১। ২০০১-এর পর তৎকালীন লে. কর্ণেল রেজা নূর বি.এন.পি-জামায়াতের একজন অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে উএঋও তে জি.এস.ও-১ নিযুক্তি লাভ করেন ও ঢাকা সদর দপ্তরে অবস্থান করেন। তৎকালীন লে. কর্ণেল রেজা নূর-এর সাথে সর্বদাই তার কোর্সমেট জামায়াতের আমির গোলাম আজমের পুত্র লে. কর্ণেল আজমি’র (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার) একান্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল। ঐ সময় লে. কর্ণেল রেজা নূর, লে. কর্ণেল মামুন খালেদ (বর্তমানে মেজর জেনারেল) ও লে. কর্ণেল হান্নান (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার) প্রায়ই গোলাম আজমের মগবাজারের বাসায় যাতায়াত করতেন।
২। উএঋও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৪ সালে বি.ডি.আর সেক্টর কমান্ডার, রাজশাহী হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে মেয়র মিনুর সাথে তার অতিমাত্রার সখ্যতা ও লেনদেন স্থানিয় বি.এন.পি নেতাদের ও সমালোচনার মুখে পড়ে।
৩। ১/১১ পরবর্তীতে কর্ণেল রেজা নূর চট্টগ্রাম ই.বি.আর.সি’র ডেপুটি কমান্ডার নিয়োগ পান। সেই সাথে চট্টগ্রাম শহরের টাস্কফোর্স প্রধান হিসেবে সেখানে তিনি তার কিছু কোর্সমেটসহ দুর্নীতির বেশ কিছু উদাহরণ তৈরী করেন। যেমন
ক। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার লিঃ এর মালিক ইঞ্জিঃ নাজিম উদ্দিন এবং তার পার্টনার জাফরকে ই.বি.আর.সি-তে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখান যে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে তাদেরকেও মামলায় জড়ানো হবে। এই ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মেজর মুকিত-এর সহায়তায় ৪৫ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন বিনিময়ে মেজর মুকিতকে ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি গাড়ি উপহার দেন।
খ। রাজশাহীর মেয়র মিজানুর রহমান মিনু যখন দুর্নীতির মামলায় তদন্তের সম্মুখীন তখন মিনুকে রক্ষা করার জন্য তিনি মেজর মুকিতকে দিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের যৌথবাহিনীকে প্রভাবিত করেন। যার প্রমান, তৎকালীন রাজশাহী অঞ্চলের উএঋও থেকে মেজর মুকিত-এর বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল গঠনের সুপারিশ। কোর্ট মার্শাল গঠিত হওয়ার পর মেজর মুকিত ও কর্ণেল রেজা নূরকে বাচানোর জন্য নগ্ন হস্তক্ষেপ করেন উএঋও-এর তৎকালীন ডাইরেক্টর (সি.আই.বি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন খালেদ।
গ। চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকা খুলশীতে একটি চলাচলের পথ দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে রেখেছিল খুলশী সমিতি। দেয়ালটি অপসারনের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে কর্ণেল রেজা নূর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম এর কাছ থেকে ফাইলটি সিজ করে নিয়ে যান। নিয়ে যাওয়ার পর ওনার বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী জাহিদ সাহেবের মাধ্যমে জায়গার মালিকের কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফাইলটি ছেড়ে দেন। উএঋও-তে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল করা আছে। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন দেয়ালটি ভেঙ্গে দিলে উনি (কর্ণেল রেজা নূর) খুলশী সমিতির সাথে যোগাযোগ করে বিপরীত মুখী আচরণ শুরু করেন এবং ওনার খালাতো ভাই জনৈক টিটুর মাধ্যমে পুনরায় ২০ লক্ষ টাকা দাবী করেন। এবং টাকা না দিলে পুনরায় দেয়াল নির্মাণের হুমকি দেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মোঃ আলী ও আমিরুল ইসলাম তার এই দাবী না মানায় পুনরায় দেয়ালটি নির্মাণ করে দেন।
ঘ। কর্ণেল রেজা নূর উএঋও চট্টগ্রাম-এর তৎকালীন কমান্ডার কর্ণেল মাসুদ-এর সহায়তায় পুরনো জাহাজের তৈল-মবিলের প্রকৃত ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম, সারোয়ার ইসলামকে ভয় দেখিয়ে উক্ত ব্যবসা করা থেকে নিবৃত করেন, এবং একক ভাবে তার খালাতো ভাই টিটু যাতে করতে পারে সে লক্ষ্যে উপরোক্ত ব্যবসায়ীদেরকে বাধ্য করেন। ফল স্বরূপ টিটুর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অন্যায় ভাবে কামিয়ে নেন।
