“ আপনারা কেউ ই আমাদের কথা ভাবেন না । আমরা আশান্তিতে আছি । আজকাল আর ভয় হয় না। কারন ভয় পেতে পেতে ভয় কেটে গিয়েছে। এখন আছি অশান্তিতে। কারন আমাদের ঘরে বসে থাকার উপায় নাই। পথে নিরাপত্তা নাই। কী করবো ? সংসার তো চালাতে হবে। বউ , ছেলে, মেয়ে নিয়ে চলবো কেমন করে ? আমাদের বাচ্চাদের কী হবে ? ঠিক মত পড়াশুনা না করলে তো আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাদের তো কোন ক্ষমতাধর আত্মীয় – স্বজন নাই । কী হবে এই দেশের মানুষের ? এর নাম প্রতিবাদ ? আন্দোলন ? কার জন্যে ? কেন ? “ সাধারন একজন মানুষ যিনি ব্যাংকে চাকরী করেন তিনি এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলি বলে করুন চোখে আমার দিকে তাকালেন । আমি এই ভদ্রলোকের কথার কী উত্তর দিব ? আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না । কারন এর উত্তর আমার জানা নাই ।
এই প্রশ্নের উত্তর যে কার জানা আছে সেটিও আমার জানা নাই ।
হঠাত করেই ৫ জানুয়ারী ২০১৫ থেকে দেশে এক অশান্তি শুরু হয়েছে। বি এন পি সরকার পতন চায়। চাইতেই পারে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু চাওয়া পূরণের পথ টি হতে হবে গণ তান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে । সেই পথে যেই হাঁটবে সে বিজয়ী হবেই। এটাই নিয়ম ।
বি এন পি ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচন কেন করে নি সেই প্রশ্ন এখন আমি তুলতেও চাই না । নির্বাচন করলে ফল ভাল হত নাকি খারাপ হত সেই প্রসঙ্গেও যাব না । আমার নিজের অশান্তি, অস্বস্তি, ভয়, আতঙ্কের আলোকে শুধু এটাই বলতে পারি – জন পরিবহনে আগুন দেয়া, পেট্রোল বোমা ছোঁড়া, সাধারন মানুষ ও অবলা প্রাণী পুড়িয়ে মারা কোন রাজার নীতি অর্থাৎ রাজনীতি হতে পারে না ।
এই সব অঘটন কেবল সাধারন মানুষের উপরই ঘটে চলেছে। আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ এর বিনাশ ? সেও তো আমাদের । কারো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বা সম্পত্তি নয়। তাহলে বিষয়টি আসলে কী দাঁড়ায় ?
মানুষ মরছে – সাধারন। সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে জনগণের। না কোন রাজনীতিবিদ এর ব্যাক্তিগত বা সম্পদ গত কোন ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে না । সেই ক্ষেত্রে কেনই বা যারা গদিতে আসীন তারা গদি ছাড়বেন বা যারা যাতে পারেন নি বা বহুদূরে আছেন তারাই বা এই সব অশান্তিদায়ক কাজকর্ম বন্দ করবেন ? এই দুই গোত্রের আসলেই কী কোন ক্ষতি হচ্ছে ?
রাজনীতি আসলেই রাজারই নীতি । এখানে প্রজার কোন সম্পৃক্ততা কোনদিন ছিল না – আজো নাই । আমরা হলাম প্রজা । আগেকার দিনে রাজাদেরকে উপঢৌকন দিতে হত , জমিদারদেরকে খাজনা দিতে হত আর আজকাল সভ্য ভাষায় বলা হয় “ট্যাক্স “। আধুনিক যুগের সুশীল শব্দ । সাথে আবার যোগ হয়েছে সব কিছুতেই “ভ্যাট” ও।
কিন্তু যে নামেই বলি না কেন আমাদের রাজাদেরকে এই উপঢৌকন /খাজনা/ ট্যাক্স/ভ্যাট দিতে হলে আমাদের তো প্রথমেই বেঁচে থাকতে হবে, কিছু আয় উপার্জন করতে হবে । নইলে কার টাকায়ই বা আরাম আয়েশ করবেন বা কষ্ট করে রাজনীতি করবেন ? আর এই যে ধ্বংস লীলায় আপনারা লিপ্ত হয়েছেন এর ফলে আসলে লাভের লাভ কার হচ্ছে ?
থামতে হবে – অনতিবিলম্বে আপনাদের এই ধবংসলীলা থামাতে হবে । নইলে সামনে আপনাদের ঘোর অমানিশা। জনগন কীভাবে আপনাদের এই হত্যা আর ধবংসলীলার উত্তর দিবে সেটি আপনাদের একটু হলেও আঁচ করা উচিৎ। আজকাল আমরা আর কোন অবস্থাতেই এই সব অহেতুক অবরোধ আর হরতালে সাড়া দিচ্ছি না । শুধু আমরা কেন – আপনারা যারা এই সব কর্মসূচী দিচ্ছেন তাঁদের দলীয় লোকজন ও তো দিচ্ছে না । তাহলে কেন এই অহেতুক গোঁয়ার্তুমি যার কোন সুফল জনগণ তো পাচ্ছেই না এমন কি আপনারাও পাচ্ছেন না। বরঞ্চ দিনে দিনে যে হত্যা ও ধ্বংসের দায়ভার আপনাদের উপরে বর্তাচ্ছে তার বোঝা বহন করার মত কাঁধের জোর আপনাদের আছে তো ? থাকলে ভাল, নইলে প্রস্তুত করুন।
দিলরুবা সরমিন
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
প্রধান সম্পাদক , প্রথমবার্তা.কম
সুত্র: প্রথমবার্তা.কম
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫১