এসাইনমেন্ট জমা নেয়ার তারিখ আসলে শিক্ষার্থীদের বোধোদয় হয় যে, ফেসবুকের বাইরে একটা বাস্তব দুনিয়া আছে। সেই দুনিয়ায় লেখাপড়া নামক যে মিথটা এখনো বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার অংশ হিসেবে প্রতিটি কোর্সে দুটো এসাইনমেন্ট জমা দিতে হয়। তো সোস্যাল প্রসেস এন্ড ইনস্টিটিউশনস কোর্সের এসাইনমেন্ট জমা নেয়ার তারিখ চলে এলো, ব্যাচের সবাই ডেডলাইন মেনে এসাইনমেন্ট জমাও দিলো। Good. Very Good!
সামনে রাখা এসাইনমেন্টগুলোর প্রথমটার উপর চোখ পড়তেই, খেয়াল করলাম কাভার পেইজে আমার নামের বানান ভুল। খুব সাধারণ ভাবে দ্বিতীয়কপিটা হাতে নিলাম। এটাতেও কাভার পেইজে আমার নামের বানান ভুল। এরপর সামনে রাখা সবগুলো এসাইনমেন্ট একটা একটা করে উল্টে দেখলাম- আমাকে অবাক নয় বরং হতাশ করে সবগুলো কাভার পেইজে আমার নামের বানানে একই ভুল!
এর তো একটা বিহিত করতে হয়। বোর্ডে মার্কার দিয়ে ১৬বর্ণের নাতিদীর্ঘ নামটি লিখলাম। এবং ক্লাসের সবাইকে নামটি ১০০বার করে লিখতে হবে বলে জানিয়ে দিলাম। লিখতে হবে মানে লিখতে হবে, দ্যাটস ফাইনাল। শিক্ষার্থীরা যখন নিরুপায় ভংগীতে লিখে যাচ্ছে- লিখে যাচ্ছে আর লিখে যাচ্ছে আমি ক্লাসরুমের পিছনে দাঁড়িয়ে হেসে খুন।
এমন একটা ইনসিডেন্টের পরে, পড়াশোনা -লেকচার-স্লাইড সব শিকায় তুলে বললাম, এত পড়াশোনা করে আর কি হবে বলেন, তারচেয়ে বরং আসেন গল্প করি। বলার জন্য ফিদেল কাস্ত্রো সম্পর্কে একটা গল্প মনে পড়লো। কিউবার রাজনৈতিক নেতা। ক্লাসে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা নিশ্চয় ফিদেল কাস্ত্রোকে চিনেন। নাম তো অন্তত শুনেছেন। নাহ কেউ ফিদেল কাস্ত্রোকে চিনে না, এমনকি নামও শুনে নাই। ক্লাসরুমে এতটা অপ্রস্তুত এর আগে কখনো হইনি। বললাম, আমি খুবই দু:খিত। আসলে ভুলে গিয়েছিলাম ফিদেল কাস্ত্রো নামের কেউ তো আপনাদের ফেসবুক আইডিতে এড নাই। না চেনাটাই স্বাভাবিক।
আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে আমরা ভিন্ন কিছু করি। আপনারা চাইলে আমার সম্পর্কে যে কোনো প্রশ্ন একটা করে করতে পারবেন। দেখি আমি উত্তর দিতে পারি কিনা।
➤শিক্ষক না হলে জীবনে অন্য কোন পেশায় যেতেন?
শিক্ষক না হলে, সম্ভবত উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতাম। তবে আমার আর্কিটেক্ট হতে ইচ্ছে করে। যদিও আমার সাইন্স নিয়ে পড়া হয়নি। তবে শুরু থেকে শুরু করে শিক্ষাক না হলে আমি অবশ্যই আর্কিটেক্ট হবো।
➤ প্রিয় বই?
অবশ্যই ফর্টি রুলস লাভ (অথার এলিফ শাফাক)
➤ কেমন আছেন?
আনন্দে আছি।
➤ ম্যামের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি কে?
আমার ছোট ভাইগ্নাটা, ওর নাম তাসবীর হাসান। প্রায় যার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
➤আপনার শিক্ষকতা পেশা বেছে নেওয়ার কারণ কী?
পরীক্ষা ইনভিজিলেশন দেয়ার জন্য। হা হা হা। আসলে
আমার বাবা এই পেশাটা অনেক পছন্দ করেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতে সাবলীলভাবে বেঁচে থাকার এমন সুবর্ণময় জীবন আর কোনো পেশাতে নেই।
➤ আপনি অনেক বই পড়েন। কেন পড়েন?
আমি অনেক বই পড়ি না, হ্যাঁ বই পড়ি এটা ঠিক। আসলে আমার কিছু করার নাই তো তাই বই পড়ি।
➤ আপনার ফেসবুক আইডি নাই কেন?
নিজের ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ করা এবং অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়াদি শোনা বা জানার ব্যাপারে আমার কিছু রিজার্ভেশন আছে। তাই ফেসবুক আইডি থেকে আমি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি।
➤ আজকে সকালে আপনি কি খেয়ে এসেছেন?
Kellogg's এর গ্রানোলা। আর কফি।
➤ কিভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা যায় আপনার মতো?
বই পড়েন। বই মানুষের অনুভূতি প্রকাশের স্কিল ডেভেলপ করে।
➤ কোন বিষয়ে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন?
শত্রুতার বিষয়ে। আমি যার তার সাথে শত্রুতা করি না। মিনিমাম নয় শত্রুতার ক্ষেত্রে আমি ম্যাক্সিমাম স্টান্ডার্ড মেইনটেইন করি। যাকে তাকে শত্রুর মর্যাদা দিয়ে নিজের প্রোফাইল লো করার কোনো মানে হয় না।
➤ ছোটবেলায় বড় হয়ে কী হতে চেয়েছিলেন?
দোকানদার। একজন মুদি দোকানদার হতে চেয়েছিলাম।
➤ যে তিনটা বিষয় মেনে চলার চেষ্টা করেন।
সীমিত আহার করা, গভীরভাবে চিন্তা করা আর ধীর স্থির ভাবে চলাফেরা করা।
➤ কখনো কাউকে মন থেকে ভালবেসেছিলেন?
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ বেসেছি। পাকিস্তানের জুলফিকার আলি ভুট্টো'র দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম 'তার জন্য আমার দু:খ হয়, যার জীবনে প্রেম আসেনি '।
➤ প্রিয় খাবার কী?
বাসায় থাকলে গরম ভাত। গরম ভাতের সাথে আমি যে কোনো তরকারি খেতে পারি। আর বাসার বাইরে হলে সিঙাড়া। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানেন; বাসার বাইরে আমি সবথেকে বেশি খেয়েছি সিঙাড়া আর ধোকা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