somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য টিভি সিরিজ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনকার টিভি সিরিজগুলো বেশ জনপ্রিয় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সিরিজগুলো খুব বড় । সিজন থাকে বেশি এবং পৌনে এক ঘণ্টার এপিসোডগুলোর সংখ্যাও কম নয় । কাজেই ব্যস্ততার জন্য অনেকেই টিভি সিরিজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন । যদি এমন হত টোটাল সিরিজ একটা কিংবা দুটা সিজনেই শেষ!
সম্প্রতি দেখা এরকম দুটো টিভি সিরিজ যা শেয়ার না করে পারা গেলনা ।

১। ব্যান্ড অফ ব্রাদার্সঃ



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে সাজানো দশটি এপিসোড নিয়েই পুরো সিরিজটি করা হয়েছে । ডি-ডে নিয়ে যত মুভি বলেন, টিভি সিরিজ বলেন; ব্যান্ড অফ ব্রাদার্সই সেরা আমার কাছে । এর নির্মাণ, দৃশ্যপট, কাস্টিং সবমিলিয়ে যতটাসম্ভব বাস্তবসম্মত করার চেস্টা করা হয়েছে । প্রত্যেকটা এপিসোড শুরুর আগে ওয়্যারহিরোরা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন । তাই এটাকে বায়োগ্রাফিকাল হিস্টোরি বললেও ভুল হবেনা!
এবার আসি, কাহিনীতে ...



ইউ এস প্যারাট্রুপারস ‘ইজি কোম্পানি’ পুরোপুরি প্রস্তুত ফ্রান্সের নরম্যান্ডি আক্রমণ করার জন্য । কোম্পানি আরো আছে- ফক্স কোম্পানি, ডগ কোম্পানি ইত্যাদি । কিন্তু এখানে ভিউপয়েন্টে থাকে ইজি কোম্পানি । ল্যুটান্যান্ট উইন্টারস আর নিক্সনের নেতৃত্বে টিম এগিয়ে যায় যুদ্ধের সম্মুখে । ইজি কোম্পানির আছে প্রস্তুতি, ট্রেইনিং, ধৈর্য এবং কৌশল । অবশ্য ক্যাপ্টেন সোবেলের মত এরকম জাঁদরেল ট্রেইনারের হাতে পড়লে যে কেউই ডিসিপ্লিন কি জিনিস তা অচিরেই শিখে যায় । কিন্তু ক্যাপ্টেন সোবেল সৈনিকদের সার্বিক দিক দিয়ে উপযোগী করে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিলেন না । উপরন্তু গম্ভীর এবং একগুয়ে স্বভাবের । সিরিজের একটা পর্বে দেখা যায়, উইন্টারস ক্যাপ্টেন সোবেলকে স্যালুট দেয় কিন্তু তার কাছ থেকে কোন প্রত্যুত্তর পায়না । তখন উইন্টারস সোবেলকে বলে, ‘captain sobel we salute the rank, not the man’ এই সিরিজের দ্বিতীয় সেরা উক্তি!



নিক্সন আর উইন্টারসের মধ্যে ভালো সম্পর্ক । তবে পার্থক্য একটাই, একজন অতিরিক্ত মদ্যপান করে আর আরেকজন মোটেই না । যুদ্ধে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মেডিক টিম । আমি মনে করি এরাই সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করে, টাচ অফ এঞ্জেল! প্রবল গুলিবর্ষণের মধ্যেও নিজের তোয়াক্কা না করে অন্যকে বাঁচানোর জন্য ছুটে যাওয়া, আহতদের সারিয়ে তুলতে প্রাণপনে চেষ্টা করা । যুদ্ধের ভয়াবহতা আর মানুসিক চাপের মধ্যেও এরাই করে যায় এঞ্জেলের কাজ এবং তাদের নেই কোন নিজস্ব ডিফেন্স । অন্যেরা কভার দিলে এরা ছুটে যায় আহতদের কাছে ।

কয়েকটা মিশন খুবই ভয়াবহ ছিল! বিশেষ করে বেলজিয়ামের বাস্টগনে । বরফঞ্চলের মাঝে ওদের ছিলনা কোন শীতবস্ত্র, খাদ্য আর যথেষ্ট এ্যমো । শত্রুদের এলোপাথাড়ি আক্রমণে অনেকে প্রাণ হারায়, কিংবা বিকলাঙ্গ হয়ে যায় ঐ মিশনে । তবে তারচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্যটি অপেক্ষা করছে সামনে । যুদ্ধ শেষে ওরা একটা বিশাল ক্যাম্প খুঁজে পায়, যেখানে পড়ে ছিল হাজার হাজার ইহুদীদের পচিত, গলিত দুর্গন্ধময় বীভৎস লাশ । তার মধ্যে যারা বেঁচে আছে । তাদের অবস্থা আরো বেহাল, লাশের চেয়েও বীভৎস! কঙ্কালসার দেহধারীরা জম্বির মত এগিয়ে আসতে থাকে; কাড়াকাড়ি করে খাবারের জন্য । দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর । পুরো যুদ্ধের ভায়লেন্সকেও ছাপিয়ে গেছে এই নির্মম দৃশ্য! পরে ওরা হিটলারের প্রাসাদ আর মূল্যবান সব আসবাবপত্র উদ্ধার করে ।
শেষের সেরা উক্তিটি দিয়ে শেষ করছি ...
Grandpa, were you a hero in the war?
Grandpa said, “No!.... but i served in a company of heroes.”
গ্র্যান্ডপা ছিলেন তাঁদেরই মধ্যে একজন ওয়্যারহিরো । গ্র্যান্ডপার পরিচয় জানতে হলে দেখে ফেলুন সিরিজটি । না দেখলে পস্তাবেন ।

