ভাবাবেগ জিনিসটা গত যুগের বিলাসিতা - এই যুগে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ভাবাবেগ আর বোকামি, এর যে কোনো একটা যদি আপনার উপর ভর করে, ধ'রে নিতে পারেন আপনি শেষ! কিছু মানুষ আমাদের জীবনে এসে আমাদেরকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। তাদের হারিয়ে ফেলার ভয়, ধরে রাখার তৃষ্ণাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ইমরান ঠিক তেমন একজন মানুষ। তবুও তার সাথে একবিন্দুতে মিলনাকানংক্্ষা, অভিন্ন বিন্দুতে পৌঁছে দেয়নি বরং আরো দূরে ঠেলে দিয়েছে, পৃথক সত্ত্বায় প্রকট করে তুলেছে।
ইমরানের ভাবনা একইসাথে মধুর, জোড়ালো,এবং ভয়ংকর। এর মধ্যে কোনটা প্রধান, সেটা বলা অসম্ভব। ঘটনাটা সরল রেখায় বলি... হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া কুটকুট করতে শুরু করলো। আর্কিটেকচারাল কমিউনিকেশন নিয়ে কাজ করবো। কমিউনিকেশনে আমার মেজর করা। কিন্তু আর্কিটেকচার এর উপর আমার জানা শোনা ভাসাভাসা। একাডেমিক কাজ। তাত্ত্বিকভাবে দাড় করাতে হবে। আমার আবার উঠলো বাই তো কটক যাই টাইপের অবস্থা। বুয়েটের ফ্যান ফলোয়ারদের একজনকে কল দিলাম। যাসির আমার তো একজন আর্কিটেক্ট এর সাথে কিছু তাত্ত্বিক বিষয় ডিসকাস করতে হবে। তোমার দূরবর্তী পরিচিত কেউ আছেন? দেখতেছি আপু। সপ্তাহখানিক বাদে যাসির একটা নম্বর এবং অফিস এড্রেস দিলো। সাথে ফুট নোট- ইমরান ভাই একটু ব্যস্ত আছেন। আপনি সপ্তাহ দুয়েক বাদে কল দিয়েন।
সবমিলিয়ে তিনবার দেখা হয়েছে আমাদের। ইমরান খুব যত্ন নিয়ে আমার আগ্রহের বিষয়বস্তু ব্যখ্যা করেছে। নিজে থেকে আরো প্রাসপেক্টিভ যুক্ত করে দিয়েছে। অতঃপর আমার বিরাট ক্ষতি করেছে। কারণ দিনের পর দিন কাজ থেকে এসে ঘুমের পর আবার সকালে উঠে কাজে যাওয়াকে যদি 'জীবন কাটানো' বলে, তবে সেটাই করছি। অনুভব করছি আমার বাসাটা যতবেশি অগোছালো তারচেয়ে বেশী নিস্বংগ। ইমরানের কথা লিখতে গিয়ে নিজের ভেতর বিষন্নতার গভীরতা উপলব্ধি করছি। ইমরান: আপনাকে আমার আশ্চর্য ভালো লাগে- এই ব্যকুলতাকে স্বীকৃতি দেবার কোন পথ জানা নাই আমার।
প্রেম ব্যাখ্যা করা কঠিন কারণ তা বোঝা সহজ। প্রেম একটি ভাষা সেজন্য আমাদের সুন্দর গল্প বলতে পারে ব্যাপারটা তা নয় বরং প্রেমানুভূতি চমৎকার গল্প বলতে পারে বলেই এটি ভাষার রূপ পেয়েছে। ইমরানের সাথে পরিচিত হওয়ার পর বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম আমার জীবনটা পালটে গেলো আজ থেকে। আরো একবার প্রেমে পড়েছি আমি...জীবনে সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার মানে বদলে যায়। এই তো সেদিনও মনে হতো, যাকে ভালোবাসি তাকে না পেলে জীবন বৃথা। আর আজ! ইমরানের সাথে পরিচয়ের পর; জীবনে পাওয়া না-পাওয়ার সীমাবদ্ধতাকে পেরিয়ে এসেছি। কারণ এখন আমার কাছে ভালোবাসার জন্য সবকিছু করার চেয়েও, ভালোবাসার জন্য আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে প্রবল মনে হয়।
সামান্য, তবুও তো প্রলোভন! আজকাল বেঁচে বর্তে আছি ঠিকই কিন্তু এই ঘটনার আগের মানুষটার ছায়া হয়ে। পৃথিবীর সমস্ত হতে চাওয়া প্রেমিকার পক্ষ ওটা আমিই। ওটা অন্য কেউ নয়। যা হোক হৃদয়ের অসুখ হৃদয়েই বাড়ুক। আমার যখন খুব 'ভাবাবেগ' বেড়ে যায় সোজা এক বালতি কাপড় কেঁচে ফেলি। বাস্তবতায় ফিরে আসার অব্যর্থ ওষুধ!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১০:২০