somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এন ইসলাম রনি
পুরো নাম মুহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম রনি, জন্ম- যশোর, পৈত্রিক নিবাস- ঝিনাইদহ। পড়ালেখা করছি বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ। ঠিকানা- https://www.facebook.com/nasirul.rony

ভয়

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহমান ঘুম থেকে ধড়পড় করে জেগে উঠলো। ঘরে জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে না, পুরো ঘর অন্ধকার। রাত ক'টা বাজে বা এখন রাত কি দিন বোঝাও যাচ্ছে না। সে গত দু মাস হয় শহরের পুরনো অংশের এ বাসায় উঠেছে। অপ্রস্থ এক গলির শেষ মাথায় এক তিন তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার ঘর। বাড়িটা পুরোটা ই বলতে গেলে পরিত্যাক্ত। নিচ তলার ও দোতলার অন্য ঘর গুলো সবসময় তালা বন্ধ ই থাকে। একমাত্র দায় ঠেকে না গেলে গলির শেষ মাথার এমন পুরনো বাড়ি কেউ ভাড়া নিতে আসার কথাও নয়। বাড়িওয়ালা এ বাড়িতে থাকেন না। তিন তলায় যাও একটা ভাড়াটে পরিবার রয়েছে যাদের সাথে রহমানের তেমন একটা দেখা হয় না। তবে তার দোতলার ঘর থেকেই পরিবারটির প্রতিদিনকার আবহাওয়ার খবরাখবর তার পাওয়া হয়ে যায়। রহমানের ঘরটি সিঁড়ি দিয়ে উঠেই পশ্চিমে। আসবাব বলতে খাট আলনা টেবিল আর একটা চেয়ার দিয়েই পুরো ঘর বন্দি। ঘরের দক্ষিণে একটি জানালা থাকলেও তার ওপাশেই পাশের বাড়ির নিরেট দেওয়াল। বৈদ্যুতিক বাতি ই আলোর একমাত্র উৎস। তাই হঠাৎ দিন রাত বোঝা কঠিন।



রহমান বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টা নিয়ে দেখলো পৌনে আট টা বাজে। তেমন রাত নয়, যদিও অন্ধকার ঘরে গভীর রাতের নীরবতা। তিনতলার থেকেও কোন শব্দ আসছে না, আসার কথাও না ঈদের ছুটিতে তারা দেশের বাড়ি গেছে, যাওয়ার আগে ভাড়াটে ভদ্রলোক নিজে এসে বলে গেছেন।



দুপুরে লাইট বন্ধ করেই রহমান ঘুমিয়ে পড়েছিলো কিন্তু ঘুমটা ভেঙেছে একটা অস্বস্তি নিয়ে। ঘুমের ভেতর সে কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছে তাও মনে পড়ছে না। অন্ধকার ঘর দমবন্ধ একটা পরিবেশ কিন্তু সেটা কারণ নয় অন্য রকম একটা অস্বস্তি হচ্ছে তার। রহমান খাট থেকে নেমে আলো জ্বালালো আর ঘটনা টা ঘটলো তখন ই। খুব আকস্মিক তীব্র একটা হাসির শব্দে সে কেঁপে উঠলো। কাঁপতে কাঁপতেই চেয়ার ধরে পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগলো -এই যা যা......। এদিকে যে হাসছে সে যেন এক যুগ ধরে হেসেই যাচ্ছে কোন এক পৈশাচিক আনন্দে। সে হাসির সাথে কোন মানুষের কুটিলতম হাসির ও তুলনা চলে না।



হাসিটা থামার পর রহমান ঘটনাটির আকস্মিকতায় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। সে বুঝে উঠতে পারছে না একটু আগে তারসাথে কি ঘটে গেল, সেই বা কাকে তাড়াতে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছিল। রহমান দরজা খুলে ঘরের সামনের সিঁড়ি তে কাওকে দেখতে পেলো না পাওয়ার কথাও নয়। পাশের ঘর গুলো বরাবরের মতোই তালা বন্ধ। পুরো ব্যাপারটাকে মনের ভুল বলে নিজেকে বোঝাতে চাইলেও একটা খচখচে ভাব তার থেকেই গেলো। এদিকে ছুটি শেষে অফিসের ব্যস্ততায় ঘটনাকে কিছুটা ভুলেই গিয়েছিলো।



এর মাঝে মাসখানিক পেরিয়ে গেছে, তিন তলার পরিবারটিও ফিরে এসেছে তাদের পারিবারিক কলহ, শিশুর কান্না, টেলিভিশনের শব্দের মাঝে কোন অস্বাভাবিকতার ছাপ নেই। দিনরাত গুলো নিয়ম মেনে একঘেঁয়ে কেটে যাচ্ছে। প্রতিদিনকার মত অফিস শেষে কলীগের সাথে আড্ডার পর হোটেল থেকে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমতে গেলো রহমান তিনতলায় স্বামী-স্ত্রীর তখন ঝগড়া চলছে। ঝগড়ার বিষয় অতিতুচ্ছ। এতোসব তুচ্ছ বিষয়ে মানুষ ঝগড়া করে মাঝরাত পার করে দেয় কিভাবে মাঝে মাঝে রহমানের কাছে এটা বিস্ময়কর লাগে। তার ঘরে কোন রেডিও বা টিভি নেই অধিকাংশ দিনই সে এই ঝগড়াটা উপভোগ করার চেষ্টা করে। আজ এই ঝগড়ার মাঝেই রহমান কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তার মনে নেই, যখন ঘুমটা ভাঙলো তখন ঘরে জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে, উপর তলার ঝগড়ার শব্দ আর পাওয়া যাচ্ছে না, চিরদিক নিস্তব্ধ তাবৎ পৃথিবীটা যেন দম বন্ধকরে চেয়ে আছে কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায়।



