somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৭. "আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।"

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্মৃতিচারণ:
"ভোট", "মিছিল", "স্লোগান" এসবের সাথে পরিচয় ছোট থেকে। নান্নামুন্না অবস্থায় দেখেছি, ছোট দাদা প্রতিবার মেম্বার পদে দাঁড়াতেন। ভোটের আগে চাচারা সারা গ্রাম মাইকিং(প্রচারণা) করে বেড়াতো। মাঝেমধ্যে আমরাও যেতাম। সম্বল ছিল একখানা সাইকেল; সাথে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার, ৬ ভোল্টের ব্যাটারি, আর মাইক্রোফোন। আমাদের আসল ধান্দা, সুযোগমত মাইক্রোফোন পেলে একখানা গান/গজল বলবো। তখন কোন মিছিলকে রাস্তা দিয়ে যেত দেখলে দৌড়ে এসে স্লোগান দিতাম, "মোরগ" "মোরগ"। মানে ঐ একটার বেশী আমি জানতাম না। "একদলের মিছিলে অন্য দলের স্লোগান যে দিতে নেই", কথাটা তখনও বুঝতাম না। নেয়ায়েত ছোট ছিলাম তাই সে যাত্রায় রক্ষে পেয়েছিলাম। যাই হোক, ভোটের দিন দেখতাম প্রার্থীরা কেন্দ্রের পাশে পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী তাঁবু বানাতো। তাবুঁর ভেতর ভোটারদের চা পরিবেশন করা হতো, সাথে থাকতো ফ্রী বিড়ি। উদ্দেশ্য ভোটাররা যেন নুন খেয়ে গুন গায়। যাই হোক, সেবারে ভোটারদের গুণগান না পেয়ে আমাদের হৃষ্টপুষ্ট মোরগখানা বিপুল ভোটে পরাজিত হইল। এদিকে পরের নির্বাচন আসার আগেই দাদা ইহকাল ত্যাগ করিল।(একবার অবস্য তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন)

আসল কথায় আসি,
সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট নিয়ে এবারও জনগণের মনে অনেক স্বপ্ন, আশা আর উদ্ব্যেগ। তবে বরাবরের মত এবারেও আমি হতাশ। কেন? এর উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক...
※※ নির্বাচনী বছর: ১৯৯১
রাজনৈতিক দল - প্রাপ্ত ভোট(%) - প্রাপ্ত আসন

বিএনপি...... ....... ...... ৩০.৮ - ১৪০
আওয়ামি লীগ..... ........ ৩০.১ - ৮৮
জামাত....... ....... ....... ১২.১ - ১৮
জাতীয় পার্টি......... ...... ১১.৯ - ৩৫
স্বতন্ত্র...... ........... ........ ৪.৪ - ০৩

※※ নির্বাচনী বছর: ১৯৯৬(১২জুন)
রাজনৈতিক দল - প্রাপ্ত ভোট(%) - প্রাপ্ত আসন

আওয়ামি লীগ ...... ..... ৩৭.৪ - ১৪৬
বিএনপি ..... ........ ..... ৩৩.৬ - ১১৬
জাতীয় পার্টি ......... ..... ১৬.০ - ৩২
জামাত...... ......... ....... ৮.৬ - ০৩
স্বতন্ত্র........ ........ ......... ১.১ - ০১

※※ নির্বাচনী বছর: ২০০১
রাজনৈতিক দল - প্রাপ্ত ভোট(%) - প্রাপ্ত আসন

বিএনপি .......... ....... ৪১.৪০ - ১৯৩
আওয়ামি লীগ.... ...... ৪০.০২ - ৬২
জাতীয় পার্টি..... ........ ৭.২২ - ১৪
জামাত...... ...... ....... ৪.২৮ - ১৭
স্বতন্ত্র........ ...... ....... ৪.০৬ - ০৬

