বিঃ দ্রষ্টব্য = ডকটির লেখায় কোন ডিপ্লোমা বা গ্রাজুয়েট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনাকে খাটো করা হয়নি। দয়া করে কেউ ভূল বুঝবেন না এবং লেখা গুলো তাদের উদ্দেশ্যে নয় যাদের অনেক অনেক টাকা পয়সা আছে। আবার যারা ট্রেডিং বিজনেসে বেশী আগ্রহী তাদের জন্য ও এই লেখা নয়।

ইদানিং একটা কথা বিশেষ ভাবে আলোচিত হচ্ছে, অমুক সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। অবশ্যই সেটা সম্ভব কিন্তু এর জন্য যেটা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে আমাদের আরও বেশি করে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা। প্রোডাকশন বিজনেসটাকে বেশি করে প্রেফার করা। নতুন যারা উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখছেন শুধুমাত্র তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আমার এই লেখা। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি সঞ্চারে ম্যানুফেকচারিং বা উৎপাদনমুলক ব্যবসা পরিচালনায় দেশের সম্ভাবনাময় শিক্ষিত তরুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়াটা জরুরি। ট্রেডিং বিজনেস এবং ম্যানুফেকচারিং বিজনেস এর মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য। যেকোনো প্রোডাক্ট উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো জানতে হয় সেগুলো হলোঃ
১) উক্ত প্রোডাক্ট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে কি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহৃত হয়।
২) এর ম্যানুফেকচারিং বা মেশিনিং প্রসেস।
৩) এর জন্য কি কি মেশিন লাগবে।
এগুলো হচ্ছে প্রাথমিক মূল বিষয়। এর পরবর্তীতে আসছে আরও ডিটেইলস যেমনঃ একের অধিক কাঁচামালের ক্ষেত্রে পারফেক্ট ম্যাটেরিয়ালস কম্বিনেশন ফর্মুলা , ম্যানুফেকচারিং প্রসেসে একের অধিক সেগমেন্ট থাকলে সেগুলো বিস্তারিত অনুধাবন করা এবং প্রত্যেক সেগমেন্টে যে মেশিন লাগবে সেগুলো সম্পর্কে জানা। অর্থাৎ টেকনিক্যাল নো-হাউ জানাটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ধারণা গেঁথে আছে যে ম্যানুফেকচারিং ব্যবসা/ ইন্ডাস্ট্রিজ করতে অনেক অনেক টাকা লাগে। সত্যি কি তাই ? অনেক অনেক টাকা না থাকলে কি আমরা ইন্ডাস্ট্রিজ করতে পারব না ? আসুন একটা উদাহরণ দেই , এটাতো অনেকেই জানেন বাংলাদেশে ১০০/১৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের প্রোজেক্ট আছে যারা জুতা তৈরি করে আবার আপনি একটু খেয়াল করে দেখুন হয়ত আপনার পাশেই স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত কেউ একজন আছে যে একটা ছোট কারখানায় বা দোকানেই খুব সুন্দর করে জুতা তৈরি করছে। বলতে পারেন সে কত টাকা ইনভেস্ট করেছে এবং চিন্তা করে দেখুন তো সে যদি আপনার আমার মতো শিক্ষিত ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানত তাহলে সে কি করে ফেলতে পারত।