ঘুম ভাঙার সাথে সাথে রহমানের পুরনো অস্বস্তিটা ফিরে এসেছে, সাথে তার হাত পা গুলো যেন অবশ হয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে তার পিঠের কাছে একজন থাবা পেতে বসেআছে, যার নিঃশ্বাসের শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে। যে বসে আছে সে তাকেই দেখছে। রহমান পেছনে না ফিরেও স্পষ্ট অনুভব করছে অন্ধকারের ভেতর জমাট অন্ধকার একটা ছায়া, যার ভেতর থেকে একজোড়া চোখ তারদিকে চেয়ে আছে তীব্র জিঘাংসা নিয়ে, যেন সে পাশ ফিরলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।



অবশ হাত দিয়ে হাতড়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল ফোন টাতে আলো জ্বাললো সে। ফোন ডিসপ্লেতে রাত তিনটা। তখনো শিরশিরে অনুভূতি অবশ করে রেখেছে রহমানকে। তার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ফোনে পরিচিত কারো কন্ঠস্বর তার প্রয়োজন, এই রাতে কেউ কি ফোন ধরবে? সে তার কলেজের এক বন্ধুকে ফোন দিলো কিন্তু ওপাশে কেউ রিসিপ করলো না। অবশেষে নিজের সবটুকু সাহস একত্র করে কাওকে দেখবে একরকম ধরে নিয়েই পেছনের দিকে তাকালো। কিন্তু সেখানে কেউ নেই, ঘর ডিম লাইটের সবুজ আলোয় সবুজ হয়ে আছে। এরপরের মাসেই রহমান নতুন একটা মেসে উঠে গেল যদিও এরমাঝের দিনগুলোতে আর কিছুই ঘটেনি।



চারটি বছর পার হয়ে গেছে, এই চারটি বছরে রহমানের জীবনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। ছোট প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি ছেড়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেছে সে। ভাড়া বাড়ির খুপরি ঘর আর মেচের জীবন কে বিদায় দিয়ে কিস্তিতে দেড়হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্লাট নিয়েছে। সামনের ছুটিতেই গ্রাম থেকে পরিবার কে তার নতুন ফ্ল্যাটে নিয়ে আসবে। সুখ বলতে যদি স্বচ্ছলতা বোঝায় তবে সে সুখি মানুষের শ্রেনীতে পড়ে।



মধ্য জুলাইয়ের বর্ষণ মুখর সন্ধ্যা। কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমের পর তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে সকাল থেকে। আজ রহমান একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে, দুপুরে একটা মিটিং শেষে লাঞ্চের পর। বাড়ি ফিরে পোশাক বদলেই একটু বিশ্রামের জন্য শুয়েছিলো তাতেই টানা আড়াই ঘন্টা ঘুম। যখন ঘুম ভাঙলো মাগরিব পার হয়ে প্রায় রাত নেমে গেছে। জানালা বন্ধ থাকায় ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ। রহমান জানালা খুলে দিলো। ইতিমধ্য বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে তারপরও আকাশ জোড়া মেঘ আসন্ন রাত্রিকে আরো এগিয়ে আনছে ধূসর কালো রঙে।

জানালা থেকে মুখ সরাতেই রহমান স্পষ্ট শুনলো তার ঘরের ভেতর থেকে ভারি পা ফেলে কেউ একজন দ্রুত পাশের ঘরে চলে গেল অথচ পুরো বাড়িতে সে একা। ব্যাপারটা এতো স্পষ্ট এবং আকস্মিক যে অজানা আতঙ্কের একটা স্রোত তাকে জাঁপটে ধরলো। রহমান শোবার ঘরে থেকে ডাইনিং কিচেন বাড়ির সব লাইট জ্বেলে দেখলো কোথাও কেউ নেই। মনের ভুল বলে নিজেকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝাতে চাইলেও তার ইচ্ছে করছে এই বাড়ি ছেড়ে ছুটে চলে যেতে কিন্তু তার মতো প্রাপ্ত বয়স্ক একজন সামান্য একটা শব্দশুনে ভয়ে পালাতে চাইছে এটা নিজের কাছেই কেমন একটা হাস্যকর লাগছে।



রহমান গোসল করে ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করলো। সকালে বুয়ার রেখে যাওয়া খাবার ই রাতে খেয়ে টিভিতে এ চ্যানেল সে চ্যানেল ঘুরে শেষে একটা মুভির পুরোটাই প্রায় দেখে ফেললো। রাত পৌনে বারো টায় ঘুমতে যাবার আগে বাড়ির ডাইনিং কিচেনের লাইট বন্ধ করে শোবার ঘরে আসতেই ফিরে এলো চার বছর আগের সেই হাসি। রহমান পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগলো এই যা যা... যে হাসছে সে যেন এক যুগ ধরে হেসেই যাচ্ছে এ হাসি যেন শেষ হবার নয়।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×