দেশের সমাজ ব্যবস্থা এবং মানুষের মন-মানসিকতা এখন ধীরে ধীরে অতলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কোন কাজটা গ্রহণযোগ্য আর কোনটা বর্জনীয় সেটা বেশিরভাগ মানুষই ভালোমতো জানেও না। কিছু দূর্নীতিগ্রস্থ মানুষ এবং রাষ্ট্রীয় অশুভ পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধও অতি দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতেই দেখা যাচ্ছে কাণ্ডজ্ঞানহীন, মাত্রাজ্ঞানহীন কাজের বাহুল্যতা। ওয়াসার পানির লাইন ঠিক করার জন্য গর্ত খুড়া শুরু করলেও সেখানে ভীড় জমে যায় দেখার জন্য। কারো বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে এখন আগুন লাগলে পানি এনে দেয়ার লোক খুঁজে না পাওয়া গেলেও, আগুনের লেলিহান শিখার ছবি কিংবা ভিডিও করার লোকজনের কোনই অভাব হয় না। প্রকাশ্যে মানুষ খুন কিংবা আঘাত করার দৃশ্য দেখে এখন সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে মজা নেয় এবং ছবি/ভিডিও করে কিন্তু কেউ যেয়ে ধরেও না।
এই দেশে, বিশেষ করে সোসাল মিডিয়াতে, সবাই এখানে একদিনই আলোচিত কিংবা বিখ্যাত হয়ে যেতে চায়। এই আলোচিত হবার পদ্ধতি ভালো না খারাপ সেটা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। ফেসবুকে এবং ইউটিউবে গতকাল’কে এসে আজকেই সবাই সুপার-হিরো বনে যেতে চায়। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, এইদেশে সবাই সুপার-হিরো, সুপার-হিরোইন এবং মাস্টারশেফের স্পেশালিস্ট শেফ। আর যেভাবে একশ টাকার জিনিস সাতশ টাকায় বিক্রির নামে গলা ফাটিয়ে ফেলে তাতে খোদ ফিলিপ কটলার’ও লজ্জায় মুখ লুকাতেন।
কিছুদিন পরে পরেই আমাদের দেশের সোসাল মিডিয়াগুলিতে একটা করে “বাইন মাছ” ফাল দিয়ে উঠে। উঠে, না উঠানো হয়, এটা নিয়ে বিতর্কে যাবো না। কারণ দুই পক্ষের পাল্লাই যথেষ্ট ভারী। “রেশমা” কিংবা “মাছ বেডা” সোজা আকাশ থেকে এই দেশের মাটিতে নেমে আসে নি। ফাল দেয়ার সাথে সাথেই এই উজবুক জাতী দিন-দুনিয়া সবকিছু ভুলে যেয়ে এই নব্য “বাইন মাছ” নিয়ে প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পরে।
সারাবিশ্বে করোনা’কালীন এই চরম দুঃসময়েও মাত্র কিছুদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় “সবুজ রঙের পোশাক পরা এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী, সবাই নিজ মোটরবাইকে, মাঝখানে সোনালী রঙের পোশাকে একটি মোটরবাইকে কনে সেজে থাকা মেয়ে’কে” হুলস্থূল ভিডিও’তে ছয়লাব। এই মেয়ের কর্মকান্ড এবং হাবভাব দেখে মনে হলো “বেগম রোকেয়া” টাইপের কিছু মনে করছে নিজেকে এবং সারা বাংলাদেশের সমস্ত নারী জাতীর মুক্তির অগ্রদূত হয়ে তার আবির্ভাব! এবং যেন এর আগে এই দেশের আর কোন মেয়েই বাইক চালায় নি! অথচ দেশে “কেয়ার” সহ বেশ কয়েকটা এনজিও’র মেয়েরা চাকুরী কারণে বহু আগে থেকে এইদেশে বাইক চালাচ্ছে (এমন কি এখন ট্রেনও চালাচ্ছে এখন মেয়েরা) এবং আমরা তা বহুদিন ধরেই দেখে আসছি। অথচ এই কাণ্ডের পর দেশে বেশ কিছুদিন ইউটিউব, ফেসবুক ভরপুর হয়ে গেল এই উদ্ভট আচরণ নিয়ে। এই মেয়ে’কে নিতান্তই একজন বেকুব এবং ছিঁচড়ে জোকার ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি!
