somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসের পথে ... (১০) জাপানের ইতিহাস-২

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ হেইয়ান পিরিয়ডে ( ৮৩৯ সালে) কাঠের তৈরী বৌদ্ধমুর্তি

জাপানের ইতিহাস সুদুর প্রাচীনকাল থেকে শুরু হওয়া এক যুদ্ধের ইতিহাস। এই যুদ্ধ দৈহিক বা অস্ত্রের শক্তি প্রয়োগের চেয়েও বরং মতাদর্শের বিরোধীতার যুদ্ধ। ধারাবাহিক ভাবে সেই ইতিহাস তুলে ধরতেই এই প্রচেষ্টা। প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আজ তুলে ধরছি দ্বিতীয় পর্ব।

প্রথম পর্ব

নারা এবং হেইয়ান পিরিয়ড (খ্রীষ্টাব্দ ৭১০ হতে ১১৮৫)

জাপানে খ্রীষ্টাব্দ ৭১০ সালে নারা-তে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট ভিত্তিক রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন রাজধানীতে প্রচুর বৌদ্ধ মনষ্টারদের পত্তন ঘটে। এই মনষ্টাররা খুব দ্রুত এমন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন যে সেই সময়কালীন সম্রাটের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য এবং কেন্দ্রিয় সরকারকে রক্ষার জন্য রাজধানীকে পরবর্তীতে ৭৮৪ সালে নাগাওকাতে এবং সবশেষে ৭৯৪ সালে কিয়োটো-তে (হেইয়ান) স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে এই কিয়োটোই হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে জাপানের রাজধানী হয়ে থাকে।


ছবিঃ টোডাইজি টেম্পল, ৭৫২ সালে নারাতে প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধদের প্রধান টেম্পল

এই পিরিয়ডের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, জাপানের উপর চীনা প্রভাব কমানোর চেষ্টা। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই প্রভাব না কমে বরং আরো প্রকট হয়। চীন থেকে অনেক গুরুর্ত্বপূর্ণ মতাদর্শ বা ত্বত্ত্ব নিজেদের মতো করে জাপানীজরা গ্রহন করে। প্রশাসনিক সিষ্টেমের পাশাপাশি জনগনের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, যা আসলে চাইনিজ মডেলের একটি রূপ। জাপানের লিখিত ভাষা তিনটি। হিরাগানা, কাতাকানা এবং কান্জি। হিরাগানা এবং কাতাকানাকে একত্রে বলা হয় "কানা"। "কানা" অক্ষরের প্রচলনও এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, যা সত্যিকার অর্থে জাপানীজ সাহিত্যের প্রসারের অগ্রদূত। হিরাগানা এবং কাতাকানা প্রতিটিতে রয়েছে ৪৬ টি করে অক্ষর। কানা - মূলত কান্জিরই সহজতম একটি রূপ। আর কান্জির আদিস্থান ছিলো চায়না। সেখান থেকে কোরিয়ার মাধ্যমে জাপানে এর প্রসারণ ঘটে।


ছবিঃ হিরাগানা অক্ষরসমূহ


ছবিঃ কাতাকানা অক্ষরসমূহ

এই সময়কালীন বেশকিছু বৌদ্ধ মতবাদও চীন থেকে জাপানে আসে, যা পরবর্তীতে জাপানীজ নামে নামান্তরিত হয়। এ সময়কালীন জাপানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা টাইকা রিফর্ম (Taika reforms)। এই রির্ফম মূলতঃ খাজনা ও জমি বন্টনের রিফর্ম। উচ্চহারের খাজনার পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য এসময় অনেক কৃষককেই জমি বিক্রি করে দিতে হয় এবং পরিপ্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে জমিদারী ব্যবস্থা গড়ে উঠে। একটা সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও এইসব জমিদাররা প্রভাবশালী হয়ে উঠেন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

"ফুজিওয়ারা" পরিবার হেইয়ান পিরিয়ডে বেশ কয়েক শতক ধরে একছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক ছিলো। তারা কৌশলগত ভাবে সম্রাটের পরিবারের সাথে ইন্টারমেরেজের মাধ্যমে এবং কিয়োটো ও অন্যান্য গুরুর্ত্বপূর্ণ প্রিফেকচারের রাজনৈতিক অফিসে অবস্থান গ্রহনের মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পায়। ফুজিওয়ারা মিচিনাগার (Fujiwara Michinaga) ক্লানই শেষ ফুজিওয়ারা যিনি ক্ষমতার সর্বোচ্চ শীর্ষে পৌছুতে পেরেছিলেন ১০১৬ সালে।