উপরোক্ত উদাহরণে আপনি কি কিছুটা অনুধাবন করতে পারছেন আমি ঠিক কি পয়েন্ট আপ করছি? দেখুন আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিশ্বাস করতে চান না যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়লে বোধহয় টেকনিক্যাল নো-হাউ বোঝা সম্ভব না। আসলেই কি তাই ? আপনার কাছাকাছি কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখুনতো কোন ডিপ্লোমা বা গ্র্যাজুয়েট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পান নাকি। ও আচ্ছা ভালো উদাহরণ আমি নিজেও তো একাডেমিক সার্টিফিকেট ধারী কোন ইঞ্জিনিয়ার নই, ঠেলেঠুলে কমার্স গ্রাজুয়েট কিন্তু আমার প্রোজেক্ট এর সব মেশিন / ডাইস আমি নিজেই আমার মতো করে তৈরি করেছি। তো কি বলতে চান আমার মধ্যে কোন গায়েবী ক্ষমতা আছে নাকি জাদুমন্ত্র দিয়ে সব করেছি? জী না শিখেছি। প্রয়োজনের তাগিদে শিখেছি । স্বপ্ন দেখেছি শিল্পোদ্যোক্তা হবো কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেক তফাৎ । পুরো প্রোজেক্ট এর মেশিন রেডিমেড কিনতে গেলে কোটি টাকা লাগবে। এটা জীবনেও আমি জোগাড় করতে পারবনা। ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বিজ্ঞানী ডঃ এ পি জে আবদুল কালাম এর একটি উদ্ধৃতি আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়াতো “ স্বপ্ন সেটা নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয়না।” শুরু করলাম এক ভয়ংকর কঠিন সাধনা আর সংগ্রাম যার কোন ঢাল নেই তালোয়ার নেই কিন্তু নিধিরাম সর্দার। সব আপনজন তথা পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার কাছে আমি একটা অথর্ব অপদার্থ আর পাগল বলে পরিচিত হলাম। কোন রকম সহযোগিতা বা অনুপ্রেরণা তো দূরের কথা সারাক্ষণ শুধু তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর টিটকারি পেয়ে এসেছি সবার কাছ থেকে।

দুঃখিত মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে নিজের ঢোল পেটাচ্ছি। তো যাই হোক আসল কথায় আসি -যেকোনো একটা আনকমন প্রডাক্ট বেছে নিন যেটার অনেক চাহিদা আছে কিন্তু আমদানি হয়, সেরকম প্রোডাক্ট। এবার ইন্টারনেটে খুঁজতে থাকুন GOOGLE , WIKI PEDIA, YOUTUBE । একটু মাথা খাটিয়ে খুঁজুন সব পাবেন। টেকনিক্যাল ম্যাটার গুলো শেখার চেষ্টা করুন। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে সেটা হল কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে প্রতিদিন কিছু সময় দিয়ে সেখানকার কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে টেকনিক্যাল ম্যাটার গুলো শিখে নেওয়া। শেখার কোন বয়স বা শেষ নেই। আবার আমার প্রসঙ্গে আসছি উদাহরণের জন্য। আমার প্রোজেক্ট এর যে মেশিনের দাম পড়ত ৭ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা তা আমি নিজেই তৈরি করেছি ৩০/৪০ হাজার টাকায়। অবাক হবেননা এটা বাস্তব সত্য। তবে পার্থক্য হচ্ছে হয়তো আমার তৈরি করা মেশিনের রেট অব প্রোডাকশন কেপাসিটি কম। কিন্তু তাতে কি, আমার সামর্থ্য যা আছে তা দিয়ে আমি আপাতত কোটি টাকা প্রফিট এর আশা না করে লাখ টাকার তো আশা করতে পারি। আশা করি বুজতে পেরেছেন আমার কথা। আপনি ও শুরু করুন স্বল্প পরিসরে। ২০০ কোটি টাকার গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ আছে আবার ২ লাখ টাকার দরজীর কারখানা ও তো আছে। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য কি – একজন ছোটো পরিসরে আর একজন অনেক বড়ো পরিসরে।

অসম্পূর্ণ রেখে ডকটি আপাতত এখানেই শেষ করছি , পরবর্তিতে আরও বিস্তারিত উল্লেখ করবো কিছু আনকমন প্রোডাক্ট ও এর সাশ্রয়ী ম্যানুফেকচারিং প্রসেস + বিজনেস অপরচুনিটি সম্পর্কে যার ডিমান্ড অনেক কিন্তু ১০০% আমদানী নির্ভর।