somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গ থেকে নামা ভালোবাসা

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টার লাইফৈর আগে কিছুদিন কুষ্টিয়ার এক মেসে থাকতাম। আমাদের মেসটি দিল তিনতলা। নিচতলা ও দোতলা ছিল মেস এবং তিনতলা ছিল বাড়ির মালিকের বাসা। কুষ্টিয়ার স্থানীয় ছেলে হিসেবে খুব অল্পদিনের মধ্যেই ঐ বাসার সবার সাথে ভালো একটা সখ্যতা গড়ে উঠে। ঐ বাড়ির বড় মেয়ে অতশী আপু তখন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স পড়ে। তার খুব বাতিক ছিল এডভাঞ্চেরারের বই পড়া এবং আমার তো ঐটা বাতিক নয় বরং নেশার বস্তু ছিল। তাই আপুর সাথে মাখামাখি হতে বেশী সময় লাগেনি। আপু আমাকে তার লাইফের ফিলোসফি বোঝানোর চেষ্টা করতো।
মেসের অন্যান্য বড় ভাইয়েরা সবাই কানাকানি করত আপু নাকি মাঝে মধ্যে ড্রাগস
নেয়।
তখন থেকে কেন যেন খুব ভয় পেতাম ওনাকে।
মাঝে মাঝে কোন কোন দিন আসত যেদিন আপু
উচ্চস্বরে বিলাপ করে কাঁদত আর চিত্কার করত যা আমি দোতলা থেকেও শুনতে পেতাম। ওনার
সেই কান্নার মধ্যে কী যেন একটা তীব্র হাহাকার
ছিল! হয়ত পাওয়া না পাওয়ার জীবনের মেলবন্ধনে তার সুর প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ত আকাশে বাতাসে। একদিন সুযোগ বুঝে ওনাকে চেপে ধরলাম যদিও বলতে চায়নি। তবুও ছোট ভাই হিসেবে আমাকে আর ফিরাতে পারেনি। ওনার
কাছ থেকে যেটুকু শুনেছিলাম তার সারাংশ হল নিয়াজ
ভাইকে উনি খুব ভালবাসতেন। ওনাদের খুব সুন্দর
একটা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নিয়াজ ভাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত।
কিন্তু সেই নিয়াজ ভাই যখন স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতার আশায় স্থানীয় এক সমাজপতির মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়।(উল্লেখ্য যৌতুক হিসেবে এগুলোর সাথে বিরাট অংকের সম্পদ ছিল যা আমি পরে জেনেছিলাম)। সেই
ধাক্কাটা আপু কোনভাবেই সহ্য করতে পারেন নি।
উনি প্রায়ই একটা কথা বলতেন-
"একবার কাউকে ভালবাসার পর ঐ একই
হৃদয়টা দিয়ে দ্বিতীয় কাউকে ভালবাসার ক্ষমতা আর
থাকে না"
কুষ্টিয়া ছেড়ে যশোরে চলে আশার পরে ওনার সাথে আর তেমন যোগাযোগ
ছিল না।
প্রায় ৮ বৎসর পরে কুষ্টিয়া যেয়ে "লাভলী টাওয়ারে" হঠাৎ অতশী আপুর সাথে দেখা।
আমার কাজিনকে নিয়ে নিয়ে দাড়িয়ে আছি হঠাত্ দেখি সেই অতশী আপু আর তার
ওড়না ধরে টুকটুক করে হাটছে একটা ডল পুতুলের মত মেয়ে।
অনেকক্ষণ কথা বললাম। বিয়ে করেছেন। হাজব্যান্ড
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল জব করে।
অতশী আপু তার আগের রিলেশানের সব জানিয়েই
বিয়ে করেছেন। আমিও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেকখানি কাঁটিয়ে এসেছি শুনে একইসাথে চমকৃত ও আনন্দিত হলেন। আমাকে জীবনে সব কাজের ব্যাপারে সৎ থাকার পরামর্শ দিলেন যাতে জীবনটা আমি উপভোগ করতে পারি কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়। না কারো সাথে-না নিজের সাথে। তারপর ওনার ফ্যামিলী নিয়ে অনেক কথা হলো।
ফিরে আসার সময় ওনার একটা কথাই বার বার
কানে বাজছিল-
"আল্লাহ যে আমার মত মানুষের ভাগ্যে এতটা সুখ
লিখে রেখেছিলেন এটা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি রে"
আসলে আল্লাহ যাকে আমাদের
ভাগ্যে লিখে রাখেনি সেই মানুষটাই হল আমাদের
জীবনের ভুল মানুষ। অথচ সেই ভুল মানুষগুলোর পেছনেই
আমরা ছুটে বেড়াই সুখ নামের মরীচিকার আশায়।
আসলে কারো জন্যেই কারো জীবন থেমে থাকবে না।
তপনরা হয়ত থাকবে না কিন্তু অন্য আর একজন ঠিকই সেই
শুন্যস্থান পূরন করবে।
আর যেই সম্পর্কটা ভেঙে যায় ঐটার
মধ্যে আসলে কোনকালেই ভালবাসা ছিল না।
ভালবাসা এক অন্য জিনিস যা কোন উপমা দিয়ে বোঝানো যায় না। এটা হয়তো স্বর্গ থেকেই আসে আবার স্বর্গীয় হাওয়ায় মিশে যায়। কোন কবিই সেটার পরিধি নির্ণয় করতে পারেননি, না পেরেছেন কোন তাত্বিক সেটা নিয়ে সর্বগ্রাহ্য কোন তত্ব দিতে। তবে "অতশী" আপুর মত মেয়ে আছে বিধায় ভালোবাসা এখনো মরেনি। এরাই ভালোবাসাকে খাঁটি করতে শেখায়। ভালোবাসার মধ্যে যে কোন রাক্ ঢাক -মিথ্যা-লুকোচুরি থাকতে নেই তা আমরা এই "অতশী"দের মত মানুয়ের কাছ থেকেই শিখতে পারি। প্রাণভরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আপুর ভালোবাসার শীতল বাতাসে ভরে যাক তার সমস্ত পরিবার। ভালো থেকো আপু...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×