২। রোমঃ



জুলিয়াস সিজারের কাহিনী আর তৎকালীন প্রাচীন রোমের ডার্টি পলিটিক্স নিয়ে মাত্র দুটি সিজনে সম্পন্ন একটি দারুণ সিরিজ । একসময়ের বন্ধু ‘পম্পে ম্যাগ্নাস’ আর ‘গায়াস জুলিয়াস সিজার’ পরিণত হয় শত্রুতে । ক্ষমতার লোভ আর ডিপ্লোম্যাসি পুরানো মধুর সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে । সিজারের ক্রমাগত রাজ্য দখলের লড়াই এবং পরিশেষে গল রাজ্যের শাসক বনে যাওয়াকে অনেকেই ভালো চোখে দেখতনা । তারা সিজারকে অভিহিত করত ডিক্টেটর বলে । রিপাবলিকান উপদেষ্টারা সিজারকে দোষারোপ করে ক্ষমতার লোভে উন্মত্ত নেকড়ে কিংবা ডেস্ট্রয়ার অফ দ্যা রিপাবলিক বলে । গায়াস সিজার কঠোর হলেও ছিলেন বিচক্ষণ । পম্পে তাঁর শত্রু হলেও তাঁর প্রতি তিনি ছিলেন যথেষ্ট উদার ।



মূল কাহিনী শুরু হয় ‘লুসিয়াস ভেরাস’ আর ‘টিটাস পুলো’ সিজারের রেজিমেন্টে নিজেদের সৈনিক হিসেবে পদার্পণ করার পর । এই দুজনকে সিজার যে কোন কাজে ভরসা করেন, বিশ্বাস করেন । অসম্ভবকে সম্ভব হয় এদের দ্বারা । দু জন দলে থাকলে জয় নিশ্চিত । কারণ তারা ভালো যোদ্ধা এবং ভাগ্যদেবতা নিজে তাদের সঙ্গে থাকেন । লুসিয়াস ভেরাস কর্তব্যপরায়ণ এবং রুলসের বাইরে একচুলও নড়েন না । এজন্য অনেকে তাঁকে কঠোর এবং একগুঁয়ে মনে করে । কিন্তু ভেতরে লুসিয়াস ভেরাস ছিলেন একজন ভালো মানুষ । ফ্যামিলির জন্য যেমন ডেডিকেটেড তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও । কিন্তু এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিনি তাঁর স্ত্রীকে হারান এবং তাঁর সন্তানেরা তাঁকে ভুল বুঝে । আর টিটাস পুলো আকৃতিতে যেমন বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রেও তেমনই প্রমাণ দেন । একাই ছয় সাতজনকে ভূপতিত করার ক্ষমতা রাখেন । সাইজ এবং শক্তি দুই মিলিয়ে যত ভয়ংকরই হোক না কেন তাঁর চেহারার মধ্যে একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে । একবার ওর জীবন বাঁচানোর পর থেকেই লুসিয়াস ভেরাসের সর্বসঙ্গী হয়ে যান পুলো । বিপদে আপদে সবসময় একজন আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ান । টিটাস পুলো বিয়ে করেন একজন স্লেইভকে । যাকে শত্রুপক্ষের হাত থেকে উদ্ধার করেন । কিন্তু হিংসার বশবর্তীর শিকারে পরিণত হয় ওর স্ত্রী!



ঐদিকে আতিয়া আর সার্ভিলা দুই সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুইজন একজন আরেকজনকে দু চক্ষেই দেখতে পারে না । দুজনেই সিজারের পাণিপ্রার্থী । কিন্তু সিজারের দুর্বলতা থাকে একজনের প্রতি । এই নিয়ে পরস্পরের বাগবিতণ্ডা, কূটনীতি, প্রোপাগান্ডা চরম পর্যায়ে চলে যায় । একজন আরেকজনকে শেষ করে দিতে উঠে পড়ে লাগে । সমস্যা হচ্ছে সিজার সম্পর্ক গড়ায় রাণী ক্লিওপেট্রার সাথে, তার ক্ষমতা বৃদ্ধির লোভে । সার্ভিলা অফ দি জুনির ছেলে ব্রুটাস যোগ দেয় রিপাবলিকানদের দলে । আর আতিয়া অফ দি জুলির ছেলে অক্টাভিয়ান মনোনীত হয় ভবিষ্যৎ সিজার হিসেবে । অক্টাভিয়ান, পিচ্চি একটা ছেলে । কিন্তু এই বয়সেই সে যুদ্ধের স্ট্রেটেজি আর অন্যান্য বিষয়ে ব্যাপক পারদর্শী । সিজারের সেনাপতি মার্ক এন্থনির সাথে ওর মার যৌনসম্পর্ক ও কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা । অবশেষে গায়ান সিজারের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসে অক্টাভিয়ান সিজার । অক্টাভিয়ানের এই ক্ষমতায় বসাকেও মার্ক এন্থনি মেনে নিতে পারেন নি । তবে চতুর এবং তরুণ সিজার অক্টাভিয়ানের সাহায্য নিয়েই হারিয়ে দেয় অবশিষ্ট রিপাবলিকানদের । পরে মার্ক এন্থনির বিপক্ষেও যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে সে ।

প্রাচীন রোমের খুঁটিনাটি জিনিসগুলো খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিরিজটিতে । দর্শন, রাজনীতি, ডিপ্লোম্যাসি, গৃহযুদ্ধ, যৌনতা কিছুই বাদ যায়নি । মিথলজিক্যাল টিভিসিরিজগুলোর মধ্যে রোম অন্যতম ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×