somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্প: সনা বাথ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বছর দুয়েক আগে ক্রিসমাসের কিছু আগে আগে ইয়ানিস হঠাৎ আমাদের দাওয়াত করল তার বাসায় একটা বার্বিকিউ পার্টিতে যোগ দিতে। সাথে বিশেষ আকর্ষণ সনা বাথ। আমাদের বলতে আমি, এবং সাথে একজন ইজিপ্সিয়ান, নাম ইদ্রিস। আমরা তার কিছুদিন আগে ইউনিসেফ-এর একটা ক্যাম্পেইনে কিছুদিন একসাথে কাজ করেছিলাম । তখন নিজেদের মধ্যে বেশ ভাল একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। ইয়ানিস লাটভিয়ার ছেলে। এখানে বছর দুয়েক আগে এসেছে।

আর্কিটেকচারে পড়ে। সনাবাথের কথা আগে শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয়নি তাই রাজি হয়ে গেলাম। শহরের মেইন ট্রেন স্টেশন থেকে ট্রামে করে একটা জায়গায় গেলাম আগে। সেখানে ইদ্রিসের সাথে মিট করার কথা। এরপর ওখান থেকে আবার বাসে করে দশ মিনিট পর আরেক জায়গায়। ইয়ানিসের বাসা থেকে যেটা ১০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে বলেই জানতাম। শহর থেকে এ জায়গাটা বেশ দূরে। শেষ মাথায় বললেও ভুল হবেনা। চারপাশ পাহাড় ঘেরা। বাস থেকে আমরা যখন নামলাম তখন শেষ বিকেল। ইয়ানিস অপেক্ষা করছিল। আঙ্গুল দিয়ে পাহাড়ের মাঝে একটা দূর্গের মত বাড়ি দেখিয়ে বললো ওখানে তার বাসা। সত্যি বলতে কি দারুণ লাগছিল দেখতে। গাছপালা ঢাকা পাহাড়ের মাঝ থেকে উঁকি দিয়ে থাকা সাদা খরগোশের মত। হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম যত সহজ ভেবেছি তত সহজ হবেনা যাওয়াটা। কারণ রাস্তা আস্তে আস্তে খাড়া হচ্ছিল। দুপাশে বন। এ জায়গায় যেতে একমাত্র উপায় কার অথবা সাইকেল জাতীয় কিছু। আর আমাদের মত যাদের কিছু নাই তাদের সম্বল দু’পা। তখনও কিন্তু সূর্য ডোবেনি অথচ চারপাশ কি নীরব আর শুনশান! আমরা জিজ্ঞেস করলাম এতদূরে বাসা নেবার কারণ কি। ইয়ানিস বললো এই এলাকাতে আগে থেকে অনেক লাটভিয়ান থাকে। এখন যদিও কমে গেছে তারপরও তার পরিচিত কিছু মানুষ এখানে থাকত। এজন্য সে এখানেই এসে উঠেছে। পরে আর চেঞ্জ করা হয়নি। হাঁটতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট হচ্ছিল ইদ্রিসের। সে একটু পর পর বসে জিরিয়ে নিচ্ছিল। আর আমরা মুখ টিপে হাসছিলাম। এক পর্যায়ে সে বলেই বসল, 'আমাকে ১০০ ইউরো দিলেও আর আসবনা এই জায়গায়।' ইয়ানিস সেটা শুনে হেসে গড়াগড়ি খায় আর কি! এভাবে বন বাদাড়ের মাঝের রাস্তা দিয়ে মোটামুটি ২৫-৩০ মিনিট হাঁটার পর আমরা ইয়ানিসের বাসায় পৌঁছালাম। পাহাড়ের ঢালে আশেপাশে এত ঘন বনের মাঝে বাড়ির মালিক কি ভেবে এরকম একটা বাসা বানিয়েছে সেটাই ভাবছিলাম। বুঝতে পেরে ইয়ানিস নিজে থেকেই উত্তর দিল। এটাকে আসলে সে একটা সামার কটেজ হিসেবে বানাতে চেয়েছিল প্রথমে। পরে বড়সড় করেই বানিয়েছে যাতে মাঝে মাঝে এসে থাকা যায়। অদ্ভুত হলেও সত্যি আশেপাশে খুব কাছাকাছি কিন্তু আর কোন বাড়ি নেই। সব সমতলে। ভেতরে ঢুকে নিচতলার ড্রয়িংরুমে বসলাম। আবছা আলো ভেতরে। টিভি চলছিল। তিন তলা বাড়ি। সিঁড়িগুলো কাঠের। কমপক্ষে ৮০-৯০ বছরের পুরোনো তো হবেই। তবে ভেতরটা বেশ ভালভাবে রেনোভেট করা। প্রতি ফ্লোরে ৮ টা করে রুম। কিচেন এবং ডাইনিং শেয়ারড্। সব মিলিয়ে ৬-৭ জন থাকে পুরো বাড়িতে। বাকি রুমগুলো খালি। আর এখন ক্রিসমাসের সময় বলে ৩-৪ জনের বেশী নেই মনে হয়। ইয়ানিস এবারের ক্রিসমাসে ওর গার্লফ্রেন্ডের বাসায় চলে যাবে। সেটা অন্য শহরে। তাই যাবার আগে আমাদের সাথে একবার মিট করতে চেয়েছে। সোফায় বসতেই ওর এক ফ্রেন্ড এল। উজবেকিস্তানের ছেলে উগুর। দেখি অনেক কিছু আগে থেকেই রেডি করা। ফলমূল, ওয়াইন, ক্র্যাকার্স, সসে্জ আর দু-তিন রকমের কেক। সবাই হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। ইয়ানিস জানাল একটুপরই আমরা সনায় যাব। সেখান থেকে এসে বার্বিকিউ স্টার্ট হবে। তখন বাজে সন্ধ্যা ৭ টার মত। শীতকাল বলে অনেক আগেই অন্ধকার নেমে এসেছে। আমি খেতে খেতে হঠাৎ আঁতকে উঠলাম ইদ্রিসের জ্যাকেটের দিকে তাকিয়ে। সবুজাভ কি যেন একটা। ইয়ানিস দেখে শান্তভাবে জিনিসটাকে একটা কাঠি দিয়ে মাটিতে ফেলে বলল, ‘তেমন কিছুনা। শুঁয়োপোকা টাইপ। জঙ্গল দিয়ে এসেছ। ওখান থেকে লেগেছে। তবে বিষাক্ত না।’ এদিকে ইদ্রিস চমকে উঠে হাতের ওয়াইন কার্পেটের উপর ফেলে দিয়েছে এরমধ্যে। আমারও কেমন যেন উশখুস লাগছিল। শুরু করলাম গায়ের জ্যাকেট খুলে ঝাড়া। আমাদের কান্ড দেখে উগুর খুব মজা পাচ্ছিল। সে একটা টাওয়েল দেখিয়ে বলল, ‘..লাগবে নাকি!’ এই ছেলেটা বেশ হাসিখুশি। এ বাড়িতে থাকছে গত মাস ছ'য়েক ধরে। অথচ মনে হচ্ছে কতদিনের চেনা! সবকিছু সেধে সেধে সার্ভ করে দিচ্ছে, বাড়ী ও এর আশপাশ নিয়ে বলছে। ভাল লাগছিল। খাবার দাবার খেয়ে একটু ঘুম ঘুম মত লাগছিল। হেঁটে আসার ক্লান্তিতে সম্ভবত। ইয়ানিস সেটা দেখে বলল উহু ঘুমানো যাবেনা। সনায় যেতে হবে। আমরা দ্রুত চেঞ্জ হয়ে নিলাম। সনার রুমটা বেজমেন্টে। করিডোরের শেষ মাথায়। আমি এর আগে কখনও যাইনি। এজন্য খেয়াল করছিলাম অন্যরা কে কি করে। খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরে আবছা আলোর রুমটার ভেতরে ঢুকতেই একটা গরম আভা লাগল। ৪ জনের সবাই ঢুকলাম। প্রথম ২-১ মিনিট বুঝিনি। কিন্তু এরপর থেকেই মনে হল কান, নাক, মুখ দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। আমি দেখলাম বাকিদের মধ্যে আমিই বেশি কুপোকাত। কেউই তখন কথা বলছেনা। অবশ্য শুরুতে ইয়ানিস