তিন চার দিন আগে সত্যেন সেনের 'রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ' নামের একটা উপন্যাস পড়লাম।এর আগে উদীচির প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের 'মশলার যুদ্ধ' এবং 'ভোরের বিহঙ্গী' বই দু'টো পড়েছিলাম।'ভোরের বিহঙ্গী' উপন্যাসটা আমার দারুণ লেগেছিল।ত্রিভূজ প্রেমের উপন্যাস ছিল সেটা।নায়কের নাম অনুপম আর নায়িকা তমালী এবং অশোকা।২০১৫/১৬ সালে পড়া এই উপন্যাসের শেষ ছত্রটা আমায় এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়,এটা ছিল তমালী কে লেখা অনুপমের চিঠি।'ভোরের বিহঙ্গী' পড়ে আমার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের 'প্রাগঐতিহাসিক' গল্পের ছায়া পেয়েছিলাম।
'মশলার যুদ্ধ' বইটা পড়েছিলাম পিডিএফে।আকাশদের ছাদে বসে।পরিতাপের বিষয়, ছয় সাত বছর আগে পড়া সেই বইয়ের কিছুই এখন মনে নেই।
দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আবার সত্যেন সেন ধরলাম।'রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ' উপন্যাসের নায়কের নাম রুনু।কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত রুনু রাজবন্দি হয়ে জেল খাটছে।ততোদিনে দেশ ভাগ হয়ে গেছে।প্রেমিকা বিভা স্কুল মাস্টার।যার কিছুদিন পরেই চাকরী চলে যাবে ,রুনুর সাথে আলাপ থাকার কারণে।জেলে রুনুর সাথে আরো আছে কাশেম ,কাদের,মহর্ষি (মনসুর), বরদা বাবু আরো অনেকে।জেলের বাইরে রয়েছে বিভা, মহর্ষির স্ত্রী সালেহা,অনিমেষ।আরো অনেক চরিত্র রয়েছে,চেহারা রয়েছে ,সেই সব চেহারার পেছনের গল্পও রয়েছে।এখানে আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে মনসুর চরিত্রটাকে।সারাক্ষণ বইয়ের দুনিয়ার পড়ে থেকে বলে তার সব সহযোদ্ধারা তাকে মহর্ষি নাম দিয়েছে।মহর্ষি রাগ করলে ইংরেজি বলা শুরু করে, প্রতি মাসে তার স্ত্রী তাকে বইয়ের জোগান দেয়।মহর্ষি নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়েও খুব সচেতন।বই পড়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ পারে না বলে খানিক অনুতাপেও ভোগে।সেসব আর মনে নেই এখন। এই উপন্যাসটা আমার উপভোগ্য লেগেছে চিঠির জন্যে।পুরো উপন্যাসটাই যেন টুকরো টুকরো চিঠি দাস্তান।
আমাদের দেশে সত্যেন সেনের পঠন -পাঠন শুধুই নিদিষ্ট কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।ভগবান জানে সেসব সংগঠনের কয়জন সত্যেন সেন পড়েছে! তবুও সত্যেন সেন কিন্তু বেঁচে আছেন।সত্যেন সেনের মতন মানুষেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না,তবু তিনি বেঁচে আছেন।বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।আমার মতন কিছু অভাজনের অন্ধ চোখে আলো হয়ে !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৯