আদিম, অকৃত্তিম এবং বিশুদ্ধ যৌন জীবনে পুরুষ সমাজ নিজেদের কে মনে করেন পার্ফরমার। তারা কখনো পার্টনারশীপের ধরনার সাথে পরিচিত নন। তাকে হতে হবে “ আসল পুরুষ”। ফার্মগেট টু গুলিস্থান এর মোড়ে খোলা বাজারে বিক্রি হয় ছোট-বড়, মোটা তাজা করন যৌন ঔষধ। মহাখালি ফ্লাইওভারের নীচে জোকের তেল।মিটফোর্টে বিদেশি যৌন উত্তেজক ঔষুধ। না এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন ভেষজ, কবিরাজি, আয়ুর্বেদ, কলিকাতা হারবাল, ইউনানী হারবাল কিংবা ভি আই পি হারবালের কথা না বললেই নয়। এদেশে জন্ম নিরোধক পন্য প্যান্থার কনডমের বিজ্ঞাপনেও “নায়িকা” ধরনের নারী কে বিয়ে করে ঘরে এনে পুরুষ কে হতে হয় “আসল পুরুষ”। যেখানে আসলের অস্তিত্ব আছে সেখানে নকল বলেও কিছু থাকবে। তাহলে সেই নকল পুরুষ কারা। তারা কী একটু সামনে আসবেন প্লিজ। না কারো দেখা নেই ।থাকবে কী করে বলুন, পন্য তো বলেই দিচ্ছে আপনাকে হতে হবে “আসল”। বিজ্ঞাপন বলছে, হিরো “লাগবা বাজি” এবং হ্যাঁ বাজি তে জিততে হলে আপনা কে প্রমান করতে হবে আপনি “আসল পুরুষ”।
আসল পুরুষ হয়েও অনেক পুরুষ-ই আর তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ধরে রাখতে পারছেন না। ঢাকা শহরে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের শাররীক অক্ষমতাও বেশ উল্লেখযোগ্য একটা কারন। এটাকে আক্ষেপ হিসেবে না দেখে এর পেছনের কারণ টা কী খতিয়ে দেখা দরকার। কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে না তো? যারা Health Education নিয়ে একটু আধটু পড়াশুনো করেছেন, তারা জানেন যে, বিভিন্ন যৌন রোগের বাহক পুরুষরা আর ভুক্তভুগি হন নারীরা।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের পুরুষ জনসংখ্যার মোট ২ ভাগ গোপন রোগে আক্রান্ত। কিন্তু এর চিকিৎসার বাজার ৫০ কোটি টাকার উপর।যার কারনে বৈধ ছাতার নীচে এর পাশাপাশি গজিয়ে উঠেছে, অবৈধ চিকিৎসা পদ্ধতি। অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের উত্তেজক ঔষধ। মুল ক্রেতা দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষ গুলো। মিডফোর্ট এর খান মার্কেট এবং রহিম মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে এই সব বৈধ ও অবৈধ দেশি- বিদেশি যৌন উত্তেজক ঔষধ। মাত্র কয়েক বছর আগেই ভায়াগ্রা এসে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়। এছাড়াও আছে সেনেগ্রা এবং পার্কটিমের মত রাশি রাশি যৌন উত্তেজক ঔষধ। প্রায় ১২ টি বৈধ অবৈধ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বিশ্ব বাজারে বাতিল হওয়া নানা ব্রান্ডের যৌন উত্তেজক ঔষধ। ডাক্তার সাহেবরা নিজস্ব প্যাডে নয় বরং চিরকূটে লিখে দেন নানা ধরনের এই সব যৌন উত্তেজক ঔষধ এর নাম।(খোঁজ পর্ব ০২, গোপন রোগের গুনকীর্তন।)
এবার আপনাদের একটা গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশে ঔষধ বিক্রির দোকানের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৮০ হাজার দোকানের বৈধ লাইসেন্স আছে। যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রয়কারী অনেক দোকানের-ই তাই দায়বদ্ধতার প্রশ্ন নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী টেকনোলজী বিভাগের প্রফেসর এবিএম ফারুক মনে করেন, যে কোন ঔষধ উপর নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে বিক্রির অনুমোদন দেয়া ঠিক না। তিনি আরো বলেন, এই ঔষধের সেবনে পুরুষত্ব কমে গেল বা যৌন শক্তি কমে গেল, শুধু তাই-ই নয়, হার্টও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রায় ১২ টি সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে দেশে ঢুকে পড়া বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ঔষধ এর বেশির ভাগই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।এসব এলাকাতে "চাহিবামাত্র মিলিয়া যায়" কাংখিত উত্তেজক ঔষধ। রীতিমতো প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে, কমিশনের হিসাব পাকাপোক্ত করে ঢুকে পড়া উত্তেজক ঔষধ গুলো তাই খুব সহজেই পৌছে যায় ক্রেতার কাছে।
যৌন উত্তেজক ঔষধের পরামর্শক থাকে মুলত বন্ধু স্থানীয়রা। তারাদের যৌন শিক্ষাটাই যে নির্ভরযোগ্য এমন টাও ভাবা কত টা যুক্তিসংগত তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়। “নীল ছবি”র ভ্রান্ত ধারনা আর অনভিজ্ঞ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য-ই এখনও মিলে মিশে যৌন জীবনের চালকের আসনে আসী্ন।তাই তো উত্তেজক ঔষধ ব্যবহারকারীরা শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে যে জীবন যাপন করেন সেটা খুব একটা সুখকর নয়।
দেশে যৌন ও চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ থাকতে তবে এদের দৌরত্ব কেন? জানা যাচ্ছে চিকিৎসকগন প্রেস্ক্রিপশনের প্যাডে নয় চিরকুটে লিখে দিচ্ছেন বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ঔষধের নাম। যা বৈধ তা নিয়ে এত লুকোছাপা কেন?
আপনি শুনলে হয়ত অবাকই হবেন - বছরের পর বছর ধরে যে অপচিকিৎসায় দেশের বৃহত্তর তরুণ সমাজ যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজেদের ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনছে তার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ তরুণ-পুরুষের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই বললেই চলে আর থাকলেও তা খুব সহজেই নিরাময়যোগ্য। অথচ বিভিন্নভাবে রাস্তা ঘাটের আশেপাশে বেঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা হারবাল-আয়ুর্বেদ, ভেষজ ও নানা কবিরাজি চিকিৎসায় তরুণদের যে শুধু বিভ্রান্ত করা হচ্ছে তাই নয়, বহু এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারও তরুণদের যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে অজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগে রোগী বানিয়ে দিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে বাধ্য করছে।(তথ্য সুত্র- ইন্টারনেট)।
সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার।এখন প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা আর সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। সুস্থ থাকুন আপনি নিজে, সুস্থ থাকুক আপনার পরিবার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৩