somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুব আদরের ছোঁয়া পাবে তোমার সিঁথির রেখা...

০৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





একসময় যেমন মানুষ বিড়াল বস্তাবন্দি করে দূরে নিয়ে রেখে আসতো যেন বাসা চিনে ফিরে আসতে না পারে, ঠিক তেমনি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি ক্লান্তি দূর করতে শেফস টেবিলে গিয়ে ঘন্টা দুয়েক সময় কাটিয়ে আসি। খাই-গল্পগুজব করি আর আসপাশের মানুষের ভণিতা উপভোগ করি। যদিও সিংহভাগ মানুষের বলার মতো কোনো কথা নেই এই সময়টাই, সবাই সেলফোনের স্ক্রিনে বিভোর।

ধানমণ্ডি ১৫'র মীনা বাজারের পাশের একমাত্র ফুলের দোকান থেকে কয়েকটা ইমপোর্টেড গোলাপ নিলাম। রাস্তা পার হতে মীনা বাজারের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। সামনে দিয়ে মিডিয়াম স্পিডে একটা রিকশা গেল। একজোড়া তরুণ-তরুণী বসা। বয়স ২২-২৪ এর মধ্যে হবে। মেয়েটা রিকশার বামদিকে বসা। কালো শাড়ি, হাতে কাঁচের চুড়ি। ছেলেটারও একটা কালো পাঞ্জাবি পরা। নির্ধিদ্বায় বলা যায়, মেয়েটার মুখশ্রী ভীষণ মিষ্টি আর ছেলেটার ঝরঝরে হ্যান্ডসাম। দুজনের মধ্যেই বয়সের সৌন্দর্য স্পষ্টত প্রতীয়মান। রিকশা আমাদের সামনে দিয়ে যেতে যেতে মেয়েটা ঘুরে ছেলেটার বামগালে একটা চুমু দিলো। ছেলেটা এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো! (সুবহানাল্লাহ) আমি চোখে পলক না ফেলে পুরো দৃশ্যটা দেখলাম। এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাধনের দিকে তাকালাম। বাধন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমিও ফিরতি হাসি দিয়ে বললাম, আপনি বোধকরি এই বয়সটা বছর কয়েক আগে পিছনে ফেলে এসেছেন...

সাংবাদিকতা বিভাগের পড়ার সময় দ্বিতীয় বর্ষে সোস্যাল প্রসেস এন্ড ইনস্টিটিউশন্স বলে একটা কোর্স পড়তে হয়েছিল আমাদের। রোবায়েত ফেরদৌস স্যার কোর্সটা পড়িয়েছিলেন। তো স্যার একদিন ক্লাসে বললেন, আপনারা কী জানেন 'what is KISS'। বোর্ডে লিখে দিলেন Keep it short and simple.
বাহ্!

নব্বই দশকের কিডসরা আমার সাথে ঐক্যমত পোষণ করবেন যে, তখনকার চুমুকান্ড বেশির ভাগই ঘটতো সিড়িতে! ভাবুন একবার একটা সিম্পল বিষয়ে কতটা মানসিক চাপ নিতে হতো। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ছেলেকে সেটা সংক্ষিপ্ত করতে হতো, এবং ধারণা করি মেয়েরা অপ্রস্তুত হয়ে যেত। আসলে সামাজিক শাসনের মধ্যে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে অবাধ স্বাধীনতা ছিলনা, জানা বোঝার পরিমানও ছিল সীমিত।

যা হোক চুমু যদিও একটা ফিজিক্যাল একটিভিটি। তবুও তা মোটেও হেলাফেলার মতো বিষয় নয়। কেননা চুমুতে থাকে নানা বার্তা। যেমন প্রেরক এবং প্রাপক মধ্যে বার্তা বিনিময় হয়, তেমনই যাদের সম্মুখে হয় তারাও বার্তা পান। তাহলে কেমন বার্তা বহন করে চুমু?

যেমন -

এরাবিয়ান মুসলিম রীতির বিয়েতে দেখবেন বিয়ে পরবর্তীতে বর কনের কপালে চুমু দেয়। যার অর্থ নারীটিকে সৌভাগ্যের স্বীকৃতি দেয়া হয়। পুরুষের হাতে চুমু দেয়। মানে হলো তার কর্মকে শ্রদ্ধা করা হয়। তার অধীনস্থতা বা বশ্যতা স্বীকার করা।

ঠোঁটে চুমু দেয়াটা বিশুদ্ধ ভালোবাসা প্রকাশ করে। তবে ঠোঁটে চুমু দেয়াটা যদি সংক্ষিপ্ত হয় তবে, যিনি দিচ্ছেন তিনি ক্লান্ত কিংবা উদাসীন। । আর চুমুটা যদি দীর্ঘ হয় তবে অবশ্য ইন্টারকোর্স এর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

সঙ্গী যখন মাথার উপরের অংশে, চুলের সিথির মধ্যে চুমু দেয় সেটা আস্থা দেয়া কিংবা নির্ভার রাখা বোঝাতে।

যে কপালে চুমু দেয় সে মেধাকে সম্মান করে।
যে গালে চুমু দেয় সে সৌন্দর্যকে প্রসংশা করে।
যে নাকে চুমু দেয় সে অস্বস্তি প্রকাশ করে।
যে চিবুকে চুমু দেয় সে সঙ্গীর কাজের প্রসংশা করে।
চোখের পাতায় চুমু খাওয়াকে মানে বিদায় সম্ভাষণ।

বিয়ের পর যদি যদি প্রথম দেখতেই চুমু খান কোনো দম্পতি তবে তাদের বিবাহিত জীবন হয় সুখী আর দীর্ঘ।
যদি কফিনে শোয়ানো স্বামী বা স্ত্রীকে চুমু খান অন্যজন তবে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় দ্বিতীয় বিয়েটা খুব শীগ্রই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।


বছর কয়েক আগে, কোনো এক বৃষ্টিরদিনে টিএসসিতে এক যুগযুগলের চুমু খাওয়ার দৃশ্য ধারণ করা ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছিল। পরে শুনেছি আলোকচিত্রী ভদ্রলোকের চাকরি চলে গিয়েছিল। অথচ মারামারির ছবি তুললে হয়তো বেচারা পুরষ্কারে ভূষিত হতো। যা কিছু সহজ-সুন্দর-সাবলীল, সেগুলো আমরা কবে একসেপ্ট করতে শিখবো?

গায়ক প্রিতম আহমেদ এর একটা গানের দুটো লাইন দিয়ে শেষ করি-
'রোজ সকালে ঘুমের ঘোরে থাকবে যখন একা, খুব আদরের ছোঁয়া পাবে তোমার সিঁথির রেখা।
এমন অনেক ইচ্ছে যখন মনেতে ভর করে, তোমায় পাওয়ার অযোগ্যতা ঠিক ততটা বাড়ে'...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৬
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×