somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামীলীগ বনাম মুসলিমলীগ:আমরা কোন পক্ষে?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য সাদা চোখে দেখলে বড় দায় আওয়ামীলীগের, আর একটু সংকীর্ণ করে দেখলে শেখ হাসিনার। “তিনি কেন ক্ষমতা ছেড়ে নির্দলীয় সরকার গঠনের পথে যাচ্ছেন না? কেন তিনি সংবিধান সংশোধন করে নিজে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের পথ তৈরি করে সংকট তৈরি করলেন?”-এই প্রশ্নগুলো এখন শুধু আমজনতার মুখে নয়, কেতা দুরস্ত বিজ্ঞজন সুশীল সমাজের অতি আঁতেলরাও দিন-রাত আউড়ে যাচ্ছেন। খুবই সঙ্গত এবং যৌক্তিক প্রশ্ন? দেশ ও জাতির স্বার্থে এসব প্রশ্নের জবাব শেখ হাসিনাকে দিতেই হবে। কিন্তু প্রশ্ন আরও আছে। শেখ হাসিনা কার কাছে ক্ষমতা ছাড়বেন? কার কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া নিরাপদ? ক্ষমতা ছাড়লে জামায়াত-শিবিরের তান্ডবে আবারও একাত্তরের মত আওয়ামীলীগ নেতা, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী নিধন শুরু হলে কে রক্ষা করতে আসবে? সুশীল সমাজ, না বিএনপি? প্রশ্নগুলো অনেকের কাছে খুব হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের ভেতর ভয়ংকর ভবিষ্যতের ছায়া আছে। সেই ছায়ার আবরণ সরিয়ে যুক্তির আলোয় আমাদের উত্তরগুলো ভাবতে হবে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের চরিত্র এবং মাত্রা ভিন্ন। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ সরকার মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত জটিল ছিল না। কারন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান ছিল না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে জামায়াত-শিবিরের নৃশংস তান্ডবও ছিল না। তারপরও আওয়ামীলীগ সরকারেরর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার দিন রাতে বিএনপি সর্বত্র বিজয় মিছিল করেছে যেন আওয়ামীলীগকে গণ অভ্যুত্থান করে নামানো হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে নানা ভাবে। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনের পর প্রথম সপ্তাহ জুড়ে বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলে যে ধ্বংস-যজ্ঞ চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবাদে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে বরিশালের গৌড়নদী, আগৈলঝড়া, রামশীল, মাদারীপুরের শিবচর প্রভৃতি স্থানে তার চিত্র স্বচক্ষে দেখে শিউরে উঠেছি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সেই তান্ডব কিন্তু কোথাও দেখা যায়নি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর জামায়াত-শিবিরের হিং¯্রতা প্রতিরোধে সর্বশেষ তিন বছর ধরে সরকারের যে অবস্থান, তার কথা মনে রেখে বলা হয়, এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়ারর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি’র কাঁধে বন্দুক রেখে নির্বিচারে গুলী চালাবে জামায়াত, একাত্তরের কায়দায় হত্যা করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুক্তমনের সবাইকে। প্রশ্নটা তাই কঠিন। তাহলে কি জনসমর্থন না থাকলেও আওয়ামীলীগকে জোর করে ক্ষমতায় রাখতে হবে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে আর একটি প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে। খালেদা জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তঋণ শোধ করার শপথ নেওয়া লাখো তরুনকে সরাসরি ‘নষ্ট’ বলে গালি দেন এবং বর্বর শিবির কর্মীদের সোনার টুকরো বলে পরিচয় দেন, তখন ভবিষ্যতে তিনি বা তার পুত্র ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের চেহারা কেমন হতে পারে? আমরা আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না, ক্ষমতায় থাকার জবরদস্তিও সমর্থন করি না, কিন্তু আমরা কি দেশকে জামায়াত-শিবিরের বর্বরতা, হিং¯্রতার অভয়ারণ্যে পরিণত করার জন্য খালেদা জিয়া বা তার পুত্র কে ক্ষমতায় আনব? আমরা যদি ভয়ংকর জঙ্গী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠির অবাধ বিচরণভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তমনের মানুষদের খুনে রক্তাক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই, খালেদা জিয়াকে ভোট দিতেই পারি। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি সেটা চাই?

পাকিস্তান আমলে মুসলীমলীগ আর জামায়াতের মধ্যে নৈতিক আদর্শের সম্পর্ক ছিল, ক্ষমতার দ্বন্দ নিয়ে বিভাজন ছিল। আওয়ামীলীগ গঠনের পর মুসলীমলীগ খুব দ্রুত বিলীণ হতে থাকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর মুসলীমলীগ অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জটিল সমীকরণে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা হাতে পেয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিএনপি নামে যে দল গঠন করলেন তাতে মূল সমাবেশ ঘটল বিলুপ্ত প্রায় মুসলীমলীগ নেতাদের। একাত্তরে গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যাক্ষভাবে জড়িতরাও বিএনপি’র ব্যানারে জিয়াউর রহমানের আমলেই মন্ত্রী মিনিস্টার হলেন। যেমন জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম। মুসলীমলীগের সঙ্গে নৈতিক মতাদর্শগত ঐক্য থেকেই জিয়াউর রহমান জামায়াতের রাজনীতিও প্রতিষ্ঠিত করে দেন। লক্ষ্যটা খুব পরিস্কার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং তার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় তৈরি করা। দুর্ভাগ্যজনক হল, রাজনীতির ভবিষ্যত গতি-প্রকৃতি নিয়ে দূরদৃষ্টির সীমাবদ্ধতার কারনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল চেতনার সিপিবি সহ কমিউনিস্ট পার্টি জিয়াউর রহমানকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গঠনে সহায়তা করে বসলেন। সে সময় আওয়ামীলীগের রাজনীতি বিপর্যস্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কমিউনিস্টরাই জিয়াউর রহমানের অপ রাজনৈতিক বলয়ের প্রধান ও দৃঢ় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারতেন, অংকুরেই স্বাধীনতাবিরোধী মুসলীমলীগ-জামায়াত বলয় গঠনের প্রচেষ্টাও রুখে দিতে পারতেন, দেননি। বরং সচতুর জিয়াউর রহমানের ফাঁদে পা দিয়ে কমিউনিস্ট নেতারা অহেতুক মতাদর্শিক বিতর্কে জড়িয়ে নিজেরা নানা দল-উপদলে ভাগ হয়ে ক্রমাগত দুর্বল হওয়ার পথ ধরেন। ভুল আওয়ামীলীগেরও ছিল, হয়ত বঙ্গবন্ধুরও ছিল। যে বাকশাল তিনি ১৯৭৪ সালে গঠন করে বিতর্কিত হয়েছেন, সেটা ১৯৭২ সালে শুরুতেই জাতীয় সরকারের আদলে গঠন করলে বাংলাদেশের আজকের করুন রাজনীতির চেহারা হয়ত আমাদের দেখতে হত না। তখণ বঙ্গবন্ধু এবং তার ঘনিষ্ঠজনরা ক্ষমতাভোগের রাজনৈতিক হিসেব থেকে ভয় পেয়েছেন কমিউনিস্টদেরই, এ কারনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষো থাকা কমিউনিস্টদের নিয়ে শুরুতেই জাতীয় সরকার গঠন না করে দলীয় সরকার গঠন করেন। পরে যখন জাতির নিদারুন প্রয়োজনেই বাকশাল নামে জাতীয় সরকার গঠন করা হল, তখন সেই বাকশালকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি ধ্বংস করার প্রধান পুঁজি হিসেবে নিলেন দেশের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি এবং তাদের তৎকালীণ আর্ন্তজাতিক মিত্ররা। সর্বদলীয় বা জাতীয় সরকার বাকশালকে তারা প্রচার করলেন এক দলীয় সরকার হিসেবে। বাকশাল গঠন পরবর্তী সময়ে সংবাদ মাধ্যমের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মত ভুল করে বঙ্গবন্ধুও তার শত্রুদের বাকশালবিরোধী প্রচারণায় সুবিধে করে দিলেন। যা হোক, আওয়ামীলীগ যখন নতুন করে উঠে দাঁড়াল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আওয়ামীলীগ কিংবা কমিউনিস্ট নেতারা মুসলিমলীগ-জামায়াতের ভবিষ্যত ভয়াবহ পুনরুত্থানের বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি। সে কারনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ঐক্য হয়নি। উল্টোদিকে খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া মুসলিমলীগ-জামায়াত ঐক্যের রাজনীতিকে অদৃশ্যভাবে হলেও ঐক্যবদ্ধভাবেই পেলেন। মাঝখানে আর এক সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা দখল করে জাতীয় পার্টি নামে খিচুড়ি পার্টি বানিয়ে ফেললেন। এই জাতীয় পার্টিতেও সাবেক মুসলিমলীগারে উল্লেখযোগ্য সমাবেশ ছিল। তবে এরশাদ ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজেকে আরও বেশী সুচতুর প্রমাণের জন্যই হোক, কিংবা অন্য কোন সমীকরণ থেকে হোক মুক্তিযুদ্ধের অনেক বড় সংগঠককে তার চারপাশে রাখেন, ফলে জাতীয় পার্টি ধর্মীয় সুড়সুড়ির রাজনীতির নানা ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করলেও বিএনপি’র মত মুসলিমলীগের আদর্শ সংস্করণ হতে পারেনি। যে কারনে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর প্রথম সরকার