somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত আদ্রিতা(প্রথম পর্ব )

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন সে আমাকে মাইকেল মধুসূদন এর মধুসূদন গ্রন্থবলী এবং রবার্ট ফ্রষ্টের “ মাউন্টেন ইন্টারভেল” বই দুটি পড়ার জন্য দিল। রবার্ট ফ্রষ্টের কাব্যগ্রন্থ পড়ে মুগ্ধ হলাম,তার কবিতার সাথে তখনই আমার প্রথম পরিচয়। এরপর একদিন রাতে ঘুমাতে যাব , তখন মধুকবির বইটা হাতে নিয়ে বসলাম,”তিলোত্তমা, পদ্মাবতী,মায়াকানন” পড়ে শেষ করলাম,আর শর্মিষ্ঠার পাতা উল্টাচ্ছিলাম। হঠাত এক টুকরো কাগজ আমার দৃষ্টি কারল। ভাজ করা কাগজটা খুললাম,একটা কবিতা। পড়ে এতটাই মুগ্ধ হলাম ভাবতে লাগলাম আমার আদ্রিতা এত সুন্দর কবিতা লিখতে পারে আর আমাকে কখনই বলে নি। সত্যি বলতে কি আমারও খানিকটা কবিতা লিখার পোকা আছে , কিন্তু আদ্রিতা ছোট্ট চিরকুটের ওই কবিতাখানা পড়ে তার কবিতার সামনে আমার কবিতা গুলোকে আমার কাছে কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছিল। বই ফেরত দেয়ার পালা আসলো, তুমি এত সুন্দর লিখতে পার,আমাকে আগে বল নি কেন? সে বলল এটা আমি লিখিনি।মিথ্যা বলছ কেন?মিথ্যা না বাবা,এটা আমার লেখা না।আমি কি লিখতে পারি নাকি গাধা। আমি আর তর্ক বাড়ালাম না। হয়তো কোনদিন সে স্বীকার করবে নয়তো সত্যি দেখা যাবে এটা অন্য কারো লেখা। সে যা হবার হবে। আদ্রিতার সাথে আজ অনেকদিন থাকার পর এটা বুঝে উঠতে আমার কষ্ট হল না সে যদি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী কাওকে ভালোবাসে, তা হচ্ছি আমি আর ওর বড় বোন। ওর বোনকে আমি কখনো দেখি নি, তবে ওনার কথা বলতে গেলেই আদ্রিতার মদ্ধ্যে যে একটা চাপা অস্থিরতা কাজ করে তা কখনই আমার চোখে এড়াইনি। যাই হোক একদিন বিকেলবেলা পার্কে তার সাথে আমার দেখা করার কথা ছিল, আমার পৌছাতে পৌছাতে দেরী হয়ে গেল, প্রায়ই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। প্রকৃতি এমন মায়াময়ী রুপ নিয়েছে যে আমার দু চার চরন লেখার খুব ইচ্ছে করছিল,সে আশা আপাতত মনে পুষে রেখে পার্কে রাস্তা ধরে ওকে খুঁজতে লাগলাম। তাকে যখন আমি পাই না, তাকে যখন আমি খুঁজি আমার কাছে তা অনেকটা যজ্ঞের মতই মনে হয়,আর যখন তাকে খুজে পাই সিদ্ধি লাভের তৃপ্তি পাই। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমার এত দেরী দেখে সে চলে যায় নি তো?? তবুও আমার মন কেন যেন ভীষমভাবে বলছিল সে যায় নি, সে আছে। হঠাত করে একটা দখিনা বাতাস এসে সমস্ত পরিবেশটাকে পাগল করে দিল। আমি দূরে একটা বেঞ্চীতে দেখলাম এই মাতাল বায়ুপ্রবাহের তোড়ে মহাকালের অপূর্ব আয়োজনে এক নবীন কিশোরীর চুল ঊড়ছে।বুঝে নিতে কষ্ট হল না এ আমার আদ্রিতা না হয়ে পারে না,আমি গেলাম তার কাছে। মাঝে মাঝে মহাকাল এমন আয়োজন করে যেন মনে হয় আমাদের দেখা করার উপলক্ষ মাত্র বাকীটা মহাকালের খেলা। আমাকে দেখে সে কি যেন তার ব্যাগের ভেতর লুকিয়ে ফেললো,আমি আর তা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি বিকেলে আসবো বলে সন্ধ্যা করলাম তারপরো আমাকে দেখে আদ্রিতা মুখে তেমন একটা রাগ বা বিরক্তি দেখলাম না। রাগ কিংবা বিরক্তি তো ছিলইনা বরং সে আমাকে দেখে তার স্বভাব সুলভ মিষ্টি হাসিখানা দিয়ে তার অমৃত কন্ঠে যাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব ভালো মানায় ,যে কন্ঠে মধুসুদনের কবিত আবৃত্তি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিল সেই মায়াবী কণ্ঠে অত্যন্ত ভালোবাসায় তার পাশে বসতে বলল।আমি তার পাশে বসলাম,সে আমার হাতটা ধরে চুপ করে কিছুক্ষন দিগন্তের অস্ত যাওয়া সূর্যটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার হাসিমাখা মুখ আর চঞ্চল জোরা চোখের পেছনে একটা গভীর বেদনা আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। অন্য কেউ হলে হয়তো দেখতে পেত না। আমি পেলাম। কারনটা আমি তাকে ভালোবাসি তা না, কারনটা সে আমাকে তার সমস্ত স্বত্বা দিয়ে ভালোবাসে। তাই অপরের কাছে যা সে লুকিয়ে বেড়ায় তা আমার সামনে লুকায় না তবে একেবারে উন্মোচনও করে না। আমাকের খুজে নিতে হয় এই যা। এখানে আদ্রিতার সুখ । এমন অদ্ভুত মেয়ে আদ্রিতা। সবার থেকে আলাদা নয় তবে সবার মদ্ধ্যে একটা ইউনিক অস্তিত্ব। তানাহলে তার অনুভূতি গুলোকে পড়তে পারে এমন ক্ষমতাধর মানব মানবী জন্ম হয় নি। আমাদের সম্পর্কটাই এমন ছিল যে আমরা কাওকে কোনকিছু জানার জন্য জিগেস করতাম না। একে অপরকে যতটুকে সম্ভব নিজ থেকেই পড়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম। সূর্য অস্ত গেল,আমিও তার হাত ধরে সুবোধ বালকের মত বসে আছি। একটা কথাও হল না, নীরবতাই যেন কথা বলে চলেছে। হঠাত করেই সে আমার হাতটা ছেড়ে উঠে দাড়াল, বললো” যেতে হবে” আমি নির্লিপ্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম আমার উপড় রাগ করেছো? সে মৃদু হেসে বললো রাগই যদি করতাম তাহলে কি পাশে বসিয়ে হাত ধরতে দিতাম? সন্ধ্যে হয়ে গেছে তোমার হয়তো খেয়াল নেই।আমি মেয়ে, দেরী করলে বাবা চিন্তা করবে। আমি বললাম , চল ,তোমাকে এগিয়ে দেই। সে বলল থাক,বাবুর আর আদিক্ষেতা দেখা্তে হবে না,আপনার যে এখন আর এই বেঞ্চ থেকে ওঠার শক্তি নেই আমি চলে গেলেই যে আপনি ভাবনার সাগরে ডুব মারবেন তা কি আমার জানা নেই।সাথে গাড়ি আছে ,চিন্তা করতে হবে না।তুমি বসে বসে কবিতা লেখ,বলে সে হাসতে হাসতে সে চলে গেল। কিছুক্ষনের জন্যে মনে হল আদ্রিতা যাকে কিনা ঈশ্বর সব মায়া, সব সৌন্দর্য দিয়ে পরম মমতায় নিজ হাতে সাজিয়েছেন। যে কিনা চাইলে কোনো এক রাজপুত্রকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে নিতে পারতো সে আমাকে এতটা ভালোবাসে কেন? সে আমার প্রত্যেকটা চোখের পলক পর্যন্ত পড়তে পারে,কেমন করে পারে? সে কি মানুষ নাকি অন্য কিছু? আমি অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে তার কথা ভাবতে লাগলাম একটা নীরব শুন্যতা নিয়ে
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×