আওয়ামীলীগ না স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াস এর স্রষ্টারাই স্বাধীনতার ডাক দেয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আপনারা জানেন স্বাধীনতা আওয়ামীলীগের একক সম্পত্তি। এই কথাটি আজকালরা ছোকড়া আওয়ামীলীগরা বুজে হোক না বুজে হোক ব্যাবহার করে। অথচ তারাও জানেনা কত বড় ভূল ধারনা নিয়ে তারা বসে আছে। আজকে আমার এ লেখায় সেই ভূলের সংশোধন করার চেষ্টা থাকবে।
আপনি যদি কোন বাম অথবা আওয়ামী তাত্বিকের সাথে কথা বলেন তবে শুরুতেই সে দু’ তিনটি শক্ত তত্ব কথা বলে আপনাকে ঘাবড়ে দেবার চেষ্টা করবে। যার মধ্যে অনিবার্য এসে পড়বে ‘নিউক্লিয়াস’ শব্দটি। যদিও এই নিউক্লিয়াস কি? কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল? এগুলো নিয়ে নিয়ে আপনি যদি প্রাথমিক ধারনা রাখেন দেখবেন সেই সব বিখ্যাত তাত্বিক রা একেবারে ত্যানানো মুড়ির মত ন্যাতিয়ে যাবে।
চলুন দেখি ‘নিউক্লিয়াস’ কি?
১৯৭১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী। সন্ধ্যা। ঢাকায় গর্ভনর হাউজে গর্ভনর আহসান শেখ মুজিব কে জানিয়ে দেন রাওয়ালাপিন্ডির বার্তাটি। সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শেখ মুজিব গর্ভনরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে বলেন “আমার অবস্থা দু পাশের আগুন- মাজখানে আমি দাঁড়িয়ে। হয় সেনাবাহিনী আমাকে মেরে ফেলবে না হয় আমার দলের চরমপন্থীরা আমাকে মেরে ফেলবে। কেন আপনারা আমাকে গ্রেফতার করছেন না”।( সিদ্দিক সালিকের নিয়াজীর আত্মসমর্পনের দলিল পৃঃ ৫৬)
শেখ মুজিব যাদের চরমপন্থী বলেছেন তারাই এক দফাপন্থী, তার দলের ভেতরকার আর এর গোপন অংশ যারা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভূদ্ধ এবং শোষনহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রানিত আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ব্যাপক তরুন অংশ।
কারা ছিল এই তরুন ছাত্র সংগঠন? কারা ছিল এক দফার দাবীতে সোচ্চার?
অনেকেই হয়ত আমার আগের প্যারা পরেই বলবেন কেন আমি তো বলেই দিয়েছি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। না ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। এরপরেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় আসব। এখানেই আসে নিউক্লিয়াসের প্রসঙ্গ। যে প্রসঙ্গ সজ্ঞানে আওয়ামীলীগ খুব সযত্নে এড়িয়ে যায়।
আজ যারা বড় গলায় বলেন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে একাত্তরের সশস্ত্র প্রতিরোধ হয়েছিল তাদের জন্য জানাই যে আওয়ামীলীগের শ্রেনীগত বৈশিষ্ট্যই তাদের সশস্ত্র যুদ্ধ থেকে সরিয়ে আনে। মূলত আওয়ামীলীগ ছিল ততকালীন উদীয়মান ধনিক বাঙালী শ্রেনীর প্রতিনিধি। আর ছয় দফা ছিল সেই উদীয়মান ধনিক শ্রেনীর বিকাশের সনদ। আওয়ামী রাজনীতি ছিল ছয়দফার মাধ্যমে ভোটযুদ্ধে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া।
আওয়ামী মুল নেতৃত্ব যুদ্ধ না চাইলেও আওয়ামী যুবলীগের মধ্যে এক শ্রেনীর রাগী যুবক আর পরাধীনতা সহ্য করতে চাচ্ছিল না। এই মতধারা আওয়ামীলীগের মধ্যে এত শক্তিশালী হয়ে উঠছিল যে মুল নেতৃত্ব শেখ মুজিবসহ এদের ভিত নাড়ানো সম্ভব ছিল না।
এই যুবকদের কথা বলতে গেলেই চলে আসে নিউক্লিয়াসের প্রসঙ্গ।
শেখ মুজিবের ভাষায় দলের এই চরমপন্থীরা ভারতীয় মদদে ( আপনাকে বুজতে হবে ভারতীয় দৃষ্টিকোন থেকে এই মদদ কিন্তু বাংলাদেশ কে ভালবেসে দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছিল পাকিস্তান ভাগ করার জন্য) চিত্ত রঞ্জন সুতার আর কালীদাস বৈদ্যর “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” তৎপরতা শুরু হয় ১৯৬২ সালে আর ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগঠন টি গড়ে ওঠে ১৯৬৪ সালে।
১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মধ্যে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়। তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক।
আব্দুর রাজ্জাক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ সাধারন সম্পাদক। আর ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা কাজী আরেফ আহম্মেদ কে নিয়ে গঠিত হয় “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের” তিন সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেল।
তিন সদস্যর এই গোপন সেল সর্ব প্রথম স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে। এই নিয়ে সাংগঠনিক কাজ করে।