গঠনেই পর্দার আড়ালে সরকার গঠনে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যমত পৌঁছতে খুব বেশী সময় লাগেনি। নিশ্চয় মনে আছে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ১৪৬টি আসন পেয়েছিল যেটা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। পরে জামায়াত সরকারের অংশ না নিলেও তাদের ১৪ সংসদ সদস্য নিয়ে বিএনপিকে সমর্থন দিলে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সুযোগ পান। পরে অবশ্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ণ চুড়ান্ত হলে বিএনপি’র আসন ১৬৬টিতে দাঁড়ায়, যা একক সংসদে তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে। বিএনপি-জামায়াতের এই ঐক্য ২০০১ সালে সুসংবদ্ধ হয়েছে সরাসরি জোট গঠনের মধ্য দিয়ে। সরাসরি রাজনৈতিক জোট গঠন এবং ওই জোটের ক্ষমতায় যাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কিছুটা হলেও বোধদয় হয়। সেই বোধদয় থেকেই ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের রুখে দিতে মহাজোটের আত্মপ্রকাশ এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও মাহজোটের মাধ্যমে অংশগ্রহনের ঘটনা ঘটেছে। মহাজোটে জাতীয় পার্টির অবস্থান কখনই কারও জন্য স্বস্তিকর ছিল না, কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নামে স্বাধীনতাবিরোধী ‘টোটাল ফোর্সের’ নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়া রুখে দিতে অস্বস্তিকর আপোসের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রাখার কোন বিকল্প ছিল না আওয়ামীলীগ এবং বামদলগুলোর।

ক্ষমতায় যাওয়ার পর মহাজোট সরকারের সবচেয়ে সাহসী কাজ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। কাজটিতে ভয়াবহও ঝুঁকি ছিল, এখনও আছে। কারন এই যুদ্ধাপরাধীদের দল শুধু জামায়াত নয়, তিনবার ক্ষমতায় আসা দল বিএনপিও। তাদের দলের নেতারাও একাত্তরে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন, সাজাও পেয়েছেন। ফলে ঐতিহাসিক মেলবন্ধনের কারনেই বিএনপি-জামায়াত টোটাল ফোর্স হিসেবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ‘সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ তত্ত্বে’র রুমাল দিয়ে বিএনপি বরাবরই মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করলেও যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে লঅখো তরুন রাস্তায় নামলে খালেদা জিয়ার তার দলে প্রকৃত অবস্থান খোলামেলাভাবেই বুঝিয়ে দিলেন সেই তরুনদের ‘নষ্ট’ গালি দিয়ে। এই গালি খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে দিয়েছেন । স্বাভাবিকভাবে তিনি আবার ক্ষমতায় আসলে এই নষ্টদের নির্মূল করার দায়িত্ব নেবেন, নষ্টদের রেখে দেশ চালাবেরন কিভাবে? এ প্রশ্ন জায়েজ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নির্র্মূলে কুযুক্তির কুৎসিত তত্ত্ব হাজির করার জন্য নব্য রাজাকার ফরহাদ মজহার, শফিক রেহমানরা তো আছেনই। আর মাহমুদুর রহমানের মত আপাদমস্তক অসৎ, বদমাসদের পত্রিকার সম্পাদক বানিয়ে তাদের দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নতুন আমলে সাংবাদিকতার চেহারা কি হবে, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। শওকত মাহমুদের মত খ্যাতিমান পেশাজীবী সাংবাদিকরাও ক্ষমতার উচ্ছিস্ট খাওয়ার লোভে নিজের অবস্থান এবং পেশার মান মর্যাদা জুতার তলায় রেখে গিয়ে সেই ফালতু, অসৎ মাহমুদুর রহমানের সাক্ষী গোপাল সেজেছেন, মাহমুদুর রহমানের জঘন্য হলুদ সাংবাদিকতাকে জায়েজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন! অতএব আগামী দিনে খালেদা জিয়ার ভয় নেই।

ভয় আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাহসী কাজটি আওয়ামীলীগ সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জাতীয় জীবনের অনিবার্য সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। জামায়াত-শিবির এখন অস্তিত্বের লড়াইএ। এ লড়াই এর আর একটা অর্থ তারা সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। বন্দুক রাখার জন্য জামায়াতের পাশে বিএনপি’র শক্ত-সামর্থ্য কাঁধ আছে। বিএনপি’র সামনেও দারুন সুযোগ। বাংলাদেশে মুসলিমীগের রাজনীতির একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এমন মওকা আগে তো আসেনি! আর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে হাট হাজারির তেতুল হুজুর আহমদ শফি কে ব্যবহার করে ‘হেফাজত’ নাটক