somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যত কথা

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাক্তিত্ব কি? বা, ব্যাক্তিত্ব বলতে আমরা কি বুঝি? কিসের ভিত্তিতে আমরা বলি উনার ব্যাক্তিত্ব অনেক প্রখর আর উনার ব্যাক্তিত্ব নেই। আসলে এটা কি পরিমাপের বিষয়? এটা কি তুলনা করা যায়? এসব জিজ্ঞাসাকে সামনে রেখেই জানতে শুরু করেছিলাম। জানার জন্য বেছে নিয়েছিলাম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট থেকে যা জানতে পেরেছি এবং নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেই এই লেখনি।

এক কথায় বলতে গেলে ব্যাক্তিত্ব হচ্ছে অভিজ্ঞতার ঝুলি, আর এই ঝুলিতে রয়েছে - আমরা প্রতিনিয়ত যা বলি, যা করি, যা অনুভব করি, যা ভাবি, যা আশা করি, যা বিশ্বাস করি; সাথে রয়েছে চলার পথে আমরা কোন পরিস্থিতিতে কি প্রতিক্রিয়া দেখাই সে সবকিছু।


ব্যাক্তিত্বের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে মানবিক সর্ম্পক বা হিউম্যান রিলেশন। মানবিক সর্ম্পকের উন্নয়ন ছাড়া ব্যাক্তিত্বের উন্নয়ন অসম্ভব। আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার মানবিক সর্ম্পক বা হিউম্যান রিলেশন কেমন? আমরা কেউ কি বলবো খারাপ? হয়তো কেউই তা বলতে চাইবোনা। কিন্তু এই লেখাটার আর কিছুটা পড়ার পর কিন্তু আপনিই নিজেকে উত্তর দিবেন, আপনার মানবিক সর্ম্পক কেমন। কি ঠিক আছে? তাহলে চলুন প্রথমেই জেনে নেই মানবিক সর্ম্পক বলতে কি বুঝায়। ইংরেজীতে হিউম্যান রিলেশনের প্রতিটি অক্ষরের একটা করে অর্থ রয়েছে। সেই অর্থগুলোই এখানে দিলাম-

H = Have self control (নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ)
U = Understanding from others view point (অপরের অবস্থান থেকে চিন্তা করা)
M = Make others interest as your own (নিজের মতো অপরের আগ্রহও তৈরী করা)
A = Admit when you are wrong (নিজের ভুল স্বীকার করা)
N = Never criticize publicly (সবার সামনে সমালোচনা না করা)
R = Reasons should be constructive (প্রতিটি কাজের গঠনমূলক কারণ থাকা)
E = Explain precisely and to the point (সংক্ষেপে এবং ঠিক বিষয়ের ব্যাখ্যায় পারঙ্গম হওয়া)
L = Lead but do not drive (দিক নির্দেশক হওয়া, কিন্তু চালক না হওয়া)
A = Avoid quick judgment (অতিদ্রুত বিচার করা যাবে না)
T = Take care of little things (বিষয় যত ক্ষুদ্রই হোক তা বিবেচনায় আনা)
I = Inform others about the matter (সবাইকে জানানো)
O = Offer helpful suggestion (অপরকে সাহায্য করা)
N = Never forget to praise for a job well done (ভাল কাজের জন্য উপযুক্ত সন্মান জানানো)
S = Stress the positive (ধনাত্মক চিন্তার অধিকারী হওয়া)

যদি উপরের এই বিষয়গুলো আমরা মেনে চলতে পারি তবেই আমাদের মানবিক সর্ম্পক ভালো বলা যেতে পারে। তবেই আমাদের ব্যাক্তিত্বের প্রখরতা কিছুটা চোখে পরবে। এখন যদি উপরের এই বিষয়গুলো বিবেচনা সাপেক্ষে আমাদের বলা হয়, আমাদের মানবিক সর্ম্পক কি রকম? উত্তরটা কি আগের মতোই হবে???


