... ... অনেক রাত। গোটা শহর নিঝুম নিস ব্ধ কুয়াশার আবরনে ঢেকে আছে। সারি সারি সোডিয়াম ল্যামপের আলোয় শহরের রাজপথ গুলো ঝলমল করছে। এর মাঝেও হালকা জোৎস্নার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জোৎস্না, ভাবে ছেলেটি, তার প্রিয় জিনিস। আর রয়েছে একটি তারা। অনেক দিন তারাটিকে দেখা হয়নি তার। যতন তারাটিকে দেখে ততন মনের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে একটি শাশ্বত মায়াবী মুখ। তার ভালোবাসার ছবি। নীল রংয়ে বাঁধানো সে ছবির ফ্রেম। কিন্তু সে ছবি তাকে আনন্দ দেয়না, দেয় শুধু কষ্ট আর যন না। তখন তার চোখে চিক চিক করে ওঠে অশু্র ,কষ্টের ভালোবাসার অশু্র। ব্যালকনিতে বসে এতন জোৎস্না দেখছিল সে। হঠাৎ কি মনে করে ঘরের ভিতর যায়। কিছুন পর ফিরে আসে সে। তার হাতে একটি বোতল দেখা যায়, ফেন্সিডিলের নীল বোতল। মুখ খুলে অর্ধেকটা শেষ করে সে। এটি এখন তার নিত্য সংগী। এর মাধ্যমে সে তার কষ্টকে ভুলবার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। বোতলটা শেষ করে ফেলে দিতে গিয়ে কি মনে করে লেবেলটির দিকে চোখ পড়ে। নীল রংয়ের উপর লাল কালিতে ফেন্সিডিল লেখা। অর্ধ অচেতন অবস্থায় ছেলেটি ভাবে তার জীবনের সেই লাল রাজকুমারীর কথা। সেও শুয়ে আছে লাল রং নিয়ে তার নীল সৌধের ওপর। এসব ভাবতে ভাবতে নেশার রাজ্যে হারিয়ে যায়।
সন্ধ্যা মিলিয়ে রাত নামছে। বসন ের বাসন ী হাওয়া বইছে নগরীতে। এরকম অপরূপ পরিবেশে একাকী হাঁটছে ছেলেটি। ইদানিং তার শরীরটা ভালো যাচেছনা। বেশীন হাঁটতে পারেনা সে। হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে এসে বসল সে। রীতিমত হাপাচেছ সে। পকেট থেকে ফেন্সিডিলের বোতলটা বের করে অর্ধেক খেয়ে বোতলটা ফেলে দিল। এখন আর অর্ধেকের বেশী খেতে পারেনা। আজ তার শরীরটা খুব খারাপ। তাই উঠে পড়ল সে। একটি রিঙ্া নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল । ফেরার পথে ডাক্তারের চেম্বার থেকে শুনে গেল তার চেকআপের রিপোর্ট কবে পাবে। ডাক্তার এক সপ্তাহ পরে আসতে বলল। বাসায় ফিরে যায় ছেলেটি। একসময় ভালো ক্রিকেট খেলতো সে, পড়ালেখায়ও ভালো ছিল। খারাপ কোন কিছ র প্রতি আকর্ষন ছিলনা তার। আর আজ! এক লাল রাজকুমারীর জন্য তার আগের জীবন বিস্মৃত। তার জীবন আজ নষ্ট পথিকের মতো। ভালো কোন কিছুই এখন তাকে আকর্ষন করেনা। জগতের পিছুটান আর তাকে ব্যাকুল করে তোলেনা। সে শুধ নষ্টের দিকে এগিয়ে যাচেছ। এভাবেই সে হারিয়ে যাবে একদিন, কেউ মনে রাখবেনা তার কথা। তার কথা ভেবে কারও চোখ সিক্ত হবেনা। "এই ভালো" ভাবে ছেলেটি। কারও ভালোবাসার দরকার নেই তার। মনে মনে বলে সে,"হে পৃথিবীর মানুষেরা, আজ তোমাদের চোখে আমি নষ্ট ছেলে। কিন্তু তোমরা কেউ খুঁজে দেখলেনা আমার অতীত জীবন ছিল কত সুন্দর, হাসি আনন্দে ভরপুর। সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করত। আর আজ আমার বিকৃত রূপ দেখে তোমাদের কারও মনে করুনা জাগেনা। তোমরা সবাই আজ আমাকে ঘৃণা কর। কেউ আর স্বান না দেয়না, আশার আলো দেখায়না। তোমরা কেউ খুঁজে দেখলেনা আমার কষ্টটা। কি কারনে আমি আজ নষ্ট তা জানার ইচেছ হলোনা তোমাদের কারও। তোমরা শুধু পারলে এতদিন বুকে টেনে নিতে আর আজ ছুড়ে ফেলে দিতে। তাই আজ আর আমি তোমাদের আশ্রয় চাইনা। তবে আমি আজ তোমাদের অভিশাপ দেবোনা। শুধু অনুরোধ করবো, আমার মতো কোন ছেলে বা মেয়েকে তোমরা নষ্ট হতে দিওনা। তাহলে আর কোন ােভ থাকবেনা আমার।"
স্টমাক ক্যানসার ধরা পড়েছে ছেলেটির। ডাক্তার বলেছে বড়জোড় দুসপ্তাহ বাঁচবে সে। নদীর তীরে ঠায় বসে থাকে ছেলেটি। তার হাতে রয়েছে মেডিক্যাল রিপোর্ট। স র্য ডুবে যাচেছ, গোধুলীর আলোয় লাল হয়ে আছে পশ্চিম আকাশ। কি অপরূপ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এর মধ্যে, অথচ এই সৌন্দর্য তাকে বেশীদিন অভিভুত করবেনা। একদিন সে দুম করে নাই হয়ে যাবে সবার অল্যে। মনটা অনেকটা হালকা হয় তার। যে মৃত্যু তার সামনে অবধারিত তার জন্য একটুও ভীত নয় কিংবা একটুও দুঃখবোধ নেই মনে। এই মৃত্যু তো তার চুড়ান উপহার। তবে এত সহসা যে তার আগমন ঘটবে তা সে ভাবেনি। আজ থেকে সে অপো করবে সেই শেষ নিঃশ্বাসের নটির জন্য। প্রতি সেকেন্ড, মিনিট আস ে আস ে হারিয়ে যাচেছ। কি চেয়েছিল আর কি পেয়েছিল কিংবা পায়নি এই হিসেব নিকেশ আর তাকে জর্জরিত করবেনা। শুধু যাবার আগে তার ভালোবাসার নীল সৌধের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকার রাজ্যের পথিক হবে। একটিমাত্র স্বান না থাকবে তার। সে তার ভালোবাসার কাছে হার স্বীকার করেনি। তার ভালোবাসা ছিল চির শ্বাশত এবং আজীবন তা থাকবে অ্নান হয়ে।
সন্ধ্যা মিলিয়ে ক্রমশ রাত নামছে। উঠে পড়ে ছেলেটি। যাবার আগে রিপোর্টটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দেয় নদীতে। সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত রাজপথ দিয়ে হাটতে থাকে সে। আজ আর তাকে কান বা বিদ্ধস মনে হয়না। আজ তাকে দেখাচেছ যুদ্ধ জয়ী বীরের মতো। সেই বীরের মতো, যুদ্ধ জয় করেও যার ভাগ্যে জুটেছে নির্বাসন। এই নির্বাসন তার নষ্ট ভালোবাসার জন্য। শুধুমাত্র নষ্ট.. .. .. ভালোবাসার.. .. .. জন্য।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



