"যদি ভেস্তে যাইতে চাও গো,
অন্তোরেতে রাইখো আল্লাহর নাম"
আমরা যারা বিদেশে থাকি,তাদের দেশে যাবার জন্যে যে কি পরিমানে সেই ফেলে আসা পিছুটান পিছু ডাকে-সেটা একমাত্র এই প্রবাসীরাই বলতে পারবো ।বুকের ভেতরে পাহাড়সম যন্ত্রনা নিয়ে প্রতিটা মুহুর্তের সাথে বসবাস ।এ যন্ত্রনা কিসের? কেউ হয়তো ফেলে এসেছে তার প্রিয় পরিবার।সেখানে আছে বাবা,মা,ভাই,বোন ।কেউ ফেলে এসেছে তার প্রিয় সবচেয়ে কাছের কোন এ বন্ধুকে,যার সাথে হয়তো কোন এক বটতলায় চা খেতে খেতে জীবনের সবচেয়ে গভীরতম বিষয় নিয়ে আলোচনা হত ।সেই মানুষটার অভাব কে পুরণ করবে,তাকে কাছে না পাবার শূন্যতায় ।আর জীবন নিয়েই বা সে আলোচনা করবে কার সাথে ?একটি সেলফোনই ভরসা ।ফোন রাখার শেষ মুহুর্তটায়-মায়ের শেষ কথাটা ....ভালো থাকিস বাবা?ভাই,বোনের শেষ কথাটা ....এই ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস রে?আর প্রিযতম কিংবা প্রিযতমা? সে যে কি জ্বালা?শেষ কথাটা.... ভালো থেকো?আর বন্ধুর শেষ কথাটা,আর কি হে হবে দেখা?
দুর আকাশে দেখা যায় উড়ে স্বাধীন কোন পাখী কিংবা কখনও আলোর জলরাশিতে ছুড়ে ফেলা শুন্যতায় এই প্রবাসীর চোখের জলে সবকিছুকে বিদায় জানিয়ে শেষ কথাটা এ রকমই হয়,তোমরাও ভালো থেকো?
মা,বাবা,ভাই,বোন, বন্ধু,প্রিযতম কিংবা প্রিযতমা? আর সবমিলিয়ে বাকি থাকে দেশ।কারণ সবার অনুপস্হিতে তখন তার কাছে দেশটাই ভুমিকা পালন কবে কখনও মায়ের ,কখনও বাবার,কখনও ভাই আর বোনের ,কখনও বন্ধুর,কখনও প্রিযতম কিংবা প্রিযতমার ।সবকিছুর উর্ধ্বে চলে যায় দেশ ।
এমনিতেই অনিশ্চয়তায় প্রত্যেকটা মুহুর্ত ।তবুও ভাবা হয়, হয়তো সমস্ত কষ্টের পর পাওয়া শেষ ডলারটাই কোন না কোন ভাবে লেগে যাবে কারও না কারও কাছে ,সেটা যে কেউ হতে পারে-মা,বাবা,ভাই,বোন, বন্ধু,প্রিযতম কিংবা প্রিযতমা অথবা র্সবপরি দেশ ।
এর থেকে আর কিভাবে ভালোবাসা যায়,প্রবাসী কাররিই জানা নাই ।একটা চিত্র কল্পনা করা যেতে পারে,কোন একজন ডুকরে ডুকরে কাঁদছে,কিন্তু তার চোখ দিয়ে কোন জল পড়ছে না-গড়ে পড়ছে টপটপ করে রক্তবিন্দু ।
র্সবপরি দেশ ?কিন্তু এই কি প্রেমের পরিচয়?শেষ করে দেব একটা ফোন কলের শেষ কথা দিয়ে,সেখানে ভালো থাকা কিংবা ভালো করে খাওয়া দাওয়া করিস-এরকম কোন কথা হয়নি ।শেষ কথা ছিল,সাগর আর রুনির হত্যার রহস্য অজানাই থেকে যাবে ।আমার বুকটা আবার ফেটে যায় ।
খুব কষ্টে সময় বের করে টেলিভিশন সেটের সামনে বসি,না -বিশ্বাস করিনা?কিন্তু বিশ্বাস ক্রমশই ছোট হয়ে আসে ।অবিশ্বাসে অবাক হয়ে দেখি আসোলেই-শিরোনামে অন্যকিছু -সাগর আর রুনি আংশিক হয়ে গিয়েছে ।অনলাইন এ বসি ,পাগল হয়ে খুঁজতে থাকি সর্বশেষ "সাগর আর রুনি" দেখি ,ই-পেপারে হেডলাইন দখল করে নিয়েছে অতি সামান্যই অপ্রাসাংগিক অন্যকিছু ।সেখানেও সাগর আর রুনির অসামান্য বিচ্ছেদ ।
হায়রে দেশ! হায়রে সংবাদপত্র!হায়রে মিডিয়া!হায়রে সমস্ত অশিক্ষিত সাংবাদিক সমুহ!হায়রে সুশিল সমাজ!ধিক্কার তোমাদের।
ভাবছি আর দেশে যাবো না ।কেন যাবো?আরও ভাবছি ,কোথাও না কোথাও তো শেষ পর্যন্ত যেতেই হবে।তাই অনিশ্চয়তায় শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ,এবার অন্য কোন বিদেশে গিয়ে অন্যরকম পরবাসি হয়ে যাবো।
সাগর আর রুনি-দেখা হচ্ছে বন্ধু,খুব শিঘ্রই ।আমরা একসাথে কোন এক বটতলায় চা খেতে খেতে জীবনের সবচেয়ে গভীরতম বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।
ভেস্তে যাবার মধ্যেই বুঝি সমস্ত আনন্দ ।সেটার প্রমান হয়ে গিয়েছে এই ভাংগাদেশে।