※※ নির্বাচনী বছর: ২০০৮
রাজনৈতিক দল - প্রাপ্ত ভোট(%) - প্রাপ্ত আসন

আওয়ামিলীগ(মহাজোট).. ৪৯.০ - ২৩০
বিএনপি (চারদলীয় জোট) ৩২.২ - ৩০
জাতীয় পার্টি .......... ....... ৭.০ - ২৭
জামাত ........ ........ ....... ৪.৬ - ০২
স্বতন্ত্র ......... ......... ........ ৪.৯ - ০৪
উপরের দলগুলো ছাড়াও ইসলামী ঐক্য জোট, জাসদ, বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি সহ আরো কিছু দল প্রতিবারই দু-চারটা আসন পেয়েছে।

♦♦ নির্বাচনী ফল ও কিছু কথা:
১. আমাদের যতই অপছন্দ হোক, এটা মানতেই হবে, "এদেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামিলীগ ও বিএনপি।"
২. জাপা ও জাশি আছে দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে। এরা তুলনামূলক দুর্বল, তবে এদের সমর্থক সংখ্যা সমীহ করার মত। আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয়, জনপ্রিয়তায় এরা দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে।
৩. ইসলামী ঐক্য জোট ও বামপন্থী দলগুলো নামমাত্র আছে। নির্বাচনে এরা কখনই সুবিধে করতে পারে নি।
৪. উপরের নির্বাচনী ডাটায় বিশ্লেষণের বিষয়-
ক) প্রতিবারই বিজয়ী হয়েছে আগের বিরোধী দল। ভেবে কী দেখেছেন? কেন একটি দল পরপর দুবার ক্ষমতায় আসতে পারছে না?(উত্তরটা আমরা নিজেরাই ভাবি, কারণ মূল সমস্যাটা এখানেই!)
খ) ভোটের পার্সেন্টেজ হিসেব করলে দেখা যায় বিজয়ী দল, বিরোধী দলের চেয়ে খুব বেশী ভোট(%) পায় না(৯১, ৯৬ ও ২০০১ মতে)। বুদ্ধিমানেরা এক বাক্যে স্বীকার করবে, নির্বাচনে যেই দলই বিজয়ী হোক প্রধান বিরোধী দলকে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই। কারণ তারা প্রতিবারই(বিরোধী পক্ষে যেই থাকুক) উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন পেয়ে পরের বার ক্ষমতায় আসছে।
গ) আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, দুই দলের আসন সংখ্যায় কিন্তু বিস্তর ব্যবধান(২০০১, ২০০৮ তে বিজয়ী দল কয়েক গুণ বেশী আসন পেয়েছে)। এতে সমস্যা যা হচ্ছে, সংসদে বিরোধী দলের শক্তিশালী প্রতিনিধি থাকছে না। থাকলেও তারা হয় ওয়াক আউট করছে, নয়তো দুই-তৃতীয়াংশের তোপের মুখে তাঁরা পাত্তা পাচ্ছে না। ফলে সরকার তাঁর পছন্দ মত আইন পাশ করতে পারছে। এদিকে ৭০ অনুচ্ছেদ মতে, সাংসদদের ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ নেই। ফলাফল "হ য ব র ল" গণতন্ত্র।


নির্বাচনে জেতা/গদিতে বসার চেয়ে সুস্থ রাজনীতি বেশী প্রয়োজন: (দেশের স্বার্থে)
রাজনীতিটা আসলে কী?
বাংলা ব্যাকরণ মানলে রাজনীতি হলো "নীতির রাজা"।(যেমন রাজহাঁস রাজার হাঁস নয়, হাঁসের রাজা)। কিন্তু আমরা ব্যাকরণটাকে একটু উল্টে দিয়েছি, ভুল ব্যাকরণকেই শুদ্ধ বলে মানি। রাজনীতি এখন রাজা হওয়ার নীতি। তাই বর্তমান রাজনীতির মূল লক্ষ্য আদর্শ নয়, ক্ষমতা।
ঐতিহাসিকভাবে আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি পালন করে আসছি। নির্বাচনে জিতে আমরা ভাব ধরি, "মুই কি হনু রে!" শুরু হয় বিরোধী দলের দমন-পীড়ন ও নিজেদের আখের গোছানোর উন্নয়ন। এদিকে বিরোধীদল গণতন্ত্রের নামে হরতাল, অবরোধ আর ভাঙচুর শুরু করে। সুস্থ রাজনীতি/সত্যিকারের গণতন্ত্র তো কবেই বৃন্দাবন পালিয়েছে।

