গভির রাতে ফোন করে কথার ফুলঝুঁড়ি ছুটাতো মেয়েটা আর আমি ওর কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম বলে পরদিন সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে ওর গাল ফুলানো,ঠোঁট ফুলানো দেখতে হতো ... হাসতে হাসতে অভিমান ভাঙাতাম,বলতাম ...
"তুমি আমার "ঘুমের ঔষধ",50mg,100mg কিংবা 500mg পাওয়ারের নও...বরং লাখ পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ!!"
ফিক করে হাসি দিতো মেয়েটা,তন্ময় চোখে ওর মুক্ত ঝরা দাঁতে আর ঘনকালো হরিণী চোখে চেয়ে থাকতাম...মন ভাল হয়ে যেতো!!
- এই অহনা
- হু
- চলো ঘুরতে যাবো
- এ্যাহ্,শখ কত!
- যাবেনা?
- যাবো তো,আমি কি বলেছি যাবো না?
- ইয়েমানে...
- তবে শর্ত আছে!
- কি শর্ত?
- তুমি রিক্সায় বসে এপার্শ্বে ওপার্শ্বে গুতাগুতি করতে পারবেনা!
- হুহুহু,আচ্ছা ঠিক আছে!!
দুইশ টাকা ঘন্টা দরে রিক্সা ভাড়া করতাম,দশটাকার বাদাম কিনতাম,পকেটে ছোট্ট একটা প্যাকেটে একটা পায়েল কিনে লুকিয়ে রাখতাম,সুযোগ পেলেই পড়িয়ে দিবো বলে ... আর ব্যাগে লুকিয়ে রাখতাম রেশমি চুড়ি,নিজহাতে পড়িয়ে দিব বলে!!
- এই ছেলে এই!
- হু
- ঐ দিকে কি দেখ এ্যাঁ?
- কিছুনা তো!
- এ্যাঁ?আমাকে রিক্সার পাশে বসিয়ে আবার রাস্তায় মেয়ে দেখা হচ্ছে!
- দেখ অহনা,মেয়েটার চুলগুলো কত কালো!
- এইপ!চোখ তুলে ফেলব,এই ইডিয়ট!আমার দিকে তাকাও,চোখ তুলে ফেলব একদম!
- চোখ তুলে ফেললে তোমাকে কি করে দেখব?
- দেখতে হবে না,হাত দিয়ে ধরলেই অনুভব করতে পারবে!
- ও রিয়েলী!ওকা বাবুনি....!
- আরে কি করো!মানুষ দেখবে তো!বলেছিনা,রিক্সায় উঠে গুতোগুতি চলবেনা!
- তুমিই তো বললে হাত দিয়ে অনুভব করতে,তাই চোখ বন্ধ করে...!!
- হুহ্,লজ্জা শরম সব শেষ তোমার!!
- আরে এখানে কেউ দেখবেনা বাবুনি!
- আরে ধ্যাৎ,রিক্সাওয়ালা কি ভাববে?
- ধুরো,কি ভাবে ভাবুক!!
- উহু,আমার কাতুকুতু লাগে তো!
- হুহুহু,লাগুক...আমি কাতুকুতু দিব নাতো কে দিবে?
- ষ্টুপিড,আমার কেমন যেন লাগছে!হাত সরাও!নয়তো রিক্সা থেকে নামবো আমি!
- আরে নাহ্,রিক্সা থেকে নেমে কি করবা?
- বাসায় চলে যাব!
- বললেই হলো?
- আচ্ছা যাবো না,তাহলে কোমড় থেকে হাত সরাও!
- হুহু,উহু না
- এই মামা থামেন তো,আমি রিক্সা থেকে নামব!
- অহনা প্লিজ নামিওনা!
- হুহ্,আমি গেলাম!টাটা!
- এই অহনা দাড়াও!আমার কাছে রিক্সা ভাড়া নেই!!
পশ্চিমাকাশে পরন্ত সূর্য নিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে বিলের ধারে বসে থাকতাম দুজনে,গল্প করতাম,কথার যেন শেষ নেই ... তারপর উঠে গিয়ে ওর সামনে বসে ওর পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিতাম ... ওর হাতদুটোকে টেনে নিয়ে রঙিন চুড়িগুলো দিয়ে রাঙিয়ে দিতাম!
অজানা এক আনন্দে কেঁদে উঠত মেয়ে,গাল বেঁয়ে টসটস করে ঝরে পড়ত আনন্দাশ্রু ... পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ছবি তুলে নিতাম টুক করে,মুখে বলতাম ... "কাঁদলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে,এই দেখ পিকটা!"
ওর কান্নাভেজা চোখের সাথে ঠোঁটের হাসিটা ভয়ংকর সুন্দর করে ফেলত আমার মনটাকে,ও পিকটা ব্লু-টুথ করতে বলত...আমার ব্লু-টুথ ডিভাইসের নাম ছিল "Take me across''... আর ডিভাইস পেইরিং করার সময় ওর ডিভাইসের নাম দেখতাম "Of course!!"
ভালবাসার মানুষটাকে খুশি করার জন্যে তিন বেলা শপিং করতে হয়না,বরং গভির ভালবাসায় একবার বালিশের নিচে থেকে একজোড়া চুড়ি পরিয়ে দিলেই সে খুশি হয় ... ভালবাসার মানুষটাকে খুশি করার জন্যে অঢেল ধন সম্পদ বিকিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়েনা বরং মাত্র আশি অথবা একশত টাকা দিয়ে একটা পায়েল কিনে হাসিমুখে দিলেই ওরা খুশি,ওরা "কনজেনিটাল সুখি মানুষ!!"