আম্বানির টাকা খরচ নিয়ে আপনার মাথাব্যাথা কেন?
এই মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় ৯ম অবস্থানে আছেন ভারতের তথা এশিয়ার শীর্ষ ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। লিস্টের বাকিদের সম্পদ যখন কমছে, আম্বানির তখন বেড়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি তাঁর অতি আদরের ছোট ছেলে, ছোট থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে যার সুস্থভাবে বাঁচারই কথা ছিলো না, তাঁর বিয়ের আগের অনুষ্ঠানে প্রায় ১২৫০ কোটি রুপি খরচ করছেন দেখে অনেকে বাজে মন্তব্য করছেন, কেউ কেউ এটাকে বিলাসিতাও বলছেন। তাদের জন্য আমার খুব করুণা হয়। এরা মূলত ভারতবিদ্বেষী ও হিন্দুবিদ্বেষী। এরা অবশ্যই বাংলাদেশী মুসলিম। মুসলিম কেউ এত বড়লোক হলে এরাই আবার তাঁকে মাথায় তুলে নাচতো, তাঁর পাদের গন্ধও তাদের আতরের মতো লাগতো।
আম্বানির এই মুহূর্তে গড় সম্পদমূল্য ১১৭.৮ বিলিয়ন ডলার। ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ ১০০ কোটি ডলার। ১ ডলার এখন প্রায় ৮৩ রুপির সমান। তাহলে আপনি হিসাব করেন তাঁর মোট কতটা সম্পদ আছে! সেই সম্পদের সমুদ্র থেকে অতি আদরের ছোট ছেলের বিয়ে-পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানে মাত্র ১২৫০ কোটি রুপি খরচ করে অনুষ্ঠান করে আনন্দ করেছেন, ৭৫ কোটি দিয়ে পপ সম্রাজ্ঞি রিয়ানাকে এনে দেশের মানুষদের বিনোদন দিয়েছেন, ২৬০০ পদের রান্না করে নিজ গ্রামের ধনী-গরিব সবাইকে নিজ হাতে খাইয়েছেন। তুলনা করে দেখেন তাঁর মোট সম্পদের তুলনায় এটা বেশি খরচ কিনা!
মোটেও না। ছেলের বিয়ে তিনি একবারই দেবেন, বারবার না। টাকা তো তিনি বাকি জীবনে আরও অনেক আয় করবেন, খরচও করবেন। এই দিন কি আর আসবে? যে বাবার ১০ লাখ টাকা আছে, তিনিও তো ছেলের বিয়েতে ২ লাখ টাকা খরচ করেন। যার নাই সে ধার করে ছেলের বিয়েতে খরচ করে। সেই হিসাবে আম্বানি মোটেও বেশি খরচ করেননি। তাছাড়া তিনি বৈধপথে তাঁর উপার্জিত অর্থ কোন খাতে কীভাবে খরচ করবেন এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যাপার। এটা তো কালো টাকা নয়, দুর্নীতি করে বা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করা টাকাও নয়। এটা তাঁর বৈধ ব্যবসায় অর্জিত টাকা। এর জন্য তিনি সরকারকে কর দেন, অনেক লোকের কর্মসংস্থান করেছেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছেন, দেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়ে চলেছেন।
মুকেশ আম্বানির বিয়েতে অতিথি হয়ে কারা এসেছেন?
বিশ্বের সেরা ধনীর তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে থাকা ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ স্ত্রীসহ এসেছেন, যার আছে মুকেশের চেয়ে ৫৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। এসেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যিনি মুকেশের চেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলার বেশির মালিক। এসেছেন বলিউডের তিন খানও। তাঁরা একসাথে এক মঞ্চে নেচেছেন, যা বিরল ঘটনা। এটা নিয়েও দেখলাম অনেকে ট্রল করছে। যারা এটা করছে, তারা গরিব। অর্থের দিক দিয়ে তো বটেই, মনের দিক দিয়েও।
শাহরুখ খানের সম্পদ আছে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের। অভিনেতাদের তালিকায় তিনি বিশ্বের ৪র্থ শীর্ষ ধনী। তাঁর ১ বিলিয়নও নাই, যেখানে মুকেশ আম্বানির আছে ১১৭.৮ বিলিয়ন ডলার। মুকেশদের স্পন্সর করা টাকায় তাঁর ফিল্ম হয়, প্রচার ও আয় হয় তাঁর কোম্পানির বিজ্ঞাপনে। তাই স্টেজে উঠে তিনি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেন, মুকেশজি আমাকে না এনে নিজেই অভিনয় জগতে এলে আমি আজকের শাহরুখ খান হতে পারতাম না। এমনকি অমিতাভ বচ্চন এসে মঞ্চে বলেন "আমার অত্যন্ত দুর্দিনে যখন হাতে কোনো টাকা ছিলো না, মুকেশের বাবা ধিরুভাই আম্বানি তখন আমাকে টাকা সেধেছিলেন। আমি সেটা না নিয়ে অভিনয় করে আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি দেখে তিনি গর্ব করে পাশে ডেকে বসাতেন।" বুঝলেন? বলিউডকে বাঁচিয়ে রাখে মুকেশ আম্বানিরা। তাঁর ছেলের বিয়েতে খানেরা নাচবে না তো কী করবে? নাচাটা কি খারাপ? যেখানে রিয়ানা চলে আসে বিনোদন দিতে, সেখানে শাহ রুখ খানরা তো থাকবেনই!
মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত খুবই ভদ্র, বিনয়ী একটা ছেলে। এত বড়লোকের ছেলে হলেও তাঁর মধ্যে একটুও অহংবোধ বা উগ্রমেজাজ নেই। তিনি নিজ হাতে গ্রামের গরিবদের খাওয়ালেন, আবার গ্রামের মহিলাদের হাত থেকে ভাঁজ করে আনা একশ রুপির নোটটাও মাথা নত করে নিলেন, যা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তিনি বড়লোকের বখে যাওয়া পুত্র নন যারা ফুটপাতে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত গরিব মারে। বরং তিনি অত্যন্ত মিশুক সমাজসেবক, পশুপ্রেমীও। আহত হাতিদের এনে তিনি সেবা করেন, নিজ হাতে খাওয়ান। একটা হাসপাতাল খুলেছেন নিজের গ্রাম গুজরাটের জামনগরে 'এলিফ্যান্ট হসপিটাল' নামে। তাঁর শরীরের আকার দেখেও হাসার কিছু নেই। তিনি অনেক অসুখে জর্জরিত বলেই দেখতে অমন। তাছাড়া বংশগত ব্যাপারও আছে।
কাজেই, এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে হাসাহাসির কিছু নেই। এখনও আসল বিয়ে তো পড়েই আছে! এখনই যদি এত জ্বলে, তখন কী করবেন? আম্বানিদের উচিত আমাদেরকেও বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া। তাহলে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ হবে। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয়ই এই দেশে আসলে শুধু খাওয়াতে আসবে না, হয়তো বৈধপথে এদেশে ব্যবসা করতে আসতে চাইবে, তাঁদের উন্নতমানের সেবা পণ্য ইত্যাদি নিয়ে আসবে। সেটা হলে আরও ভালো হয়। অনেক বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রচুর বেকারের কর্মসংস্থান হবে। সেই আশা রেখে আপাতত বিয়ের জন্য শুভকামনা জানিয়ে রাখি অনন্ত আম্বানিকে। জয় বাংলা। লেখা- দেব দুলাল গুহ।
#ambaniwedding #AmbaniPreWedding #ambani #AnantRadhikaWedding #anantambani #radhikamerchant #jamnagar #RelianceIndustriesLimited #India #Bangladesh
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:১৪