কেন?
তিনকন্যা খ্যাত চিত্রনায়িকা’ত্রয় সুচন্দা, চম্পা ও ববিতার ভাতিজী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্রী ফারহানা নিজের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে নিয়ে মোটরবাইকে গোটা যশোর শহর চক্কর দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। এইধরণের কর্মকান্ড আমাদের দেশে স্বাভাবিক নয়। সুতরাং ইচ্ছেকৃতভাবেই এই কাজ করা হয়েছে এটা নিশ্চিত! সোসাল মিডিয়ার লাইম লাইটে আসার জন্যই এইকাজ যে করা হয়েছে সেটা আড়াইদিনের দুধের বাচ্চাও বুঝবে।
কে এই ফারহানা?
একটা ছেলেবাচ্চার মা, তিন বছর আগে যার বিয়ে হয়েছে, তার হুট করে এতদিন পরে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নামে নায়িকার মতো সাঁজুগুজু করে, চোখে সানগ্লাস পরে, কমপক্ষে বিশ বা তিরিশ জন একইভাবে সেঁজেগুজে দল বেঁধে যেভাবে সাড়ি করে মোটরবাইক চালাচ্ছিলো তা নাটক সিনেমার অভিনয়ের সাথেই মানায়, বাস্তবে কখনই মানানসই না। প্রি-প্ল্যান্ড একটা ঘটনা। উপরে বর্নিত নায়িকা’ত্রয়ের সারাজীবন বাংলা সিনেমার সাথে জড়িত থেকে শেষজীবনে হজ্ব করে হিজাব পড়ার দৃশ্য যেই কারণে ভাইরাল হয়েছে, এই মেয়েও ঠিক একইভাবে জোকারের মতো উদ্ভটভাবে কাজ করে সারাদেশের মানুষকে দিনের পর দিন হাসিয়েছে।
অথচ নিজে কি দাবী করেছে দেখুন?
“আমি ইচ্ছেপূরণ করেছি। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটু হইচই-আনন্দ করেছি। আমি কি বলেছি আমাকে ভাইরাল কর?”
“আমি ঢাকাতে থাকি, অহরহ ছেলেরা হলুদে বাইক নিয়ে এন্ট্রি দিচ্ছে ও মেয়েরা নেচে। আমি মেয়ে হয়ে বাইক চালাতে পারি। তাই ভাবলাম বাইক চালিয়েই এন্ট্রি দেই।”
“গায়ে হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠান স্মৃতি করে রাখতেই পেশাদার ক্যামেরাম্যান দিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। বিয়ের পরে সেই ছবি ও ভিডিও বন্ধু-বান্ধবরা ফেসবুকে পোস্ট করে। এরপর থেকেই তা ভাইরাল হয়ে যায়”।
-সারাদেশে প্রতিদিন কতগুলি বিয়ে কিংবা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয় তার হিসাব জানেন কি
আপনি?
-তাদের বিয়ের সব ভিডিও কি দেখেন আপনি?
-এটা সম্ভবও না।
-তাহলে এই মেয়ের গায়ে হলুদের এই ভিডিও ভাইরাল হলো কিভাবে?
