somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ফড়িংটার আজ জন্মদিন

১০ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাটাক্ষন সে ফড়িংয়ের মতোই ছুটোছুটিতে ব্যস্ত...ধরতে গেলে হাত থেকে ছুটে পালায়...মাঝে মাঝে ওকে আমি ফড়িং বলেই ডাকি, সেও খুব মজা পায়। দশই নভেম্বর আমার ফড়িং সোনার জন্মদিন।

এই ছবিটা আজকের

দিন কিভাবে চলে যায়!!! মনে হচ্ছে, এইতো সেদিন সে এলো পৃথিবীতে... দেখতে দেখতে আজ তার পাঁচ বছর হলো। সন্তানের আগমনের দিন সব মায়ের কাছেই এক বিশেষ দিন...স্মৃতির পাতায় আপন মহিমায় দিনটি ভাস্মর হয়ে রয়েছে...২৬ রোজার দিবাগত রাত মানে শবেকদরের রাত...নামাজ পরা শুরুই করেছিলাম কিছুটা দেরীতে...রাত বারোটার দিকে ধীরে ধীরে পরছি...মাটিতে সিজদাহ দিতে পারি না...চেয়ারের উপরে সিজদা দিয়ে কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে দিয়ে নামাজ পড়লাম...ঘন্টা দুই পরে আর ভালোলাগছিলো না, ঘুমোতে গেলাম তিনটার দিকে...শুয়েও কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না..একবার এইদিকে ঘুরি আরেকবার ঐদিকে ঘুরি...তার কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারলাম, তার পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গেছে। যদিও আসার কথা আরও ছয়দিন পরে ছিলো। রাত চারটার সময় হসপিটালে যেয়ে ভর্তি হলাম। ও পেটে আসার পর থেকেই অনেকের কাছ থেকে অনেক ধরনের কথা শুনেছিলাম,ভীষন কস্ট...অনেক সময় মা, বাচ্চা দুজনেই মারা যায়..এমনই নানা ধরনের কথা। এসব কথা মনে পড়ছিলো আর ভীষন ভয়ও করছিলো..তারউপরে পাশে পরম মমতাময়ী মা নেই, এই দূরদেশে সেইসময়টায় আসতে পরেননি। এই কারনে ভয়টা আরও বেশি লাগছিলো...তবে এখানের হসপিটালে হাজবেন্ডকে থাকতে দেয় পাশে ডেলিভারী হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। পরের দিন দুপুর দুইটায় সব যন্ত্রনা, কষ্টের অবসান শেষে নরমাল ভাবেই তার জন্ম। করুনাময়ের অশেষ রহমত কোনো অপারেশান ছাড়াই সুস্থ্য ভাবে তার জন্ম হয়েছে।
হওয়ার সাথে সাথেই নাড়ী কেটে ওকে আমার বুকে শুয়ে দিলো নার্স।
উঠে চোখ খুলে দেখার শক্তিটুকুও নেই, চোখ বন্ধ করেই অনুভব করতে পারছি, নরম তুলতুলে পাখির ছানার মতো ছোট ছোট হাত পা নাড়ছে...সেই সময়ের অনুভূতিটা এখনও চোখ বন্ধ করলই দেখতে পাই...আমার জীবনের শ্রেষ্ট অনুভূতি।

বয়স যখন একদিন

দুই বছর থেকেই ওকে ডেকেয়ারে রাখতে হয়। প্রথম দিকে কিছুতেই থাকতে চাইতো না...রেখে আসার সময় জামা ধরে কান্নাকাটি করতো, আর ছাড়তে চাইতো না। জামার কোনাটা ঐ ছোট্ট হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমেও ওর কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেতো..যতক্ষন শুনতে পেতাম ততক্ষন নীচেই দাড়িয়ে থাকতাম...একসময় যখন আর শব্দ পেতাম না তখন চোখ মুছে নিজের কাজে যেতাম।

পার্কে কাঠের ট্রেনে

বাসায় সে সবসময়ই বাংলাতেই কথা বলে...ডেকেয়ারে ও ছাড়া বাকী সবাই জাপানিজ, বাধ্য হয়েই ওকে জাপানিজ বলতে হয়। কিন্তু গেট থেকে বের হবার সাথে সাথেই তার বাংলা কথার ফুলঝুড়ি ফোটে...ফিরতে ফিরতে কোনোদিন সন্ধ্যা হয়ে গেলে, আকাশে যখন টুপকরে চাঁদটা উঠে পরে...তার প্রশ্ন, চাঁদটা কেনো শুধু আমার সাথে সাথেই হাটে!!!!! কেনো তোমার সাথে যায় না!!! আমি থামলেই কেনো থেমে যায়!!!! আর আমাদের বাসার কাছে এসেই কেনো চুপ করে বসে থাকে!!!!

