প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সেই এক চেহারা দেখতে হবে!! অসম্ভব। আমি কোনো ভাবেই বিয়ে শাদীতে নেই। কিন্তু নেই বললেই তো আর নেই হয়ে থাকা যায় না। সেই নেই কে আছি করতে বাঙ্গালীর আছে এক পঙ্গপাল আত্নীয়স্বজন। যাদের কাজ উঠতে বসতে খেতে শুতে আমি যে কত বোকা!, সেটা প্রমান করা। আমিও কম যায় না। তারা যদি হন বুনো ওল আমিও বাঘা তেতুল।
- বিয়ে করছো না কেন? (আত্মীয়স্বজন এর প্রশ্ন)
- আগে লেখাপড়া টা শেষ করি।
- মাস্টার্ষ তো শেষ! এখনো লেখাপড়া বাকি?
- হ্যাঁ, আমি সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে পড়তে চাই।
- এরপরে কি আর “ভালো” পাত্র পাওয়া যাবে?
- আপনি বরং ভালো পাত্রের ছোট ভাই কে খুঁজুন
- মানে?
- আহা চটে যান কেন! পাত্র সম্পর্কে খোঁজ খবর নিবেন না? সবথেকে ভালো খবর আপনি তার কাছ থেকেই পাবেন।
- তুমি রাজি থাকলে কিছু ভালো পাত্র আছে। বায়োডাটা দিতে বলি?
- আমার ভালো পাত্র বিয়ে করার একদম ইচ্ছে নেই। দেখেন তো কোনো আরাম দায়ক পাত্র পাওয়া যায় কি না?
- বুঝলি নিলু এই মেয়ে নিয়ে তোর দূর্ভোগ আছে।
অথচ নিলু মানে আমার মায়ের সে বিষয়ে কোনো দূর্ভাবনা নেই। আমার মা সেই ধরনের মহিলাও নন। ভীষণ প্রাকটিক্যাল মানুষ। মেয়ে বিয়ে করছে না বলে কেঁদে বালিশ ভেজাবেন আর বিয়ে হলে কেঁদে বুক ভাসাবেন এমন মানুষ-ই নন তিনি। আর বাবা? তিনি তো রীতিমতো বলেই দিয়েছেন, “জীবন তোমার, সেই জীবন যাপনের সিদ্ধান্তও তোমার”।
তারপরও কিছু মানুষ থাকেই তারা আপনাকে নিয়ে নিজ দায়িত্বে ভাববে। আপনি যে রাম বোকা কথায় কথায় সেটা বুঝিয়েও দিবে। যা হোক, একদিন তো বলেই ফেললাম, আপনাদের এত সুখের সংসার; সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুন না, অযথা আমাকে নিয়ে কেন! আপনাদের দেখে তো আমার আফসোস করার কথা। “বিয়ে” এতো সুখের! কেন সময় থাকতে আমলে নিচ্ছি না। কী অদ্ভুত দেখুন, উলটো আপনারা আমাকে নিয়ে আফসোস করছেন!! আমার লেজ আমি নিজেই পাহারা দিতে পারবো, চিন্তা করবেন না প্লিজ।
বিয়ে তো এফোর্টও করতে হয়। আমার আয় এখনো অতোটা নয়। শুনেই অনেকের চক্ষু চড়কগাছ। তুমি এফোর্ট করবা মানে? তোমার বর কাজ করবে না! বরেরটা বর করবে আমারটা আমি। তাছাড়া সংসারের কাপড় কাচো রে, বাসন মাজো রে, ঘর মোছো রে, রান্না করো রে এগুলো আমার ভালো লাগে না। এবার মুখ ব্যাকালো, হ্যাঁ ব্যাকাবেই তো। ব্যাকাবে কারন, সবারই লাগে কেবল আমার লাগে না। হ্য দোষ তো আমারই। আমার একরাশ বই পড়তে ইচ্ছে করে, আমার পৃথিবী দেখতে ইচ্ছে করে। নিজের মতো করে একটা জীবন কাটাত ইচ্ছে করে, নিজের ইচ্ছের মূল্য দিতে ইচ্ছে করে। ঘরকন্না করার জন্য আমার নিজের অমূল্য জীবনটা ব্যয় করতে ইচ্ছে করে না।
বান্ধবী জিজ্ঞেস করলো, “তুই বিয়ে করিস না কেন?”
আমি বললাম “তুই মারা যাচ্ছিস না তাই”।
বান্ধবী বললো, “আমার মারা যাওয়ার সাথে তোর বিয়ের কি সম্পর্ক?”।
আমি বললাম, তুই মারা গেলে আমি তোর বরকে বিয়ে করবো। তারপর তোর সুখের সংসার দেখে শুনে রাখবো। এরপর থেকে বান্ধবী আর বিয়ে বিষয়ে মুখে কিছু জিজ্ঞেস করেনা।
বন্ধু মহলে প্রশ্ন “কিরে বিয়ে করছিস কবে?”
আমি বলি, তুই যে আমার বিয়ে নিয়ে এত চিন্তিত তোর বৌ সেটা জানে তো!
পাশের বাসার আন্টি বলেন, “বিয়েটা করলে পারতে”
আমি বলি, “পৃথিবী্র সব ভাল ছেলেরা বিয়ে করে ফেলেছে আন্টি। আর একটা ভাল ছেলেও বাকি নেই”।
আপু তোমার বিয়ে কবে খাচ্ছি ?
আমি বলি, আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। আগে বড় হয়ে নেই, তারপর নাহয় বিয়ে করা যাবে।
সহকর্মীর নানু জিজ্ঞেস করেন, “বিয়ে হয়েছে?”
আমি বললাম, “না নানু, আমাকে কেউ বিয়ে করে না!”
নানু বললেন,- কই কী, এমন মেয়েকে, কে না বিয়ে করতে চায়!
আমি বললাম- নানু দিন বদলায় গেছে না!
তিনি তো হেসেই খুন।
ঠিক করলাম, দিন দিন মানুষের প্রশ্নের ধরন বদলানোর সাথে সাথে ব্যাটিং স্টাইলও আরো পারফেক্ট করতে হবে। তারা শেন ওয়ার্নের স্টাইলে স্পিন করলে আমাকেও মাথা ঠান্ডা রেখে শচীন তেন্ডুলকারের মতো ব্যাটিং করতে হবে।
এদেশে বিয়ে দেয়ার কারনের কোনো অভাব নেই,
>মেয়ের ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে >> বিয়ে দিয়ে দিন
> মেয়ে দেখতে ভালো >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ের গায়ের বং কালো >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ের লেখাপড়া শেষ >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ের ছেলে বন্ধুদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ের পড়াশোনা আর হলনা >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ের বয়স বেড়ে যাচ্ছে >> বিয়ে দিয়ে দিন
>মেয়ে ভালো চাকরী পেয়েছে >> খুব হয়েছে এবার একটা বিয়ে দিয়ে দিন
> মেয়ে বিদেশ যেতে চায় >> কোনো সমস্যা নেই, বিয়ে দিয়ে দিন যত খুশি বরের সাথে যাক
ছেলেদের তো সমস্যা আরেক কাঠি বেশি, বিয়ে করছেন না তো, অনেকেই ভেবে নিচ্ছেন আপনি “নপংসুক”। কী অদ্ভুত! যেন কাম ছাড়া তাদের মাথায় আর কিছু-ই নাই। আজকাল তো হাল ফ্যাশানে “সমকামী” বলেও গাল দেয়া হয়। আপনি অসুস্থ, এটা প্রমান না করতে পারলে, অনেকেই আবার নিজেকে সুস্থ বলে দাবী করতে পারেন না কিনা!!
হ্যাঁ তাই-ই তো, কেবল বিয়ের মধ্যেই তো লুকিয়ে আছে জীবনের সব সুন্দরের নিগুঢ় সত্য, সব রহস্যের সমাধান। আপনি বিয়ে করছেন না মানেই কেউ আপনাকে “ডিচ” করেছে। অথচ কেউ সরল দিকটাই ভাবে না। ভাবে না, মানুষ নিজেকে ভালোবেসে, নিজের কাজ কে ভালোবেসে, বিয়ে না করেও একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। জীবনের মাঝে দাড়িয়েই খুঁজে নিতে পারে “জীবনের মানে”।
বিয়ে করছো না কেন?
যে কারো এই প্রশ্নের জবাবে আজকাল মিষ্টি হেসে জানিয়ে দেই “আমার হাতে বিয়ের রেখা নেই”!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫২