আমি ফোন রেখে ওর বাসার কাছে চলে যাই। আমি বাসা চিনিনা। তারপর ওকে ফোন দেই। ও ফোন ধরে আমাকে বলে অপেক্ষা করতে, কিছুক্ষন পর ও আসছে সেখানে যেখানে আমি আছি।
:তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি তো এমনি বলছিলাম। আমি তোমাকে আমার ঘরে আসতে বলব এটা তুমি ভাবলে কেমন করে। আমার বাসার মালিক তারপর অন্যান্যো সবাই কি ভাববে। আমরা একটা সমাজে বাস করি সেখানে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
আমি তাকে সরাসরি বলার চেষ্টা করি অনেকবার সে আমার কোন কথাই শুনেনা। সে বলতে থাকে, আগে চল এখান থেকে। তুমি আমাকে জ্বরের মধ্যে কষ্ট দিচ্ছ।
জানিনা, আমি কি পাগলামি করছিলাম কিনা । সে আমাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিল, আমার পাশে বসে আমাকে বলছে, আমরা ভাল বন্ধু। তোমার এভাবে আসাটা ঠিক হয়নি। রবিন রিক্সাআলাকে বলেছিল আমার ঘরে নামিয়ে দিতে। মাঝপথে ও নেমে গেল।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আমি বাসায় চলে আসলাম।
কাল সারারাত ঘুম আসেনি। সারা রাত জেগে ছিলাম। সকালে রবিন ফোন দিল।
:এখন কি ভাল আছ।
:তুমি ভাল আছ। খেয়েছ।
:আরে উঠেই তোমাকে ফোন দিলাম।
:জ্বর কি কমেছে।
:হা এখন ভাল আছি। আচ্ছা কাল তুমি এমন কেন করলে
:তুমি বুঝনা আমি কেন এমন করলাম
:বুঝছি। এটা কি তোমার করা ঠিক হয়েছে।
:কি বুঝেছ।
:তুমি আমাকে ভালবাস। অনেক শুনেছি আর ভাল লাগছে না। আমি বন্ধুর উপর কোন সম্পর্ক মানিনা। আমি সুন্দর করে কথা বলা বা তোমার কেয়ার মানে এই না যে আমি তোমাকে খুব ফিল করছি। আর তুমি বিবাহত। আমরা ভালো বন্ধু। সবসমই থাকব তুমি চাইলে।
আমার চোখে জল। আমি জিজ্ঞেস করি
: রথির সাথে বাড়াবাড়িটাকে কি বলে...
:স্টপ ইট, ও শুধু আমার বন্ধু। আর সত্যি করে বলতে আমি মেয়েদের সহ্য করতে পারিনা। তাই অনেকের সাথে কথা বলি। বন্ধুই ভাবতে ভাল লাগে জীবন সঙ্গি করে সারা জীবন একজনরে ঝেলতে পারবনা।
আমি ফোনটা রেখে দেই। এখন বুঝতে পারছি আমি কানতে চেষ্টা করছি কিন্তু চোখে জল নেই সারা রাত ঘুমাইনি। নিজেকে খুব দূর্বল মনে হচ্ছে। এখন তো আরও ঘুম আসছেনা।
কলিং বেল বাজল। রথি আর শ্রাবণ আসল। দরজা খুলতে না খুলতেই শ্রাবণ আমাকে ঝাড়া শুরু করল।
এই তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কি করছিস। একটা কাজও কি ভেবে করছিস। তুই আর আমাদের সেই পৃথি না। তুই বিবাহিত এটা কি ভুলে গেছিস। শশুর বাড়ি থাকিস। সেখানে যদি কেও জেনে ফেলে ব্যপারটা কি দাড়াবে জানিস। তুই একটা সিক মেয়ে। বলেছিলাম একবার আমার কথা ভাব। না মায়ের ঠিক করা ছেলেটির সাথে বিয়ে করব। এখন দেখ কি হল। আচ্ছা করলি তো করলি এসব কি শুরু করেছিস।
আমি নিশ্চুপ কিছুই আমার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। এবার রথি বলা শুরু করল,
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম যখন কাল রবিন আমাকে তোর ব্যপারে বল্ল। আমি তো ভাবতে পারছিনা তুই এটা কেমন করে করলি। তুই শিক্ষিকা হয়ে যদি এমন করিস তাহলে ছাত্র ছাত্রীরা কি করবে। রবিন আমাকে ভালবাসে আমি তাকে ভালবাসি। তুই কেন এর মাঝে আসছিস।
আমার কানে শুধু এই কথাই বাজছে তুই কেন আমাদের মাঝে আসছিস। আমি স্তব্ধ, কিছুই বলছিনা। আমার কিছুই মনে নেই এর পর আমি কি করেছি। কথন শ্রাবণ রথি চলে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠে আমার মনের ব্যথাটি ডায়েরিতে উঠাচ্ছি। আমি বুঝে পাচ্ছিনা। রথি কি সত্যি বলছে না রবিন সত্য বলছে।
আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। আমার যখন তেইশ বছর তখন আমার বাবা সন্ত্রাসিদের গুলিতে মারা যায়। অনেক লাশের মধ্যে বাবার লাশ সনাক্ত করে চিনে নিতে হয়েছিল আমাকে । যে সময়টা ছিল আমার স্বপ্ন দেখার সময়। তা না করে আমার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল মায়ের আর আমার একমাত্র ছোট বোনের। প্রথমে বাবার পোস্টের চাকরিটা করলাম পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছি। বাজারঘাত, সংসার পড়াশোনার মাঝে কোন স্বপ্ন দেখতে পারিনি।
কত স্বপ একসময় দেখেছিলাম। আমাদের একটা সুন্দর ঘর হবে। সেই ঘরটি আমি আর আমার আমি সুন্দর করে সাজাবো। আমাদের মধ্যে প্রতিদিন মিস্টি ঝগড়া হবে। ও আমার চুলগুলো ধরে বলবে এই চুলের মধ্যে মরে যেতে ইচ্ছে করে। ও ঘুম থেকে উঠতে চাইবে না আমি গরম চায়ে ওর আঙ্গুল ডুবায়ে ওকে প্রতিদিন উঠাব। সবই স্বপ্নই তো কাদার সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি বড়দের সম্মান করি মামার পছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে হল। মায়ের জোরে রাজি হলাম। ভাবছিলাম তার সাথে আমার স্বপ্ন সাজাব। নতুন করে স্বপ্নের জাল বুনবো। কিন্তু তাও আমার কপালে লেখা নেই, ছেলে আমেরিকা থাকে বিয়ের পরে দশদিন আমরা একসাথে ছিলাম। আজ তিনমাস হয়ে গেল। কোন দিন সে আমার সাথে ভাল করে কথা বলেনি। সপ্তাহে একবার ফোন করে তাও দুই মিনিটের বেশি কথা বলে না। মায়ের সাথে দশ মিনিটের বেশি কথা বলে। আমি কোন সমস্যায় আছি কিনা কখনও জানতে চাইনি। এমন বিয়ে করার থেকে না করাইটা ভালো ছিল। তা মনে হচ্ছে আমি ভুলে গেছিলাম যে আমি বিবাহিত। আমি রবিনের মাঝে আমার স্বপ্নগুলোর সত্যি হওয়ার আলো খুজে পেলাম। তাই আমি ধীরে ধীরে তার দিকে ঝুকে পড়ি। কেওকে ভালবাসাটা কি দোষ ছিল। আমার চাওতে কি কোন দোষ আছে.............
Click This Link
পূর্বের পর্বরে জন্য ক্লিক করুন।