somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাবিহার মন

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: সংগৃহী

নাবিহার মনটা আজকে একটু খারাপ। ওর মন ইদানীং একটু বেশীই খারাপ হয়ে যায় হুটহাট। তবে আজকে একটু অন্যরকম খারাপ। ব্যাপারটা শুরু সেই সকাল থেকে। শুক্রবার সকাল। একটু যে আরাম করে ঘুমাবে তার উপায় নাই। ক্লাস থাকে। আজকে ছিল আবার পরীক্ষা। ক্লাশ টেস্ট। কাল রাত জেগে জেগে যা পড়েছিল তা থেকে কিছু আসেনি। লিখতে গিয়ে দেখল প্রশ্নের উত্তর কোনটাই তার পুরো মনে নাই। কোনরকমে পরীক্ষাটা দিল এবং ক্লাশে সবার চেয়ে কম মার্কস পেল। তার সমান শুধু আর একজনই পেয়েছে। আরাফাত। আরাফাত ছেলেটার এসব নিয়ে মাথাব্যথা নাই। সে ক্লাশে আসে কম। কি সব লোকাল রাজনীতি-ফাজনীতি করে। সে আসে শুধু পাশ করার জন্য। এটা স্যাররাও জানেন। এজন্য তাকে কেউ ঘাটায়ও না। কিন্তু নাবিহার হয়েছে সমস্যা । সে খুব সিলি কিছু ভুল করেছে। মার্কস কম পেয়েছে সেজন্য না যতটা তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে অন্য কারণে। স্যার দাঁড় করিয়ে পুরো ক্লাশের সামনে তাকে নিয়ে মজা করেছেন। বললেন, ‘নাবিহা এরপর থেকে শুক্রবার এলে তুমি আর পরীক্ষা দিওনা। কি দরকার কষ্ট করে ছুটির দিনে এসে এরকম মার্কস নিয়ে বাসায় যাবার। তার চেয়ে বাসায় থেকে ঘুমাবা। ঘুমিয়ে এনার্জী সেভ করবা। ওয়ার্ল্ড-এ সবাই এনার্জী ওয়েস্ট করছে। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।‘ স্যারের কথা শুনে সবাই যেন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। কি এমন আহামরি রসিকতা করেছে যে সবাইকে এমন হাসতে হবে। আশ্চর্য! সবচেয়ে বেশী হাসছে এই রাফা মেয়েটা। ইচ্ছে করে গা দুলিয়ে দুলিয়ে হাসছিল তার দিকে তাকিয়ে। নাবিহার ইচ্ছা করছিল উঠে গিয়ে কষে একটা থাপ্পর দিতে। মেয়েটা তাকে খুব হিংসা করে। কি কারণে সেটা নাবিহা বুঝে না। প্রায়ই এসে আলগা খাতির জমানোর ভান করবে। ক্লাশের ব্রেকে বলবে ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে চা সমুচা খেতে কিংবা লাইব্ররীতে গিয়ে গ্রুপস্টাডি করতে। এমন রাগ লাগে! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নাবিহা না বলতে পারেনা। বিরক্তি নিয়ে রাফার সাথে লাইব্রেরীতে যায়, ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে আড্ডা দেয়। আড্ডা শেষে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাসায় আসে। স্যারের কথা শেষ হবার আগেই সামনে আর আশেপাশের সব কেমন ঝাপসা হয়ে আসে নাবিহার। ছি ছি! সবার সামনে কেঁদে ফেললে কি কেলেংকারীটাই না হবে! কোনরকমে নিচু হয়ে বাম পায়ের হিলটা ঠিক করার ভান করে চোখ মুছে ফেলে সে। সেটা করতে গিয়ে আবার হাতে কাজল লেগে যায় । কি একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! এরকম কিছু হলে নাবিহা সরাসরি বাসায় চলে আসে। অন্যদিন হলে তা-ই করতো। কিন্তু আজকে আবার আদিয়ার জন্মদিন। ক্লাশে শেষে দুপুরে আদিয়ার বাসায় যেতেই হবে। বাসায় খেয়ে দেয়ে ওরা বিকেলে আরও কয়েকজন মিলে ঘুরতে বের হবে এমনটাই প্লান। না হলে আদিয়া আজ পুরোদিন তাকে ফোন দিবে। না ধরলে বাসায় ফোন দিবে। আম্মুকে বলবে নাবিহার মন খারাপ কেন। আম্মু তখন জিজ্ঞেশ করবে কি হয়েছে। ঠিকমত না বললে তখন আব্বুকে বলবে। আব্বু আবার এসে সান্তনা দিবে। উফ! এতসব ঝামেলার কথা চিন্তা করে নাবিহা ঠিক করে সে আদিয়ার বাসায় যাবে। গিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারে চলে আসবে। আদিয়া যে পরিমান কথা বলে! কারও মন খারাপ থাকলে সে সেটা ভুলে যায় আদিয়ার কথার চোটে। তবুও সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড। এজন্য যেতে হবে। দুপুরে আদিয়াদের বাসায় গিয়ে তার আরও খারাপ লাগল। মন খারাপের সাথে শুরু হলো মেজাজ খারাপ লাগা। আদিয়া ক্রমাগত কথা বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে। আর পিচ্চি বাচ্চাদের মত আহ্লাদ করছে। ওর বয়সী একটা মেয়ের এরকম আহ্লাদ মানায় না এটা আদিয়া না বুঝলেও তার বাবা-মায়ের তো বুঝা উচিত। কি আশ্চর্য! সবাই যেন অবুঝ হয়ে গেছে আজকে। তবে আদিয়াদের বাসায় যাবার আগে কিছুক্ষণের জন্য তার মন ভাল হয়েছিল। সে গিয়েছিল আদিয়ার জন্য একটা গিফট কিনতে। এরকম কারও জন্য গিফট কিনতে তার খুব ভাল লাগে। আজকেও লাগছিল। যমুনা থেকে আদিয়ার জন্য একটা লিপস্টিক কিনল। আদিয়া সারাদিন সেলফি তালে। এছাড়াও লিপস্টিক তার খুব পছন্দ। লাল রঙের মারলন ব্রান্ডের একটা লিপস্টিক কিনল। আর কিছু চকলেট। নাবিহার ইচ্ছা করছিল আর কিছুক্ষণ ঘুরতে মার্কেটে। কিন্তু আদিয়ার ফোনের জ্বালায় আর পারল না। এই মেয়েটার নির্ঘাৎ মাথায় সমস্যা আছে। শুধু তার না। তার পুরো ফ্যামিলির। জন্মদিনের প্রোগ্রামে তেমন খুব বেশী মানুষ আসেনি। তবু মনে হচ্ছিল বিয়েবাড়ি। নাবিহা পুরো সময়টা হাসি হাসি মুখ করে থেকে অল্প একটু পেস্ট্রি খেয়ে চলে এসেছে। আদিয়াকে হাজারটা মিথ্যা বলে বুঝিয়ে তারপর আসতে হয়েছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। নিজের রুমে ঢুকে যেন একটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সে। এই রুমটাই দুনিয়াতে তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। রুমের সাথে লাগানো বারান্দা। ওখানে খাঁচাতে তার দুইটা পোষা পাখি আছে। এরা লাভবার্ড টাইপ। সারাদিন মনে হয় খুনসুটি লেগে থাকে তাদের। অবশ্য এখন মনে হয় সম্পর্ক ভাল। চিল্লাফাল্লা করছেনা। লাভবার্ড গুলো কিনে দিয়েছে ভাইয়া। দুই বছর আগে তার জন্মদিনে। কাঁটাবন থেকে কিনে এনেছিল তাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে। তার আগেই বুয়া এসে তাকে সব বলে দিল। বরং রাতে বার্থডে উইশের সময় ভাইয়া গিফট খুঁজে না পেয়ে হাসফাঁস করছিল। তখন নাবিহা উল্টা তাকে সারপ্রাইজ দিতে বারান্দায় নিয়ে যায়। ভাইয়ার তখনকার চেহারাটা মনে পড়লে আজও হাসি পায়। এই ভাইয়াটা এত বোকা! বোকা মানুষরা সম্ভবত মানুষকে বেশী ভালবাসতে জানে। কারণ তারা কোন বিনিময় আশা করে ভালবাসেনা। নাবিহার মনে হল তার মাথা ধরেছে। আস্তে আস্তে বাড়ছে। চিনচিন করে বামপাশটাতে।বাইরে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা নামছে। তবে আকাশ যেন একটু বেশীই কাল। মেঘ করেছে কি?

নাবিহার ঘুম ভাঙ্গলো ঠান্ডা বাতাস লেগে। বৃষ্টি শেষে যেরকম বাতাস হয় ওইরকম। রাত ১১ টা। তার মন ভাল হয়নি। মাঝে আম্মু একবার এসে ডেকে গেছে সম্ভবত। অবেলায় ঘুমাচ্ছে কেন জিজ্ঞেস করছিল। খেতেও ডেকেছিল মনে হয় একবার। নাবিহা শুধু আধঘুমে বলেছিল পরীক্ষার জন্য কাল ঘুম হয়নি বা এরকম কিছু; ঠিক মনে নেই। এরপর আর কেউ বিরক্ত করেনি। এর মাঝে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছে সে। দেখে যে সে পুরো মাথায় মেহেদী লাগিয়ে বসে আছে। মেহেদীর রঙ তার চুল বেয়ে বেয়ে গায়ে পড়ছে। হঠাৎ মনে পড়ল একটু পর তার পরীক্ষা। তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে ভার্সিটি চলে গেল। ভুলে গেল মেহেদী উঠাতে। এটা নিয়ে পুরো ভার্সিটিতে কি হাসাহাসি সবার! নাবিহা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসল।

নাবিহা গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। খোলা চুল,উস্কখুস্ক চেহারা । অদ্ভুত লাগছে তাকে। চোখের একপাশে জলের একটা চিকন রেখার দাগ। শুকিয়ে গেছে। তার মানে ঘুমের মাঝে সে কেঁদেছে। কিন্তু কাঁদবে কেন। খুব আহামরি মন খারাপ হবার মত তো কিছু ঘটেনি। পরীক্ষাটাই যা একটু খারাপ হয়েছে। তাহলে এমন লাগবে কেন। আজকে লাভবার্ড গুলোও চুপ। এদেরও কি মন খারাপ। নাকি এরা ঝগড়া করেছে কে জানে! খাঁচার কাছে গেল সে। ছেলে আর মেয়ে পাখি দুটো দুইদিকে ফিরে আছে। কিন্তু দুজনেই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। এদের দুইবেলা খাবার দেয়া হয়। সেগুলোও পড়ে আছে। কি হয়েছে? নাকি আজকে বৃষ্টি হয়েছে বলে এদের ঠান্ডা লেগে গেছে। অবশ্য আকাশে থাকা পাখিদের কি এরকম ঠান্ডা লাগে? দেখা গেল যে ঠান্ডা লেগে সর্দি হয়ে গেল। হতেই পারে। পাখিদের সর্দি লাগা কি অসম্ভব নাকি? তবে কোন একটা প্রাণীর ক্ষেত্রে সেটা নাকি আসলেই অসম্ভব। কোথায় যেন পড়েছে সে। কার, কোন প্রানীর?....ধুর! কি সব ভাবছে সে। এদের ঝগড়া হয়েছে। এজন্য কিছু খাচ্ছেনা; কথাও বলছেনা। কাল সকাল থেকেই আবার চেঁচামেচি করে বাসা মাথায় তুলবে। ভাবতে ভাবতে সে গেল শাওয়ার নিতে। একটা হট শাওয়ার নিলে ফ্রেশ লাগবে। মন খারাপও কমবে হয়ত একটু।

টাওয়েল হাতে নিতেই চট করে কিছু একটা মাথায় এল নাবিহার। এমন কিছু একটা যা এতদিন সে ভাবেইনি। সে দৌঁড়ে গেল বারান্দায় । খাঁচার কাছে। লাভবার্ড গুলোকে বের করে আনল। উত্তেজনায় তার বুক কাঁপছে। পাখি দুটো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নাবিহার দিকে।

অনেক দুরের একটা ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় নাবিহা দেখতে পেল দুটো পাখি উড়ে যাচ্ছে। ডানা ঝাপটে ক্লান্তিহীন। আচ্ছা, পাখিরা কি মানুষের মত হাত ধরে উড়তে পারে? পারলে নিশ্চয়ই লাভবার্ড গুলো সেভাবেই উড়ত। নাবিহা ঝাপসা চোখে আর দেখতে পেল না ওদেরকে।

তার মন ভাল হয়ে গেছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×