তীর্থ আমার বিভাগের প্রথমসারির শিক্ষার্থীদের একজন। তীর্থের চোখ জোড়া ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত। থার্ড ইয়ার ফাইনাল টার্মে রেজাল্ট পুরো ধপাস। যেহেতু সে আমার এডভাইজি ব্যাচের শিক্ষার্থী তাই লেখা পড়ার এই দুর্দশা নিয়ে কথা বলা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তো তীর্থের ইন্টেরোগেশন। কি হাল-চাল জানার জন্য ডাকলাম। আমি সাধারণত ইন্টেরোগেশনে এক কাপ ''Good Day' কফি খাওয়ায়। আমাদের এটেনডেন্ট হানিফ আল হাসান খুব ভালো কফি বানাতে পারে। পুর্ব নির্ধারিত সময়ে তীর্থ আসলো, কফির কাপও আসলো এবং আলাপ শুরু হলো।
তীর্থের হাল-চাল হলো, তার তিন বছর পুরনো প্রেমের ইতি ঘটেছে। যে মেয়েকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়েছিল। একসময় মেয়েটাকে ইম্প্রেস করতে না পেরে আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট থেকে ড্রপ আউট হয়ে ঘুমের বড়ি খেয়ে হসপিটালে ছিলো সপ্তাহ খানিক। সেই প্রেম তার জীবনে আসলো ঠিকই আবার চলেও গেল!
'আমাদের যে শুধু ব্রেক আপ হয়েছে তাই নয় ম্যাডাম, নীল এখন ম্যাথমেটিক্স ডিপার্টমেন্টের এক ছেলের সাথে প্রেম করে আর শামসুন্নাহার হলের সামনে বসে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খায়'। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তো আপনার বর্তমান সমস্যা কী ফ্রেঞ্চফ্রাই, শামসুন্নাহার হল নাকি ম্যাথমেটিক্স ডিপার্টমেন্টের ছেলেটা। 'আমার মূল সমস্যা আমার ঘুম আসে না'। লাস্ট ছয়মাস নীল আমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছে। আমার সবকিছু নিয়ে ওর অভিযোগ ছিল। সব সময় আমাকে মনে করিয়ে দিত আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। মনে হয় আমি প্রেম না ম্যাডাম, নীলের কাছে কৈফিয়ত দেয়ার একটা চাকরি করতাম'। যার জীবনই স্বাভাবিক অবস্থায় নাই তাকে রেজাল্ট নিয়ে আর কি প্রশ্ন করবো...
মৃদু হেসে বললাম, অবসাদও প্রেম হয়ে আসে কারো কারো জীবনে, প্রেমিকার মতো মিষ্টি স্বার্থপরতায় সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নিতে থাকে একে একে। তারপর হৃদয়ের সবক’টা ঘরদোর, লেপ-কাথা-বালিশ-তোশক সব দেয় এলোমেলো করে। ... প্রেমিকার মুখে কথার কথাও যেনো হয়ে ওঠে ভাবের সমুদ্র।
একজন প্রেমিক যখন প্রচলিত লাভ-ক্ষতির দুনিয়া থেকে ছুটি নিতে পারে পুরোপুরি, ঠিক তখনই তার সঙ্গে দেখা হতে পারে এক সাধকের।
মন দিয়ে শোনেন, জীবনে আবার প্রেম 'অতিথি' হয়ে আসার হলে আসবে, না আসলেও ক্ষতি নেই। প্রেমে থেকে অসম্মানিত হওয়ার সুখের কিছু না। অসম্মানিত হওয়ার চেয়ে নিজের সঙ্গে থাকা ভালো।
একা কেউ বাঁচে না কথাটা ভুল। বাঁচতে হলে একাই বাঁচতে হয়। আপনার জীবন আপনাকেই যাপন করতে হবে। আপনার লড়াই আপনাকেই লড়তে হবে; আপনার সিদ্ধান্ত, আপনার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আপনি কী পোশাক পরবেন, কী রঙের জুতো পরবেন ; কেউ ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিলে আপনি তার প্রতিবাদ করবেন নাকি মুখ বুজে সহ্য করবেন, সে সিদ্ধান্ত শুধুই আপনার। এবং আপনাকে আরো মনে রাখতে হবে আপনি শুধু আপনার কাছেই অপরিহার্য; আপনার সম্মান অটুট রাখার দায়িত্বও আপনার। অন্য কারো হওয়ার আগে আপনাকে আপনার হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৩