somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই মেয়েটা ! (ইতালির গল্প )

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি যদি গুলশান,বনানীর কোন একটা সোসাইটি ফ্যমিলিতে বেড়ে উঠেন তবুও আপনাকে ইউরোপে এসে তার পরিবেশ এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে গিয়ে বড় একটা ধাক্কা সামলে উঠতে হবে ।
আর আমি তো এক জঙ্গলা থেকে এসেছিলাম এই স্বপ্নের শহর "রোমে"।
স্কুলে ভর্তি হলাম ,ক্লাস করছি ।
ক্লাসের ছেলেপেলেরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, আমি ইতালিয়ানের আগামাথা কিছুই বুঝি না ,চোখ বড় বড় করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
কি এক বিব্রতকর অবস্থা বলে বুঝানো যাবে না ! :|

প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে আবিস্কার করলাম একটা বাঙ্গালি মেয়েও আছে আমার ক্লাসে।আমি ভাবলাম "বাহ ! ভালোই হল, সাহায্য পাওয়া যাবে" ।
মেয়েটির বিবরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা ।
১৬ বছরের একটা মেয়ে ,শ্যামলা ,লম্বা ,বিশাল আকৃতির দুইটা চোখ আর সবচেয়ে লক্ষণীয় হল তার চুলগুলি । এত সুন্দর চুল মানুষের হতে পারে বলে আমার জানা ছিল না ।
তার চেহারা কত টুকু সুন্দর ছিল তা ফুটিয়ে তোলার মত লিখনি ক্ষমতা আমার নেই!
মূল বেপার থেকে সরে যাচ্ছি । যা বলছিলামঃ

ভেবেছিলাম সাহায্য পাব। কিন্তু না , সাহায্য পাব কি ? বরং পুরো ক্লাসের সামনে আমার সাথে যা ইচ্ছে তা ব্যবহার করল ,খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল সে বাংলা বলতে পারে না ।
আমিও মেনে নিলাম । ইতালিতে জন্ম একটা মেয়ে বাংলা জানবেই বা কি করে ? হোক তার বাবা-মা বাংলাদেশি ।

কোন এক কারনে মেয়েটাকে আমার ভীষণ ভালো লেগে যায় । কি চঞ্চল একটা মেয়ে,সাড়াক্ষন ক্লাসটাকে মাতিয়ে রাখে । কি হাসি , সেই খোলা চুল ,তার চোখের দিকে চোখ পড়লেই বুকের মাঝে কি যেন একটা সূক্ষ ব্যথা অনুভূতি হয় ।

আমি তখন জড় পদার্থের মত ক্লাসের এক কোনে বসে থেকে অনুভূতি গুলির অপমান করি । জমানো কথা গুলি কাগজে লিখি ,ক্লাসের আর সবাই এসে বলে "কি এত লিখিস ? হিজিবিজি লিখা কিছুই বুঝা যায় না " ।
লিখা শেষ করে সেই পাতা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে বল বানিয়ে তাতে লাথি মেরে ফুটবল খেলি । ছোট্ট মনের মানুষদের মনে আবেগ ,অনুভূতির জায়গা দিতে নেয় ! /:)

কি করে যেন খুব অল্পদিনে সবার সাথে গলায় গলায় ভাব জমে উঠল ।খুব দ্রুত ঐ দাঁত ভাঙ্গা ভাষাটাকে রপ্ত করে ফেলি :)। এক ঝাঁক সাদা চামড়ার মানুষ গুলি মাঝে কালো আমি । প্রথম প্রথম নিজেকে ছোট মনে হলে একসময় বুঝতে পারি "সবার উপর মানুষ সত্য , তাহার উপর নাই"।
কিন্তু ঐ নিজ জাতির মেয়েটার সাথে কোন দিনও আমার ভাব জমে উঠেনি। আমি তাকে পাত্তাই দিতাম না ।
কেননা তত দিনে আমি জেনে গেছি "সে খুব ভালো বাংলা জানার পরেও আমাকে মিথ্যে বলেছিল। তার প্রেস্টিজের একটা বেপার আছে না? "।

এখন ঐসব কথা মনে হলে কেন নিজেকে অপরাধী মনে হয় । একটা স্মার্ট মেয়ে আমার মত খেতের সাথে কথা বলে কেন তার সময় নষ্ট করবে ?
আমি শুধু শুধুই তাকে ভুল বুঝেছি ।
পছন্দের মানুষকে ভুল বুঝতে ক্ষতি কি ? হইতবা পছন্দের কথাটুকু তাকে বলা হয়নি, তাতে কি?
পছন্দতো করতাম!

স্কুল শেষ করলাম , কলেজে উঠলাম । প্রায় ২ টা বছর আগের কথা, আজো কত স্পষ্ট মনে আছে ! জমানো তুষার ছুড়াছুড়ি,জিম ক্লাসে বলিবল খেলা , রাতে পার্টি শেষ করে বাসায় ফেরা,পিজ্জার দোকানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া আরো কত শত কান্ড ।
এখন ও মাঝে মাঝে মেয়েটির কথা মনে হয় । আমি তখন ফেসবুকে থেকে তার ছবি গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি । অনুমতি না নিয়ে দেখি, তাই মনে পাপবোধ জন্ম নেয়। এমনিতেও বেশি ক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারি না।
এত সুন্দর্য সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

জমা থাকুক কিছু বলতে না পারা কথা । মাঝে মাঝে স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে দেখতে গেলেই মনে পড়বে সেই সোনালি দিন গুলির কথা আর সেই মেয়েটা !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩৬
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×