somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ কিছু গল্প হোক…

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জর্জ বার্নার্ড শ'র বাড়িতে রাতের খাবারের দাওয়াত পেলেন চার্লি চ্যাপলিন। নিমন্ত্রণটা চ্যাপলিনের কাছে অনেকটা 'ড্রিমস কাম ট্রু'। তাই সন্ধ্যে নাগাদ পৌঁছে গেলেন তিনি। বসার ঘরে না বসিয়ে জর্জ তাকে নিয়ে গেলেন স্ট্যাডি রুমে যেখানে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাঁর। চ্যাপলিন ধরেই নিলেন জর্জ তাকে নিজের লেখা বই থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনাতে চাইবেন। মনে মনে হয়তো জর্জ প্রসংশা শোনার জন্য অপেক্ষাও করবেন। কিন্তু না, জর্জ তা করলেন না। ওয়াইন নিয়ে গল্পে মনোযোগী হলেন। ডিনার টেবিল রেডি হয়ে গেছে- ভেতর থেকে এমন ডাক এলো। তবুও জর্জ নিজের কোনো বইয়ের কথা কিংবা লেখা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। এক পর্যায়ে বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে চ্যাপলিন প্রশ্ন করে বসলেন - এই সব বই আপনার লেখা?!। জর্জ নির্বিকার ভাবে খুব সংক্ষেপে উত্তর দিলেন- হ্যাঁ। তারপর দুজনেই ধীর পদক্ষেপে ডাইনিং হলের দিকে রওনা করলেন। ইদানিং কোনো কোনো লেখক নিজের লেখা বই পড়ানোর জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লাগে, খুব খারাপ...

সাংবাদিক টনি বেন। তারুণ্যে এক মেয়ের সাথে দেখা করতে যান পার্কে। দু'জনেই ঠিক সময়ে পৌঁছে গেলেন, কিছুক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে গল্প করার পর মনে হলো, এই মেয়েকে অনেককিছু বলার আছে তার। কিছুটা কোলাহলমুক্ত কোন বেছে নিয়ে বসলেন এক বেঞ্চে। দীর্ঘক্ষন আলাপ হলো তাদের মধ্যে। তারপর মাঝেমধ্যেই দেখা করতে লাগলেন দুজন। ধীরে ধীরে তাদের প্রনয় ও পরিণয়। বেশ কিছুদিন বাদে পছন্দসই একটা বাড়ি কিনলেন দুজন মিলে। গড়ে নিলেন সংসার। জন্ম নিলো সন্তান। তবে নিজেদের প্রথম দেখার দিন তাদের মনে অমলিন। শহরের মেয়রের কাছে পার্কের সেই বেঞ্চিটা চেয়ে আবেদন করে বসলেন টনি। লিখলেন তার আবেগ। শহরের মেয়র ডেকে পাঠালেন, মঞ্জুর করলেন সে আবেদন। টনি নিজেদের বাড়ির লনে বসালেন সেই বেঞ্চি। অবসরে মিসেসকে নিয়ে বসতেন বঞ্চিটাতে। জীবনের সুন্দর সেই দিনকে, সময়কে, মানুষকে তিনি যত্ন করে গেছেন আজীবন। ভালোবাসা তো এমনই হতে হয়, তাই না?

১৯৪৬ সালে যুগোস্লাভিয়াতে জন্ম হয় 'ম্যারিনা আব্রাহামোভিচ'র। পেশায় আর্টিস্ট ম্যারিনা ১৯৭৬ সালে একটা আর্ট শো করতে আমস্টারডামে আসেন। ভালো লেগে যাওয়াতে আমস্টারডামেই স্থায়ী হয়ে যান তিনি। পরিচয় হয় 'উয়ে লেইসিয়েপেন', সংক্ষেপে 'উলে' নামের একজন আর্টিস্টের সাথে। একসাথে কাজ করতে শুরু করেন তারা, থাকতেও শুরু করেন একসাথে। 'সম্পর্ক' নামে বেশ কিছু 'মাস্টার পিস' আছে তাদের। এছাড়াও সাইকিক এনার্জি আর ননভারবাল কমুনিকেশন নিয়েও কাজ করেছেন তারা। ১২ বছর একসাথে কাজ করার এবং থাকার পর নিজেদের সম্পর্কতে ফাটলের চাপ অনুভব করেন ম্যারিনা-উলে। ১৯৮৮ সালের দিকে তারা চীনের প্রাচীরে যান, এবং দুইজন দুই প্রান্ত থেকে হাঁটা শুরু করেন, যাতে তারা প্রাচীরের মাঝখানে মিলিত হতে পারেন। উলে গোবি মরুভুমি প্রান্ত থেকে, আর ম্যারিনা ইয়েলো ডেজার্ট থেকে। তারা প্রত্যেকে ২৫০০ কিমি পথ হেঁটে প্রাচীরের মাঝপথে মিলিত হবার মাধ্যমে নিজেদের ১২ বছরের সম্পর্কের ইতি টানেন। ১৯৮৮ সালের পর পুনরায় তাদের দেখা হয় ২০১০ সালে। এঘটনা সম্পর্কে ম্যারিনা বলেন, আমাদের সম্পর্কের একটা সুন্দর ইতি প্রয়োজন ছিল, দুজন দুজনের দিকে অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে আসার মাধ্যমে যা অর্জিত হয়েছিল। বিষয়টি খুব-ই মানবিক, বেশ খানিকটা নাটকীয়, অনেকটা সিনেমার মতো মনে হতে পারে। তবে তার দরকার ছিল কেননা, দিন শেষে তুমি আসলেই একা, সে তুমি যা-ই করো না কেন।

আর উলের বক্তব্য? জানা যাবে এই গানের কথায়:
There she was like a picture
There she was,she was just the same
There she was, he just had to know that she had forgot his name
Ulay, ulay, oh

Thinking back to the last time
On the wall as they turned away
Walking back, was it just a dream or did he hear her say?
Ulay, ulay, oh

Trying his best to forget her
Trying his best to just keep his stride Kept his word,
but he knows he heard Ulay, ulay, ohUlay, ulay, oh (২০১৪ সালে তাদের কাহিনী নিয়ে গানটি বানানো হয়)

মার্ক জাকারবার্গ একজন 'এক্সিডেন্টাল বিলিনিয়র'। হার্বার্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সহপাঠীদের মধ্যে মতামত জরীপের উদ্দেশ্যে 'ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দরী তরুণী কে' নিয়ে ভোটাভুটির জন্য একটা ভোটিং পোল তৈরি করতে গিয়েই মুলত ফেসবুক এর আইডিয়া তার মাথায় আসে। আর আইডিয়া থেকেই তিনি রাতারাতি বিলিয়ন ডলারের মালিক। যার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৬২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফেসবুক তৈরির পেছনের অনুপ্রেরণা, সেই সুন্দরী তরুণীর নামটা কেউ জানেন? কথায় আছে, ‘নারী হেসে ওঠার আগে পৃথিবী ছিল জঙ্গল, আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী’।

হ্যানসি ক্রনিয়া আমার কৈশরের প্রেম। নব্বই দশকের শেষভাগ, ক্রিকেট তখনও ভদ্রলোকের খেলা। দুই দেশের মধ্যে মর্যাদার লড়াই। সেই কৈশরে আমি প্রেমে পড়ে যাই হ্যানসি ক্রনিয়ার। সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হ্যানসি ছিলেন পুরো দস্তুর ভদ্রলোক। মাত্র ২৫বছরেই নির্বাচিত হন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে। হ্যানসির নিশ্চুপ নিস্পৃহতা আমার ভালো লাগতো। প্রতিটি পরাজয়কে কাঁধে তুলে নিতে হ্যানসি ছিলেন সক্ষম। জয় উৎযাপনেও তিনি ছিলেন সুবিবেচক। মাঠে হ্যানসি ছক কষে খেলতেন। দায়িত্ববোধ আর সহনশীলতায় তিনি ছিলেন অনন্য। হ্যানসি দাবাড়ু না হয়ে কেন ক্রিকেট খেলোয়াড় হয়েছিলেন আমার মাথায় আসে না। চোকার দলের এই সেন্সসেবল এন্ড থটফুল ক্যাপ্টেন অভিযুক্ত হন স্পট ফিক্সিয়ের দায়ে। তখন গণমাধ্যমের সংখ্যা এত ছিলো না। সংবাদপত্রে প্রথম পড়ি সংবাদটা। খুব করে চেয়েছিলাম এটা যেন মিথ্যে প্রমানিত হয়। বাস্তবতা চাওয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তদন্ত আর শোনানিতে উঠে আসে অপ্রীতিকর সব তথ্য। বরখাস্ত হন হ্যানসি। তার বয়স তখন ৩০। কেপ্ টাউনের রাস্তায় নিসঙ্গ হ্যানসি হেঁটে বেড়িয়েছেন ঘৃণাভরা চোখের সামনে দিয়ে। গুটিয়ে থাকা হ্যানসি আরো বেশি গুটিয়ে গেলেন। কী ভীষণ বেদনা তখন আমার সমস্ত হৃদয়জুড়ে। সেই বেদনা বোধের সাথে আরো খানিকটা যোগ করে এক সকালের আরেকটি সংবাদ। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ২০০২ সালে জীবন আর জগতের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন এই পরাজিত বীর। মৃত্যু সম্ভবত বাঁচিয়েই দিয়েছিল হ্যানসিকে। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা হারানো হ্যানসি তখন সমস্ত বোধের উর্দ্ধে। প্লেন ক্রাশে আকাশে মিলিয়ে যায় ক্রনিয়া। তবু ক্রনিয়া আমার বুকের মধ্যে হেঁটে চলে ধীরে ধীরে অবিরাম…
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×