জীবন প্রবাহে এমন একটা সময় আসে যখন ফিরে যাবার কোনো পথ থাকে না, কারণ ফিরে যাওয়ার মতো দম থাকে না। তখন কেবল একটা কাজই করার থাকে; নির্বিকারভাবে সামনের অজানার পানে এগিয়ে যাওয়া... আর মনে মনে প্রার্থনা করা যেন বের হবার একটি পথ ওখানে থাকে। যে পথটা কুহুর কাছে পৌঁছে দেবে। জনাকীর্ণ লোকারণ্যেও অতিপরিচিত অনুভূতিটা জেঁকে বসে। পৃথিবী যখন রাতের ঘুমে ডুবে যায়, বহুবছর যত্ন করে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কুহু’র চিন্তার বৃত্তের ফাঁদে আটকে যাই।
কুহ; নিরবতা যার কাছে প্রার্থনার সমান। যে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি গভীর চিন্তা করতে পারে, এমনকি আবেগের বেলায়ও অনেক বেশি তীব্রতা ও পরিপক্কতা দেখিয়ে থাকে। মস্তিষ্ক এবং হৃদয়ের চিরন্তন যুদ্ধে বেদনাকে লুকানোর শিল্পটা রপ্ত না করে বরং সেটা ধারন করার গৌরবটাকে চর্চা করে। আমি এমন কম মানুষকে চিনি যারা কুহু’র সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে পারবে। আজকাল কুহুকে দেখে প্রায়শ মনে হয়, নির্বিকার হওয়াটা দোষের নয় বরং এটাই সবথেকে গভীর অনুভুতি।
সম্পর্কের দায়িত্ব এড়িয়ে গ্রিক দেবতা মেন্দাসিয়াম-এর পথ অনুসরণ করেছিলাম। মেন্দাসিয়াম ছিলেন মিথ্যাচার, ছলচাতুরী আর বানোয়াট কাজকর্মে বিশেষভাবে পারদর্শী। ভেবেছিলাম ইচ্ছে করলেই দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাকে হিসেব করে অবহেলা করা যাবে। স্লেট থেকে সবকিছু পরিষ্কার করে মুছে ফেলার মতো। একজন হোপলেস রোমান্টিক মানুষ হওয়ার কারণে নিরপেক্ষ থাকার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। অথচ দান্তে অলিঘিয়েরি সেই বহুল আলোচিল ভাবনাটাই শেষমেশ সত্যি- ‘নরকের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাটি তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে যারা ভালো আর মন্দের সংঘাতের সময় নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখে’।
ভালোবাসা আসলে একটা খাদ; অনেক গভীর খাদ। জীবন স্রোতে অল্প কয়েকটি, খুবই অল্প কয়েকটি সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় টিকে যায় কিংবা বেঁচে থাকে। বাকিসব পরষ্পরের দৃষ্টির আড়ালে চলে গিয়ে সারাজীবনের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারপর অন্ধকার নেমে আসে তারাহীন রাতের মতো… সুখ নিয়ে বারট্রান্ড রাসেলের একটা আস্ত বই আছে। সুখ কি বুঝতে বইটা পড়তে গিয়ে প্রতিটি ছত্রে নিশ্চিত আরো বেশি কনফিউজ হয়েছি। আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানের একটা লাইন আছে ‘আসলে কেউ সুখি নয়’। কথাটা ভুল। আসলে একজন মানুষ সবাইকে সুখি করতে পারে না।
ভাগ্য, নির্দয় আর দুর্বোধ্য এক রক্ষিতা। আকাংক্ষা আর বিচ্ছিন্নতার উদ্ভট সংমিশ্রণে মাঝে মাঝে মধ্যরাতের চাঁদকে হত্যা করাতে ইচ্ছে করে আমার। দিনে দিনে ইচ্ছাটা আরো প্রবলতর হচ্ছে। যদিও মিথলজি মতে, শুধু মানুষই নয়, এমনকি দেবতারাও স্ববিরোধী। তবু নিজের মন থেকে পালাতে পেরেছে কে কবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