somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিস্তৃত অনুভূতির দ্বার-রায়ান (১)

০৯ ই মে, ২০১১ সকাল ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ হঠাৎ অনেক কিছু মনে পড়ছে কেন জানি বারবার।আমার বয়স তখন ২৪, প্রথম মা হওয়ার অনুভুতি আমার সবটা জুড়ে! কেমন জানি কৌতুহল,উত্তেজনা আর ভয়ের কাঁপুনি দিয়ে যাচ্ছিল।একদম স্পষ্ট মনে আছে, প্রথম যেবার আলট্রাসনোগ্রামের জন্য গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার আপাটা তখন সনোগ্রামের মেশিনটা নিয়ে আমাকে পরীক্ষা করছিলেন, আর আমি কেবল মুখখানা উঁচু করতে ব্যস্ত।খালি উঁকি দিয়ে দেখতে চাচ্ছি কম্পিউটার স্ক্রিনে..তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না।তবুও আমার ভেতর ভীষণ রকম শিহরণ খেলে যাচ্ছিল।মনে হচ্ছিল-এই যে আমার সোনাটা।আমার মানিকটা আমার ভেতরে আমার সত্তার মাঝে মিশে আছে।একটা মানুষ আমার ভেতরে বাস করছে, আমার অস্হিত্বে মিশে আছে একটা ছোট প্রাণ-অন্যরকম অনুভুতি।
সৃষ্টির প্রচন্ড রকম অনুভুতি আমার মধ্যে তখন। নামাযে বসে বারবার শুধু চাওয়া-সব ঠিক মত হোক খোদা! প্লিজ! সব কিছু তুমি সহজ করে দাও!!
প্রথম প্রথম যখন আমার মাঝে তার সাড়া পেতাম, আমি উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতাম।
প্রথমদিন যখন ওর নড়াচড়া স্পষ্ট বুঝতে পারলাম,কি খুশি আমি! সাথেসাথে বাবুর বাবাকে ফোন দিয়ে জানালাম,সেও অনেক বেশি খুশি হয়েছিল।সারা বাড়ি যেন আনন্দে ভেসে যাচ্ছিল।প্রথম সন্তান দুই বাড়িতেই।নানা নানী,দাদা দাদীর খুশির অন্ত নাই।
আস্তে আস্তে দিন ঘনিয়ে আসতে লাগল।এরপর দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক ফুটফুটে শিশু।আমার ছেলে, আমার একমাত্র ছেলে রায়ান।
রায়ান অর্থ স্বর্গের সব চেয়ে বড় দরজা।আমার জন্য ঐ তো সব আনন্দের অন্যরকম এক অনুভুতির দ্বার হয়েই পৃথিবীতে এলো।
আমি আমার বাবুটাকে ছুঁই, খুব সাবধানে।যেন ও ব্যাথা না পায়। কারো কোলে দেয়ার আগে বারবার জিজ্ঞেস করি- হাত ধুয়েছো ঠিক করে?
শক্ত করে ধরবে! আরে আরে আস্তে, আমার আব্বুটা ব্যাথা পাবে তো!! উফ! তোমরা যে কী!!
আমার এসব দেখে মুরব্বিরা সবাই হাসে। আমার মধ্যে তখন পুরোদমে মাতৃত্বের স্বর্গীয় অনুভব। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ লাগে। বাবুর বাবাকে আগে বলতাম- মেয়ে হওনি,বুঝবে কি করে কষ্ট!
এখন যখন সে আমার এসব দেখে হাসে, তখন সেই আমিই ফোড়ন কেটে বলি-"মেয়ে হওনি, বুঝবে কী করে মাতৃত্বের অনুভুতি! মিস করলে এত বিশাল এক অনুভব!" নিজের প্রাণটা দিয়ে যেন ভাগাভাগি করে একটা মানুষকে নিয়ে আসা। প্রথম নিজের বলে পাওয়া কিছু, যেটা শুধুই আমার। যাতে আমারও অবদান আছে। অন্যরকম সুন্দর!
বাবুকে নিয়েই কেটে যেত আমার সারাটা দিন। বাবু ঘুমিয়ে গেলে আমি চেপে ধরে থাকতাম আমার বুকে।আস্তে আস্তে আমার আঙুল টা দিয়ে দিতাম ওর মুঠোর ভেতর। গালটা দিয়ে গালটা ছুঁয়ে দিতাম।পা টা ধরে আমার গালে লাগিয়ে রাখতাম।
বাবুর মাথাভর্তি চুল। খুব খুশি লাগত আমার। আমি এমনটাই চাইতাম।সব যেন স্বপ্ন লাগতে লাগল।
আস্তে আস্তে একটু একটু বড় হতে লাগল।বাবুর যখন ছয় মাস, সবাই যখন বাবুর দিকে তাকিয়ে হাসে-বাবুর কোন প্রতিক্রিয়া দেখিনা। দুই একজন কীসব জানি বলতে লাগল। আমি গা করিনা। আমার কাছে আমার বাবুটা অলস বলে মনে হয়।তবে কোন কিছুতেই ওর কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়াটা আমারও কেমন যেন ঠেকত! আমার রায়ান আমার দিকে তাকায় না। ওর বাবা ডাকলে ফিরেনা। কেমন যেন! আমার খুব কষ্ট হত। মনে হত, আমার কি কোন ত্রুটি হয়েছিল ওকে জন্ম দিতে? নিজেকে কেমন অপরাধী লাগত! এত কীসের অভিমান তোর বাবা? মা-র দিকে একবার ফিরেও তাকাস না! বুক ফেটে যেত কষ্টে!
শুধু মনে হত, যেন সবাই যা ধারণা করছে তা না হোক।
আমি রায়ানের দিকে তাকায়ে থাকতাম। ও যখন ঘুমাতো, আমার চোখ ফেটে শুধু কান্না আসত! আমি বুকের মধ্যে চেপে ওকে মিশিয়ে নিজের মধ্যে আকড়ে ধরতাম, আর বারবার উপরে মুখ তুলে শুধু বলতাম
"ইয়া আল্লাহ!! আমার সন্তানটাকে দেখো, ওর খেয়াল রেখো খোদা! যখন তুমিই দিলে এত স্বপ্ন দিয়ে,আমার করে যখন তুমিই ওকে দিলে আমানত হিসেবে, সব ঠিক করে দাও হে করুণাময়!"
আমার হু হু করা কান্নাগুলোর উত্তর মেললো আর কিছুদিন পরই....।

(চলবে)

রায়ান-২

রায়ান-শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১১ সকাল ১০:৫৫
৫০টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×