somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমিতাভ-রেখার প্রেম ও বাস্তবতা: রূপালী জগতের রাজা-রাণীর মিথ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিল্লির ছেলে অমিতাভ বচ্চনের ছোটবেলা কেটেছে এলাহবাদে। বিজ্ঞানের ছাত্র অমিতাভ পড়াশুনার পাট চুকিয়ে চাকরী নেন কলকাতার বার্ড কোম্পানীতে সেলস এক্সিকিউটিভ পদে। মাস মাইনে ৪৮০রূপি।কিন্তু চাকরীতে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না অমিতাভ। মাস মাইনে চাকরি করার জন্য তো তার জন্ম হয়নি। যদিও কলকাতার নারী মহলে অমিতাভর ছিলো লাভার বয় ইমেজ। কলকাতার প্রথম প্রেমিকার নাম স্বাতী না শান্তা মনে নেই তাঁর।

১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মুম্বাই এসে পৌঁছালেন অমিতাভ। ব্লাকার অ্যাণ্ড কোম্পানীতে ২০০০রূপির চাকরি ছেড়ে বাবা হরবন্স বচ্চন (ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক) আর মা তেজি বচ্চনের অনুমতি নিয়ে। সাথে ছিলো ঝুঁকি নেয়ার সাহস, বাবার থেকে পাওয়া শিক্ষা আর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর লেখা প্রশংসাপত্র। (ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন তেজি বচ্চনের বান্ধবী) মুম্বাইয়ে যাওয়ার প্রথমদিনেই অমিতাভ ‘সাত হিন্দুস্থানি’ ছবির সাত নায়কের একজন হলেন। পারিশ্রমিক পাচহাজার রূপি। জীবনের প্রথম ছবি ‘বোম্বে টকিজ’এ একঝাঁক এক্সট্রাদের সঙ্গে একঝলক পর্দায় মুখ দেখালেন অমিতাভ। অমিতাভের কন্ঠস্বর পছন্দ ছিলনা পরিচালকদের। তাই ‘রেশমা আউর শেরা’ ছবিতে পেলেন বোবা ও কালা’র চরিত্র। অমিতাভর করা প্রথম বারোটা ছবিই ছিলো ফ্লপ।

জয়া’র বাবা তরুণকুমার ভাদুড়ি একজন সাহিত্যিক। মধ্যপ্রদেশের বাঙালি জয়ার প্রথম পছন্দ সিনেমায় অভিনয়। ‘আনন্দ’ সিনেমায় রাজেশ খান্নার সাথে কাজ করার সুযোগ পান জয়ারই সুপারিশে। পারিশ্রমিক ২৫হাজার রূপি। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ‘গাজিবো’ রেস্তোরাতে দিনের পর দিন প্রেম করেন জয়া আর অমিতাভ। এখানে বসে সুন্দর এক সন্ধেতে অমিতাভ আর জয়া ঠিক করলেন, তাঁরা বিয়ে করবেন। ১৯৭৩ সালে জয়া ভাদুড়ি হলে জয়া বচ্চন। অমিতাভের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে পুরোপুরি সংসারে মনোনিবেশ করেন জয়া। ছেড়ে দেন সিনেমায় অভিনয়। শুধু অভিনয় কেন, অমিতাভের জন্য জয়া ছেড়েছেন প্রেমিক ভাস্কর চৌধুরীকেও। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পরিচয় ভাস্করের সাথে, যিনি জয়ার মনের পুরুষ। সেখানেই প্রেম, আসলে সেটা প্রেমে পড়ারই বয়স ছিলো বলে মনে করেন জয়া। তারপর দুজনে কালিগঞ্জে চলে আসেন। দুজনের ঘনিষ্টতা দেখে সেই সময় অনেকেরই ধারনা ছিলো জয়া আর ভাস্করের বিয়ে হয়ে গেছে।

তারপর জয়া মুম্বাইতে এসে স্বপ্নের পুরুষের সন্ধান পান অমিতাভের মধ্যে। কলকাতায় গিয়ে ভাস্করের সাথে দেখা করেন অমিতাভ। জয়া আর ভাস্কর আর কোনোদিন দেখা করতে পারবেন না এই শর্ত অমিতাভের, লোক মুখে শোনা যায় সেজন্য ব্রিফকেস ভর্তি টাকাও দিতে চেয়েছিলেন ভাস্করকে। না ভাস্করের সাথে জয়ার আর কোনো দিনই দেখা হয়নি, কেননা তার কিছুদিনের মধ্যে আত্মহত্যা করেন ভাস্কর। ভাস্করের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘রবি সোম’ মুক্তি পায় তার কিছুদিন পরই।

‘আলাপ’ ছবিতেই আলাপ হয় রেখার সাথে। প্রথম দর্শনেই মেয়েটির সৌন্দর্যের আকর্ষণে আটকা পড়েছিলেন অমিতাভ। বিশেষ করে চোখের। এই প্রথম কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অসহায় লাগছিল অমিতাভের। রেখা তখন দ্বিতীয় সারির নায়িকা। বাবা জেমিনি গণেশন আর মা পুষ্পাবলির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পর টাকার প্রয়োজনে সিনেমায় আসেন রেখা।

একরাতে অমিতাভই ফোন করেন রেখাকে, অনেক দ্বিধাদ্বন্দের পর। কেননা রেখার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অমিতাভ রেখার প্রেমের গল্প তখন বলিউডের চলতি আলোচনা। তাদের কাস্ট করে একের পর এক সিনেমা নির্মিত হতে থাকে। তাদের প্রেমের টানটাও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একজনের কাছে আরেকজন খুঁজে পেয়েছেন আশ্রয়। রেখার বাড়ির ফিক্সড ফোনের নম্বর জানেন শুধু অমিতাভ। অমিতাভ ছাড়া ঐ টেলিফোনে কখনও রিং বাজে না। মুম্বাইয়ের গসিপ ম্যাগাজিন, জয়ার নিরব খবরদারি সবকিছু থেকে দূরে লন্ডনকেই প্রেম করার জায়গা হিসেবে বেছে নিলেন অমিতাভ-রেখা। লন্ডনে একান্তে ঘুরে বাড়ান তারা। এরই মধ্যে বিয়ের তারিখও ঠিক করে ফেললেন তারা।

১৯৮২সাল। লন্ডন থেকে ফিরে ‘কুলি’ ছবির শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অমিতাভ। শ্যুটিং চলাকালে আহত হন তিনি। সেখান থেকে সোজা মুম্বাইয়ের ব্রিচকান্ডি হাসপাতাল। আইসিইউতে অমিতাভ। জয়ার অনুমতি ছাড়া কেউ দেখা করতে পারবেন না অমিতাভের সঙ্গে। অথচ খবর পেয়ে ছুটে এসেও রেখা অমিতাভর সঙ্গে দেখা না করে ফিরে যান, জয়ার অনুমতি তিনি নিবেন না। শেষ অবধি সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে একঝলক দেখেছিলেন তার প্রেমিককে। রোজ ব্রিচকান্ডি হাসপাতালের থেকে খানিকটা দূরে কালো কাঁচে ঘেরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে দূর থেকে চলে যান রেখা। মন্দিরে গিয়ে সেরা পুরোহিতকে দিয়ে জজ্ঞ করিয়েছিলেন প্রেমিকের আরোগ্য কামনায়। অমিতাভও জ্ঞান ফিরে রেখাকে খোঁজেন। জয়া তখন আরো বেশি সেবায় মন দেন।

হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে জয়া অমিতাভ আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে যান প্যারিস। রেখার সঙ্গে আর দেখাই হয়না অমিতাভর। অমিতাভের এই ব্যবহার মেনে নিতে পারেন না রেখা। মায়াস্থেনিয়া প্রেভিস নামের রোগ তখন যার ছায়াসঙ্গী। শরীরের সমস্ত স্নায়ু আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে আসে। চিকিৎসার জন্য জোর করে জয়া নিয়ে যান লন্ডনে। ফিরে এসে হঠাৎ স্টুডিওতে শুনলেন রেখা বিয়ে করছে দিল্লির এক ব্যবসায়ীকে। বুকের মধ্যে মোচড় দিলো। খবরটা কনফার্ম করলেন তিনি।সত্যিই। রেখাকে একগুচ্ছ নীল গোলাপ পাঠিয়ে দিলেন। গুচ্ছের ফুলে কোনও নাম ছিলো না। তবু রেখার বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই ফুল কে পাঠিয়েছে। একসময় অমিতাভই রোজ সকালে নিয়ম করে পাঠিয়ে দিতেন নীল গোলাপের তোড়া। রেখার প্রিয় রং নীল, আর প্রিয় ফুল গোলাপ! কিন্তু অমিতাভকে নিয়ে কখনই কোথাও মুখ খোলেননি রেখা। নীরবে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। অমিতাভ প্রসঙ্গ এলে তিনি শুধু বলে্ ‘He is blessed child of GOD. He is God’s special child’।

১৯৮৪তে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। স্বয়ং রাজীব গান্ধীর প্রস্তাবে রাজনীতি নাম লেখান অমিতাভ।ভোটের নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ১৯৮৮তে স্বপরিবারে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান অমিতাভ। বোফর্স কেলেংকারীর মামলা, সুইস ব্যাংকে এক্যাউন্ট খোলা নিয়ে কম হয়রানি হতে হয়নি এই মেগাস্টারকে। ১৯৯৭সালে ডুবে যান আকন্ঠ দেনায়। নাম লেখান বিজ্ঞাপনের জগতে। আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেনামুক্ত হন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:১৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×