সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন: ইহা একখানা কপিপেস্ট পোস্ট।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ন করা ও সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ কোনো স্থানীয় সরকারব্যবস্থা নয়, এবং এ আইনে পরিষদকে প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত না করা—এ অভিমত দিয়ে আদালত আইনটি অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
এর ফলে আঞ্চলিক পরিষদ আইনের অধীনে গঠিত আঞ্চলিক পরিষদ কার্যকারিতা হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। অন্যদিকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
দুই দিনের রায়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে—এ কথা জানিয়ে রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করতে সরকারপক্ষের আরজি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সংশোধিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের উপজাতীয় হেডম্যান (পাড়াপ্রধান) থেকে অ-উপজাতীয় কি না—এর সনদ নেওয়া, পার্বত্য অঞ্চলে জমি না থাকলে ভোটার হওয়া যাবে না এবং জেলা পরিষদে চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার—এ-সংক্রান্ত চারটি ধারা অসাংবিধানিক বলে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণী নির্ধারণের জন্য কমিশন বা সংস্থার কথা উল্লেখ করে আদালত পাঁচ দফা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
চুক্তি প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে: রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, শান্তিচুক্তি একই রাষ্ট্রের মধ্যে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে অন্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সমঝোতা। এটিকে শান্তিচুক্তি হিসেবে গণ্য করা যায় না। এর মাধ্যমে সংঘাতে লিপ্ত দুটি পক্ষ অস্ত্র সমর্পণে সম্মত হয়েছিল। যার মধ্য দিয়ে শান্তির শর্তাবলি নির্ধারিত হয়েছে। এ জন্য আমরা মনে করি না যে সংবিধানের ১৪৫(১) ও (এ) অনুযায়ী এটি চুক্তি নয়। শুধু রাজনৈতিক চুক্তি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও উপজাতীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে সশস্ত্র বৈরিতা সমাপ্তির লক্ষ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন হয়েছিল। এটি দুটি পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা। এ কারণে এটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিষয় নয়। আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, একটি অনগ্রসর গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিশাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
পাঁচ দফা দিকনির্দেশনা: রায়ে আদালত পাঁচ দফা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এক. পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়িত অংশটুকু তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়েছে। এ কারণে পার্বত্য চুক্তির বৈধতা নিয়ে এ আদালতের বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা নেই। দুই. আঞ্চলিক পরিষদের আদলে সরকার ইচ্ছা করলে বিধিবদ্ধ সংস্থা তৈরি করতে পারে, যার সদস্য সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন। তিন. সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। চার. বিভিন্ন দেশে অনগ্রসর শ্রেণী নির্ধারণের জন্য কমিশন ও সংস্থা আছে। এসব প্রতিষ্ঠান জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও জমির মালিকানা ইত্যাদি নির্ণায়ক ধরে অনগ্রসর শ্রেণী নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের দেশে এটি হয়নি। রাষ্ট্র এ জন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। তবে এটি যৌক্তিক ও সুবিধাজনক পদ্ধতি হতে হবে। পাঁচ. ভূ-কৌশলগত অবস্থান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের প্রেক্ষাপট ও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এনে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আদালতে সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষে কামাল হোসেন, সারা হোসেন শুনানিতে অংশ নেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে মওদুদ আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, বেলায়েত হোসেন ও ইমরান এ সিদ্দিক মামলা পরিচালনা করেন। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান ও রোকনউদ্দিন মাহমুদও বক্তব্য দেন।
জেলা পরিষদের চারটি ধারা বাতিল: রায়ে আদালত জেলা পরিষদ আইনের চারটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় তা বাতিল ঘোষণা করেছেন। এ আইনের ৬(ঙ), ১১, ১৫(খ) ও ২৮ ধারাগুলো সংবিধানের ২৭,২৮(১),২৯(১) ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হওয়ায় তা অসাংবিধানিক বলে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৬(ঙ)তে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কি না, তা উপজাতীয় হেডম্যান থেকে সনদ নিতে হবে। এই সনদ ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং পাসপোর্টও পাবেন না। ১১-তে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জমির মালিক না হলে, স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবেন না। এটি ছাড়া ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবেন না। এটি অ-উপজাতীয়দের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ, তাঁরা দেশের যেকোনো জায়গায় ভোটার হওয়ার যোগ্য। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজাতীয়রা অগ্রাধিকার পাবে বলে ১৫(খ) ধারায় বলা হয়েছে। ধারা ২৮-এ বলা হয়েছে, তিন জেলায় পুলিশ নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকারের কথা।
ফিরে দেখা চুক্তি ও রিট: ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির আলোকে ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন করা হয়। এ ছাড়া পার্বত্য জেলা কাউন্সিল আইন-১৯৮৯-তে সংশোধনী এনে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ সংশোধনী আইন-১৯৯৮ প্রণয়ন করা হয়। আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. বদিউজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ২৯ মে আদালত রুল জারি করেন। পরে ২০০৪ সালে শান্তিচুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী মো. বদিউজ্জামান।
২০০৪ সালের ১ আগস্ট আদালত রুল জারি করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম পার্বত্য চুক্তি নিয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৭ আগস্ট আদালত রুল জারি করেন। এ বছরের শুরুতে রিট দুটির রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১২ এপ্রিল থেকে আদালত রায় দেওয়া শুরু করেন। শেষ করেন গতকাল বিকেলে। আদালত প্রথম রিটের রুল আংশিক গ্রহণ করেন। তবে চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয়বার করা সম্পূরক আবেদন ও অপর রিটের রুল খারিজ করেন।
প্রতিক্রিয়া: অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, আঞ্চলিক পরিষদ আইন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্কেল চিফ ও হেডম্যানদের সনদ দেওয়ার ক্ষমতাসংক্রান্ত কয়েকটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপও বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করা হবে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের ফলে শান্তিচুক্তির জীবন শেষ হয়ে গেল। কারণ, এর অধীনে চারটি আইন হয়েছে। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ আইন অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। ফলে পরিষদ কার্যকারিতা হারিয়েছে। অর্থাৎ পরিষদ বলতে কিছু থাকছে না।
সূত্র: আজকের প্রথম আলো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