[আমরা কখনো দেখলাম না; কোন রাজনৈতিক দল প্রতিপক্ষের দিকে কাদা না ছুঁড়ে, গঠনমূলক সমালোচনা করল। বিরোধীদলে থেকেও যে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা যায়, সেটা তো কবেই উন্নয়নের মহাসড়কে চাপা পড়েছে। হতাশ হই, এমন গণতন্ত্র দেখে। সিস্টেম এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে, ভুলেও যদি কোন বিরোধীপক্ষ সিট পায় তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সেভাবে বরাদ্দ দেয়া হয় না। জনগণ বাধ্য হয়ে কলাগাছদের ভোট দেয়।
সিরিয়াসলি,
একটা মাঝারি প্রকল্পের জন্য পাঁচ বছর কোন সময়ই না। উন্নয়নের প্ল্যানিং, পর্যবেক্ষণ, বাজেট পাশ এসব করতেই কয়েক বছর চলে যায়। এদিকে কাজ শুরু করে সরকারের মেয়াদ শেষে দেখা যায়, এখনও কাজের অর্ধেক বাঁকি। পরের নির্বাচনে যদি আগের বিরোধীপার্টি জিতে, তাদের জন্য "ফরজে আইন" হল আগের প্রকল্পগুলো বাতিল করা। দেশের উন্নয়ন হবে কীভাবে? (মন্ত্রনালয়ের অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতির কথা না হয় বাদই দিলাম)]



স্যরি টু সে,
জাতী হিসেবে আমরা বরাবরই সংকীর্ণমনা, ছিদ্রান্বেষী, প্রতিহিংসা পরায়ণ। পরশ্রীকাতরতা আমাদের রন্ধ্রে, রন্ধ্রে। "বড় নেতা হবার আগে, ভালো মানুষ হওয়াটা যে জরুরী" কথাটা আমরা ভুলেই গিয়েছি। অথচ নির্লজ্জের মত ঠিকই স্লোগান ঝাড়ি, "উমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মত....."
এর আগেও বলেছি, আজও বলছি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও অবস্থার পরিবর্তন হবে না। যে যতই "উন্নয়ন" "উন্নয়ন" বলে চিল্লাপাল্লা করুক, এসব আসলে বালির বাঁধ। পাইলিং না করে হাতুড়ে মিস্ত্রি দিয়ে দশতলা বাড়ি বানানোর চিন্তা করা, আর সেটা দেখে গর্বিত হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।(ভেতরের কথা বুঝে নিন)

শিরোনাম প্রসঙ্গে বলি:
"আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব" কথাটার দুটো অর্থ করা যায়। গ্রহণযোগ্য অর্থটা হল, আমরা(প্রত্যেকে) আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে ভোট দেব। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব ইসির। তাদের সাংবিধানিক পাওয়ারটা তারা কাজে লাগাক। এখন আমি নিজু কাকে ভোট দেব সেই কথা আলাদা।(ব্যক্তিগতভাবে প্রচলিত নেতাদের আমার ভালোলাগে না, সেভাবে আমি ভোটও দেই না।) সেই ছোট থেকে দেখছি নির্বাচন নিয়ে প্রান্তিক মানুষদের খুব উৎসাহ। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ওরা খুব পছন্দ করে। আমি চাই নির্বাচনটা সুষ্ঠ হোক, জনগণ স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করুক। ক্ষমতায় কে যাবে সেটা জনতাই ঠিক করবে।

শেষ কথা, আমার কাছে উন্নয়নের চাইতে সুস্থ রাজনীতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেলা জানালা বন্ধ রেখে মোমবাতি আর দিয়াশালাইয়ের পেছনে দৌড়ানোর কোন মানে হয়!!!
.



⚠⚠⚠মন্তব্য সেটিংসঃ পোস্টে মন্তব্য সুবিধা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×