somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু। অতঃপর...

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নুশরাত জাহান নোহা (৯) আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া দারুল ফালাহ প্রি ক্যাডেট একাডেমির ছাত্রী ছিল। গত ৫ সেপ্টেম্বর দারুল ফালাহ প্রি ক্যাডেট একাডেমিতে মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে অকৃতকার্য হয় নোহা। একারণে বুধবার ৯সেপ্টেম্বর সহপাঠীদের সামনে তাকে মারধর করেন শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। রাতে তাদের বাড়ির ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে নোহা। বিডিনিউজ২৪ডটকম এ উক্ত ঘটনাটি ঠিক এভাবেই উঠে এসেছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্যের ঘটনায় আত্মহত্যার ঘটনা গণমাধ্যম মারফত জানা যায়, তবে তৃতীয় শ্রেনীর একটা শিশুর আত্মহত্যার ঘটনা এই সমাজের মুখে একটা সজোর চপেটাঘাত!

নোহার আত্মহত্যার দুটো কারণ হতে পারে, প্রথমত সবার সামনে মারধোর করার সে লজ্জা পেয়েছে। আর দ্বিতীয়ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বাবা-মায়ের বকা খাওয়ার ভয়ও পেতে পারে। শিশুদের জীবন এখন বৈচিত্রপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে আমরা হাসির ছলে বলি, শিশুদের এখন স্বর্ণযুগ চলছে। প্রযুক্তি’র কল্যাণে তাদের বায়না কিংবা দাবী একটু বেশিই থাকে। অনেক অভিভাবকরাও অনেক ক্ষেত্রে নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে বাচ্চাদের চাহিদা পূরনও করেন। এবং শর্ত জুড়ে দেন ক্লাসে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে। বাচ্চাকে ক্লাসে মেধাতালিকায় রাখতে অভিভাবকদের মধ্যে চলে এক অসম প্রতিযোগীতা।

শিশুর সামাজিকীকরণ এবং মনঃস্তত্ত্ব বিকাশে যে এজেন্টগুলো সমাজে কাজ করে তাতে পিতা-মাতার পরেই বিদ্যালয়-শিক্ষক-সহপাঠীদের অবস্থান। সেই বিদ্যালয়ের এই মাসিক পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তীতে শিশুর আত্মহত্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো কতটা অন্তঃসার শূন্য হয়ে গেছি। আমরা সন্তানদের সংশোধন করিনা, অভিযুক্ত করে লজ্জিত করি, ছোট করি আর অপরাধীর মতো আচরণ করি। যা অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয়। শিশুদের তো মৃত্যু ভীতি থাকে না, তবে সেই মৃত্যুকেই সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নেয়া কেন? এদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা কি তবে শিশুদের মানসিক কারাগার হয়ে গেল!

বাচ্চাদের স্কুলের রিপোর্ট কার্ডের প্রতি থাকে আমাদের অহেতুক কৌতুহল আর অযাচিত উপদেশ। প্রায়শ বড়রা অভিভাকত্ব নয় বরং বাচ্চাদের উপর কর্তৃ্ত্ব জাহির করে ফেলে। প্রতিনিয়ত কর্তৃত্ব জাহির করতে থাকলে ভালো বাসতে বাসতে শিশুরা একসময় নিজেদের অজান্তেই চারপাশটাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। প্রত্যাশার চাপ শিশুদের শৈশবকে বিপন্ন করে তোলে। শিশুদের মনের উপর বাবা-মায়ের জীবনাচরনের একটা প্রভাব পড়ে। বাবা-মায়েরা শিশুদেরকে বলেন, ‘বাচ্চারা এগুলো করে না (মিথ্যে কথা বলে না)’, অথচ নিজেরা সেটা করেন প্রতিনিয়ত। শিশুদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে ,তাহলে কী বড়রা মিথ্যে বলতে পারে’। বাচ্চারা তো স্কুলে লেখাপড়া শিখছে, কোচিংয়ে নাচ-গান- আর্ট-অভিনয় শিখছে। নৈতিকতা তারা শিখছে কোথায়?

শিশুরা যদি ভাল-মন্দ, আসল-নকলের পার্থক্য বুঝতো তাহলে তাদেরকে আর শিশু বলা হতো না। শিক্ষকের তো ভুল ধরার কথা নয়। সর্বসম্মুখে শারীরিক নির্যাতন করে লজ্জিত করার কথা নয়, বরং ভুল শুধরে দেয়ার কথা। শিশুদের নিরন্তর ভালোবাসা, অপার আগ্রহ, একাগ্রতা, সৌজন্যতা, আর আত্মসচেতনহীন মনোভাব আমাকে মুগ্ধ করে। নয় বছরের এক শিশুর আত্মহত্যার ঘটনায় আমি হৃৎপিণ্ডে ব্যথা অনুভব করছি। শিশুদের প্রতি বন্ধুসুলভ হোন প্লিজ।

এই ঘটনাটা প্রথম আলো রিপোর্টে এসেছে ' শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বাবার দাবি আত্মহত্যা, মা বলছেন হত্যা' শিরোনামে।

মূল বক্তব্য এমন যে, মেয়েটির দাদা তাঁর সব সম্পত্তি নাতনীর নামে লিখে দিবেন এই মনোভাব ব্যক্ত করার পর বাবা য় সৎ মা মিলে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে। পৈত্রিক সম্পত্তি এক্ষেত্রে হত্যার কারণ। মেয়েটির বাবা সুমন মিয়া এবং মা তানিয়া আক্তারের ছাড়াছাড়ির পর মেয়েটি তার বাবা এবং সৎ মা ঝুমুর বেগমের কাছেই থাকতো।

শিশুদের প্রতি এই ধরণের পারিবারিক সহিংসতা আমাদেরকে অন্ধকার আগামীর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিশুদের প্রতি পারিবারিক সহিংসতা নিতে এই ব্লগে আগেই একটা পোষ্ট দেয়া আছে। তাই আর পুনঃউক্তি করছি নয়া। ছোট্ট করে একটা প্রত্যাশাই করবো, শিশুদের নিরাপদ শৈশব এবং পারিবারিক আবহ নিশ্চিত হোক।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫২
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×