somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেদিন আমি স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখেছিলাম (প্রথম খন্ড)

১২ ই জুন, ২০০৮ রাত ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি খুব স্বপ্ন দেখি। রীতিমত দিবাস্বপ্ন, জেগে জেগে ভর দুপুরে। এর অধিকাংশই বৃথা যায়, কখনো দুঃস্বপ্নেও পরিনত হয়। তবে মাঝে মাঝে যে সত্যি হয় না, তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু সত্যি হয়। একটা স্বপ্ন সত্যি হলে আমার দশটা স্বপ্ন ভেঙে যাবার কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমি অভিভুত হয়ে রীতিমত গনিতের ভাষায় এক্সপোনেনসিয়ালী আরো স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। ২০০৬ সনে এরকমই একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম যেটা এক সময় আমার জেদ-এ পরিনত হয়। স্বপ্ন, জেদ এবং অতঃপর যুদ্ধ। আমার আর দশটা স্বপ্নের মত এ স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়নি সেদিন। আমার জেদ আর সম্ভবত অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আমাকে সেদিন স্বপ্নের দূয়ারে পৌছে দিয়ে এসেছিল। সেদিন আমি স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখেছিলাম!

ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটা মায়ের সাথে শিশুর নাড়ির টানের মত। ২০০২ সনের জানুয়ারী মাসে যখন এখানে আমি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল-এ বি.এস.সি করতে ঢুকি, তখন ইস্টওয়েস্ট ছিল একটা ছোট এবং ছিমছাম বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তি চার বছরে আমার চোখের সামনে আমি ইস্টওয়েস্টকে বেড়ে উঠতে দেখেছি গুনে, মানে এবং সংখ্যায়। ২০০৫ সনে যখন আমার বি.এস.সি শেষ হয়, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রায়ভেট-এর মাঝেই নয়, রিতিমত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যলয়ের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমান তালে পাল্লা দেয়া শুরু করেছে।

আমার বি.এস.সি শেষ হয়েছিল ২০০৫ এর ডিসেম্বরে। যদিও ডিসেম্বর বলছি, তবে প্রকৃত পক্ষে শেষ হয়েছিল আরও দুই মাস পরে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে কোর্স শেষ হয়ে গেলেও আমাদের ফাইনাল প্রোজেক্ট জমার তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছিল বারবার যা শেষ পর্যন্ত জমা নেয়া হয়েছিল ২০০৬-এর ফেব্রুয়ারী মাসে। এদিকে জানুয়ারীতেই আমি শর্তাধীন ছাত্র (প্রভেশনাল স্টুডেন্ট) হিসেবে আবার মাস্টার্স (MS in CSE)-এ ভর্তি হই। সত্য কথা বলতে কি, মাস্টার্সটা অনেকটা মজা করেই শুরু করেছিলাম কিন্তু পরে এই 'হালকা' স্বীদ্ধান্তুটাই কোথা থেকে যে কি করে এক স্বপ্নপূরনের গল্প হয়ে গেল, অমি নিজেই ভেবে অবাক হই।

ভর্তি হবার ব্যাপারটাও ছিল রিতিমত নাটকীয়। আমি প্রথমে টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলের ফর্ম নিয়ে ছিলাম যেটা কয়েকদিন পর পরিবর্তন করে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সি.এস.ই.)-এর ফর্ম তুলি। কিন্তু ভর্তি হবার পর আমার আবার টেলিকম পড়ার ইচ্ছা হলো! তখন টেলিকমের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন স্যারকে অনুরোধ করে রাজী করাই আমাকে সি.এস.ই. থেকে টেলিকম-এ পরিবর্তন করে আনার জন্য। কিন্তু এ কথাটা আমাদের অর্থাৎ সি.এস.ই-এর চেয়ারম্যান আকতার স্যারের কানে যায় এবং স্যার আমাকে ডেকে পাঠান তার রুমে। আমি একটু ভয়ে ভয়ে স্যারে রুমে গেলাম। মনে মনে ভাবছিলাম আমার এই হুটহাট বিষয় পরিবর্তনের জন্য হয়তো রাগ করবেন। কিন্তু স্যার ঠিক উল্টো ব্যবহার করলেন। আমাকে খুব সুস্থির ভাবে বোঝালেন এবং বললেন একরাত চিন্তা করে জানাতে। সে রাতে চিন্তা করে দেখলাম, যেহেতু মাস্টার্সটা করছি করার জন্য (কারন আমার মূল লক্ষ্য ছিল লন্ডনে পড়তে যাওয়া এবং সেটা যেহেতু সে বছর আর হচ্ছিল না তাই ইস্টওয়েস্টে মাস্টার্স করতে ঢোকা), অতএব এখানে আমি বেশি সময় দেব না। তাছাড়া আমার পরিকল্পনা ছিল মাস্টর্স-এর পাশাপাশি চাকরি করার, ফলে চাইলেও সময় দেয়া যাবে না। যদি টেলিকম পড়ি তাহলে আমাকে এমন একটা বিষয়ে পড়তে হবে যেটা সম্পূর্ন নুতন এবং অবধারিত ভাবে এখানে সময় বেশি দিতে হবে। কিন্তু সি.এস.ই পড়লে এখানে একটা সুবিধা পাবার সম্ভাবনা থাকবে যেহেতু আমার বি.এস.সি-ও এই বিষয়ে। যুক্তি দিয়ে অনেক যোগ বিয়োগ করলাম সারারাত। তার পর ঠিক করলাম, যা আছে কপালে, সি.এস.ই-ই পড়বো।

