somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নতত্ত্ব

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ এনামুল কবির কফির কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন, কফিটা খান ভাল্লাগবে । আমি চুমুক দিতেই তিনি জিজ্ঞাস করলেন, কেমন?
বেশ ভালো । স্বাদটাই আসল কফির ।
ডঃ এনামুল বলতে লাগলেন পিওর কলম্বিয়ান কফি । আমার এক বন্ধু পাঠিয়েছে । অনেক দামী ।
তা এতো দামী জিনিস হঠাত খাওয়াচ্ছেন, কি মনে করে? দামী জিনিসটা নিশ্চয়ই প্যাশান্টের পেছনে এভাবে বিলিয়ে দেবেন না!
তিনি হেসে উঠলেন, ওদের কাছে জিনিসটা দামী হলেও আমার কাছে ততোটা নয় । পেটেই তো চলে যাচ্ছে, ধরে রাখা তো আর সম্ভব নয় । খাবার দাবার নিয়ে বিলাসিতা আমার মাঝে নেই বললেই চলে ।
আমি চুমুক দিতে দিতে গতকালকে দেখা আমার স্বপ্নের কথাটা বললাম তাঁর কাছে । তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং কাগজে কি কি নোট করে নিলেন ।
তারপর কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তিনি আমাকে স্বপ্ন নিয়ে কিছু জ্ঞান প্রদান করলেন ।

প্রিকগনিশন ড্রীম বলে একটা টার্ম আছে । যেখানে মানুষ স্বপ্নে ভবিষ্যৎ দেখে!
কিন্তু এটা তো কাকতালীয়ও হতে পারে ।
হ্যাঁ তা হতে পারে । কিন্তু কাকতালীয় ব্যাপারগুলোও একটা স্প্যাটিস্টিক্যাল প্রবাবিলিটির ভেতর থাকতে হবে । কিন্তু প্রিকগনিশন ড্রীমের ক্ষেত্রে তা থাকছে না । প্রিকগনিশন ড্রীমটা আসলে আসে প্রিকনশাস থেকে । হয়তো আপনার বাসার ভিতগুলো ততোটা মজবুত নয় এবং আপনি এটা নিয়ে ঘনঘন চিন্তা করেন । একদিন স্বপ্ন দেখলেন ভূমিকম্পে আপনার বাসাটা ভেঙ্গে পড়ছে । পরদিন দেখলেন ঠিকই ভূমিকম্প হয়েছে এবং যা ঘটার তা ঘটেছে ।

তাহলে আপনি এখন কি সাজেস্ট করছেন?

আপনি ইদানীং খুব বেশি আজেবাজে চিন্তা করছেন । আমি কিছু ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি আর কয়েকদিন একটু বিশ্রাম নিন । ঠিক হয়ে যাবে আশা করি ।
রাতে ঘুমানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শমত ঘুমের ওষুধটা খেয়ে নিলাম ।

“আত্নহত্যা আর আত্নরক্ষা দুটোই কঠিন কাজ । বখে যাওয়া সমাজের দুষিত জিনিসগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখাটা খুবই কঠিন । ইফতেখার কদিন চেষ্টা করেছিলো সিগারেট, গাঁজা থেকে বিরত থাকার । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠতে পারেনি । টিংটিঙে শরীরের ঢোলা ফতুয়াটা বাতাসের তোড়ে পতাকার মত উড়ছে । তার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই । একটা বন্দী নৌকার পাটাতনে বসে আপনমনে গাঁজা টেনে যাচ্ছে আর হেঁড়ে গলায় স্বরচিত গানে সুর বসাচ্ছে । খুব দূর থেকে একটা আলোর স্রোত ভেসে আসে । চরের লোকেরা নাকি দুর্ধর্ষ হয় । কিন্তু নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ইফতেখার তা আমলে নেয়না । একটা মাছ ধরা ট্রলারে চড়ে কয়েকজন লোক পাড়ে এসে নামে । অন্ধকারে তাদের চেহারা বুঝা যায়না । ইফতেখারের দিকে আলো ফেলে ওরা । তাকে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে ট্রলারে তুলে ফেলে অনায়াসে । তারপর আবার তারা চলে যায় যেখান থেকে এসেছে সেখানে” ।

