somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রবিনের গল্প

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলোনীর মধ্যে ফেলে রাখা অব্যবহৃত পানির পাইপটা বুঝি আজ এক ইতিহাসের স্বাক্ষী । আশেপাশের মানুষগুলো বোধহয় বিষয়টা খেয়াল করেনি । আর করলেই বা কি, কার কি যায় আসে । এই ঢাকা শহরে এমন দিনের তো আর অভাব নেই যেদিন কারও মন ভেঙ্গে যায় তাসের ঘরের মত । পানির পাইপটার উপর স্ট্যাচুর মত প্রায় ১০-১৫ মিনিট বসে ছিল রবিন । অশ্রুসজল ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখল লিজার চলে যাওয়া ।


বিশ্বাসই হচ্ছিল না ওর । মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে এত দ্রুত ঘটে গেল ঘটনাগুলো । অধিক শোকে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়! আজ তাই নিজেকে পাথর ভাবতে ইচ্ছে করছে ওর । কাল রাতেও প্রায় দেড়টা পর্যন্ত কথা হয়েছিল লিজার সাথে । কি হাসিখুশিই না ছিল সে । অথচ আজ, হায় রে নিয়তি! কত চমৎকারভাবে ধীরে ধীরে, কত সহজেই না বলে ফেলল, "নাহ, আর নয় । আমাদের মধ্যে এতদিন যে সম্পর্ক চলছিল তা এ পর্যন্তই থাকুক । এ ব্যাপারটা নিয়ে তুমি কষ্ট পেও না প্লিজ । তাহলে কিন্তু আমিও অনেক কষ্ট পাব । তুমি আমাকে পারলে ভুলে যেও । আমি আর এর বেশি কিছু ভাবতে পারছি না ।"

কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে চলল লিজা । রবিনের চাপা দীর্ঘশ্বাসগুলো বোধ হয় শুনতে পাচ্ছিল না ও । এমন এক আত্মীয়তার বেড়াজালে বন্দী দুজন যেখানে কোন শুভ পরিণতি আশা করা হয়ত বিলাসিতা ছিল । তবুও একটা চেষ্টা করার সুযোগ তো লিজা দিতে পারতো রবিনকে । রবিন তো তাকে কথা দিয়েছিল বাড়িতে জানানোর । নাহ, আর কোনো সুযোগ নয় । টানা দশটা দিন মন নিয়ে খেলার পর অবশেষে রবিনকে ছুটি দিয়ে দিল সে । জানিয়ে দিল সব শেষ ।

জীবনের প্রথম প্রেম নাকি মানুষ ভুলতে পারে না । সত্যিই কি তাই? আজ বসে বসে আপন মনে সেই হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনের সুখস্মৃতি রোমন্থন করছিল রবিন । শুরুটা হয়েছিল সেই জুন মাসে । রবিনের জন্মদিনের আগেরদিন লিজার সাথে ওর প্রথম পরিচয় । রবিনের বড় মামার আত্মীয় লিজা। ঐদিন রবিনদের হলে এসেছিল সবাই । মামা, মামী, লিজা সবাই একসাথে শপিং-এও গিয়েছিল । যদিও সেদিন একটা বাক্য বিনিময়ও হয়নি ওদের । রবিন এমনিতেই অনেক লাজুক প্রকৃতির । আর আগ বাড়িয়ে কথা বলা - এটা তো ওর দ্বারা এক প্রকার অসম্ভবই । তবুও ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! পরদিনই ফোনে প্রথম কথা হল লিজার সাথে । ব্যাপারটা অবশ্য হত না যদি গর্দভ রবিনটা একটু হলেও ঢাকা শহরটা চিনত । মামার সাথেই কথা বলছিল রবিন । মামাই ফোনটা লিজাকে দিয়ে বলেছিল রবিনকে ঠিকানাটা বুঝাতে । যে লোকেশনই লিজা বলে রবিনের এক কথায় উত্তর, "চিনি না" । তখনকার রবিন তো টোটালই আঁতেল টাইপের ছিল । এখন সে ঢাকা অনেক চিনেছে । কিন্তু যার কল্যানে সে তো চলে গেল আজ বহু দূরে!