ছবিঃ ফুজিওয়ারা মিচিনাগা

মিচিনাগার পর ফুজিওয়ারা নেতৃত্বের ক্ষমতা কমতে থাকে। জমিদাররা নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে থাকেন। তারা নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার্থে সামুরাইদের নিয়োগ দিতে থাকেন। মিলিটারী ক্লাস সামুরাইদের উত্থানের ইতিহাসটা এখান থেকেই শুরু।


ছবিঃ সামুরাই যোদ্ধার যুদ্ধের সরন্জাম

ফুজিওয়ারাদের ক্ষমতা ১০৬৮ সালে সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। এসময় নতুন সম্রাট গো-সানজো (Go-Sanjo) নিজেই দেশ শাষনের সিদ্ধান্ত নেন। ফুজিওয়ারা নতুন এই সম্রাটের উপর প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হয়। ১০৮৬ সালে গো-সানজোকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক মন্চের পেছন থেকে ঠিকই তিনি দেশ শাসন করতে থাকেন। ইনসি গর্ভারমেন্ট (Insei government) নামক নতুন ধরনের সরকার গঠিত হয় এসময়। ইনসি সম্রাটরা ১০৮৬ থেকে ১১৫৬ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এরপর নতুন নেতৃত্বে আসেন তাইরা কিউমোরি (Taira Kiyomori)।

দ্বাদশ শতকে দুইটি মিলিটারী ফ্যামিলি প্রচুর ক্ষমতা অর্জন করে। এই দুইটি ফ্যামিলি হচ্ছে - মিনামোটো বা গেন্জি (Minamoto or Genji) এবং টাইরা বা হিকি (Taira or Heike) ফ্যামিলি। টাইরারা গুরুর্ত্বপূর্ণ অফিস সমূহ হতে ফুজিওয়ারাদের বের করে দেয়। অপরদিকে মিনামোটোরা পর পর দুইটি যুদ্ধের মাধ্যমে (১০৫০-১০৫৯ এবং ১০৮৩-১০৮৭) হনসুর উত্তরাংশ জাপানের নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একই সঙ্গে আরো মিলিটারী অভিগ্গতা অর্জন করে।

১১৫৯ সালে হেইজি-র (Heiji) উত্থানের পর দু্ই পরিবারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ দেখা দেয় প্রকটভাবে। টাইরা কিউমোরি নেতৃত্বে আসেন এবং সম্রাটের আগ্গাভাজন হয়ে ১১৬৮-১১৭৮ পর্যন্ত জাপান শাসন করেন। এসময় তিনি শুধুমাত্র মিনামোটোদের শাসন না মানার বিরোধীতারই সম্মুখীন হননি, বরং একই সঙ্গে বৌদ্ধ মনষ্টারদের দ্বারাও খন্ড খন্ড যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

কিউমোরির মৃত্যুর পর টাইরা এবং মিনামোটো পরিবারের নিজেদের মধ্যে ১১৮০-১১৮৫ সাল পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে লড়াই চলে যা ইতিহাসে জিমপির যুদ্ধ (Gempei War) নামে পরিচিত।


ছবিঃ জিমপি যোদ্ধা


ছবিঃ জিমপি যুদ্ধের অবস্থানগত ম্যাপ

যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মিনামোটো পরিবারের মিনামোটো ইউরিটোমো জাপানের নেতৃত্বে আসেন। সে সময় তিনি তার সকল শত্রু এমনকি দ্বিমতকারী পরিবারের কাছের সদস্যদের সরিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ সামরিক অফিসার - সোগুন (Shogun) হিসাবে নিয়োগ নেন। অতঃপর তিনি তার নিজ শহর কামাকুরা (Kamakura)-তে নতুন সরকার গঠন করেন।


ছবিঃ মিনামোটো ইউরিটোমো


সবাই ভালো থাকবেন...


===============================

তথ্য ও ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট
অন্যান্যঃ ফারুক হাসান-এর ব্লগে প্রকাশিত

===============================

আগের পর্বসমুহঃ
প্রবাসের পথে... (১) ওসাকার অলিগলি...
প্রবাসের পথে... (২) জাপানের ঐতিহ্য...
প্রবাসের পথে... (৩) জাপানীজ কিমোনো...
প্রবাসের পথে... (৪) জাপানীজ সুসি...
প্রবাসের পথে... (৫) ফসলের ছবি...
প্রবাসের পথে... (৬) হকুসাই চিত্রকর্ম...
প্রবাসের পথে... (৭) ইকেবানা...
প্রবাসের পথে... (৮) জাপানীজ পুতুল-নিনগো...
প্রবাসের পথে ... (৯) জাপানের ইতিহাস-১


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×