ঙ। চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী জাবেদ আলম মাসুদকে লক্ষ লক্ষ টাকা ও দামী দামী মোবাইল সেট-এর বিনিময়ে চট্টগ্রামের বৃহত্তম ক্রীড়া সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধারন সম্পাদক বানিয়ে দেন। র্যাব-৭ এর ফ্লাইট লে. মিজান হঠাৎ জাবেদ আলম মাসুদকে গ্রেফতার করে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে বের হলে কর্ণেল রেজা নূর র্যাব-৭ এর তৎকালীন সি.ও কর্ণেল হাসিন-এর উপর চাপ সৃষ্টি করেন দ্রুত পুলিশের কাছে উক্ত সন্ত্রাসী মাসুদকে হস্তান্তরের জন্য। ফলশ্র“তিতে জাবেদ আলম মাসুদ জেল থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে কর্ণেল রেজা নূর র্যাব-এর এ.ডি.জি হওয়ার পর উক্ত মাসুদ বায়েজীদ থানাধীন অক্সিজেন মোড়ে ফটিকছড়ি থানার জনৈক শফি সাহেবের ৫ গন্ডা জায়গা বাড়িসহ জোর পুর্বক দখল করে নেয় যার বর্তমান মূল্য কোটি টাকার ওপরে।
চ। ব্রিগেডিয়ার লতিফুল হায়দারের করা দুর্নীতিবাজদের তালিকা কর্ণেল রেজা নূর ফটোকপি করে তার এজেন্ট জাহিদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাশেম এবং চট্টগ্রাম বন্দরের এস.আই বশরকে দেখান এবং তাদেরকে রক্ষা করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বোয়ালখালীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মনসুর-এর মাধ্যমে ২০ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন।
ছ। ইঞ্জিনিয়ার আক্তারকে ভয় দেখিয়ে তার মাধ্যমে বেনামিতে কল্পলোক হাউজিং প্রকল্পে ২টি প্লট নেন।
জ। চট্টগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাশেম থেকে আবার ৫ লক্ষ টাকা নেন।
ঝ। কউঝ-এর আবদুল হাই এর মেয়ের জামাই থেকে ২৪ লক্ষ টাকা নেন।
ঞ। উক্ত টাকা তার স্ত্রীর আতœীয় মোজা ব্যবসায়ীকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
ট। চট্টগ্রামের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী জনাব আজফর-এর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ নিয়ে বর্তমানে তাদের দাম্পত্য সংকট চলছে।
ঠ। চট্টগ্রামের আখতার নামের একজন লম্পট জিপ (টিয়া রং এর সুজুকি জিপ নম্বর চট্ট মেট্রো-গ-১১-০৪৫০) নিয়ে মেয়ে সংগ্রহ করে কর্ণেল রেজা নূর-এর জন্য নিয়ে আসতো। হালিশহরের লাভলী, কুমকুম, সায়মাকে নিয়ে অনেকবার লংড্রাইভে গিয়েছেন।
ঢ। কর্ণেল রেজা নূর নিজেকে আওয়ামীলীগার হিসেবে দাবী করলেও চট্টগ্রামের মেয়র জনাব মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হানা দেন। মেয়রের স্ত্রী ও আতœীয় স্বজনদের অপদস্থ এমনকি গায়ে হাত তোলেন। বাড়ির বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। এ সময় মেয়র বাড়ির বাইরে ছিলেন। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী) কে মেয়রের বাসা হতে জানানো হয়েছিল।
৪। ২০০৮ এর নির্বাচনের ২ মাস পূর্বে হঠাৎ করে কর্ণেল রেজা নূর তার রূপ পরিবর্তন করেন। তিনি তার কোর্সমেট তৎকালীন ডাইরেক্টর (সি.আই.বি) উএঋও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন খালেদসহ মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকির সাথে সাক্ষাৎ করে তার আস্থা অর্জনের জন্য তৎকালীন ২৪ ডিভ জি.ও.সি মেজর জেনারেল শামিমসহ বিভিন্ন জনের নামে মিথ্যা তথ্য দিতে শুরু করেন।
৫। নির্বাচন পরবর্তীতে কর্ণেল রেজা নূর র্যাব-এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানেও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করা শুরু করেন। যেমন র্যাব-৭ এর ডি.এ.ডি শহিদুল ইসলাম সন্ত্রাসী মেহেদিকে নিয়ে র্যাব সদর দপ্তর পৌছার পূর্বেই জনাব রেজা নূর,শহিদুল ইসলামকে জিঙ্গাসা করেন কেন মেহেদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং বলেন মামলা টামলা বুঝিনা তাকে অবিলম্বে থানায় হস্তÍান্তর করো। পরে তার চাপের মুখে ১২ মামলার আসামী মেহেদিকে দ্রুত থানায় হস্তান্তর করতে বাধ্য হন শহিদুল ইসলাম। শুধু তাই না বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় ও অন্যায় ভাবে সহযোগিতা করেছেন।