১৪ ঘন্টা আগে ধারণ করা এই ভিডিও দেখে স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে বেইলি রোডের আগুনের সূত্রপাত ভবনটির নিচ তলার রেস্টুরেন্ট থেকেই, যা একদম সিঁড়ির কাছে। যেহেতু ভবনের প্রতিটি তলাতেই রেস্তোরাঁ ছিলো আর সেখানে বিশাল সাইজের রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার ছিলো, সেহেতু সেই অল্প আগুন মুহূর্তেই গোটা ভবনে বড় বড় বিস্ফোরণ আকারে ছড়িয়ে যায়। সিলিন্ডারগুলো সিঁড়িতেও রাখা ছিলো, লিফট দিয়েই মূলত আসা যাওয়া করে সবাই! ভবনে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার এক্সিট বা বাইরের দিকে সিঁড়ি ছিলো না। রান্না করার সিলিন্ডার থাকলেও মেয়াদী অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ছিলো না। ফলে আগুন লাগলে তা নেভানো তো যায়-ইনি, উপরন্তু মানুষ নিচে নেমে আসার পথটাও বন্ধ ছিলো। সপ্তাহান্তে প্রিয়জনকে নিয়ে একটু ভালো খেতে গিয়ে কেউ পুড়ে গ্রিল চিকেন হয়েছে, আবার কেউ দূষিত বাতাসে দমবন্ধ হয়ে মরেছে। মৃতের সংখ্যা আমার মনে হয় ২০০+ হবে, আপাতত কমপক্ষে ৪৪ জন নিশ্চিত।
ভবনের দ্বিতীয় তলায় দেশের সেরাদের একটি কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ। সেখানে লিপ ইয়ার আর বৃহস্পতিবার উপলক্ষ্যে ২০% ছাড়ে বিরিয়ানি খাওয়া যাচ্ছিলো। সেই বিরিয়ানি খেতে সেখানে গিয়েছিলেন ৩০ জনের অধিক ছাত্রী নিয়ে মেয়েদের দেশসেরা কলেজ ভিকারুন্নেসার শিক্ষকরা। রাতেই জেনেছি এক শিক্ষিকা সেখানে তাঁর মেয়েসহ পুড়ে মরেছেন।
দেশসেরা কলেজ আমাদের নটর ডেম কলেজের এক ছোটভাই ছিলো নাহিয়ান নামে, যে খুব ভালো উপস্থাপনা-আবৃত্তি করতো। তুখোড় মেধাবি ছেলেটি দেশসেরা ভার্সিটি বুয়েটের সেরা বিভাগ EEE তে পড়ছিলো। বন্ধুদের কাছে হতাশা নিয়ে বলতো, 'এই দেশ থেকে বেরোতে হবে। না পারলে একদিন আগুনে পুড়ে অথবা সড়ক দুর্ঘটনায় মরতে হবে। তার মৃত্যু আগুনে পুড়েই হয়েছে।
সেখানে জানামতে বুয়েটের আরও এক শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি পুলিশের একজন অতি: ডিআইজির মেয়ে। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে দুই বোনের মধ্যে ছোট মেয়েটি বুয়েটে চান্স পাওয়ায় বাবার সে কী গর্ব! সেই মেয়েটিও পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেনি।
এক ইতালি প্রবাসী ইতালি ফিরে যাওয়ার আগে তার পরিবারের ৪ জনকে নিয়ে কাচ্চি খেতে গিয়েছিলেন কাচ্চি ভাইতে। ৫ জনই পুড়ে ছাই হয়েছেন সেখানে গতকাল!
প্রতিটা জীবনই মূল্যবান। আটকে পড়া হোটেলের কর্মীদের জীবনও মূল্যবান। তবে মেধাবি ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের মানুষ মারা যাওয়ায় অনেকের ধারণা এবার বুঝি প্রশাসনের টনক নড়বে। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও কিছুদিন অভিযান চলবে, কিছুদিন সারোয়ার আলমের মতো ম্যাজিস্ট্রেটদের দেখা যাবে খুব জরিমানা করতে, সিলগালা করতে। তারপর আবার যা তাই, হয়তো সরোয়ার আলমরাও একদিন চুপসে যাবেন!
তারপর আবারও একদিন আগুনে পুড়ে মরবে মানুষ। ৪৪ কেন, ৪৪০ জন মরলেই কী? এই দেশে মানুষের অভাব নাই। 'দ্য টাওয়ারিং ইনফারনো' কিংবা 'ট্রায়াল বাই ফায়ার' দেখেও আমরা কিছু শিখি না। শিখলেও আমাদের এখানে শুধু হাহাকার করা আর লেখা ছাড়া করার কিছু নাই। আর যাদের করার আছে, তাদের এসব দেখার ও ভাবার সময় নাই। তবুও যেখানেই দেখবেন কোনো ভবনে অগ্নিনির্বাপক নেই, জরুরি নির্গমন পথ নেই, তখনই ৯৯৯-এ কল করে জানাবেন। নিজেদেরকেই লড়াই করে বাঁচতে হবে এই মরার দেশে! -- দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২৬