somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র জয় ও S.S.C পরীক্ষায় রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ৩ টি সৃজনশীল প্রশ্ন

১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কৃষক গনি মিয়ার ৫ বিঘা জমির পাশে এলাকার মাস্তান পেট কাটা ওসমানের ১ বিঘা জমি রহিয়াছে। পেট কাটা ওসমান জাল দলিল করিয়া কৃষক গনি মিয়ার ঐ ৫ বিঘা জমি দখল করিয়া লইলেন। গনি মিয়া অনেক অনুনয়-বিনয় করিয়াও জমি উদ্ধার করিতে না পারিয়া বিচারের আশায় আদালতে উপস্থিত হইলেন। কৃষক গনি মিয়া উকিল হিসাবে নিয়োগ করিয়াছেন বটতলার উকিল টাকলা কামরুলরে আর মাস্তান পেট কাটা ওসমান উকিল হিসাবে নিয়োগ করিয়াছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে ধুরন্ধর ব্যক্তি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে।

ব্যারিস্টার মওদুদ রাজনীতিতে নিজের ভেলকিবাজি দেখাইয়া অতীতে যেমন জিয়া, এরশাদ, ও খালেদা জিয়াকে মুগ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী, ও আইন মন্ত্রী পদ বাগাইয়া নিয়েছিল একই ভাবে কোর্টের বিচারকরে তার তেলেসমাতি করবার দেখাইয়া প্রমাণ করিলেন যে জমিটা আসলেই পেট কাটা ওসমানের।

এই দিকে টাকলা কামরুল ব্যক্তি জীবনে যেমন শেখ হাসিনার পা ধইরা সালাম কইরাও প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে বড় পদ বাগাইতে পারে নাই তেমনি কোর্টেও জোরালো যুক্তি দিয়া এটা প্রমাণ করিতে পারিলেন না যে পেট কাটা ওসমানের দখল করা জমির আসল মালিক কৃষক গনি মিয়া।

এদিকে দুষ্ট লোকেরা চায়ের কাপে ঝড় তুলে, যে টাকলা কামরুল দিনের বেলা যেমন প্রেস ক্লাবে চেতনা ব্যবসা কথা কইয়া রাইতের বেলা বাসায় ফিরিয়া ইসলামি ব্যাংকের ঋণের টাকায় বানানো বাড়িতে নাখে খাঁটি সরিষার তেল দিয়া ঘুমাইতে যায়, তেমনি দিনের বেলায় কৃষক গনি মিয়ার পক্ষে আদালতে কথা বলিলেও রাতের বেলা পেট কাটা ওসমানের ডেরায় উপস্থিত হইয়া দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া বলেন “আপনি আমার বাপ লাগেন”।

বিজ্ঞ বিচারক তার দীর্ঘদিনের অবিজ্ঞতার আলোকে স্পষ্টত বুঝিতে পারিলেন যে জমির প্রকৃত মালিক কৃষক গনি মিয়া। টাকলা কামরুল পেট কাটা ওসমানের কাছ থেকে ঘুষ খাইয়া আদালতে জোরালো যুক্তি দেয় নাই। সেই সাথে বিচারক এটাও বুঝিতে পারিলেন যে উনি যদি রায় ঘোষণা করেন যে ৫ বিঘা জমির প্রকৃত মালিক কৃষক গনি মিয়া তবে উক্ত জমি কৃষক গনি মিয়ার পক্ষে কোন দিনই বুঝিয়া পাওয়া সম্ভব হইবে না।
অতঃপর বিজ্ঞ বিচারক এই মর্মে রায় প্রদান করিলেন যে ৩ বিঘা জমির মালিক কৃষক গনি মিয়া ও ২ বিঘার মালিক মাস্তান পেট কাটা ওসমান।

উপরোক্ত গল্পের আলোকে আলোচনা করো যে আদালতের রায় শুনিয়া কৃষক গনি মিয়ার হুমায়ূন আহমেদের

“হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা…মল মল কা হো জি…হো জি।””

গান গাইতে-গাইতে বাড়ি ফেরা উচিত নাকি নিজের ২ বিঘা জমির অধিকার হারানোর শোকে মনে-মনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “দুই বিঘা জমি” কবিতা আওড়াইতে-আওড়াইতে সাথে চোখের পানি মুছিতে-মুছিতে বাড়ি ফেরা উচিত?

“শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।
‘কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
‘শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা–ওটা দিতে হবে।’
কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, “করুণ বক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে, “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’
পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে–
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি–
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।”



প্রশ্নের ২য় অংশ



Permanent Court of Arbitration এর নিয়ম অনুযায়ী আদালতের বিচারপতির সংখ্যা হতে পারে ৩ জন অথবা ৫ জন। এছাড়া প্রত্যেক বাদী দেশ (বাংলাদেশ ও ভারত) বিচার শুরুর পূর্বে একজন করে arbitrator (বিচারক বা দুই পক্ষের বিরোধের নিষ্পত্তির ব্যাপারে মনোনীত ব্যক্তি) নিয়োগ করতে পারবে। পরবর্তীতে দুই দেশের নিয়োগ-কৃত দুই জন arbitrator নিজেরা আলোচনা করে নিরপেক্ষ ১ জন অথবা ৩ জন arbitrator নিয়োগ করে যথাক্রমে ৩ জন ও ৫ জন বিচারপতির আদালত গঠন করতে পারবেন।

৩ জন বিচারপতি নিয়ে আদালত গঠিত হলে নিরপেক্ষ arbitrator হবে ঐ আদালতের প্রধান বিচারপতি। আদালতে যদি ৫ জন বিচারপতি থাকেন তবে নিরপেক্ষ ৩ জন arbitrator এর মধ্যে থেকে ১ জন হবেন ঐ আদালতের প্রধান বিচারপতি।

নিয়ম মেনে ভারত সরকার নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে একজন ভারতীয় নাগরিককে (Dr. Pemmaraju Sreenivasa Rao) নিয়োগ দিয়েছে প্রথম বিচারপতি হিসাবে।
আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে সুযোগ থাকা সত্যেও বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রথম বিচারপতি হিসাবে নিজ দেশের কোন আইনজীবীকে নিয়োগ না দিয়ে নায়ক অনন্ত জলিলের “ঘানা” থেকে Thomas A. Mensah নামক একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন।

বিচার শেষে দেখা গেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে আদালত যে রায় দিয়েছে সেই রায়ের কিছু অংশের উপর ভারতের নিয়োগ-কৃত বিচারপতি Dr. Pemmaraju Sreenivasa Rao আপত্তি জানিয়ে নিজের দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের নিয়োগ-কৃত ঘানার বিচারপতি আদালতের রায় চুপচাপ মেনে নিয়েছেন।



সৃজনশীল প্রশ্ন:

“সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রথম বিচারপতি হিসাবে বাংলাদেশের ৪০-৫০ হাজার আইনজীবীর মধ্য থেকে ১ জন আইনজীবীকে নিয়োগ না দিয়ে “ঘানা” থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার আলোকে নায়ক অনন্ত জলিলের What is Love (নিঃস্বার্থ ভালবাসা) ছবির চিত্রনাট্য বর্ণনা করো।



প্রশ্নের ৩য় অংশ

ভারতের পক্ষে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার জন্য নিয়োগ-কৃত আইনজীবী প্যানেলের সমন্বয় করেছেন ভারতের এটর্নি জেনারেল (দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা)। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার জন্য নিয়োগ-কৃত আইনজীবী প্যানেলের সমন্বয় করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

ভারত তার দেশের দাবির পক্ষে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার জন্য নিয়োগ-কৃত আইনজীবী প্যানেলকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার জন্য বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্যানেল নিয়োগ করেছেন যাদের মধ্যে রয়েছে নিজ দেশের শীর্ষস্থানীয় Hydrographer (পৃথিবীর জলভাগ সম্বন্ধে গবেষণা, উহার মানচিত্রাঙ্কন গভীরতা নির্ণয় প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ), Cartographer (মানচিত্র অঙ্কনে বিশেষজ্ঞ)।

অপর পক্ষে বাংলাদেশ সরকার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশের আইনজীবী প্যানেলকে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার জন্য ভারতের মতো বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্যানেল নিয়োগ করেছে এই রকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না (Permanent Court of Arbitration প্রদত্ত প্রতিনিধি লিস্টে)। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সরকার নিজ দেশের আইনজীবী প্যানেলকে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন বা বিরোধী পক্ষের দাবি ভুল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করিতে ব্যর্থ হয়েছে (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে)।



সৃজনশীল প্রশ্ন:

সময় ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত) Permanent Court of Arbitration গিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের সামুদ্রিক ভূমি হারানোকে ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের সাথে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধে ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে নবাবের পরাজয় নিশ্চিত করতে মির জাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতার সাথে তুলনা করা যায় কি না উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তা আলোচনা করো।



লেখকঃ মোস্তফা কামাল পলাশ, ব্লগার ও অনলাইন একটিভিস্ট
- See more at: Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×