আমাদের চারপাশের চলমান সমাজ নিয়ে আমি লিখি বহুদিন ধরেই। আমার বেশিরভাগ লেখাই এই ধরনের টপিক নিয়ে লেখা।
একুশে বইমেলা ২০২২ উপলক্ষে এবার আমার দ্বিতীয় উপন্যাস নমানুষ ছাপা হয়েছে শব্দ শিল্প প্রকাশনী থেকে। নমানুষ উপন্যাসের বেশিরভাগ ঘটনা বাস্তব জীবন থেকে নেয়া এবং দৈনিক পত্রিকায় ছাপা ঘটনাগুলির ছায়া অবলম্বনে লেখা। সমাজের অসংগতি, ত্রুটি এবং অপরাধগুলি তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়।
ফাহরীন, সাজিদ, ফিরোজ, সোমা, রিতু, মুনা, জিশান, শবনম আমাদের চারপাশেই আছে। সচেতন দৃষ্টিতে তাকালেই এদের'কে আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে দেখতে পাওয়া যাবে। জিশানের মতো অপরাধীরা কারো সহায়তা না পেলে সমাজের এত স্তরে উঠে আসতে পারতো না। বিচার বাণী নিরবেই কাঁদে - এটা সত্য বলে আমাদের এখনো ধরে নিতে হয়।
ইচ্ছে করলেই প্রচলিত গতানুগতিক টপিক, সস্তা প্রেম কাহিনী, বস্তা পঁচা বাংলা সিনেমার প্লট লেখা যেতো। শুনেছি এইসব জনরার পাঠক পাঠিকাও বেশি, তাই চাহিদাও বেশি। তবুও কেন যেন আমি ভিন্ন পথে লিখে যাচ্ছি। যতদিন পারি লিখে যাবো।
আমাদের কাউকে না কাউকে কলম তুলে নিতেই হতো এইসব সামাজিক অসংগতি, ভ্রষ্টাচার, নোংরামি এবং আইনের ফাঁক ফোকরগুলি তুলে ধরার জন্য।
বিশ্বাস করুন, কোন সমাজ একদিনে নষ্ট হয় না, হবার কথাও না।
নষ্ট হবার সুযোগ না দিলে আমাদের সমাজটাও এভাবে নষ্ট হতো না এভাবে।
বর্তমানে আমাদের চারপাশের সমাজ কতটা নোংরা অবস্থানে গিয়েছে সেটা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না।
আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, সামাজিক জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে এইসব অসংগতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, সত্য প্রকাশে কখনো ভয় পাওয়া চলবে না।
এই উপন্যাস লেখার সময় যিনি সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন তার নাম আমি উল্লেখ না করলে এই বড়ভাইকে অসম্মান করা হবে। আমি সকৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধেয় ব্লগার ঠাকুর মাহমুদ ভাইকে স্মরণ করছি।
কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি আমার উপন্যাসের অসাধারণ একটা প্রচ্ছদ তৈরি করে দেয়ার জন্য জাদিদ ভাইকে।
নমানুষ পৃষ্ঠা ৮৪ থেকে ৮৫ পর্যন্ত ব্লগের পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম পড়ার জন্যঃ
------------------------------------------------------------------------------------------------------
-শুভ, কোন মেয়ে পরকীয়া করলে, যেই ছেলের সাথে করবে তার শাস্তি হবে। কিন্তু মেয়েকে নাকি আইনে কোন শাস্তি দেয়া যায় না, সত্যি নাকি?
-শবনম, পরকীয়া আইনের দৃষ্টিতে ব্যাভিচার। যদি কোন ব্যক্তি অপরকোন ব্যক্তির বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে এমনভাবে যৌন সম্পর্ক করে যা ধর্ষন নয়, তাহলে ঐ ব্যাক্তি ব্যাভিচার করেছে। এক্ষেত্রে এইদেশের আইনে ব্যাভিচারের কারণে ছেলের শাস্তি হবে কিন্তু মেয়ের কোনই শাস্তি হবে না।
-কি বলছো তুমি? একই অপরাধে একজনের শাস্তি হবে আর আরেকজনের কিছুই হবে না? এটা কেমন কথা?
-অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য! কারন দেশের প্রচলিত আইন ১৮৬০ সালে প্রণীত দন্ডবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারায় বলা হয়েছে – ‘যদি কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির স্ত্রী বা যাকে সে অপর কোন লোকের স্ত্রী হিসেবে জানে বা অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে এমন কোন ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে উক্ত স্ত্রীলোকের স্বামীর সম্মতি বা সমর্থন ব্যতিরেকে এরূপ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাহা নারী ধর্ষনের সামিল নহে, সে ব্যক্তি ব্যাভিচারের অপরাধে দোষী এবং উক্ত অপরাধে কোন মেয়াদের কারাদন্ড যাহা পাঁচ বছরের অধিক নহে বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। অনুরূপক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটি উক্ত দুষ্কর্মের সহায়তাকারীনি হিসেবে দন্ডিত হবে না’।
-জঘন্য বিষয় হলো, ব্যাভিচারের অপরাধে নারীকে কখনই দোষী করা যাবে না, ব্যাভিচারে স্ত্রীলোকের স্বামী মামলা করতে পারবে পুরুষ ব্যাভিচারীর বিরুদ্ধে, ব্যাভিচারের অপরাধ সংগঠনে যদি নারীর সহায়তা বা প্রলুব্ধকরণ বা অপরাধের মাত্রা বেশি থাকলেও উক্ত ব্যাভিচারীনি স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে কোনরূপ আইনগত পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। ভয়াবহ বিষয় হলো, স্বামীর সম্মতি থাকলে এই ব্যাভিচারকে আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হবে না।
-ওমা! কী বলছো এসব তুমি? এতো দেখি মেয়েদেরকে দিব্যি প্রলুব্ধ করা হচ্ছে আকাম কুকাম করার জন্য!
-অথচ দেশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭তে আইনের দৃষ্টিতে রাষ্টের সকল নাগরিক সমান এবং আইনের আশ্রয় লাভের ক্ষেত্রে সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৮ এ বলা হয়েছে, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে রাষ্ট্র কোন নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
-বাহ, কী চমৎকার আইন! এইজন্যই তো দেশে এখন এইসব জঘন্য অপরাধ দিন দিন আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে………
উপন্যাসঃ নমানুষ
একুশে বইমেলা ২০২২, শব্দ শিল্প প্রকাশনী
কপিরাইট @ Mohiuddin Mohammad Zunaid
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৩৬