বলে দিয়েছিল যখন ইচ্ছা তখন বাইরে এসে বসা যাবে। সমস্যা নাই। ৩-৪ মিনিট পর আমি বের হয়ে রুমের বাইরে রাখা বেঞ্চের উপর বসলাম। তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে দেখি ইদ্রিসও বের হল। এর ৩-৪ মিনিট পর উগুর আর ইয়ানিস বের হয়ে আমাদের দেখে হাসলো। যার অর্থ করলে দাঁড়ায়- এত অল্পেই কুপোকাত হলে চলবে, হ্যাঁ? ইদ্রিস বলে বসলো, ‘ম্যান, মিনিমাম কতক্ষণ থাকলে বলা যায় যে আমরা সনা বাথ করেছি।?’ শুনে সবাই হেসে দিল। সনা বাথ নিয়মিত করা ইয়ানিস এবার শুরু করল তার ব্যাখ্যা। আমার মাথায় কিন্তু তখন ঘুরছে অন্য একটা ব্যাপার। ভেতরে দেখলাম একটা বড় আয়না রাখা। নরমালি সনা বাথে আয়না থাকার কথা না। আর স্টীমের কারণে সেটাতো ঝাপসা হয়ে যায়। কেউ চাইলেও আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পারার কথা না। আর এটাতো সাজগোজের জায়গা না। চেহারা দেখার কি আছে! উগুরকে জিজ্ঞেস করলাম। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি বুঝলাম না প্রশ্ন করে কি কোন ভুল করে ফেলেছি কিনা! পরে বুঝলাম যে ব্যাপারটা তারও মাথায় আসেনি কখনো। অগত্যা ইয়ানিস বলল সে শুনেছে এটা আসলে বাড়ীর মালিকের মেয়ের কাজ। একটু নার্সিসিস্ট (narcissist) টাইপ ছিল মেয়েটা। এজন্য মালিক একটা আয়না বসিয়েছে। এটা ছাড়া বিশেষ আর কোন কারণ সে-ও ভেবে পায়নি। শুনে উগুর তখন ফান করে কিছু কথা বলল। সেগুলো আর লেখার জো নেই এখানে।

যা হোক দু-তিন ধাপে এভাবে স্টীমবাথ নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আর না। বাইরে এসে শাওয়ার নিয়ে বার্বিকিউ স্টার্ট করতে হবে। আমি আর উগুর শাওয়ার নিয়ে চলে এলাম। ইয়ানিস ও চলে আসতে চাইল। শুধু ইদ্রিস জানাল সে থাকতে চায় আরও কিছুক্ষণ। তার ভাল লাগছে। ইয়ানিস বললো একা একা না থাকাই ভাল। কারণ সনা শেষে সব সুইচ অফ করে রুম ভালমত ক্লোজ করে আসার কিছু ব্যাপার আছে। নাহলে আবার বাড়িওয়ালা কথা শুনাবে পরে। ইদ্রিস তবু গোঁ ধরাতে ইয়ানিস থেকে গেল ওর সাথে। আমরা শুরু করলাম বার্বিকিউ’র প্রিপারেশন। উগুর খুব কাজের ছেলে। চুলা,কয়লা, মশলা, মাংস মেরিনেড করা এসব সে আগে থেকেই সব রেডি করে রেখেছে। আমরা ড্রয়িং রুমের পাশে ছোট বারান্দায় সব জড়ো করে আগুন জালিয়েছি। এর মধ্যে ইয়ানিস চলে এল। বলল ইদ্রিস এখনও ভেতরে। সে মিনিট দশেকের মধ্যে গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে। বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। আমরা চেষ্টা করছিলাম চুলার পাশে বসে একটু আগুন পোহাতে। তেমন বিশেষ লাভ হচ্ছিল না যদিও। ইয়ানিসকে দেখলাম সারাক্ষণই কেমন যেন উশখুশ করছে। জানতে চাইলাম কারণ। বললো সনা তে আসলে ইদ্রিসের একা থাকা ঠিক হয়নি। সে বারবার মানা করেছে। আমি একটু আগ্রহী চোখে তাকাতেই বলল ‘না আসলে ইদ্রিস এসবে নতুন। এতক্ষণ থাকা ঠিক না। ব্যাক ফায়ার হতে পারে।’ কথার ধরণে আস্বস্ত হতে পারলাম না কেন যেন। আমার মনে হল অন্য কিছু। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে দ্রুতপায়ে বেজমেন্টে গেল। একটু পর সাথে করে ইদ্রিসকে নিয়ে আসল। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ইদ্রিস জানাল তার চিন চিন মাথাব্যথা করছে। শুনে ইয়ানিস বললো আমি নিষেধ করেছিলাম এতক্ষণ না থাকতে। ইদ্রিসকে বলা হল একটু সোফাতে শুয়ে রেস্ট নিতে। এদিকে বার্বিকিউ বেশ ভালই হচ্ছিল ততক্ষণে। উগুর কোথা থেকে যেন চুরুট এনেছে। আমাদেরকে দিল। সত্যি বলতে কি শাওয়ার নিয়ে এসে এরকম আগুনের পাশে বসে চুরুট টানতে অসাধারণ লাগছিল। একথা ওকথায় আমাদের প্রথম ধাপের মাংস রেডি হয়ে গেল। ছোট ছোট রুটি দিয়ে খেতে খেতে আবিষ্কার করলাম ইদ্রিস সোফায় চুপচাপ শুয়ে। ইয়ানিস বলল, ‘সম্ভবত ঘুমিয়ে গেছে। থাক কিছুক্ষণ ঘুমাক। একটু পর ডেকে তোলা যাবে।’ এর মাঝে উগুর উপরতলায় তার রুমে গেল কি যেন একটা কাজের কথা বলে। ঘড়িতে দেখলাম এর মধ্যেই ১০টার কাছাকাছি বেজে গেছে। একটা ফ্লাট প্যাকেট এনে টেবিলে রাখল উগুর। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম ভেতরে কি। উত্তরে একটা রহস্যময় হাসি দিল সে। এর মাঝে ইদ্রিসের একটা ফোন আসাতে তার ঘুম ভাংল। সে এসে চুপচাপ বসলো আমাদের পাশে। ইয়ানিসের কথা ঠিক। সনার ধকলে কাহিল মনে হল ছেলেটাকে। ঘুম কেমন হল জিজ্ঞেশ করতেই শান্তভাবে বলল, ‘আমিতো ঘুমাই-ই নি। শুয়ে ছিলাম জাস্ট।’ বার্বিকিউ করা মাংশ, ব্রেড, সালাদ আর সাথে বিয়ার, কোলা খেতে খেতে আমার মাথায় আবার সেই প্রশ্নটা এসে গেল। কিন্তু এখন করা ঠিক হবেনা ভেবে চেপে গেলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে ইয়ানিস নিজে থেকেই বলল, ‘আচ্ছা তোমরা অবাক হয়েছিলে না তখন কেন আমি কাউকে একা একা সনা রুমে থাকতে দিতে চাইনি?’ আমি দ্রুত মাথা নেড়ে বললাম, ‘হ্যাঁ-হ্যাঁ। কি ব্যাপার আসলে, কাহিনি কি?’ ইয়ানিস বললো, ‘দ্যাখো, আমি শুধু কিছু অভিজ্ঞতা বলবো এরপর সেগুলো কে কিভাবে নিবে সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই যদিও তারপরও আমার ধারণা ওই রুমে কেউ একা থাকলে তার ভিজ্যুয়াল হেলুসিনেশন হয়। আমার এরকম দু’বার হয়েছিল। তোমরা তো জানোই আমি সনা বাথ নিই অনেক আগে থেকেই। তো এখানেও এরকম মাঝে মাঝে নিতে যেতাম। প্রায় সময়ই কেউ না কেউ থাকতো। তো বছর খানেক আগে একদিন সন্ধ্যায় আমি যখন গেলাম তখন কেউ ছিল না। শুরু করার কিছুক্ষণ পর মনে হল আমি আয়নায় কাউকে দেখছি। পরিষ্কার কোন অবয়ব না কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছিল। নিজেকে দেখছি না সেটা নিশ্চিত ছিলাম কারণ আয়নায় যেটা বা যাকে দেখা যাচ্ছিল তার লম্বা চুলের মত ছিল যা আমার নাই। এরপর আমি অস্বস্তিতেই বের হয়ে আসি। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ হয়ে কিভাবে ব্যাপারটা মেনে নেই! এজন্য সপ্তাহ দুয়েক পর আবার একা সেখানে যাই। আশ্চর্য্য হলেও সত্যি সেদিন কিন্তু কিছু দেখিনি আগেরবারের মতন। তারপরও একটা অস্বস্তি থেকে গেল মনে। এজন্য সর্বশেষ বার আবারও একা যাই। বাথ শুরুর প্রথম ২-৩ মিনিট ঠিক ছিল সব। এরপর বাইরে এসে একটু জিরিয়ে আবার ঢুকলাম। আমি আসলে আয়নাটার দিকে তাকাতে চাইছিলাম না। কিন্তু কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছিল যে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ৪-৫ মিনিট পর একটু নার্ভাস হয়ে আড়চোখে দেখতেই অস্পষ্ট আয়নাতে কিছু একটার যেন অবয়ব দেখতে পেলাম। এবার আমি জানিনা আমার কি হয়েছিল। খুব সম্ভবত আমি কিছু সময় অচেতন ছিলাম। কয়েক মুহুর্ত। কারণ আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম বেঞ্চের উপর শোয়া অবস্থায়। অথচ শুরুতে আমি বসে বাথ নিচ্ছিলাম। রুমটাও প্রচন্ড গরম হয়ে ছিল। আমার এত দূর্বল লাগছিল যে মনে হচ্ছিল যেন দরজাটা খুলে বের হতে পারবনা। তবুও ঈশ্বরের নাম নিয়ে টলতে টলতে বের হয়ে যাই। এরপর আর কখনও একা একা যাইনি। এসব আসলে এমন কিছু অভিজ্ঞতা যেটা তুমি সবার সাথে শেয়ার করতে পারবেনা। এজন্য চেপে গেছি। আমি চাইলে তোমাদের আগেই ব্যাপারটা জানাতে পারতাম। কিন্তু সেটা তোমাদের সনা বাথ নিয়ে এক্সাইটমেন্টটা নষ্ট করে দিতে পারত। তা আমি চাইনি। এই ধরনের বদ্ধ রুম মানুষের স্নায়ুর উপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করে। ক্লাস্ট্রোফোবিয়ার (claustrophobia) সমস্যাওয়ালা মানুষের যেমনটা হয়। তাছাড়া ভেতরের তাপমাত্রাও অনেক বেশী সব মিলিয়ে যার পরিণতিতে এরকম উল্টাপাল্টা কিছু দেখা যেতে পারে । ইদ্রিসকেও তাই একা থাকতে দিতে চাইনি রুমটায়। আপাতত এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা আমার।’

আমরা একমনে শুনে যাচ্ছিলাম ইয়ানিস এর কথা। সম্বিত ফিরে পেলাম পোড়া মাংসের গন্ধে। চুলায় দেয়া মাংস যে পুড়ে যাচ্ছিল এতক্ষণ কারও খেয়াল ছিলোনা সেদিকে। উগুর শুধু পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য বলল ‚‘there are more things in heaven and earth.’ এরপর সবাইকে টেবিলে ডাকলো সে। একটু আগে যে প্যাকেটটা এনেছিল সেটা খোলা হল। ভেতরে বড় একটা কেক। উপরে জার্মানে লিখা “শুভ জন্মদিন ইয়ানিস” আমি এবং ইদ্রিস প্রচন্ড অবাক হয়ে ইয়ানিসের দিকে তাকালাম। দুজনের কেউই জানতাম না ব্যাপারটা। ইয়ানিসের মুখে আগের মত সেই স্মিত হাসি। ‘হুম আজ আমার জন্মদিন এবং আমি খুব খুশি তোমাদের সবাইকে দেখে।’ উগুরকেও ধন্যবাদ দিল কারণ কেকটা সে-ই এনেছে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে এরকম একটা পরিবেশ আর ছেলেপেলে পেয়ে খুব ভাল লেগেছিল সেদিন। অবশ্য আমরা এরপর আর অল্প কিছুক্ষণ ছিলাম। বাসায় ফেয়ার তাড়া ছিল। ইয়ানিস তার ওখানে থেকে যেতে বলেছিল কিন্তু আমার নিজের বাসা ছাড়া ঘুম হয়না এটা বুঝিয়ে বিদায় নিই সেদিন। তবে ফেরার পথে হাড়হিম করা শীতের চেয়েও বেশী কাঁপুনি লাগছিল এই ঘন জঙ্গলের মাঝে সাদা বাড়ীটাকে দূর থেকে দেখে। যে বাড়ীতে একটা সনা আছে…! ইদ্রিসকে তার বাসার দিকে যাবার ট্রামে তুলে দিয়ে আমি বাসায় ফেরার বাস ধরব। ট্রাম আসার অপেক্ষার সময়টাতে সিগারেট খেতে গেলাম। ইদ্রিসকে জিজ্ঞেশ করলাম কেমন লাগলো সব মিলিয়ে। বলল, ‘ভালো। তবে মাথা ধরাটা কমেনি। চিন চিন ব্যথা আছে এখনো।’ আমি বললাম বাসায় গিয়ে রেষ্ট নিলেই কমে যাবে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সে বলল, ‘বন্ধু তোমাকে একটা কথা বলব। তুমি ঈশ্বরের নামে শপথ কর এটা কাউকে বলতে পারবেনা।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কি সেটা!’ ইদ্রিস এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো ‘আমি আজ সনা রুমে ইয়ানিসের বর্ণনামত কাউকে দেখেছিলাম। আয়নায় কিছু একটার অবয়ব দেখে হাত দিয়ে আয়না পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি তখনও সেটাকে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বাস কর ঈশ্বরের দোহাই আমি দেখেছি আমার পিছে কালো জমাট বাঁধা ছায়ার মত কিছু একটা। এমনকি কাঁধের উপর তার চুলের স্পর্শও পেয়েছি আমি। এই যে বলছিলাম মাথাব্যথা। সেটা হয়েছে তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বের হতে গিয়ে দরজায় রাখা হ্যাঙ্গারে মাথা ঠুকে। মনে হয়েছিল মাথাটা বোধহয় চৌচির হয়ে গেছে ফেটে আর তখনই হন্তদন্ত হয়ে ইয়ানিস আসে। তার মত আমিও চাইনি আমাদের পার্টিটা নষ্ট হয়ে যাক আমার এই ঘটনার কারণে।' ট্রামে উঠার আগে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘বন্ধু ভাল থেকো। আজকের দিনটা আমার অনেকদিন মনে থাকবে। অনেক কারণ কিংবা অকারণে।’ ইদ্রিস যখন বিদায় বলে হাত নাড়ছিল তখন আমার মাথায় ঘুরছিল উগুরের কথাটা ‘there are more things in heaven and earth’

ও হ্যাঁ! ইয়ানিসের সাথে এরপর আর একবার দেখা হয়েছিল। গত বছর ম্যাকডোনাল্ডে কফি খেতে গিয়ে। তবে ইদ্রিস বা উগুর-এর সাথে সে সুযোগ আর হয়নি কখনও।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×