somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটুকু ছোঁয়া লাগে

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন কাছে চলে এলো। আমি ভাবতেও পারছিনা কাল সকালেই আমি অন্য একজনের হয়ে যাবো । যার সুখ-দুঃখের ভাগ আমাকে নিতে হবে। আরেকটা পরিবারের মানসম্মান আমার ভাগ্যের সাথে জড়িয়ে যাবে। বুকের ভিতর ভয়ংকর মেঘের গর্জন। স্বপ্নগুলো ভীরু ভীরু কাপছে বুকের স্পন্দন হয়ে। একটা নতুন জীবন; অনেকগুলো চেনা মানুষ অচেনা পরিচয়ে। বারবার মনে হচ্ছে আমি কি পারবো মানুষটাকে বুঝতে?
সে কি আমাকে বুঝবে? আমার ছোটখাটো পাগলামি কি ঐ গম্ভীর মানুষটা বুঝতে পারবে?

ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের দুই পরিবারের ভালো সম্পর্ক। কিন্ত এখন নতুন সম্পর্কে কি সবাই ভালো থাকবে? রাহাতকে আমি যতটুকু জানি সে অনেক বাস্তববাদী মানুষ। সবকিছুতেই অনেক সিরিয়াস, কথা অনেক কম বলে, দশটা প্রশ্ন করলে একটা জবাব দেয়; সবাই চোখ বন্ধ করে বলে রাহাত ভালো ছেলে। কিন্ত আমি কি এমন ভালো ছেলে চেয়েছিলাম? আমিতো স্বপ্ন বেচে খাওয়া মানুষ... স্বপ্নের হাত ধরে হামাগুড়ি দেই; কখনো কখনো উড়ে বেড়াই, হুচোট খাই, আবার নতুন স্বপ্ন সাজাই।

একটা ছেলে যে একটু পাগল হবে, অনেক দুষ্টু হবে, হুট করে ভালবাসার কিছু পাগলামি করে আমাকে লজ্জায় ফেলে দিবে, আমাকে চমকে দিবে। রাহাতের সাথে এসবের কিছুরই মিল নেই, পাগলামি তো দূরে থাক আজ পর্যন্ত কারো সাথে মজা করতেও দেখিনি ওকে। ওদেরকে বলেছিলাম, ‘রাহাতের মতো ছেলে আমার ভাল লাগেনা, আমি এমন নিরস জীবন চাইনা।’ কথাটা শুনে আব্বু আম্মু দুজনেই থ’ হয়ে গিয়েছিলেন। আব্বু দু’দিন সময় দিয়েছিলেন রাহাতের দোষগুলা ধরে দেয়ার জন্য, কিন্তু রাহাতের কোনো দোষ আমি পাইনি, সত্যি পাইনি... একটা দোষও পাইনি। তারপর দেখতে দেখতে কি করে যেন আজকের এই দিন চলে এলো!

‘ইয়া আল্লাহ! ঐশীর মা তোমার ফুরি দেখি সখাল ঐতে না ঐতে চোকর ফানি দিয়া বালিশ বিজার! ও ঐশী আরোকটু ঘুমাগো মা, অতো সখাল উঠার খাম নাই সারাদিন খতো দখল যাইবো।’

মামীর কথায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি। কেন যেন হঠাৎ করে আজ মামীর গলা ধরে অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করে। এই চেনা মানুষগুলোর কাছ থেকে কত দূরে যে চলে যাব! রোজ ভোরে যে মা-বাবার মুখ দেখতো, আজকের পর থেকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গে আর দেখবোনা ওদেরকে। আর কখনো ভোরে মা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুম ভাঙ্গাবে না; খাবারের সময় হলে বাবা মুখে তুলে খাইয়ে দিবেনা। ভাবতে ভাবতে আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি।

ঘুম ভাঙ্গলো যখন, তখন ঘর ভর্তি একদল শিশু হইচই করছে। চোখ মেলতেই দেখি মা আমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। একটু আগে কেঁদেছেন এই জন্য মনে হয় মুখ চোখ ফুলে আছে। আমি জেগে গেছি দেখে চাচাতো ভাবী হাসতে হাসতে বললো, ‘এখন উঠো আর ঘুমাইলে তো আমরা সাজাইতাম ফারতাম নায়। তোমারে তোমার বর আইয়া সাজাইতে ওইবো।’ আমি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেই। এই ভাবীগুলা জ্বালাচ্ছে কদিন থেকে। খালি কি সব বলে লজ্জা টজ্জা সব জলে ভাসিয়ে দিয়েছে!

সময় যেন পাগলা ঘোড়ার মতো বিরামহীন ছুটে চলছে! আমি চুপচাপ বসে আছি। বড় মামা অনবরত বলছেন, ‘বলো মা কবুল বলো।’ মনে হচ্ছে আমার গলায় কি যেন আটকে আছে। আমি কথা বলতে পারছিনা । বোবার মতো বসে আছি আমি। এই একটা শব্দ আমার মনে হচ্ছে পাহাড়ের চেয়ে ভারি! কবুল বলার সাথে সাথেই মামা আলহামদুলিল্লাহ বলে চলে গেলেন। আমি পাথরের মতো বসে রইলাম। যেন প্রচণ্ড বজ্রপাতে আমি পাথর হয়ে গেছি।

বাসার সবাই অনেক চিন্তিত। আমার বুকের ভিতর টিপটিপ করছে। রাহাত বলেছে কনের সাথে তার জরুরি কথা আছে। কনে ঘরে নেয়ার আগেই কনের সাথে কথা বলতে চায় সে। আমি একা একটি রুমে বসে রাহাতের জন্য অপেক্ষা করছি। ভয়ে হাত পা কাপছে আমার। মাথায় কতো কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। রাহাত কি বলবে আমাকে? সে কি জেনে গেছে আমি এ বিয়েতে রাজি ছিলাম না? রাহাতের কি আমাকে পছন্দ নয়? যদি পছন্দ নাই হয় তাহলে বিয়ের আগে বললো না কেন?

রাহাতের মুখের দিকে আমি তাকিয়ে আছি। বলে কি ছেলেটা? এই কি সেই ছেলে যাকে আমি এতোদিন চিনে এসেছি? সে তার ঠোঁটের কোনে দুষ্টামিটা বন্দি রেখে আমার চোখে চোখ রেখে আবার বললো, ‘ঐশী আমি চাই আমরা এখন বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবো আরো চার-পাচ দিন পরে ফিরবো তুমি যাবে আমার সাথে?’

http://youtu.be/i-SQif8xWAo
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১১
৫১টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×