somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তঃজালের অন্তরালে!

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব একটা মনে পড়ছে না কবে কখন কোথায় প্রথম নেটে হাতে খড়ি হয়েছিলো, তবে এইটুক মনে আছে নেট ব্যবহার করার প্রথম প্রথম অভিজ্ঞতাগুলো মোটেও সুখকর ছিলো না। নেটের 'ন' না বুঝেই নেটে ঝাঁপিয়ে পড়ি, এর খেসারত অবশ্য পদে পদে কম দিতে হয়নি, এখনো নানা ভাবে দিয়ে যাচ্ছি। নেট মানে হচ্ছে জাল! জালের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটা হচ্ছে নকল! তবে আমরা যে নেট নামক জাল ব্যবহার করছি তাকে সরাসরি নকল জাল না বলে ধূম্রজাল বলা যথাপোযুক্ত হবে বলে মনে করি। নেট নামক ধূম্রজালে পড়ে এ যাবত কতজন যে নাজেহাল হয়েছেন তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া অসম্ভব। এই ধূম্রজালের রঙ্গীন ধোঁয়ায় চেনা কঠিন কে আসল আর কে নকল!! তবুও এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন, প্রতিদিন, ভাবনাহীন কিংবা ভাবনায় লীন!

প্রথম যখন মোবাইল ব্যবহার শুরু করি তখন আমি যেন আমাকেই চিনতে পারছিলাম না, এ যেন নতুন আমি! আমি সাধারণ কেউ না, কারণ আমার কাছে একটা মোবাইল আছে! সেসময় মোবাইলধারী যে কারো কদরই আলাদা ছিলো, বাব্বাহ! অল্প বিস্তর কারো সাথে দেখা হলে বা টুকটাক কথা হলেই কোন এক ফাঁকে চেষ্টা করতাম নিজের মোবাইল নাম্বারটা তার হাতে ধরিয়ে দিতে, কিংবা কোন বন্ধুর সাথে দেখা হলে সোজা বলেই দিতাম দুস্ত এখন ব্যস্ত আছি মোবাইলে কল দিস কথা কমুনে! যদিও আমি ভালো করেই জানতাম তার মাইল দুই আশে পাশে কোন মোবাইল নেই!! ভাবটাই আলাদা!! অবশ্য মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার সাথে সাথে এই ভাব বাষ্পীয় হয়ে উড়ে গেছে! এখন যেন মোবাইল যন্ত্রটা আর যন্ত্র না, যন্ত্রণা হয়ে গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে!!

মোবাইলে ফোনের পর দ্বিতীয় বার ভাব মারার সুযোগ আসে যখন প্রথম একটা ইমেল একাউন্টের মালিক হই! তখন নামের সাথে পদবীর মতোই লেপ্টে থাকতো ই-মেইল এড্রেস! কোথাও সই করছি তখন আবশ্যকীয় ভাবে তারিখের পরিবর্তে ইমেল এড্রেসটা বসিয়ে দিতাম! তখন অনেক বাঘা বাঘা অফিসারও চশমার ভারি কাঁচের উপর দিয়ে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থাকতো, হয়তো তখন তিনি নিজেকেই ভর্ৎসনা করে মনে মনে বলতে থাকতেন এই এতোটুকুন একটা পুচকে ছেলেও এই বয়সে একটা ইমেল এড্রেসের মালিক বনে গেছে! আর আমি এই চেয়ারে বসে বসে বা... ছিঁ...ছি! ছিঃ!! তখন উনাদের বিস্মিত চেহারা দেখে অন্যরকম এক আনন্দ পেতাম আহা! আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!!

না না, বাতাস যখন উল্টো বইতে থাকে তখন আর আনন্দ থাকেনা! নিরানন্দের হেঁচকা টানে সব আনন্দ পঙ্গু হয়ে যায়! আমাদের এই আন্তঃজালে শুধু হাওয়া আর হাওয়া! কোন হাওয়া দুষ্টের আর কোন হাওয়া তুষ্টের তার বুঝা বেশ শক্ত! আন্তঃজালের হাওয়ার ঠ্যালায় হঠাৎ করেই একদিন আমার ইমেল একাউন্টে একটা মেইল এলো যার সারমর্ম হলো কোন এক লটারীতে রেন্ডমলী আমার ইমেল এড্রেস নাকি কয়েক মিলিয়ন ডলার জিতে গেছে! আমাকে আর পায় কে! সাথে সাথে ক্যালকুলেটর নিয়ে হিসেব করতে শুরু করলাম বাংলাদেশী টাকায় তা কত হবে! কিন্তু হায় আমার ৮ ডিজিটের ক্যালকুলেটর হিসেব করতে পারেনা বার বার এরর দেখায়! অপারগতা প্রকাশ করে! কারণ বাংলাদেশী টাকায় হিসেবটা যে ৮ অংক ছাড়িয়ে গেছে!! তখন আমার ইচ্ছে করছিলো বাজার থেকে কয়েক দিস্তে কাগজ এনে হিসেব কষতে বসি এই এতো টাকা দিয়ে কি কি করবো! আমার বহু দিনের ইচ্ছে একটা বি.এম.ডাব্লিউ কেনার! সাথে সাথে এক প্রিয় বন্ধুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম "দুস্ত, বল তো বাংলাদেশের কোথায় বি.এম.ডাব্লিউ কিনতে পাওয়া যায়?" ওর সোজা সাপ্টা উত্তর, পাবনার হেমায়েত পুরে! আমি তখন মনে মনে বলি, ব্যাটা আর ক'টা দিন সবুর কর ডলার গুলো হাতে পেয়ে নিই তারপর আমার বি.এম.ডাব্লিউ'র টায়ারের ঠ্যালায় তুই নিজেই হেমায়েত পুরে দৌড় লাগাবি!

এবার আমার জিতে যাওয়া ডলার নেয়ার পালা! উত্তেজনায় আমার সারা শরীর কাঁপছে কিন্তু কাউকে কিছু বলছিনা, এই মুহুর্তে কাউকে কিছু বলা ঠিক হবে না। মনে মনে ভাবতে থাকলাম, আচ্ছা আমাদের বাড়িটা কি একটু বেশি পুরোনো হয়ে গেছে? আচ্ছা নতুন একটা বাড়ি কিনে ফেললে কেমন হয়? কিংবা বাড়ির এই পুরোনো ঘরগুলো ভেঙ্গে বিশাল সাইজের একটা দোতালা বাড়ি বানালে কেমন হয়? খারাপ হবে না মোটেও। বাড়ির নাম কি দেয়া যায়? দখিন হাওয়া? না, আমার মাথা এলোমেলো হয়ে আসছে, একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার! হঠাৎ করেই এতোগুলো টাকার মালিক হয়ে যাওয়া, মাথা তো একটু আধটু এলোমেলো হবেই!

বিশ্রাম শেষে অক্সফোর্ড ডিকশনারী নিয়ে বসলাম, খুব সাবধানে আমাকে রিপ্লাই দিতে হবে! সুন্দর সুন্দর কিছু শব্দ টুকে নিলাম, ওরা বুঝুক টাকাটা কোন মুর্খের হাতে যায়নি, একজন সুশিক্ষিত মানুষের হাতে যাবে, যে শুধু নিজের জন্যই খরচ করবে না, বরং নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে কিছুটা হলেও সমাজ সেবার কাজে লাগাবে! প্রায় তিন ঘন্টা চিন্তা ভাবনা করে মাত্র কয়েক লাইনের একটা রিপ্লাই দেয়া হয়ে গেলো! সাথে বাড়ি ঘরের পুরো ঠিকানা! নিশ্চয় ওরা চেক পাঠাবে! বাড়ির ঠিকানা না দিলে ওরা চেক পাঠাবে কিভাবে? এবার উত্তর পাওয়ার পালা। ওমা! যেখানে আমাকে রিপ্লাই দিতে তিন ঘন্টা চিন্তা ভাবনা করতে হলো সেখানে উত্তর এলো তিন মিনিটেরও কম সময়ে! না, ওরা আমার বাড়ির ঠিকানায় কোন চেক পাঠাবে না! হয় আমাকে সশরীরে আমেরিকা গিয়ে টাকা নিয়ে আসতে হবে না হয় ওরা আমার ব্যাংক একাউন্টে টাকাটা পাঠিয়ে দেবে! কিন্তু আম্রিকা যাওয়া কি আর অত সোজা? উড়োজাহাজের ভাড়া'ই লাগবে কম করে দু'লাখ! অবশ্য লটারীর টাকাটা হাতে পেলে আম্রিকা নয় একটা বিমান ভাড়া করে সোজা মঙ্গল গ্রহে যাওয়া যেতে পারে! কিন্তু আম্রিকা যাওয়ার বিমান ভাড়া পেলেই তো আর হচ্ছে না, ভিসাও যে লাগবে!! সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাংক মারফত টাকাটা আনাবো।

এবার উত্তর এলো, ব্যাংক মারফত টাকাটা আনতে হলে কিছু খরচা পাতি লাগবে। বেশি কিছু না, নাম মাত্র কিছু ট্যাক্স আর কিছু চার্জ সব মিলিয়ে মাত্র ১ হাজার ডলার!! রিপ্লাই পেয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ! ওদের কাছে অনলি ওয়ান থাউজেন্ড ডলার হলেও আমাদের কাছে তা পচাত্তর হাজার টাকা!! এতো টাকা এখন কোথায় পাই? কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। অবশেষে আমার এক লন্ডন প্রবাসী কাজিনের দ্বারস্ত হলাম। পুরো বিষয়টা শুনার পর সে ফিক করে হেসে দিলো! সে কোন ধানাই পানাই না করে সোজা বলে দিলো, ভাইয়া ওগুলো হচ্ছে ভূয়া! সে আমাকে নানান ভাবে বুঝালো যে এগুলো হচ্ছে এক ধরনের প্রতারণা, তাদের আসল উদেশ্যে হলো মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া, যেমন করে আমাকে প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছে ১ হাজার ডলার চাওয়া হয়েছে! তখন সে আমাকে একটা বুদ্ধি দিলো, আমি যেন তাদেরকে একটা রিপ্লাই দিয়ে বলি আমি যে টাকা (ডলার) জিতেছি তার মধ্য থেকে তারা যেন ১মিলিয়ন ডলার কেটে (১ হাজার ডলারের ট্যাক্স ও চার্জের পরিবর্তে) বাকি টাকাগুলো আমার একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়!

হা হা হা, আজ প্রায় দশ বছর হতে চললো এখনো ওরা আর কোন রিপ্লাই দেয়নি সেই মেইলের!!! ওরা আমাকে আর কোন রিপ্লাই না দিলেও অনেকেই দিয়েছে, কেউ কেউ দিয়েছে আমি বিলিয়ন ডলার জিতেছি! কেউবা বলেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক মারা গেছে এখন তারা এতো টাকা দিয়ে কি করবে তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেই টাকা কোন গরীব দেশে পাঠিয়ে দেবে, গরীব দেশে পাঠানোর জন্য আমার সাহায্য লাগবে, তারা আমার একাউন্টে সব টাকা পাঠিয়ে দিতে চায়! আমি সেসব মেল পড়ি আর হাসি! আর কেউ কেউ হয়তো কাঁদে!

সময়ের সাথে সাথে প্রতারণার ধরণও পাল্টেছে, এখন সহসা কেউ আর এমন মেইল বিশ্বাস করে না। আন্তঃজালের প্রতারক দল এখন সমাজের বিত্তবান ও সম্মানীদের টার্গেট করে তাদেরকে নানান রকম ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কাড়ে! আন্তঃজালের অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটছে প্রতিনিয়ত তার অনেক কিছু আমি বা আমরা জানিনা, তাতে অনেকেই হেয় প্রতিপন্ন হওয়া ছাড়াও অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কেউবা অসাবধানে নৈতিক ভাবে নাজেহাল হয়েছেন পরিচিত মানুষের কাছে, তাই আমাদের আরোও সাবধান হওয়া উচিত। আন্তঃজালে কেবল আপনার সাবধানতাই পারে আপনার সম্ভ্রম রক্ষা করতে! অসাবধানী হলেই বিপদ! এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পরিশেষে প্রিয় সব্বাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×