রচণা করে বিএনপি দারুন সব আজগুবি গল্প মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে সফলভাবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার এই কৌশলে পাকিস্তান আমলে মুসলিমলীগ সফল না হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি বার বার সফল হয়েছে। এর কারন হচ্ছে পাকিস্তান আমলে শোষণ-বঞ্চনার যন্ত্রণা এত বেশী ছিল যে সেই যন্ত্রণা ভুলে দিয়ে ধর্মের সুড়সুড়ি খুব বেশী কাজে লাগাতে পারেনি মুসলিমলীগ। স্বাধীন বাংলাদেশে মোটামুটি খাওয়া-পরা বেঁচে থাকার নিশ্চয়তার মধ্যে ধর্মের সুড়সুড়ি কার্যকরভাবে দেওয়া যায়। জিয়া-এরশাদ থেকে শুরু করে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষকে বিভ্রওান্ত করার এই সুযোগ বার বার নিচ্ছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠি। ধর্মান্ধ গোষ্ঠি ধর্মের নামে মিথ্যাচার, অসত্য গল্প চর্চা আর সন্ত্রাসের তত্ত্ব এত বেশী চর্চা করছে যে ধর্মের মূলমন্ত্র শান্তির বাণীই তারা মানুষকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। এই ধর্মান্ধরা পাকিস্তান আমল থেকেই ধর্মের শত্রু হিসেবে খলনায়কের ভূমিকায় থেকেছে, ধর্মান্ধতার ধোঁয়ায় সেটাও ভুলে যাচ্ছে ধর্মভীরু সাধারন মানুষ। ভয়টা সেখানেই বেশী। ধর্মের শত্রু বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার আর মুক্তচিন্তার প্রগতিশীলদের হত্যা করে পুরো দেশকে বধ্যভূমি বানিয়েও তা জায়েজ করা অসম্ভব হবে না বিএনপি-জামায়াতের জন্য। মৃত্যুদন্ড পাওয়া ইতিহাসের জঘন্য ঘাতকদের মুক্তি দিয়ে পুরো একটা মন্ত্রীসভা গঠন করা হলৌ অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

এখন বিএনপি-জামায়াত আলাদা করার আর কিছু নেই। এ কারনেই আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জেদটাও বেশী। ক্ষমতার লোভ আছে, ক্ষমতার অপচর্চা করে সম্পদের পাহাড় বানানোর প্রবৃত্তিও আওয়ামীলীগ নেতাদের আছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধে শেখ হাসিনার চরম ব্যর্ততাও আছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় ভয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ঘাতক চক্রের অপ রাজনীতি নির্মূলের যে পদক্ষেপ আওয়ামলীগ নিয়েছে তার প্রতিঘাত। এই প্রতিঘাত এখন ছোট-খাট কিছু নয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের নৃশংস তান্ডব, গুজব ছড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এ কারনেই আওয়ামীলীগের পেছনে সামনে দু’টো পথ। হয় ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পুরোপুরি শেষ করা তাদের রাজনৈতিক শেকড় উপড়ে ফেলা, আর একটি পুরো দল সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ বিএনপি-জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া। এখন আমাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কোনটা চাই। অন্তত: ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমাদের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই। আজ আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, আমরা কে, কি চাই? কোন পক্ষে আমাদের মানসিক অবস্থান? বিএনপি-জামায়াতের সর্বশেষ কর্মসূচী দেখলে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ। থাইল্যান্ডেও এই মুহুর্তে রাজপথে বিক্ষোভ চলছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা সচিবালয় দখল করে প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল করে দিয়েছে, কিন্তু জনজীবন অচল করেনি, আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করেনি। এখানে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, গ্রেফতারের শংকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে প্রতদিন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে, অথচ খালেদা জিয়া নিজেই বিরোধীদলীয় নেত্রীর পদ ছাড়েননি। অথচ ১৯৯৫ সালে কিন্তু শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেই আন্দোলনে নেমেছিলেন। অতএব ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যার অপরাজনীতি যারা বিরোধীদলে থেকেই করতে পারে, তারা ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কতটা বেপরোয়াভাবে নিশ্চিহ্ন করার পৈশাচিকতায় মেতে উঠতে পারে, তা সক্রিয় বিবেচনায় রেখেই জাতির এই নিদারুন সংকটের মুখে পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×