আমাদের ব্যাক্তিত্বের উপর অন্যের কাছে আমাদের গ্রহনযোগ্যতা নির্ভর করে। আর অন্যের কাছে গ্রহনযোগ্যতার উপর ব্যাক্তি জীবনের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে বিধায়ই ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের এতো চিন্তা-ভাবনা। জীবনের সফলতার ধাপগুলো দ্রুত পেরিয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের ব্যাক্তিত্বের বিকাশ এবং উন্নয়ন প্রয়োজন। আর এই কাজটি করতে হলে আমাদের নিচের বিষয়গুলো একটু খেয়াল করতে হবে-

১) কখনোই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না। যদি তুলনা করেন তাহলে আপনি নিজেকেই ছোট করবেন।
২) যদি আপনি অসুখি হন, জীবন আপনাকে নিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসবে। আপনি যদি সুখি হন, তাহলে মুচকি হাসবে। আর যদি আপনি অন্যকে সুখি করতে পারেন, তাহলে আপনাকে স্যালুট করবে।
৩) প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনেই কষ্টকর একটি ইতিহাস আছে। প্রতিটি কষ্টকর ইতিহাসের একটি সফল সমাপ্তি আছে। কষ্টকে গ্রহন করতে প্রস্তুত হোন, সফলতা আসবেই।
৪) অন্যের দোষ ধরা খুবই সহজ। কিন্তু আমাদের নিজেদের দোষ ধরতে পারাটা কঠিন। নিজের পা-টাকে জুতা পরিয়ে সুন্দর রাখাটা, পৃথিবীকে কার্পেট দিয়ে মুড়ানোর চেয়ে অনেক সহজ।
৫) কেউই পিছনে ফিরে গিয়ে নতুন করে সূচনা করতে পারে না। বরং এখন থেকেই নতুন করে শুভসূচনার মাধ্যমে সফল সমাপ্তি সম্ভব।
৬) একটি সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তা নিয়ে আর ভাবার কিছু নেই। একটি সমস্যা যদি সমাধান সম্ভবই না হয়, তাহলে তা নিয়ে ভেবে কি হবে?
৭) কখনো পরাজিত হলে মন খারাপের কিছু নেই, বরং এর মাঝেই হয়তো মঙ্গল কিছু লুকিয়ে আছে।
৮) দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন (Changing the Face) কিছুই বদলাতে পারে না। কিন্তু পরিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গী (Facing the Change) অনেক কিছু বদলাতে পারে। অন্যের ব্যাপারে অভিযোগ করবেন না। বরং নিজেকে পরিবর্তনই মূখ্য।
৯) ভুল আমাদের তাৎক্ষনিক পীড়া দেয়। কিন্তু ভুল জমতে জমতেই অভিজ্ঞতার জন্ম হয়, যা আমাদের সফলতার পথ দেখায়।
১০) পরাজয়ে শক্ত থাকুন আর জয়ী হলে সাবলীল।
১১) সোনা গলিয়ে অলংকার হয়। ধাতু পিটিয়ে পাত্র তৈরী হয়। পাথর কেটে মূতি গড়া হয়। তাই জীবনে যত কষ্ট পাবেন, ততই খাটিঁ ও দামী হবেন।



জীবনে কখনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে ভেঙ্গে পরবেন না। বরং পরিস্থিতিটুকু বুঝতে হবে। সত্যি কথা বলতে ব্যাক্তিত্ব গঠন বা পরিবর্তন একদিনের বিষয় নয়। এটা নির্ভর করে পরিবর্তনের প্রতি আপনার আগ্রহ এবং উৎসাহের উপর। আপনার ব্যাক্তিত্বের দূর্বল দিকগুলো খুজেঁ বের করার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন সেগুলো সমাধানের। পরিশেষে কয়েকটি প্রশ্ন করে শেষ করছি -

১) আমরা কি আমাদের শিক্ষক বা অফিসের বসকে যতটুকু সন্মান দিয়ে কথা বলি পরিবারের বয়স্কদের সাথেও কি ততটুকু সন্মান দিয়ে কথা বলি???
২) কখনো মজা করার সময় কি আমরা এটুকু খেয়াল করি, যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে, তার অবস্থানে আমি থাকলে আমার কেমন লাগতো???
৩) কেউ আমার কোন কথা বা কাজের দ্বারা আঘাত পাচ্ছে কিনা, তা কি আমরা খেয়াল রাখি???
৪) আমাদের চেয়ে বয়সে ছোটদের প্রতি আমরা কি সবসময় সঠিক আচরণটি করি???

সকলের সুখী জীবনের কামনায়...

ভালো থাকবেন...

___________________________
ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট
অন্যান্যঃ ফারুক হাসান-এর ব্লগে প্রকাশিত



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৮
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×