somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচ্ছেদে গলে যায় যে বন্ধন...

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মানুষ স্বেচ্ছায় কি জীবনকে জটিল করে, নাকি কারো কারো ক্ষেত্রে জীবনই মানুষের কাছে জটিল হয়ে ওঠে?

গড়পড়তা মধ্যবিত্ত আলাপ চক্রাকার, উদ্দেশ্যবিহীন এবং খাপছাড়া। এই সময়ে যারা জোর করে মধ্যবিত্ত তকমা নিয়ে বেঁচে আছেন, আমি তাদের একজন। ফলত আমার লেখালিখির প্রাধন ও আধিপত্যশীল প্রসঙ্গই হলো প্রেম। ক্ষেত্র বিশেষ ব্যর্থ প্রেম!

প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমি একজন খুব ভালো অবজার্ভার। আমি এত ভালো অবজার্ভার যে, কোনো কিছু দেখার পর সেটা ভুলতে আমাকে চেষ্টা করতে হয়। এফোর্ট দিতে হয়। শিক্ষকতা করার সুবাদে শিক্ষার্থীদের নানা পরিবর্তন প্রায়শই নজরে আসে। এমন একজন হলেন শিহাব। অনার্স কমপ্লিট করার জন্য শিহাব বোধকরি ধনুক ভাঙা পন করেছে যে কম পক্ষে ছয় বছর সময় ব্যয় করবেই। পরিস্থিতি যে নাজুক অবস্থায় আছে, ছয় বছরে যে শেষ হবে না অনার্স সে আশংকা জ্বাজ্জল্যমান। শিক্ষক হিসেবে একটু আধটু শাসন বারণ তো আমি করতেই পারি। জিজ্ঞেস করলাম, কি অবস্থা শিহাব, কী খবর আপনার?

প্রশ্নের গোড়াতে বলে রাখি, শিহাব বর্তমানে 'দেবদাস সিনড্রোম'এ ভুগছে, যাকে ব্যর্থ প্রেমিক বলা হয় আরকি। ফুটনোটে বলে রাখি দেবদাস (গল্প/সিনেমা) এর প্রধান চরিত্র দেবদাসকে নিয়ে ফেসবুকে একটা চমৎকার লেখা পড়েছিলাম। 'সবাই ভেবেছিল পার্বতী দেবদাসকে এত ভালোবাসে, দেবদাসের মৃত্যু সে কিভাবে সহ্য করবে। বাস্তবে যা ঘটে ছিল, তা হলো দেবদাসের মৃত্যুতে পার্বতীর সামান্য জ্বরও আসেনি'।

তো শিহাবের খবর হলো, তার লেখাপড়ার অবস্থা খারাপ, ইতোমধ্যে দুই সেমেস্টার ড্রপ। তার কোনো কিছুতে মন বসছে না। সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। রাখি নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল। একবছর আগে ব্রেকাপ হয়ে গেছে। শিহাব এখন নিজেকে ব্যর্থ মনে করে।

তারপর?

শিহাব এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তারপর তো সে আর ভাবে নি। সে ভেবেছিল আমি জানতে চাইবো কেন ব্রেকাপ হয়েছে, রাখি এখন অন্য কোন সম্পর্কে আছে কিনা, ব্লা ব্লা ব্লা। আমি নিশ্চিত জানি, শিহাব নিজের খোঁজ খবর না রাখলেও ফেসবুকের কল্যাণে রাখির সব আপডেট রাখে। রাখবেই বা না কেন? এখন তো আর পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগ নেই। সবসময় পরস্পরকে কাছ থেকে দেখতে হয়।

আচ্ছা শিহাব, বলেন তো প্রেম কী? শিহাব নিরত্তর। এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেয়ে তিনটা সাবজেক্ট রিটেক দেয়া সহজ সম্ভবত। রিপিট করলাম, আপনি কী জানেন, প্রেম কী? ধরে নিচ্ছি আপনি জানেন, তবুও আমি আমার উত্তরটা শেয়ার করি। প্রেম হচ্ছে, বিচ্ছেদে গলে যায় যে বন্ধন।

আমি বুঝতে পারছি, রাখি'র সাথে ব্রেকাপ আপনি মেনে নিতে পারছেন না, কিংবা সহ্য করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি নিজেই নিজের শত্রু বনে গেছেন। প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন; কখনো আবেগের সঙ্গে, কখনো বিবেকের সঙ্গে।

আচ্ছা আগামী পাঁচ মিনিটের জন্য ভুলে যান আপনি শিহাব। মনে করেন আপনি একজন মেয়ে। আপনার নাম রাখি। আপনার বয়স ২১বছর। আপনি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সততার সাথে বলেন, আপনি (রাখি) কী শিহাবের সাথে আড়াই বছরের সম্পর্ক কনটিনিউ করতেন?

আপনার নিরবতা এবং ঝুঁকে পড়া কাধ বলে দিচ্ছে করতেন না। কেন জানেন, বাস্তবে আপনি যতটা প্রেমিক তার চেয়ে বেশি ম্যানেজার। আপনি নিজের উপর আস্থা রেখে ম্যানেজ করতে চান। আজকে রাত জেগে ক্লাব ফুটবলের ম্যাচটা দেখি, এই সপ্তাহে ট্যুরটা করে আসি, এই সেমেস্টারটা ড্রপ করি; আপনার আস্থা পরের দিন, পরের সপ্তাহ, পরের সেমেস্টার।

রাখি যেতে যেতে আপনাকে এটা শিখিয়ে গেছে নিজেকে ভুলিয়ে রাখা যায় কিন্তু যে সম্পর্কের বয়স বাড়ছে তাকে নয়। আপনি আসলে কোনো কিছুতে সিরিয়াস না, সিরিয়াসনেসের ভান করেন। মানুষ যখন ভান করে সেটা প্রতারণার সমান। যখন কাছের মানুষের থেকে প্রতারণার শিকার হতে হয়, তখন মনে ঘৃণা জন্মায়। রাখির ঠিক সেটা হয়েছে।

আপনার জীবনে যে ব্রেকাপ, এটা কি আদৌ সমস্যা, নাকি ‘সমস্যা’ শব্দটি ব্যবহারে তার ওপর অর্থ আরোপ করেছেন? এটা এখন বাস্তবতা। বুদ্ধিমানরা বাস্তবতা অস্বীকার করে না, একসেপ্ট করে। রাখি'র অনুপস্থিতির গভীরতাবোধ থেকে অন্তত আপনার এই লার্নিংটুকু হোক যে, অন্যের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে ওঠার আগে, নিজেকে নিজের কাছে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।

চিয়ার আপ!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×