এক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার সহ এক ইউটিউবার ফারহানার এই বাইক শো-ডাউন নিয়ে ভিডিও বানিয়ে রিলিজ দিয়েছে। এই ভিডিও যেভাবে ইচ্ছেকৃতভাবে বানানো এবং রিলিজ দেয়া হয়েছে তাতে কোন সন্দেহই নেই যে সোশাল মিডিয়াতে লাইম লাইটে আসার জন্য এই কাজ করানো হয়েছে। এই মেয়ে জোকার কয়েকদিন পরেই হয়তো বাংলা সিনেমায় নেমে পরবে। আগে থেকেই সোসাল মিডিয়ার ফোকাস নিজের দিকে নিয়ে রাখলো। “ফারহানা এখন নায়িকা” শিরোনামে কিছুদিন পরে কোন নিউজ বের হলেও এই মেয়ে’কে চিনতে কারো ভুল হবে না।
ফারহানা অফরোড পারফোর্মেন্স যা করেছে কিংবা যেভাবে ভাইরাল করার চেষ্টা করেছে সেটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই, মাথাব্যাথাও নেই। এভাবে লাইম লাইটে আসার জন্য সারাবিশ্বেই মেয়েরা এরচেয়ে অনেক বেশি আজেবাজে নোংরা কাজ করে বেড়ায়। এই মেয়ে তো অন্তত অর্ধউলঙ্গ কাপড় পরে বা শারীরিক সর্ম্পকের নিজের নোংরা ভিডিও রিলিজ দিয়ে লাইম লাইটে আসতে চায়নি, একতলা যথেচ্ছা ভাড়া দিয়ে দুইতলায় দুইটা ঢাউস ফ্ল্যাট বাড়িও বানায় নি, একাধিক বয়ফ্রেন্ড’কে গায়ের উপরের কাপড় খুলে শুধু অর্ন্তবাস পরা ছবি তুলে সেটা পাঠিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে, পরে এসে মিডিয়াতে কান্নাকাটিও করে নি। দেশে এত এত ভয়ানক সব সমস্যা নিয়েই আলোচনা হয় না, তাহলে এই মেয়েকে নিয়ে এত হইচই কেন করা হলো?
কারণ-
এই দেশের মানুষ বড় আজিব কিসিমের দুই’পা ওয়ালা প্রাণী! কোনটা গ্রহণযোগ্য আর কোনটা বর্জনীয় সেটা না বুঝেই ছাগলের পাঁচনাম্বার বাচ্চার মতো হুদাই লাফালাফি করে। ফারহানার সমালোচনা করতে হলে বাইক চালানোর সময়ে,
-মাথায় হেলমেট কেন নেই?
-মুখে কেন মাস্ক নেই?
-সারা শহরে এভাবে ট্রাফিক আইন/ করোনাকালীন মাস্ক পরার আইন ভঙ্গ করে ঘুরে বেড়ালেও আইন শৃংখলা বাহিনী কেন নাক ডেকে ঘুমিয়েছিল?
*এইধরণের প্রশ্নগুলি আসা খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু কয়জন‘কে এইগুলি নিয়ে প্রশ্ন করতে দেখেছেন?
অথচ এইধরণের যৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্নগুলি বাদ দিয়ে মেয়েকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ, মেয়ের বাবা মা’কে গালিগালাজ, তার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তার বাবা মায়ের আর্থিক উপার্জনের পন্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেজে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেয়ার জন্যে মুখরোচক শিরোনামও দেয়া হয়েছে, ফারহানা সোজা জাহান্নামে যাবে, বেলেল্লাপণা করছে, সমাজকে ধ্বংস করছে, বিয়ের মতো 'পবিত্র' একটা কাজকে অপমান করছে, অন্যান্য মেয়েদের উস্কে দিচ্ছেন অসামাজিকতার পথে হাঁটার জন্য ইত্যাদি কোন কথাই বাদ দেয়া হয়নি।
-এখন দেশে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান কি করা হয় না?
-গায়ে হলুদে হিন্দি গানের সঙ্গে রাতভর নাচানাচি কি করা হয় না?
-ভারতীয় চ্যানেলের অনুসরণে বিয়ের অনুষ্ঠানে কোন কাজই বাকি রাখা হয়?