আমার ঘোর কেটে যায়! স্তব্দ হয়ে বসে থাকি কিছুক্ষণ; একি দেখলাম! রাত তিনটা বেজে বিশ মিনিট । আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে । একি!! সবকিছু মনে হয় মৃদু কাঁপছে । ভূমিকম্প নয়তো আবার! তিন চার সেকেন্ডের মাঝেই সবকিছু আবার সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়! ভূমিকম্পই হয়েছিলো মনে হয় । ঘণ্টাখানেকের আগে আর ঘুম বাবাজী আসবে না । টেবিলের ওপর রাখা সিগারেটের প্যাকেটের দিকে হাত বাড়ালাম । শূন্য! একটা সিগারেটও নাই । কি আর করা ।
বসে বসে ভাবতে লাগলাম একটু আগে দেখা স্বপ্নটার কি ব্যাখ্যা হতে পারে! নরমালি স্বপ্নের কোনো ব্যাখ্যা নেই । সারাদিনের ভাবনাগুলো থেকে অবচেতন মন একটা জগাখিচুড়ী বানিয়ে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয় । সেটাই আমরা স্বপ্ন হিসেবে দেখি । কিন্তু আমার স্বপ্নগুলো একটু অন্যরকম । আধোঘুম আধোজাগ্রত অবস্থায় একটা ঘোরের মধ্যে স্বপ্নগুলো আমার এন্টেনায় এসে ধরা দেয় । এবং এগুলোর একটা মিনিং থাকে । ব্যাপারটা এমন নয় যে স্বপ্নগুলো বাস্তবতার সাথে মিলে যায়, বরং তার উল্টোটা । যেমন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম আমার প্রমোশন হয়ে গেছে । তার একসপ্তাহ পর আমার চাকরী চলে যায়, অনিয়মের অভিযোগে ।

ইফতেখার হচ্ছে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু । ভবঘুরে ইফতি ভার্সিটি পড়াকালীন সময়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় । তারপর একটা গুরুত্বপূর্ণ মার্ডার কেসের পিষ্টনি থেকে বাঁচতে সে পালিয়ে যায় দেশের বাইরে । চার বছর পর ফিরে এসে একটা টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরী জুটায় । বিয়েথা করে আরো বছরখানেক আগে । তারপরও এখনো সময় পেলে মেতে উঠে পুরনো বদঅভ্যাসে । চলে যায় নির্জন কোনো স্থানে, সাথে কাউকে নেয়না ।
আমি পায়চারী করতে করতে এসব চিন্তা করতে থাকি । হঠাত চোখে পড়ে আমার ঘরের সদর দরজাটার লক খোলা । তাড়াতাড়ি আমি দরজা খুলে দেখি বাইরে কেউ আছে কিনা । নাহ! কিচ্ছু নেই । দরজা লক করে দেই এবার । মনে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । আজকে সব কেমন যেন উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে । এমন তো হওয়ার কথা নয় । আমি খুবই সাবধানে চলি, এ ধরনের ভুল সাধারণত হয়না আমার!

পরদিন আমি অফিস থেকে অসুস্থতার ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ইফতির অফিসের উদ্দেশ্যে । কিন্তু গিয়ে তাকে পেলাম না । ও নাকি আজকে অফিসেই আসে নাই । মোবাইলে আবার ট্রাই করলাম । বন্ধ এবারো! অজানা আশঙ্কায় আমার বুকে ধড়পড় শুরু হয়ে গেছে এবার । আর থাকতে পারলাম না । রিকশা নিয়ে ওর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবার । মনে একটাই চিন্তা চলছে । কি কারণে সে আজ অফিসে এলো না, মোবাইলটাই বা বন্ধ কেন?
ডোরবেল কয়েকবার চাপার পরে ওর স্ত্রী দরজা খুলে দিলো । আমি ভেতরে ঢুকে বসলাম । ভয়ে উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছি শুধু ।
বললাম ভাবী একগ্লাস পানি দাও ।
ধীরেসুস্থে পানিটা খেলাম । তারপর জিজ্ঞাস করলাম ইফতি অফিসে যায়নি আজকে?

না । ও তো কেক এর অর্ডার দিতে গেছে ।

কিসের কেক? অবাক হয়ে বললাম ।

কালকে আমাদের প্রথম এনিভার্সারী তো তাই ।

তাই নাকি? তাহলে শালা আমাকে জানালো না কেন?

আজকেই জানাতো । খবরদার আমি যে আগেভাগে জানিয়ে দিয়েছি; ওটা কিন্তু ওর কাছে ভুলেও বলা যাবে না ।

আমি একগাল হেঁসে বললাম, ঠিকাছে । ও কিছুই টের পাবে না ।

যে কাজে এলাম তার কিছুই হলো না । শেষমেশ ভাবীকে বললাম, ইফতিকে একটু চোখে চোখে রাখতে । অজানা কোথাও যেতে না দিতে । বলেই ভুল করে ফেললাম ।
ওর বৌ উদ্বিগ্ন হয়ে কারণ জানতে চাচ্ছে । কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছেনা । বললে হয়তো আরো চিন্তিত হয়ে উঠতে পারে । আর আমার এই রোগের কথা কেউ জানেনা । এমনকি আমার ঘনিষ্ঠ জনেরাও না । কিংবা ওরা হয়তো স্বপ্ন স্বপ্নই বলে উড়িয়ে দিতে পারে । শেষতক সিদ্ধান্ত নিলাম জানিয়ে দেওয়ার ।
আমার এই স্বপ্নতত্ত্ব এবং ইফতেখারকে নিয়ে স্বপ্নের সবটাই ব্যাখ্যা করলাম তার কাছে; শুধু নেশাগ্রস্থ উপকরণগুলো বাদে । ওর স্ত্রী খানিকক্ষণ কি যেন চিন্তা করে, তারপর হেসে উড়িয়ে দিলো সব । যা ভেবেছিলাম তাই হলো ।
বলল, ইফতেখার এখন খুবই সাবধানে চলে । এমনটি ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই । তাছাড়া, স্বপ্নে দেখা একটা জিনিস যে বাস্তবে ঘটে যায় এমন কোনো নজিরও পৃথিবীতে নেই । থাকলেও আকস্মিক, কাকতালীয়! আর মানুষ স্বপ্নে ভবিষ্যৎ দেখতে পায় বলে আমার মনে হয়না ।

আমি বেজার মুখে ফিরে এলাম । জানতাম এমন একটা কাণ্ডই ঘটবে । মনে পড়ল, আমার সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে একবার যাওয়া দরকার । ওয়ালেট হাতড়ে তার ভিজিটিং কার্ডটা বের করলাম । ফোন করলাম ফোন নম্বর বন্ধ । তাঁর অফিসের ঠিকানায় চলে এলাম ।
এসে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম! শুনলাম ডঃ এনামুল কবির বলে এখানে কোনো ডাক্তার বসেন না ।

তাহলে কি তিনি চেম্বার পাল্টিয়েছেন?

জবাব এলো, এই নামে কোনো ডাক্তার ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন বলে মনে হয়না । অন্তত আমরা চিনিনা । আমি তাকে ভিজিটিং কার্ডটা বের করে দেখালাম । রিসেপশনিস্ট ভিজিটিং কার্ডের নামটা কম্পিউটারে সার্চ দিয়েও পেলো না কাউকে ।
আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । এর মানে একটাই হতে পারে লোকটা ফ্রড ছিলো । কিন্তু ক্যাম্নে কি? এর কারণটাই বা কি হতে পারে! নাহ! আমার মাথায় আর কিচ্ছু ঢুকছেনা । সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে । বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দরকার ।

বিছানায় শুয়ে ইফতিকে একটা টেক্সট দিলাম । বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও সাবধানে চলাফেরা করার উপদেশ দিলাম । ঘুমানোর আগে আরেকটা স্বপ্ন দেখলাম, ওকে নিয়েই । নিহত রিংকুর বড়ভাই ইফতেখারকে মালা পড়াচ্ছে! রিংকু, পাঁচ বছর আগে যার খুনের প্রধান আসামী ছিল ইফতেখার । এই স্বপ্নটার মিনিংও বুঝলাম না ।

পরদিন আমার ঘুম ভাঙ্গে বেলা করে । আজকে শুক্রবার । দুপুরের পরে ইফতির মোবাইলে কল দিলাম বন্ধ । মনে মনে গালি দিলাম তাকে কয়েকবার । বিকেলবেলা বের হবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম । এমন সময় মোবাইলে এলো কল । ইফতির বৌয়ের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শোনা যায়!
জিজ্ঞাস করলো সে আমার এখানে আছে কি না ।
আমি বললাম, না ।
জানা গেলো সকালে বেরিয়েছে এখনো ফেরার নামগন্ধ নেই ইফতির । এমনিতে শুক্রবার দিনটা ঘরেই কাটায় সে । আমিও উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজখবর নিতে লাগলাম ।
নাহ! কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে ।
রাতে একবার বাসায় ফোন করে জেনে নিলাম । নাহ, ফেরেনি সে । ঘুম আসেনা আমার শুয়ে শুয়ে । নানা চিন্তা, অজানা আশঙ্কায় শিউরে উঠছি বার বার । আবার ফোন এলো মোবাইলে । ইফতির স্ত্রীর কান্নাজড়িত কণ্ঠ । কিছু একটা করার জন্য আকুতি জানাচ্ছে । ওর সরলতা, বন্ধুত্বের মর্যাদা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলছে । শেষে আমাকে স্তব্দ করে দিয়ে জিজ্ঞাস করলো ওকে কোথায় রেখেছি?

আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলাম, মানে?

লাইন কেটে গেলো ফোনের । আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিনা । সারা শরীরে থরথর করে কাঁপছে আবার । সবকিছু আবার পুনর্বিবেচনা করে দেখলাম । হিসেব মিলাতে লাগলাম সবকিছুর ।

ওইদিনের রাতের পর থেকে শুরু হয়েছে সব; যেদিন আমি ভুয়া সাইকিয়াট্রিস্টের কাছ থেকে ট্রিটমেন্ট নেই । আচ্ছা সাইকিয়াট্রিস্টের কার্ডটা কে দিয়েছিলো যেন? হ্যাঁ, আমার অফিসের এক সহকর্মী । কিন্তু কেন? আচ্ছা তারপর এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা । সবকিছু উল্টাপাল্টা লাগা! ধ্যাৎ, মাথাটাই বিগড়ে যাচ্ছে এসব চিন্তা করতে গেলে । সবসময়ই নেগেটিভ চিন্তাটা সবার আগে আসে । অপ্টিমিস্ট হওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা ।
ভোররাতের দিকে দরজায় কড়া শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । আরেকটু হলে দরজা ভেঙ্গেই ফেলতো মনে হয় । জোরে হাঁক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কে?
জবাব এলো পুলিশ ।
আঁতকে উঠলাম আমি ।
দরজা খুলে জিজ্ঞাস করলাম, কি ব্যাপার?
আপনার নামে ওয়ারেন্ট আছে । থানায় জিডি করা ছিল আগেই ।
কিসের ওয়ারেন্ট? কে করেছে জিডি?
ইফতেখার আলমের স্ত্রী ।
মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়লেও এতটা অবাক হতাম না আমি । জিডি করেছে! আমার নামে!!
ওদের কাছ থেকে এক মিনিট সময় নিয়ে কল দিলাম ইফতির নম্বরে, বন্ধ!! ওর বৌয়ের নম্বরেও কল দিলাম । রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা । আমি পুলিশ সদস্যদের আইডি কার্ড দেখতে চাইলাম ।
একজন ধমকে বলে উঠলো, আমাদের সন্দেহ করছেন?
বলা তো যায়না ভাই । দেশে যে হারে গুম, হত্যা বেড়েছে ।
ওরা আইডি দেখালো । তারপরও আমি পুলিশ ষ্টেশনে যোগাযোগ করে এর সত্যতা যাচাই করলাম । ওদের আর তর সইছে না । বার বার তাড়া দিচ্ছে শুধু ।

দুদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ইফতির গলাকাটা লাশ ভেসে ওঠে । দুর্বৃত্তদের সাথে আমার একটা যোগসূত্র আছে বলে ধরা হলো । ইফতির উদ্ধারকৃত মুঠোফোনের ডাটাগুলো উদ্ধার করা হলো । সেই সাথে প্রমাণ হিসেবে আমার পাঠানো টেক্সটা তারা তুলে ধরল । ‘সাবধানে থাকিস’ এই ধরনের একটা উপদেশবাণী তাদের কাছে থ্রেট হিসেবে গণ্য হলো । আর ওর স্ত্রীর জবানবন্দী তো আছেই! পরিস্থিতি একটা মানুষকে কিভাবে বেমালুম পাল্টে দেয় তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলাম সেদিন ।

আমাকে তারা রিমান্ডে নিয়ে কনফেস করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো । কিন্তু আমার চিন্তা অন্যদিকে । আমি কিছু একটা মিলানোর চেষ্টা করতে লাগলাম । আমার লইয়ারের সাথে কথা বলে অনেক কষ্টে রিংকুর বড় ভাই চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম । চুন্নু নিজে এলো না কিন্তু তার এজেন্ট পাঠিয়ে দিলো ।

লোকটার চেহারায় একটা নিষ্ঠুরতা আছে! আমি তাকে সবকিছু খুলে বলতে গেলে । সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে সব বলতে শুরু করলো । এমনকি আমার স্বপ্নগত সমস্যা এবং ঐদিনের সমস্ত ডিটেইলস । আমার সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া, রাতে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা সব ।

আমি অবাক হয়ে গেলাম! আমাকে ফলো করা হয়েছে নিশ্চয়?