হমম, ভালোলাগা বোধহয় এত দ্রুত হয়না - এটা জানত রবিন । মাঝে একটা লম্বা সময় চলে গেল । কোন স্বাক্ষাতই নেই । লিজা নামে যে কাউকে রবিন চিনতো -এটা খোদ রবিনই জানতো না । কিন্তু বিধাতা বোধহয় মনে মনে হাসছিলেন । সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা তখন অত্যাসন্ন - ইংরেজীতে যাকে বলে 'নকিং অ্যাট দ্যা ডোর' অবস্থা । পি.এল চলছে ওদের । পি.এল মানে প্রিপারেটরী লিভ । বাংলায় পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ছুটি । রোজ সকালে তাই অনেক দেরীতে ঘুম ভাঙ্গে রবিনদের । আর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হবার আগে প্রথমেই ফেসবুকে ঢোকার বদ-অভ্যাস কোনদিনই ছাড়তে পারেনি রবিন । আগষ্টের সেই সকালটাও ব্যতিক্রম ছিল না মোটেই । লগইন করতেই ওর চোখে পড়লো একটা অ্যাড ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট । কে সেই মানুষ? - ভাবতে ভাবতে অবাক চোখে রবিন আবিস্কার করল, রিকোয়েস্টটা পাঠিয়েছে লিজা ।


অচেনা মানুষের রিকোয়েস্ট সাথে সাথেই ইগনোর করার পাত্র সে - হোক সে ছেলে অথবা কোন মেয়ে । কিন্তু যখন দেখল মিচ্যুয়াল ফ্রেন্ড ওরই বড় মামা- তখন রবিন বুঝে ফেলল, আরে এই তো সেই লিজা । সাথে সাথেই অ্যাকসেপ্ট করল ও । হায় রে রবিন!ওকি জানতো একদিন এই অ্যাকসেপ্টই তাকে দাঁড় করিয়ে দেবে আজকের এই হৃদয়-বিদারক দিনে । পরদিন ঘটল আরও মজার ব্যাপার, রবিনের সবগুলো ছবিতে কমেন্ট করেছে লিজা । সেই শুরু ... তারপর ফেসবুক, ইয়াহুতে চ্যাটিং - অবশেষে মোবাইলে কথা বলা, ম্যাসেজ পাঠানো ... রবিনদের ক্যাম্পাসেও একবার ঘুরতেও এসেছিল ও। কোন সময় যে রবিনের মনটা চুরিও করে নিল - জানতেও পারল না লিজা ।

প্রথমে রবিন অনেক ভেবেছিল । নাহ, এ হয় না । এ সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না । তবুও আশা ছাড়ল না ও । রবিনের রুমমেট বিপ্লব ব্যাপারটা বোধহয় কিছুটা হলেও টের পেয়েছিল । হাজার হলেও রুমমেট তো, কিছুই গোপন থাকে না । রবিন আর বিপ্লব যেন এক আত্মা দুই প্রাণ । এক্ষেত্রে বিপ্লবই সাহস যোগাল রবিনকে । পরিশেষে যেদিন ও লিজাকে মনের কথাগুলো জানালো সেদিন লিজা প্রথমে খুব অবাক হবার ভান করলেও পরে খুব স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগল । সেদিন রবিন লিজাকে এটাও জানালো যে, সে যেন সরাসরি 'না' করে দেয় ব্যাপারটিতে যাতে ও সহজে যেন মেনে নিতে পারে । কিন্তু আফসোস! প্রতিবার এই প্রসঙ্গে লিজার উত্তর , "নাহ, আমি তো আপনাকে 'না' বলছি না ।"

এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত, লিজা সর্বদাই রবিনকে 'আপনি' বলে সম্বোধিত করতো । ঘটনাক্রমে এই 'আপনি' শব্দটাও 'তুমি' তে পরিবর্তিত হয়েছিল । কিন্তু লিজার মনে কি ছিল, কে জানে! সেই দিনগুলো বুঝি কোনোদিনই মুছে ফেলতে পারবে না রবিন । সেই স্মৃতিময় দশটা দিন। দামী ঘড়িটা যেদিন হারিয়ে গিয়েছিল সেদিন লিজার সে কি কান্না! তখন রবিনের খুব মায়া হচ্ছিল । বারবার ওর চোখের জল মুছে দিচ্ছিল সে। আর মনে মনে ভাবছিল, নতুন ঘড়ি কিনে দেবার কথা । কিন্তু ঐ মুহূর্তে যথেষ্ট টাকাও ছিল না রবিনের । বন্ধু বিপ্লবের কাছ থেকে টাকা ধার করে ওকে ঘড়ি কিনে দিয়েছিল রবিন । আর আজ সেই রবিনকেই ফিরিয়ে দিল সে ।

নাহ, আজ আর কাঁদবে না রবিন । অনেক কেঁদেছে সে । চোখে আর জল নেই । শুকিয়ে গিয়েছে বোধহয় । কার জন্য কাঁদবে ও? কেউ তো ওকে ভালোবাসে না । এখন নিজেকে খুব হালকা লাগছে ওর । এই পৃথিবী অনেক কঠিন । এখন থেকে ওকেও কঠিন হতে হবে । হতে হবে হৃদয়বিহীন পাথরের মত একজন মানুষ ।


[বি.দ্র. এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র হয়ত কাল্পনিক, হয়ত সত্য । আজ আর ইমোটিকন দিলাম না । মনটা খারাপ তো তাই আর লিখতেও ইচ্ছে করছিল না । সবাই ভালো থাকবেন । শুভ রাত্রি । ]
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×