-বিয়ের আগে জামাই বৌ শত শত আত্মীয়দের সামনে নির্লজ্জ বেহায়াদের মতো হাত ধরে, কোমর ধরে নাচানাচি করে, ভিডিও করে, ফটো সেশন করে তখন সমালোচনাগুলি হয় না কেন?
তখন ধর্মীয় মূল্যবোধ কোথায় লুকায়? খাটের নীচে নাকি জঙ্গলে?
এই জাতী যে কত পিকুলিয়ার সেটা আহমদ ছফা অনেক আগেই বলে গেছেন, “এরা লাইফস্টাইল চায় ইউরোপ-আমেরিকার মতো, দুর্নীতি-চুরি-ধান্ধাবাজী করতে চায় বাংলাদেশের মতো, আর নারীদের বেঁধে রাখতে চায় সৌদি আরবের মতো করে।”
সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে মিডিয়া, এমনকি হুজুর টাইপের কেউই বাদ থাকেনি মন্তব্য করতে।
আরেকজনের বিবাহিত স্ত্রীর দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোই তো হারাম, অথচ এরা দিব্যি নিজেরাই ফারহানা অনেকরকমের ছবি নিজের পোস্ট দিয়ে জাতীকে ইচ্ছেমতো ধর্মীয় জ্ঞান দিচ্ছে!
-কি বিচিত্র সেলুকাস এইদেশে?
-মরার আগে এইদেশে আর কত কি যে দেখে যেতে হবে?
মোটরসাইকেলে চড়ে গায়ে হলুদের দিন ফটোসেশন করার কারণে যদি ফারহানা জাহান্নামে যায় তাহলে এদের সমস্যা কি? মনে হচ্ছে ফারহানা জাহান্নামে যেয়ে এদের সিট আগেই দখল করে বসবে দেখে মহা চিন্তায় পরে গেছে এরা। ধর্মের নাম নিয়ে যারা ফারহানার সমালোচনা করছে তারা কি ভালোমতো এই মেয়ের পোশাক দেখেছে। এই মেয়ে তো শালীন পোষাক পরেছে এবং তাতে বিন্দুমাত্রও অশ্লীলতার ছাপ ছিল না কোথাও। তবুও শুধু শুধু এরা এই ঘটনা’কে 'নষ্টামি' বা 'কেয়ামতের আলামত' টাইপের টাইটেল দিয়ে অতিরঞ্জিত করে কেন ধর্ম উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছে? এদের মন্তব্যগুলি পড়লে মনে হয় এক ফারহানা কারণেই সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্ম সব উচ্ছন্নে চলে গিয়েছে!
ইসলাম ধর্ম কি এতই সস্তা? এক মেয়ের কারণে পুরো ইসলাম ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে?
এত বড় বড় ধর্মীয় আলোড়ন তোলা বক্তব্য যে দিচ্ছেন; ইসলামে তো ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, ধর্ষন করা, মদ খাওয়া, চুরি করা, বেপর্দা ঘুরে বেরানো সবই নিষিদ্ধ, সেইগুলি সব মানেন?
নিজে ঘুষ খেয়ে ডিজে পার্টি ভাড়া করে সারারাত হিন্দি গানের সাথে নেচে গেয়ে মেয়ে বিয়ে দেবেন তখন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু একমেয়ে মোটর বাইকে ঘুরে বেড়ালে গায়ে ধর্মীয় আগুন ধরে যায়!