লোকটি মৃদু হেঁসে বলল, দেখুন তো আমাকে পরিচিত লাগছে কিনা?

আমি তার চেহারা, চোখ এবং হাঁসিটা লক্ষ্য করলাম ভালোভাবে । কেমন যেন পরিচিত ঠেকছে । কোথায় যেন দেখেছি মনে করতে পারছিনা ।

কী! মনে পড়ছে না তাইতো? আপনার সাইকিয়াট্রিস্টের চেহারাটা মনে আছে?
চমকে উঠি আমি । বজ্রাহতের মত স্থির হয়ে যাই । হ্যাঁ, এবার ধরতে পেরেছি । কোথায় সেই রাশভারী চেহারা, চোখের ভারি চশমা আর থুতনিতে দাঁড়ি । কই গেলো সব?

লোকটি এবার ধীরেধীরে ঝাঁপি খোলা শুরু করলো । কলম্বিয়ান কফিতে মেশানো কেমিক্যাল, যা কার্যকর হয় প্রেসক্রিপশনে দেয়া ঔষধটি গেলার পর । তারপর দীর্ঘ ঘুমে তলিয়ে যাওয়া । যার কারণে আপনার ঘরে অন্যকারো অনুপ্রবেশ আপনি টের পান নাই । আপনার ঘুমটা শেষরাতের দিকে পাতলা হয়ে যায় । মানে প্রথম স্তরে চলে আসে । ঠিক ঐ সময়টা বেছে নিয়েই আপনাকে হিপ্নোটাইজ করা হয়, বাধ্য করা হয় ঐ ধরনের একটা স্বপ্ন দেখতে ।

এবার আমার কাছে সব খোলাসা হয়ে যায় । আমিও সায় দিয়ে বলতে শুরু করি, তাইতো বলি দরজার লক কেন খোলা ছিল? আর খালি সিগারেটের প্যাকেট তো আমি কখনো টেবিলে রাখিনা ।

প্যাকেটে একটাই ছিল । নার্ভাস ফিল করছিলাম, সিগারেটটা কাজে দিয়েছে । লোকটা এমনভাবে বলল যেন সিগারেটের জন্য সে আমার কাছে কৃতজ্ঞ!
এতসব শুনার পর খুব অসুস্থবোধ করছি । এরকম একটা পরিস্থিতির মাঝেও মুখে হাঁসি রেখে বললাম, ব্রাভো! চমৎকার আইডিয়া!!

ধন্যবাদ!! বলে লোকটি উঠে দাঁড়ালো যাওয়ার জন্য । ঘুরে বলল, আবার হয়তো বা দেখা হবে! কিংবা নাও হতে পারে ।

আমি বললাম, নিশ্চিন্তে থাকুন । দেখা হবে আবার ।
লোকটি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, প্রত্যুত্তরে একটা ঝাঁজমেশানো হাঁসি দিয়ে চলে গেলো ।

লোকটিকে যতটা চতুর মনে করেছিলাম আসলে ততোটা নয়! তার ভাবা উচিৎ ছিলো বিনা কারণে কেন আমি চুন্নুর তলব করতে যাবো? সে তো আমার কোনো উপকারে আসবেনা; তার উপর ইফতির শত্রুপক্ষ ।

টোপটা জুতসই হয়েছে! লইয়ারকে দিয়ে ম্যানেজ করা শার্টের বোতামের উল্টোপিঠে লুকানো ছোট্ট মাইক্রোফোনটা সাবধানে বের করে নিলাম এবার । কি ক্ষুদ্র একটা জিনিস! আমার বাঁচার একমাত্র উপায় । এই ছোট্ট জিনিসটাই এখন বহন করছে আমার প্রাণ । গুপ্ত কোন এক জায়গায় লুকায়িত আমার প্রাণভ্রমর । একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবার প্রাণপণে ।।




সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×