Ahnaf Serniabat
...........................
বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠায় মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব
বলেন – “ শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া অজু
ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হলে ওজু করতে হবে
মর্মে যে হাদীস বর্ণিত আছে তা জয়িফ।” (পৃ-৫৫)।
এরপর তিনি দারাকুতনী থেকে বর্ণিত একটি
হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন এটা জয়িফ। ব্যাস।
তার কাছে এতেই সব জয়িফ হয়ে গেল। এই যদি হয়
আহলে হাদীস আলেমদের অবস্থা তাহলে তাদের
শিশ্যদের অবস্থাতো করুন হওয়া স্বাভাবিক।
তবে মুযাফফর সাহেব তার এ যুক্তিকে প্রমান করার
জন্য আলবানী রাহঃ এর একটি মত এনেছেন।
আলবানী রাহঃ এর মত এরকম- “রক্ত বের হলে অজু
করা অয়াজিব মর্মে কোন সহীহ হাদীস নেই তা
কমহোক বা বেশি হোক। ” (পৃ- ৫৬)
মূল ব্যাপারটা এখানেই। আলবানী রাহঃ এর কথা
তো আর ভূল হতে পারে না!!! সুতরাং মুযাফফর
সাহেবও আলবানী সাহেবের সুরের সাথে তাল
মিলিয়ে বলে দিলেন যে - “ শরীর থেকে রক্ত
প্রবাহিত হওয়া অজু ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের
হলে ওজু করতে হবে মর্মে যে হাদীস বর্ণিত আছে
তা জয়িফ।” (পৃ-৫৫)। এরাও আবার গায়রে
মুকাল্লিদ !!!
এবার আমরা দেখবো মূলত রক্ত প্রবাহের কারনে
অজু ভেঙ্গে যায় এবং নতুন করে ওজু করে নিতে হয়।
১ম দলিলঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﺃَﻥَّ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦَ ﻋُﻤَﺮَ، ﻛَﺎﻥَ
ﺇِﺫَﺍ ﺭَﻋَﻒَ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺄَ ﺛُﻢَّ ﺭَﺟَﻊَ ﻓَﺒَﻨَﻰ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢْ .
ইয়াহইয়া রহ. সূত্রে নাফে’ রহ. হতে বর্ণিত: হযরত
ইবনে উমার রা.-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত বের হতো
তখন তিনি নামায থেকে ফিরে গিয়ে অযু করে
পুনরায় অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন; আর এ সময়
তিনি কথা বলতেন না। (মুওয়াত্তা মালেক: ৭৮,
পৃষ্ঠা: ১/১৩)
এ হাদীসের সকল রাবী বুখারী-মুসলিমের রাবী
এবং হাদীসটির সনদ সহীহ।
২য় দলিলঃ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﺰﻫﺮﻱ ﻋﻦ ﺳﺎﻟﻢ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ :
ﺇﺫﺍ ﺭﻋﻒ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﺃﻭ ﺫﺭﻋﻪ ﺍﻟﻘﺊ ، ﺃﻭ ﻭﺟﺪ ﻣﺬﻳﺎ
ﻓﺈﻧﻪ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﻭﻳﺘﻮﺿﺄ ، ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﻓﻴﺘﻢ ﻣﺎ ﺑﻘﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻣﻀﻰ ،
ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺘﻜﻠﻢ
আব্দুর রাযযাক হযরত সালেম রহ. সূত্রে বর্ণনা
করেন, হযরত ইবনে উমার রা. বলেন: কারও নাক
দিয়ে যদি রক্ত বের হয় বা বমি বেরিয়ে আসে
অথবা সে যদি মজী দেখতে পায় তাহলে সে নামায
থেকে সরে গিয়ে অযু করবে। অতঃপর ফিরে এসে
অবশিষ্ট নামায পুরো করবে যতক্ষণ সে কথা না
বলে। (আব্দুর রাযযাক: ৩৬০৯, পৃষ্ঠা: ২/৩৩৯)
এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের
রাবী এবং হাদীসটির সনদ সহীহ।
তৃতীয় দলিলঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻟْﻬَﻴْﺜَﻢُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﺭِﺟَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞُ ﺑْﻦُ ﻋَﻴَّﺎﺵٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺟُﺮَﻳْﺞٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ، ﻋَﻦْ
ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻣَﻦْ
ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻗَﻰْﺀٌ ﺃَﻭْ ﺭُﻋَﺎﻑٌ ﺃَﻭْ ﻗَﻠَﺲٌ ﺃَﻭْ ﻣَﺬْﻯٌ ﻓَﻠْﻴَﻨْﺼَﺮِﻑْ ﻓَﻠْﻴَﺘَﻮَﺿَّﺄْ ﺛُﻢَّ
ﻟْﻴَﺒْﻦِ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻼَﺗِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻻَ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢُ
মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া রহ. সূত্রে হযরত আয়েশা রা.
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ
করেছেন: নামাযরত অবস্থায় কারও বমি হলে, নাক
দিয়ে রক্ত পড়লে, খাদ্য বা পানীয় পেট থেকে
মুখে আসলে অথবা মজী বের হলে সে যেন নামায
থেকে ফিরে গিয়ে অযু করে পুনরায় উক্ত নামাযের
বাকী অংশ পূর্ণ করে; যতক্ষণ সে এ অবস্থায় কথা
না বলে। (ইবনে মাজা: ১২২১, পৃষ্ঠা: ১/৮৫)
এ হাদীসের সনদে ইসমাঈল বিন আইয়াশ নামক
রাবীর বর্ণনা শাম ব্যতীত ভিন্ন দেশের রাবীদের
ক্ষেত্রে সহীহ নয়। আর এ হাদীসে তাই ঘটেছে।
অর্থাৎ, তিনি ইবনে জুরাইজ হতে বর্ণনা করেছেন
যিনি মক্কী রাবী। আল্লামা যাইলাঈ বলেন: ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺪﺍﺭﻗﻄﻨﻲ ﺑﺴﻨﺪﻩ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺞ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﺮﺳﻼ ﻭﻗﺎﻝ : ﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ
“ইমাম দারা কুতনী এ হাদীসটিকে পূর্বোল্লিখিত
মুরসাল সনদে বর্ণনা করে এটাকে সহীহ বলেছেন”।
তবে এতে আমাদের দলীল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
কারণ, মুরসাল হাদীসকে আমরা দলীল হিসেবে
গ্রহণ করে থাকি।
তিনি আরও বলেন: ইয়াহইয়া বিন মাঈন ইসমাঈলকে
নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর নির্ভরযোগ্য রাবী যদি
কোন বাড়তি বর্ণনা করেন সেটা গ্রহণযোগ্য। সে
হিসেবে হযরত আয়েশা রা.-এর নামসহ হাদীসটি
মুত্তাসিল হিসেবেও গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথে কোন
বাধা থাকছে না। এ কারণে আল্লামা যাইলাঈ
নাসবুর রায়াহ কিতাবে এ হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন। উপরন্তু, মুওয়াত্তা মালেক ও মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক-এ ইবনে উমার রা. হতে এ অর্থে
সহীহ সনদে মাউকুফ হাদীস প্রমাণিত। তাই অন্য
হাদীসের সমর্থনের কারণেও এটা গ্রহণযোগ্য।
৪র্থ দলিলঃ
ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺣَﺪِﻳﺚُ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺛَﺎﺑِﺖٍ، ﻓَﺮَﻭَﺍﻩُ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺪِﻱٍّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜَﺎﻣِﻞِ ﻓِﻲ
ﺗَﺮْﺟَﻤَﺔِ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻔَﺮَﺝِ، ﻋَﻦْ ﺑَﻘِﻴَّﺔَ ﺛَﻨَﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑْﻦِ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ
ﺑْﻦِ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑَﺎﻥَ ﺑْﻦِ
ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦِ ﻋَﻔَّﺎﻥَ ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺛَﺎﺑِﺖٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺩَﻡٍ ﺳَﺎﺋِﻞٍ " ﺍﻧْﺘَﻬَﻰ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ
ﻋَﺪِﻱٍّ : ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﻟَﺎ ﻧَﻌْﺮِﻓُﻪُ ﺇﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﻫَﺬَﺍ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﻦْ
ﻟَﺎ ﻳُﺤْﺘَﺞُّ ﺑِﺤَﺪِﻳﺜِﻪِ، ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻪُ ﻳُﻜْﺘَﺐُ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻣَﻊَ ﺿَﻌْﻔِﻪِ ﻗَﺪْ
ﺍﺣْﺘَﻤَﻠُﻮﺍ ﺣَﺪِﻳﺜَﻪُ، ﺍﻧْﺘَﻬَﻰ . ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﺎﺗِﻢٍ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻌِﻠَﻞِ :
ﺃَﺣْﻤَﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻔَﺮَﺝِ ﻛَﺘَﺒْﻨَﺎ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻣَﺤَﻠُّﻪُ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺪْﻕُ
হযরত যায়েদ বিন সাবিত রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স.
ইরশাদ করেছেন: প্রবাহিত রক্তের কারণে অযু
করতে হবে। হযরত ইবনে আদী রহ. বলেন: এ হাদীসটি
আমরা শুধুমাত্র এখানে উল্লিখিত আহমাদের
সূত্রেই জেনেছি। আর তিনি এমন ব্যক্তি নন যার
হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া যায়; তবে তাঁর হাদীস
লেখার যোগ্য। কেননা তিনি জঈফ হওয়া সত্ত্বেও
লোকেরা তার হাদীস গ্রহণ করেছেন। হযরত ইবনে
আবী হাতিম ‘কিতাবুল ইলাল’-এর মধ্যে বলেন:
আহমাদ বিন ফারাজ-এর হাদীস আমরা লিখেছি।
আর আমাদের নিকটে তিনি সত্যবাদী। (নাসবুর
রায়াহ: ১৭ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)
আল্লামা যাইলাঈ ‘নাছবুর রায়াহ’ কিতাবে ১৭
নম্বর হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রথমে ইবনে আদীর
‘কামিল’ কিতাব থেকে ২৯ নম্বর রাবীর ব্যাপারে
আলোচনা থেকে নিন্মে বর্ণিত উদ্বৃতি নকল করেন:
ﺍﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﺑﻦ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺃﺑﻮ ﻋﺘﺒﺔ ﺍﻟﻜﻨﺪﻱ ﻣﺆﺫﻥ ﺟﺎﻣﻊ
ﺣﻤﺺ ﻗﺎﻝ ﻟﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻛﺎﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻮﻑ
ﻳﻀﻌﻔﻪ
অতঃপর এর ব্যাখ্যায় বলেন: ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺗﻢ ﻓﻲ
ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻞ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﻛﺘﺒﻨﺎ ﻋﻨﻪ ﻭﻣﺤﻠﻪ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﺍﻟﺼﺪﻕ
“ইবনে আবী হাতিম কিতাবুল ইলালে বলেন: আমরা
আহমাদ ইবনুল ফারাজ হতে (হাদীস) লিখেছি।
আমাদের নিকটে তাঁর অবস্থান হলো তিনি
সত্যবাদী”।