ভন্ডামি আর কাকে বলে? এই জাতী আপদমস্তক ভণ্ড। করোনার কারণে যেখানে সারা পৃথিবীর মানুষ আরো মানবিক হচ্ছে, সেখানে এই দেশে হরদম দেখা যাচ্ছে অমানবিক আচরণের ছড়াছড়ি। ছেলেমেয়েরা মাকে জঙ্গলে যেয়ে ফেলে আসছে, বৌ অসুস্থ জামাই রেখে পালাচ্ছে, প্রবাসী লোকজনে বৌদের নিয়মিত ফাঁস হওয়া পরকিয়া কাহিনীর হিস্ট্রি দিতে গেলে তো মহাভারতও অনেক ছোট মনে হবে।
এই দেশের মানুষের কমন সেন্সের বরাবরই অভাব ছিল, এখন সেটার আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মানুষজনের কমনসেন্সের লেভেল কত নীচু পর্যায়ে নেমে গেছে সেটা নিয়ে গবেষণা করার দরকার নেই। শুধু করোনার এই ভয়াবহতার সময়ে “আইইডিসিআর” এর হটলাইনে আসা ফোনগুলোর বিবরণ শুনলেই যে কোন সুস্থ মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত “আইইডিসিআর” এর হটলাইনে কল এসেছে দশ লাখের বেশি। তার ভিতরে প্রায় দুই লাখ ফোনকলের সঙ্গে করোনার কোন আদৌ সম্পর্ক নেই। তাহলে এই ফোনগুলো কারা করেছে? কেন করেছে? কি বলা হয়েছে সেই ফোনে?
আইইডিসিআর এর হটলাইনের ফোন রিসিভ করেন, এমন একজন চিকিৎসকই ফেসবুকে লিখেছেন- ‘‘IEDCR এর হটলাইনে কাজ করার পর একটা উপলব্ধি হয়েছে যে, এই দেশের বহু মানুষের আসলে কোন কাজই নাই, এবং তাদের গায়ে তেল অনেক বেশি। নইলে মেয়েকণ্ঠ শুনলেই "আপনি বিয়ে করসেন?" "আপনার বয়স কত", "আমি লাগাইতে চাই", "যৌবন ফিরে পাব কিভাবে", "দুলাভাই কি করে", "এই ফোন দিসি এম্নেই, আপনার সাথে কথা বলার জন্য", "আমাকে ফোন ব্যাক করেন, আপনার সাথে কথা বলতে চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলা ঘটতো না৷ সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, সৌদি আরব থেকে একটা গ্রুপ লিটারেলি ১০ বারের উপর ফোন দিয়ে নানাভাবে বিরক্ত করেছে। সমাজসেবা কঠিন জানতাম, তবে এতটা বেহায়াপনা দেখার লাগবে জানতাম না সত্যি।’’
এই দেশে একসময় বাংলা সাহিত্য ভীষণ সমৃদ্ধ ছিল। মানুষ বই লিখতো, বই পড়তো, রসবোধও ছিল প্রশংসা করার মতো।
কিন্তু এখন সবকিছু তলানিতে নেমে অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এরা হচ্ছে লম্পটের জাত। দশলাখ ফোন কলের মধ্যে যখন এরকম অবান্তর কথাবার্তা বলার জন্যেই দুইলাখ কল আসে, সেটাকে তুচ্ছ সংখ্যা ভেবে উড়িয়ে দেয়ার কোনই অবকাশ নেই। এই দেশের প্রতিটা জায়গায় লাখ লাখ পার্ভার্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সুযোগ পেলেই তারা নিজেদের কদাকার চেহারাটা দেখিয়ে দেয়।
ফারহানা’কে নিয়ে নোংরা আলোচনা করা এবং বিকৃত মন্তব্য করা মানুষগুলি এইসব পার্ভার্টদেরই নামান্তর মাত্র!
নষ্ট-পঁচা-গলা সমাজ ব্যবস্থার এইসব পার্ভার্ট’রা সোশাল মিডিয়াতে কোনভাবে একটা “বাইন মাছ” লাফ দেয়ার ঘটনা পেলেই নির্লজ্জ আস্ফালনের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয় আসলেই কতটা অধঃপতনে নেমে গেছি আমরা!
লেখার সূত্রঃ “ব্লগার করুণাধারা” ও “ব্লগার সোহানাজোহা” এর কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এটা লেখা হয়েছে।
তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকাশিত সংবাদ পত্রপত্রিকা/সোসাল মিডিয়া থেকে।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৬