কমিটি তার আরম্ভকাল থেকে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় কাজ করছিলো বলে এর অস্তিত্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অজানা থাকে। অবশ্য গোয়েন্দা সংস্থা চিত্ত রঞ্জন সুতার আর কালীদাস বৈদ্যর নাম জানত।
এই তিন সদস্য বিশিষ্ট সেল নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নেয় নিম্নলিখিত ভাবে
সিরাজুল আলম খান- শ্রমিক ফ্রন্ট।
আব্দুর রাজ্জাক- শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগের মধ্যে যোগাযোগ।
কাজী আরেফ আহাম্মেদ- ছাত্র লীগ ও ছাত্রফ্রন্ট।
এখন আসুন বিভিন্ন সময় আজকের আওয়ামীলীগের নেতাদের পরিস্কার আস্বীকার এই “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” সম্পর্কে। কেউ কেউ জেনে করে। কেউ কেউ ইতিহাস কে বিকৃত করার জন্য।
এই “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহমেদ ও কিছু জানতেন না জানতেন না শেখ ফজলুল হক মনিও। কারন এটি ছিল একটি আন্ডারগ্রাউন্ড সেল। আর অন্য দিকে মতাদর্শগত ভাবে মনি আর তোফায়েলের সাথে সিরাজুল ইসলামের পার্থক্য ছিল।
এই মতাদর্শগত বিরোধ আরো প্রকট হয়ে ওঠে ১৯৭০ সালে আগষ্ট মাসে যখন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রস্তাব গ্রহন করে। শেখ মুজিব এ প্রস্তাব বিরোধিতা করেন আর মনি ও তোফায়েল সেখ মুজিবকেই সমর্থন করে।
এখানে আরো একটা ব্যাপার পরিস্কার হওয়া দরকার যে শেখ মুজিব ১৯৬৯ সালের আগ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের অস্তিত্বের কথা জানতেন না। তাকে আসলে জানানো হয়নি। শেখ মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বের হয়ে আসলে রাজ্জাক আর সিরাজুল আলম তাকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের ব্যাপারে অবহিত করেন।
১৯৬৪ সালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বিপ্লবী বাংলা নামে সাইক্লোষ্টাইল করা একটি গোপন পত্রিকা বের করে, তিনটি সংখ্যার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করার পর স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ তা এক দফায় নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু করে বস্তুত ওই খানেই শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন। গন আন্দোলনের সময়ই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ব্যাপক অংশ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নেতৃত্বাধীন চলে আসে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (পিকিং) অভ্যান্তরে কাজী জাফর আহমেদ, হায়দার আরবর রনো ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন কম্যুনিষ্ট পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি স্বাধীন বাংলার কর্মসূচী সম্বলিত প্রচার পত্র বিলি করে ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে। ওই প্রচারপত্রে বলা হয় “সম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুজির প্রতিভূ, এক কেন্দ্রিক স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীকে পূর্ব বাংলার বুক হতে উচ্ছেদ করিয়া একমাত্র স্বাধীন সার্বভৌম জনগনতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের মাধ্যমে শোষীত, বঞ্চিত জনতার মুক্তি সম্ভব। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র পৃঃ ৪৭)
মূলত শেখ মুজিবের ভাব মুর্তিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নেতারা। তাছাড়া তার বিশাল ব্যাক্তিত্ব ও অস্বীকার করার উপায় ছিল না। আর একটি ব্যাপার তারা অনুধাবন করতে পারে যে শেখ মুজিবের কাছ থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যাবে না। এই অসমর্থনসূচক মনোভাবের প্রকাশ পায় ১৯৭০ সালের আগষ্ট মাসে। যা পূর্বে উল্লেখিত।
উপরের আলোচনায় পরিস্কার বোজা যায় আওয়ামীলীগ না স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ প্রথম স্বাধীনতার ডাক দেয় যা কৌশলগত কারনে ছাত্রলীগের অভ্যান্তরে থেকে কাজ করে গেছে। এই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ পরে “জয়বাংলা বাহিনী” তৈরী করে। এব্যাপারে পরের পোষ্টে আলোচনা করব।
স্বাধীনতার ব্যাবসায়ী আওয়ামীলীগের মুখোশ খুলে দিন ইতিহাস থেকে। কিছু গৎবাঁধা কথা আর মিথ্যার বেসাতি দিয়ে দেশ চলতে পারে না।
সাথে থাকুন।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন