মা মমতাময়ী। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে মা একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় এবং মধুরতম শব্দ মা। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন, প্রিয় অনুভূতি ,প্রিয় ব্যক্তি ,প্রিয় আদর, প্রিয় রান্না , যতগুলো প্রিয় আছে তার সব প্রিয় মাকে ঘিরে। মা নিয়ে বা মা এর মমত্ব নিয়ে লিখলে শেষ হবে না। মা কে ইসলামে যে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমরা যারা মুসলিম তারা খুব ভালোভাবে জানি। মা শব্দটি নিয়ে অনেক অনেক গল্প , উপন্যাস , কবিতা , গান ,রচিত হয়েছে এখনো হচ্ছে।
মা- শব্দটি মনে আসলেই, মনের ভেতর মায়া মমতার ভার অসম্ভব মাত্রায় বেড়ে যায়। যেটার ভার বইবার সামর্থ্য মনে হয় না কোন রক্ত মাংসের মানুষ কে দেওয়া হয়েছে। যে মমতা আর যে ভালবাসা রক্ষাকারী দেওয়াল হয়ে আপনাকে ঘিরে থাকে সবসময়, প্রতিটি মুহূর্তে, সে মায়া মমতা পূর্ণ ভালবাসা আপনি একমাত্র আপনার মা থেকেই পাবেন। আর কারও পক্ষে এভাবে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসা সম্ভব হবে না আপনাকে। মা বরাবরই আপনাকে ভালবেসে যাবে, যদিও আপনি তাকে হাজারও কষ্ট দিন, দুঃখ দিন। দিন শেষে মা কিন্তু আপনার ভালোর জন্যই প্রার্থনায় মুখরিত থাকে।
পৃথিবীতে বেশিরভাগ সফল ব্যক্তি ই তার সফলতার পিছনে তার মায়ের অবদান অকপটে স্বীকার করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন আল্লাহ এর পর কারো ইবাদত করার বললে তা হতো মাকে ইবাদত করা। কে বলেন নি মাকে নিয়ে আব্রাহাম লিঙ্কন , আইনস্টাইন , নেপোলিয়ন , বারাক ওবামা , শচীন টেন্ডুকলার, ম্যারাডোনা সবাই মায়ের মমত্ব , গুরুত্ব , আদর্শ জাতি গঠনে মা এর ভূমিকা নিয়ে তাদের নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।
যায় হোক টাইটেল লিখছি " বর্তমানের কিছু মা কেন মমতাহীন " কিন্ত আলোচনা করলাম মা এর গুরুত্ব নিয়ে। যুগ যুগ কেটে যাবে এই মাকে নিয়ে লেখতে গেলে। এর বেশী আমি আপনাদের কিছু লিখে জানাতে পারবোনা।
তবে এই বিংশ শতাব্দী তে এসে কিছু মা এর আচরণের কারণে মনে হচ্ছে মা এর মমত্ববোধ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে যা আমাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা অবলোকন করলে বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। শুধু যে এখন ই এমন হচ্ছে তা না আগেও এমন টা হত তা আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর "চোখের বালি" উপন্যাস পড়লেই বুঝতে পারবো। তাছাড়া বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায় তার "অপরাজিত" উপন্যাসে ওভার পজেসিভ মায়েদের কথা তুলে ধরেছেন। কিন্ত তখন এর পরিমান ছিল কম। আর এখন, পত্রিকা খুললেই মায়ের হাতে সন্তান খুন এর মত খবর দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পারিবারিক কোনো ঝামেলা হলেই তারা সন্তান এর উপর তার প্রভাব খাটাচ্ছেন।
এটি আমাদের জন্য চিন্তার বিষয় নয় কি ?
খুনের থেকেও আমার কাছে বড় সমস্যা হচ্ছে বর্তমান আধুনিক মা দের শিশু পালন এর ধরন টা। শিশু জন্মের পর থেকেই অবহেলার মাঝে বড় হচ্ছে , হয় নানা নানী , দাদা দাদির কাছে নয়তো বা কাজের বুয়ার কাছে (বেবিসিটারের) কাছে। জন্মের পর হয়ত তারা নিজেরা যতদিন সুস্থ না হয় ততদিন হয়ত তারা বাচ্চাদের দুধ পান করায় তার পর আর বাচ্চার কপালে দুধ ঝুঠে নাহ। শপিং এ যায় বাচ্চাদের কে বাসায় রেখে , হ্যাংআউট করতে যাবে বাচ্চাদের কে ঘরে রেখে , বাসায় ফিরে ব্যস্ত হয়ে যায় স্মার্টফোনে। শিশু যে একটু মমত্ববোধ শিখবে তার উপায় নেই তাই তো এখন মানুষে মানুষে এত হানা হানি বিশেষ করে আমাদের দেশে।
তারপর যখন শিশুদের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় তখন তো শুরু হয় এক্সট্রা কেয়ারিং :-( :-(
যা আমরা সবাই ইতিমধ্যে অবগত।
কেউ হয়ত বলবেন আমি কেন এমন লিখতে গেলাম। ভাই আমি এমন একটা সমাজের ভিতর দিয়ে বড় হয়েছি সেখানে হারমশায় ঘঠেছে এমন সব ঘটনা যা আমার মন কে ব্যাথায় কাতর করে তুলেছে। প্রতিদিন এখনো অবহেলিত শিশুর কান্নায় ঘুম ভাঙ্গে। যায় হোক কেন জানি আমরাও জিনিস টাকে অবহেলা করে কাটিয়ে দিচ্ছি যার কারণে এ দেশের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে।
আচ্ছা এর পিছনে আপনি কিসের দায় দিবেন ? বা কেন এমন হচ্ছে আজকাল? কি করলে এর প্রতিকার বা আংশিক প্রতিরোধ হবে ?
আমার ধারণামতে নিচের বিষয় গুলি এর জন্য দায়ী :-
১.সিজার এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদান। ভাবলে অবাক হবেন যে বর্তমান বাংলাদেশে ৫০-৮০% শিশু জন্ম নিচ্ছে সিজারের মাধ্যমে।
২.পশ্চিমা সাংস্কৃতি কে অর্ধেক গলাধকরণ। আমরা শুধু তাদের লাইফ স্টাইল কে কপি করতেছি কিন্ত তাদের প্রতিদিনের সমস্যা , খুন ,ধর্ষণ , ডিভোর্স এগুলা সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছি না। মোদ্দাকথা আমরা তাদের উপরের জিনিস গুলা কপি করতেছি কিন্ত তাদের মানসিকতা কে কপি করতে পারছি না যার কারণে এই নিত্যনতুন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যা আমাদের দেশে আগে খুবই কম ছিল।
মূলত আমার বাসার পাশে আজ এমন একটি ঘটনা দেখে এত খারাপ লাগল যা বলে বুঝতে পারব না একজন মা তার বাচ্চা কে এভাবে মারতে পারে :-( :-(
যায় হোক টাইটেলের আঙ্গিকে হয়ত লেখা ফুটিয়ে তুলতে পারি নি। ভুল কিছু লিখলে নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ পাক সকলের মা -বাবা কে সুস্থ রাখুক সেই দোয়া করি। মা কে জানা শশীরে কখনো কষ্ট দিয়েন না। যার মা নেই তাকে দেখুন মা এর জন্য কেমন আহাজারি করে। তখন আপনিও মা এর মূল্য বুঝবেন। আপনি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে আপনি বেঁচে থাকতে আপনার বাবা - মা কে বৃদ্ধাশ্রম এর মুখ দেখতে না হয়।