somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিস্তৃত অনুভূতির দ্বার- রায়ান (২)

১২ ই মে, ২০১১ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বের পর

আমার অবস্হা দেখে বাবুর বাবারও খুব চিন্তা হতে লাগল। কয়েকদিন পরই গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার আমাদেরকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। রায়ানকে পরীক্ষা করলেন। আমার ছেলেটা এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছিল। আশেপাশের মানুষজন খুব বিরক্তি ভরে দেখছিল। কষ্ট হচ্ছিল আমার। শুধু মনে হত- কিসে কান্না থামবে আমার বাবুটার? আমার সাধ্যের মধ্যে আমি সব করতে রাজী আমার সোনামানিকটার জন্য। আমার সাধ্যের বাইরেও কিছু করতে হলে তাও করতে চেষ্টা করব আমি। নিজের জীবনের চেয়ে ওর মূল্য যে কত বেশি সেটা যেদিন ও আসল পৃথিবীতে সেদিনই বুঝে গিয়েছি প্রবলভাবে। বারবার মনে হচ্ছিল যদি আমি নাও থাকি, আমার বাচ্চাটা এই পৃথিবীর আলো দেখুক। আমায় হায়াতটা আল্লাহ ওকে দিয়ে দিক। ওর সব কষ্ট আমাকে দিয়ে যেন ওর জীবন সবটুকু আনন্দে ভরে যায়। আমার ভিতরে থাকার সময়গুলো, ওর আসার সময়ের সেই উদ্বেগগুলো আর ওর মুখ দেখে সব কষ্ট মুছে যাওয়া থেকেই আমি জানি, আমার এতবছরের চেনা, এত বছরের বেঁচে থাকা এই প্রাণটার চেয়েও এই অল্প কয়দিনের কাছে আসা মানুষটা, আমার সন্তানটা আমার জন্য কতখানি। আমার নিজের চাইতেও অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ ও আমার জন্য।

কারণ ওর জন্মে কিছু হলেও যে অবদান আমার। একবারের জন্য হলেও স্রষ্টার সেই পরম মমতা যে টের পেয়েছি আমি। প্রতিনিয়ত হারানোর ভয় থেকে কিছু পাওয়াতো তাই এত অমূল্য মনে হয়। কোন কিছু দিয়েই এর তুলনা হয়না, আমাদের নিজেদের জীবন দিয়েও না। তাই যখন ওকে কাঁদতে দেখি, আমি সহ্য করতে পারিনা। বুঝতে পারিনা কি করব তখন। কিসে আমার বাবুটার একটু ভাল লাগবে!

ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আর বললেন মাস খানেক পর যেতে। ডায়াগনোসিস করা হল রায়ানকে। তার আরও কিছুদিন পর গেলাম আমরা ডাক্তারের কাছে। উনি কেমন যেন খালি সময় নিচ্ছেন। আরও কতগুলো টেস্ট করতে বললেন। ফ্যামিলি হিস্ট্রি দিতে বললেন। কি যে দিন কাটছিল আমার সেই সময়গুলোতে! তারপর একদিন আমাকে, রায়ানের বাবাকে বললেন যেতে।
যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ মুখ থমথম। কি কি জানি বুঝাতে লাগলেন। আমার সহ্য হচ্ছিলনা। বারবার মনে হচ্ছিল- "কি হয়েছে আমার বাবুটার? উনি কেন এত সময় নিয়ে প্রস্তুত করছেন আমাদের। যা হবে আমাকে বলে দিক! ভাল খারাপ যা-ই হোক!!" আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করলেন ডাক্তার। চার অক্ষরের একটা শব্দ মুহূর্তে পাল্টে দিল আমার জীবনের মানে।

অ টি জ ম!!

আমার ছেলের মধ্যে এ.এস.ডি সমস্যা পাওয়া গেছে। ক্লাসিক লেভেলে রয়েছে ওর অটিজম, তবে আমরা অত দেরি করিনি বললেন ডাক্তার। আমি সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করলাম-
“আমার বাবু সুস্হ হয়ে যাবে তাহলে? ওর অটিজম সেরে যাবে?? আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মত ও হাসবে, খেলবে, মা বলে দৌড়ে আসবে?”
ডাক্তার অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। শেষে বললেন, অটিজম কখনও সেরে উঠার না। আমার রায়ানকে সারাটা জীবন এই অটিজমকে নিয়েই বাঁচতে হবে। সেই সাথে আমাদেরও। এর কোন ওষুধ নাই। তবে বেশ কিছু থেরাপি আছে, ট্রিটমেন্ট আছে, যাতে পরিস্হিতি ভাল হয়। আমার কোন কথাই কানে যাচ্ছিল না যেন। চারপাশের পৃথিবীটা অসহ্য লাগছিল। সবকিছু শূন্য লাগছিল। নিরর্থক সব। কানের কাছে যেন হঠাৎ করে সব শা শা করে আশপাশ থেকে শব্দরা সব হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি শুধু অনেকক্ষণ পর বাবুর বাবার শার্টটা খামচে ধরে বললাম- “বাসায় চল। আমার ভাল লাগছেনা।“

বাসায় ফিরে আমি একা রুমে লাইট বন্ধ করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। কাউকে আসতে দিচ্ছিলাম না। রায়ানের বাবাকেও না। আমার সহ্য হচ্ছিলনা কিছু। মনে হচ্ছিল আমার কি কোন দোষ রয়েছে? আমার চিৎকার করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। বারবার উপরে তাকিয়ে স্রষ্টার উপর অভিযোগ করছিলাম....
" যদি ১৫০টা বাচ্চার মধ্যে একজনের বেলায় এটা হয়, তবে কেন আমার বেলায়ই করলে সেটা? কি করেছি আমি তোমার?? সব কিছুতে সবসময় তো তোমার কাছেই সাহায্য চেয়েছি। সবসময় তো তোমার কাছেই হাত তুলেছি। তুমি ছাড়া আর কারোর ইবাদত করিনি, চেষ্টা করেছি তোমার সব কিছু মেনে চলতে, তবে কিসের শাস্তি দিলে তুমি আমায় খোদা? আমার বাচ্চাটাকে কিসের জন্য এমন করলে? এইটুকু বাচ্চাকে সারাজীবন এই কষ্ট নিয়ে বাঁচতে হবে! কেন করলে তুমি এমন? কি করেছিলাম আমি? আমার রায়ান??? এত পরীক্ষা কেন নিচ্ছ আল্লাহ?? আমিতো এই পরীক্ষার যোগ্য নই। কেন আমারই আমার বাবুটারই পরীক্ষা নিতে হবে তোমার?? কেন আর ১৪৯টা মায়ের মত বাচ্চাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অধিকারটা কেড়ে নিলে আমার থেকে? আমি কি এতই খারাপ খোদা??? এতই কি পাপী যে আমার শাস্তি তুমি আমার নাড়িছেঁড়া ধনটাকে দিচ্ছো???? তুমি কি শুনতে পাওনা খোদা? কেন কিছু করছো না? কেন????"

(চলবে)

রায়ান-শেষ পর্ব

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১১ সকাল ১১:২৪
৩৮টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×