যথারিতি পরদিন আকতার স্যারকে জানালাম এবং রেজিস্ট্রেশনও করে ফেললাম। পূর্ব পরিকল্পনা মত সাবজেক্ট নিলাম সর্বনিম্ন সংখ্যক অর্থাৎ দুইটা, ছয় ক্রেডিট। একটা এ্যালগোরিদম যেটা এরশাদ স্যার নেবেন, আরেকটা অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড মেথডোলজী স্বয়ং আকতার স্যারের কোর্স। আমি যখন রেজিস্ট্রেশন করি ততদিনে ক্লাস প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। পড়া বুঝে উঠতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। তার উপর আমার বি.এস.সি-এর ফাইনাল প্রজেক্ট এর কাজ তখন তুঙ্গে। ফলে সারা সকাল-দুপুর বি.এস.সি-এর কাজ করে সন্ধা থেকে করতাম মাস্টার্সের ক্লাস। কয়েকদিনের মধ্যে ইউনিভার্সিটিকে রিতিমন বাসা বানিয়ে ফেললাম।

বি.এস.সি-এর ফাইনাল প্রজেক্ট জমা দেয়ার পর কাজের চাপ কমে গেল অনেকাংশে। মনে মনে ঠিক করলাম এখনই চাকরীতে ঢুকবো না। অন্তত এক-দুই মাস জীবনকে উপভোগ করবো। সারা রাত অনলাইনে কাটিয়ে আমি দিনে ঘুমাতাম। বিকেলের দিকে ক্লাসে আসতাম, তাও স্যারদের সাথে গল্প করে সময় কাটানই প্রধান অনুপ্রেরনা ছিল। দুইটা বিষয়ের চারটা ক্লাস। তাতেই মাঝে মাঝে মনে হতো এত কেন! আসলে চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এত বেশি ক্লাস করা হয়ে গিয়েছিল যে ক্লাস শব্দের প্রতি একটা অরুচি চলে এসেছিল। এভাবে চলছিল দিন, ফাকে ফাকে পড়া।

প্রথম সেমিস্টার শেষ হবার পর গ্রেডের দিকে তাকিয়ে বেশ ভালো লাগলো। একটায় A এবং অন্যটায় A+। উল্লেখ্য যে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে A এবং A+ এর মাঝে কোন পয়েন্টের পার্থক্য নেই। দুটোই সর্বোচ্চ গ্রেড পয়েন্ট অর্থাৎ 4.০০। তবে A+ দেয়া হয় তাদের যারা ৯৭% নাম্বার পায় আর ৯০% এর উপরে A। তাই A+ অনেকটা সম্মান সূচক গ্রেড হিসেবে বিবেচিত হয়। মাত্র দুটো কোর্স নিয়ে এই ফলাফল করা সম্ভবত যে কারো জন্যই সম্ভব এবং এখানে কৃতিত্বের কিছু নেই। তবে এই ফলাফল আমাকে প্রথমবারের মত খানিকটা উৎসাহিত করলো মাস্টার্সে আর কি কি কোর্স আমাকে করতে হবে সেটা জানার জন্য।

আমাদের মাস্টার্সটা ছিল আটটা কোর্স এবং একটা থিসিসের সমন্বয়ে গঠিত। তিন ক্রেডিট করে আটটা কোর্স চব্বিশ ক্রেডিট এবং নয় ক্রেডিটের থিসিস যেটা কিনা পুরো মাস্টার্সের এক-চতুর্থাংশ। মোট তেত্রিশ ক্রেডিট। নুন্যতম একবছর এবং সর্বোচ্চ তিন বছররের মধ্যে শেষ করতে হতো তবে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা দুই বছরের মধ্যে শেষ করে। ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করে জানলাম আগে একটা নিয়ম ছিল যে ডিপার্টমেন্ট থেকে বিষয় নির্বাচন করে দেয়া হতো। কিন্তু সে সেমিস্টার থেকে অনেকগুলো বিষয় উন্মুক্ত করে দেয়া হলো যা কিনা ছাত্রছাত্রীরা কয়েকটি বিশেষ নিয়মের ভেতরে থেকে নিজেদের পছন্দ মত নির্বাচন করতে পারতো। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ চমৎকার মনে হলো। আমি সবগুলো কোর্স ঘেটে দেখলাম নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত বেশ কিছু কোর্স আছে যেমন ওয়েব টেকনোলজী, এডভান্সড নেটওয়ার্কিং, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি (ক্রিপ্টোগ্রাফি), ইনফরমেশন টেকনোলজী মেনেজমেন্ট ইত্যাদি। এ্যাডাপটিভ সিসটেম নামে আরেকটি কোর্স ছিল যেটার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে এখন নেটওয়ার্কিং-এ বিশেষত রাউট ডিসকভারিতে। এলগোরিদম কোর্স করার সময়ই মনে মনে ঠিক করেছিলাম ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং-এর রাউটিং নিয়ে থিসিসটা করবো। অতএব এই কোর্সটাও আমার টার্গেট লিস্টে নিয়ে ফেললাম। ফলে একসময় আমি দেখলাম আমার মাস্টার্স প্রোগ্রাম আমি নিজেই সাজাতে শুরু করে দিয়েছি! (চলবে)

২১ এপ্রিল ২০০৮

পরবর্তি খন্ড - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:৫৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×