somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্ময়ের ভুলের মাশুল যেন সকল হিন্দুদের দিতে না হয়।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও তাঁর অনুসারীরা আবারও ভুল করলেন। যার মাশুল এখন সব হিন্দুদের দিতে হচ্ছে। ফাঁদে পা দিয়ে মা--র্ডার কেসের আসামী, মন্দিরে আগুন, দেশত্যাগ ইত্যাদির শিকার হতে হচ্ছে। আরেকটু সচেতন ও সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করি।

প্রথম ভুলটা তারা করেছিলেন চিটাগাংয়ের সমাবেশে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে বা অন্য কেউ উড়িয়ে থাকলে তা দেখেও নিচে না নামিয়ে। আপনি সমাবেশের প্রধান হলে সমাবেশের দায় আপনাকে নিতে হবে-- এটাই নিয়ম।

দ্বিতীয় ভুলটি ছিলো-- এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলেই ফেসবুকে এসে বা মিডিয়ার সামনে এ নিয়ে দু:খপ্রকাশ না করা (আমি জানি না করেছিলেন কিনা কেউ)।

৩য় ভুলটা ছিলো এ নিয়ে মামলা হলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে আগাম জামিন না নেওয়া। ব্যাক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না, তার প্রমাণ এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইস্কন থেকে বহিষ্কার করে একা করে দেওয়া।

৪র্থ ভুল-- একইভাবে অন্য একটি গোষ্ঠীও জাতীয় পতাকার উপরে কালো পতাকা ও অন্য দেশের পতাকা রেখে থাকলে তখনই প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদ না জানানো বা মামলা না দেওয়া। তখন এই কাজটা করলে এখন শুধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হয়তো গ্রেপ্তার করা যেত না। একই মামলা হওয়ার পরেও অন্যদেরকেও অ্যারেস্ট না করলে তখন প্রতিবাদ করলে সেটা যুক্তিযুক্ত হতো।

৫ম ভুল-- রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আর সমাবেশ-মিটিং ইত্যাদি করে বেড়ানো।

৬ষ্ঠ ভুল-- ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেনে ডিবি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ না করে কিঞ্চিত উত্তেজিত বাক্যালাপ করা, এভাবে অ্যারেস্ট করতে পারে কিনা এই প্রশ্ন তোলা ইত্যাদি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সম্পর্কে কি তাঁদের কারোরই সম্যক ধারণা নাই? আগাম জামিন না নিয়ে থাকলে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীই শুধু নয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ধারাতে অগ্রিম নোটিশ না দিয়ে গ্রেপ্তার করা যায়। তবে অনেকে বলছেন ডিবি হেফাজতে তাঁকে যাতে নির্মম নির্যাতন করা না হয়, তাই তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, লোক জড়ো করে শক্তি প্রদর্শন করেছেন যে তাঁর কিছু হলে প্রতিবাদ করার লোক আছে।

৭ম ভুল-- চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের খবর শুনেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় উগ্রতা দেখানো, উগ্র প্রতিবাদ করা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে যে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তা তাঁদেরকে জানানো হয়েছিলো। বাইরে থেকে খাবার ভেতরে নেওয়ার অনুমতি পুলিশ দিতে বাধ্য নয়। কে জানে প্রসাদের নাম করে যদি কেউ বিষ মিশিয়ে খাইয়ে তাঁকে ডিবি হেফাজতে মেরে দায় সরকারের উপর চাপাতো? তবে, মুসলিম পুলিশ প্রসাদ খেতে না চাইলে হিন্দু কোনো পুলিশকে দিয়ে উক্ত প্রসাদ ক্ষতিকর কিনা যাচাই করে তারপর তাঁকে খেতে দেওয়া যেত, যেহেতু তিনি প্রসাদ ছাড়া কিছু খান না। তাঁর এই ধর্মাচরণকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।

৮ম ভুল-- ধরার পরের দিনই কোর্টে চালান করা এবং প্রসাদের ব্যবস্থা করার আবেদন গ্রহণ করার পরেও আদালত প্রাঙ্গনে ৩ ঘন্টা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এখানে আগাম জামিন না থাকলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জামিন পাওয়া মুশকিল। জামিন না দিয়ে ছেড়ে দিলে যদি আদালত থেকে বের হলে প্রকাশ্যে চিন্ময় দাসকে কেউ হামলা করে বসে, তাহলে দাঙ্গা অনিবার্য। কিন্তু জামিন দিয়ে তাঁকে নিরাপদ স্থানেও পৌঁছে দেওয়া যেত। বিজ্ঞ বিচারক যেটা উচিত ও আইনানুগ বলে মনে করেছেন, করেছেন। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিডিয়ার লাইভে মিডল ফিঙ্গার দেখানো, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ইত্যাদি কাজগুলো করে প্রতিপক্ষকেই বরং সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে জ*ঙ্গী বলার। দেখলাম আদালতের বাইরে 'নারায়ে তাকবির' বনাম 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনিতে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, যা কাম্য নয়। এটা এখন 'দাঙ্গায়' পরিণত না হলেই হয়। তবে যেহেতু দেশের সব হিন্দুই ইস্কনের সদস্য নয় ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ভক্ত নয়, আবার ইস্কন থেকেও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাই আশা করা যায় ব্যাপক পরিসরে হামলা বা তথাকথিত দাঙ্গার ঘটনা ঘটবে না।

হ্যাঁ, শব্দটা 'দাঙ্গা'ই লিখবে অনেক মিডিয়া ও অনেকে। কোনো হিন্দু আক্রান্ত হলে এতোদিন বলা যেত হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছে বা হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে। এখন হিন্দুদের এইসব শ্লোগান, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, আদালতে রাস্তা দখলে নিয়ে পুলিশের কাজে বাধাদান ইত্যাদি দেখিয়ে ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের কিছু বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে একটি পক্ষ বলার সুযোগ পাবে যে এখানে দাঙ্গা বেঁধেছে। রাতের আঁধারে হিন্দুদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার একটা সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হলো তাদের হাতে! আপনারা আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলেন না? আপনাদের প্রভুকে তো মেরে ফেলা হয়নি! আমার বিশ্বাস হবেও না। কারণ এর ফল কী হতে পারে তা সবাই জানে।

কিন্তু আমি বুঝি না, এখনও আমেরিকায় বাইডেন সরকার আছে, ট্রাম্প এখনও ক্ষমতায় আসেননি, তুলসি গ্যাবার্ড এখনও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান হয়ে যাননি, ভারত সরাসরি একাত্তরের মতো বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সর্বোচ্চ নিন্দাজ্ঞাপন, ভিসা স্যাংশান জারি, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি ইত্যাদি করতে পারে-- এটুকু কি তাঁরা বোঝেন না? তাঁরা কেন রিয়্যাক্ট করতে গেলেন? তাঁরা কেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ না করে মিডল ফিঙ্গার দেখালেন? দেশের পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো না। সবাই জানে কারা এখন মাঠ পর্যায়ে ক্ষমতাধর, জেল থেকে কারা মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। তবু কেন? রাতের অন্ধকারে প্রতিবাদকারীদের মারলে কি সরাসরি বাইরের থেকে কেউ এসে বাঁচাবে?

গতকাল মোল্লা কলেজের অবস্থা দেখেন নাই আপনারা? সব শেষ করে দেওয়ার পর বাহিনী গিয়ে উপস্থিত। আপনাদের ও আপনাদের কারণে আমাদের অবস্থাও তেমনটা না হোক-- এটাই কামনা করি। সম্প্রীতির বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। পাশাপাশি ৮ দফার সবগুলোর সাথে একমত না হলেও মনেপ্রাণে চাই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস যেন ন্যায়বিচার পান। সব ছেড়ে যারা সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ও সৎ থেকে নীতি-আদর্শ বজায় রেখে সকল প্রাণীর কল্যাণ কামনায় শুধু ঈশ্বরের আরাধনা করেন, তাঁদেরকে ঈশ্বর স্বয়ং রক্ষা করেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীরামের প্রিয় হয়ে থাকেন, তবে তাঁকে তাঁরাই রক্ষা করবেন; দুনিয়ার কোনো আদালত নাই তাঁর সাথে বেইনসাফি করে। তাঁর সুস্থতা ও ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির প্রত্যাশায় থাকলাম। দেব দুলাল গুহ।

যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।
বাঁচার মতো বাঁচতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×