১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর একের পর এক জায়গা শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা বীরদর্পে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মরণপণ লড়াই চালিয়ে যায় তারা। তাদের মনে আশার আলো জ্বলেছে দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের এদিন ভোরে ভারতীয় বাহিনী সিলেটের নিকটবর্তী বিমানবন্দর শালুটিকরে নামে। তারপর চারদিক থেকে পাকিস্তানি ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণে দুপুরের মধ্যেই এখানকার পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এর আগে পালানোর সময় পাকিস্তানি বাহিনী বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, রেশন এবং কন্ট্রোল রুমের সামরিক মানচিত্রও ফেলে রেখে যায়।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোর হানাদারমুক্ত হয়। যশোরের কেশবপুরকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী রাইফেলের আগায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে কেশবপুর থানায় উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে বিজয় উদযাপন করে। এ সময় কেশবপুর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন। রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ বিজয় দেখে প্রাণভয়ে কেশবপুর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।
৭ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী কুমিল্লার চান্দিনা ও জাফরগঞ্জ নিয়ন্ত্রণে নেয়। বিকালের দিকে বগুড়া-রংপুর সড়কের করতোয়া সেতু দখল নিয়ে পাকিস্তান ও যৌথ বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। একের পর এক জায়গা শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আজকের এই দিনে জামালপুর, ময়মনসিংহ, মধুপুরও শত্রুমুক্ত হয়। এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত শক্তি ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ঘিরে ফেলে হানাদারদের ঘাঁটি নোয়াখালীর মাইজদী টাউনহল। সে সময় সেখানে শুধু রাজাকার ও আলবদর ছিল। প্রথম দিকে গুলি ছুড়লেও পরে তারা আত্মসমর্পণ করে। চরম আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগেই পালিয়ে যায়। এদিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। আর সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ কোনো ধরনের বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান।
সূত্র: বেশতো