গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির গণুর সমর্থনে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন কিছু বক্তব্য দেন। দেলোয়ার হোসেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার আলমডাঙ্গা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত সবাইকে কিভাবে ভোট আদায় করে নির্বাচনে জিততে হয় তার অভিনব পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেনঃ
-ভোট করার কায়দা আছে, অনেক কায়দা আছে। ভোট আগে থাকতি কইরে ফেলতি হবে। স্যান্টারে (কেন্দ্রে) যায়ে ভোট হবে না।’
দলীয় নেতা–কর্মীদের তিনি ভোট করার সেই ‘কায়দা’ও শিখিয়ে দিয়েছেন। নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেনঃ
-টুক করে ভোটের আগের রাত্রি গলির মদ্যি বুলে আসতি হবে, তুই বাড়ির মদ্যিতি নড়বিনে। নড়লি তোর খবর আছে, এবং তুই হচ্চে রাজাকার, তুই হচ্চে জামাত।
১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্যের সময় অনুষ্ঠানমঞ্চে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াকুব আলী এবং আলমডাঙ্গা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। ওই শ্রমিক সমাবেশে আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া বক্তব্যে দেলোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়ঃ
-এটা বিএনপির লোক, এটা জামায়াতের লোক। আমি ওই লোককে ব্যারিকেড দিয়ে ভোট আটকে দেব। আমরা নৌকাকে ভোট দিয়ে দেব। তাহলে কী হবে জানেন? বিএনপি-জামায়াতের যারা, ভোট দিতে যাতি পাইরল না, আমাদের যে ৫০০ ভোট, ৫০০ ভোটই থেকে গেল। ভোটে অনেক কৌশল আছে। কৌশলগতভাবে আগালে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র হাসান কাদির (নৌকা), জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন (ধানের শীষ) ও জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি সবেদ আলী (মোবাইল ফোন)। বক্তিতার একপর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর ভোট ঠেকাতে কৌশলও শিখিয়ে দেন দেলোয়ার। তিনি বলেনঃ
-আমরা এখানে পরিশ্রম করছি কিসির জন্যি? ভোটের জন্যি। এই ভোটগুলো কীভাবে বাড়ির কাছে আটকে দেব? গলির মদ্যি জামাত-বিএনপি। টুক করে ভোটের আগের রাত্রি গলির মদ্যি বুলে আসতি হবে, তুই বাড়ির মদ্যিতি নড়বিনে। নড়লি তোর খবর আছে। এবং তুই হচ্ছে রাজাকার, তুই হচ্চে জামাত। ভোট করার কায়দা আছে, অনেক কায়দা আছে। ভোট আগে থাকতি কইরে ফেলতি হবে। স্যান্টারে যায়ে ভোট হবে না।
যারা মনে করছেন এটাই প্রথম তাদের জন্য আরেকটা দিলাম।
গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কালকিনি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাঙ্গাসিয়া এলাকায় উঠান বৈঠকে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বেলাল হোসেন সরদার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম হানিফের সমর্থক হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজে নিয়োজিত আছেন। এই বক্তব্যের একটি অংশে তিনি বলেনঃ
-এখানে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ রেখে গেলাম, আগামী দুই দিনের ভেতর যদি আপনারা পরিবর্তন হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করেন দেশের স্বার্থে, ভালোভাবে থাকতে পারবেন। আর নচেত ঘরে ঘুমানোর কোনো সুযোগ নাই।
দেশে এত দারুন ভোট নেয়ার পদ্ধতি অবশ্য নতুন কিছু নয়।
রাতের বেলা ভোট নিয়ে, ব্যালট বাক্স গায়েব করে দিয়ে নির্বাচনে জিতে যাওয়া একটা রাজনৈতিক দলের কাছে জনগন এরচেয়ে ভাল আর কি বা আশা করতে পারে?
তবে দেশের মানুষের জন্য দারুন সুখবর আছে!
একটা বিদেশি বেয়াড়া টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের রিটের শুনানি হবে আজ সকাল ১১টায়। মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। রিটে বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত ‘**************’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব ধরণের মিডিয়া থেকে সরানোর নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
পায়ে ব্যথা হলে তার চিকিতসা না করে পা কেটে ফেলার এই অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য সংশ্লীট সবাইকে আবারো অভিনন্দন।
আশা করছি খুব শিঘ্রই দেশের সুপোষ্য সংবাদপত্র এবং বশ মানা মিডিয়া ছাড়া আর কোন কিছু দেখা বা শোনা যাবে না।
এবং আমাদেরকেও এইসব দারুন দারুন বক্তিতা নিয়ে আর কোন পোস্ট দিতেও হবে না।
লেখার সূত্রঃ
আজকের প্রথম আলো পত্রিকা, ১০-০২-২০২১ ("আগের রাতে ভোটারদের আটকানোর ‘কায়দা’ শেখালেন আ.লীগ নেতা
প্রতিনিধি", প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯: ১৭)
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারী ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:২৩