পাশ বালিশ দিয়ে ঘোড়া খেলা

আমি যদি কখনো বাসায় হঠাৎ কোনো শব্দ জাপানিজে বলি...সাথে সাথে বলবে, তুমি যেভাবে সবসময় কথা বলো...ওভাবেই বলো মানে আমার মুখে বাংলা কথাটাই বেশি পছন্দ করে। বছর খানেক আগে যখন রাতে কিছুতেই ঘুমোতে চাইতো না, তখন ওকে কোলের মধ্যে নিয়ে বাংলা ছড়া সুর করে করে শোনাতাম...তখন চুপ করে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতো...এভাবে বেশ কয়েকটা বাংলা ছড়া বলতে পারে..."ঐ দেখা যায় তালগাছ", "আগডুম বাগডুম", "আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা"

গাড়ী চালানোতেই রাজ্যের আনন্দ

এখন সে প্রিস্কুল টাইপের একটা সেন্টারে যায়...এখানে ছয়বছর বয়স থেকে স্কুল। প্রিস্কুলে পড়াশুনা তেমন বই ধরে ধরে না..খেলতে খেলতে পড়া...রং চেনা...বেশিরভাগ সময়ই সে কাগজ দিয়ে ওরিগামি বানাতে পছন্দ করে...শুধু ও না, সব বাচ্চা গুলোই দেখি ওরিগামি বানাতে পারদর্শি...কি বানাতে পারে না, এই ছোট ছোট পিচ্চিরা বিড়াল থেকে শুরু করে বক, প্লেন আরও কত কিযে বানায়...প্রতিদিন নানান রকমের ওরিগামি নিয়ে আসবে বাসায়, সেই সাথে আমাকেও সেগুলো শিখাবে :)

তখন কেবলই দাত উঠা শুরু করেছে

ওর স্কুলে যেতে দশ থেকে পনেরো মিনিটের হাটা রাস্তা...আমাদের দুজনের যতকথা এই রাস্তাতেই...একদিন ওকে প্রশ্ন করলাম, তুমি আমার কি হও? সাথে সাথে ওর উত্তর আমি তোমার বন্ধু। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, এত ছোটবেলাতেই এত সত্যি কথাটা সে কিভাবে শিখে ফেললো!!!!! এখন আমার দিন রাত প্রতিটা মুহূর্ত কাটে এই ছোট্ট বন্ধুটাকে ঘিরে..পুরোটা সময় জুড়ে থাকে সে।

হামাগুড়ির বয়সটাতে
পথে যেতে যেতে একদিন বললাম, দেখো রাস্তায় অনেক গাড়ী-ঘোড়া থাকে, সাবধানে হাটবে...মাথা ঝাকিয়ে বললো হুম, কিন্তু রাস্তায়তো কোনো ঘোড়া নেই মামনি!!! বললাম ওটা কথার সাথে মিলিয়ে বলেছি..সে বুঝতে চায় না... তার কথা রাস্তায় যেহেতু ঘোড়া নেই, তাই ওকথা বলা যাবেনা...কি আর করা, তার কথাতেই সায় দিতে হয়। এমন নানান ধরনের কথায় সে প্রায়ই আমার ভুল ধরে :|

আমার ছেলের নাম জাওয়াদ

আরেকদিন ফিরতি পথে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে...বৃষ্টির পরিমান এত বেশি যে এক হাত দূরের মানুষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। সাথে বেশ জোড়ে বজ্রপাতও, সত্যি বলতে কি আমার বেশ খানিকটা ভয়ই লাগছিলো... হেটে হেটে ফিরছিলাম...ছোট্ট বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি ভয় পাচ্ছ? সে বললো না একটুও নাকি ভয় পাচ্ছে না...আমি বললাম, আমার‌তো খুব ভয় করছে...ও বলে কোনো ভয় নেই, আমি আছি না তোমার সাথে ...সেদিন সেই বৃষ্টির মধ্যে ছোট্ট হাতটা ধরে পথ চলতে থাকলাম...

এমন করেই কেটে যাচ্ছে আমাদের দিন...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১৫
৫৬টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×